কেউ বাড়ি ছাড়ে না যদি না
বাড়িটি হাঙরের গ্রাসে থাকে

কেউ তখনই সীমান্তের দিকে ছুটে যায়
যখন দেখে গোটা শহরটিও ছুটছে
তার প্রতিবেশীরাও তার চেয়ে দ্রুত দৌড়াচ্ছে
গলা দিয়ে রক্ত উগরোতে উগরোতে
যে ছেলেটির সঙ্গে সে স্কুলে যেত
যার চুমুতে সে আচ্ছন্ন হয়েছিল পুরোনো টিন ফ্যাক্টরির পেছনে
তার হাতে এখন তার শরীরেরও চেয়েও বড় একখানা বন্দুক
কেউ তখনই বাড়ি ছাড়ে
যখন বাড়িই চায় না সে এখানে থাকুক।

কেউই বাড়ি ছাড়ে না যদি না বাড়িই তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়
পায়ের নীচে আগুন
পেটে গরম খুন

এমন জিনিষ যা করতে হবে বলে কোনওদিন স্বপ্নেও ভাবেনি
যতক্ষণ না ধারাল ইস্পাত-হুমকি
তার গলায় চেপে বসে
যদিও শ্বাসচাপা দিয়ে ধরে রাখে জাতীয় সঙ্গীত
কেবল পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলে বিমানবন্দরের শৌচালয়ে
কাঁদতে থাকে যখন প্রত্যেকটি পাতা
পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দেয় আর ফেরা হচ্ছে না


সে বুঝে
কেউই তাদের শিশুদের নৌকায় চাপায় না
যদি না স্থলভূমির চেয়ে জলকে নিরাপদ মনে হয়

কেউই নিজের হাতের চেটো পুড়িয়ে ফেলে না
ট্রেনের নীচে
যানবাহনের মধ্যে
কেউই দিন এবং রাত কোনও লরির পেটে কাটায় না
খবরের কাগজে চোখ রেখে
যদি না পেরিয়ে যাওয়া হরেক মাইল
ভ্রমণের চেয়ে আরও বেশি কিছু বোঝায়।


কেউই কাঁটাতারের নীচে হামাগুড়ি দেয় না
কেউই মারধোর খেতে চায় না
দয়া চায় না


কেউই শরণার্থী শিবির বেছে নেয় না
কিংবা নগ্ন করা খানাতল্লাশি চায় না যেখানে তার
দেহ যন্ত্রণার শিকার হয়
কিংবা কারাগার,
জ্বলতে থাকা এক শহরের চেয়ে
কারাগার অনেক নিরাপদ
এবং রাতে একজন কারারক্ষী
একদল লরিভর্তি মানুষের চেয়ে ভাল
যারা দেখতে তার বাবার মত

কেউই এটা সইতে পারে না
কারুরই এটা হজম হয় না
কোনও চামড়াই এতটা শক্ত নয়

কালা আদমিরা যাও নিজের দেশে ফিরে যাও
রিফিউজিরা
নোংরা অভিবাসীরা
শরণার্থীরা
আমাদের দেশকে লুটেপুটে খাচ্ছে
কালা আদমিরা তাদের দুহাতে
তাদের গায়ে অদ্ভুত গন্ধ
বর্বর
নিজের দেশটাকে নষ্ট করে
এবার চায় আমাদের দেশকে নষ্ট করতে

কীভাবে ওইসব কথা
ঘৃণার চাউনি
তার পেছনে-সামনে ঘুরে

হয়ত এই আঘাত তুলনামূলকভাবে নরম
কেটে ফেলা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের চেয়ে
কিংবা ওইসব কথাগুলোও আরও মৃদু
তার পায়ে চৌদ্দজন পুরুষের তুলনায়
কিংবা এই অপমান গিলে নেওয়া সহজতার
ধ্বংসস্তুপের চেয়ে
হাড়গোড়ের চেয়ে
টুকরো-টুকরে হয়ে যাওয়া
তার শিশুদেহের চেয়ে


সে বাড়ি ফিরতে চায়
কিন্তু বাড়িটি হাঙরের গ্রাস
বাড়ি এখন বন্দুকের নল
কেউই বাড়ি ছাড়ে না
যদি না বাড়িই তাকে উপকূল অবধি ধাওয়া করে
যদি না বাড়িই তাকে বলে
দ্রুত পা ফেলতে
কাপড়চোপড় পেছনে ফেলে আসতে
মরুভূমির মধ্য দিয়ে হামাগুড়ি দিতে
হেঁটে হেঁটে দরিয়া পেরোতে

ডোবো
বাঁচো
ক্ষুধার্ত হও
ভিক্ষে করো
আত্মসম্মানের কথা ভুলে যাও
তোমার বেঁচে থাকা আরও দরকারী
কেউই বাড়ি ছাড়ে না যতক্ষণ অবধি এক ঘর্মাক্ত কন্ঠ তার কানে
বলে-
পালাও,
আমার কাছ থেকে পালাও
আমি জানিনা আমি কী হয়ে পড়ছি
কিন্তু এটুকু জানি যেকোনও জায়গা
এখান থেকে বেশী নিরাপদ।

(সোমালিয়ান বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ কবি Warsan Shire এর কবিতা ‘Home’ এর বাংলা অনুবাদ চেষ্টা।)