“.. লোকে তবে করে
    কী সুখেরও তরে
    এমনই দুখেরও আশ?..”

ওপারে নৈস্তব্ধ্য নিরাক
অস্পর্শ্য আমার ঘড়ির কাঁটা
দেয়ালঘড়ির
পেন্ডুলামের
       ... হাওয়া—
এপারে জনতাকীর্ণ আমার নিঃসঙ্গতা।

একঝাক কপূর্র
উড়ে—
আর আমি রপ্ত করবার চেষ্টা করি
উড়াল

স্পর্শের অতীত এই রিক্ত শূন্যে
আমার দরকারি বাতাস তুমি
আমার দাফনযোগ্য ভূমি
আমার চুম্বনযোগ্য ওষ্ঠ..

ওষ্ঠাগতপ্রাণ একটি অধীর অপেক্ষা নিয়ে
এপারে বসে আছি আমি
তুমি ডাকবে?
বাসবে ভালো?
হাসবে?

বৃক্ষ তুমি নিঃস্ব হলে কবে? ঐশ্বর্যের
সবুজ ছাড়পত্র, আমার পানে
ফাল্গুনী ঝরাপাতা ছুঁড়ে
তবু নতুন কুঁড়ি হয়ে ফুটো।

দুই
সব হারানোর প্রান্তরেখায়
                       —তুমি
আজ দু’ডিসেম্বর
যে মানুষটার মৃত্যু হলো আকস্মিক
সে জানে না কেন তাঁর এ মৃত্যু।

যে মানুষটা রিভলবার হাতে ফিরে গেলো ধীর লয়ে
নল থেকে ধোঁয়া মুছে মুছে, ফের শীতল হবার আগেই
ভুলে গেলো শিকারের চেহারা
মানুষটা কেন মরল তার হাতে?
খুনি—
সেও জানে না।

অতঃপর যদি তোমরা আমার মৃত্যুর খবর পাও
নৃশংস ভীতিকর বিধ্বস্ত কোনো মৃত্যু
যে মৃত্যু এখন প্রতি মুহূর্তে হয় সমগ্র পৃথিবীজুড়ে
আর বাংলায় ততোধিক অবশ্যম্ভাবীরূপে
তার দেখা যদি হয় এক কবির অগস্ত্যপথে
তোমরা তবে বিক্ষুব্ধ হয়ো না, দোহাই!

তোমরা হারিয়ে যেয়ো দূরে
দূর থেকে দূরে এমন কোনো প্রান্তরে
যেখানে নিজেকে নিজে খুঁজে না মানুষ
খুঁজে না বন্ধুর শব, প্রিয় নারীর অতল চুমু
যেখানে হারিয়ে গেছে সব

তিন
“ভালোবাসা বাড়িতে, গাড়িতে নয়”

অতঃপর আমার মৃত্যু হলো
আটশত কোটি মানুষের ভীড়ে নগণ্য এক ধুলিকণাসদৃশ
যেমনটি চিরকাল চাওয়া ছিলো নীরবে

অতঃপর প্রথম প্রতিক্রিয়া এলো আমার চিরযৌবনা মায়ের বুকে
তিনি এক নিঃশ্বাসের ব্যবধানে মৃতপ্রায় বৃদ্ধা হয়ে গেলেন
আর বৃদ্ধা হয়ে গেলো দূরবতী আরেক নারী?
পিতার বুকব্যথায় কি আর কোনো স্প্রে কাজ করবে?

অতঃপর হাহাকার শোনা গেলো
নগরীর কবিদের ফেবুতে, বন্ধুদের হৃদয়ে
অথচ
আমি তাঁদের বলেছিলাম, ঢোল করতাল হাতে
মিছিলনৃত্যে নামতে, না পারলে ভাড়া করে ব্যান্ডদল নামাতে
ওরা কেউ বুঝলো না, নগরীও ছেড়ে গেলো না

মৃত্যুর এপারে সময় বলে কিছু নেই
অপেক্ষা নেই, উপেক্ষা নেই, দূরত্বও অস্তিত্বহীন
এপারের সবাই জানে, নিরন্তর সময়হীনতার ভেতর
একফোঁটা শিশির সমগ্র ওপার।