আগুন ঝরছে, কিন্তু আলো নেই,
গলিত লোহায় মোড়ানো পথঘাট,
ধোঁয়ার আস্তরণে ঢেকে গেছে শহর—
শ্বাস নেওয়া মানে বিষ পান।
প্রাচীর জুড়ে পচা মাংসের গন্ধ,
রক্তের দাগ মুছতে ব্যস্ত তেলচিটে ইতিহাস,
বিবেকের ভাঙা দরজায় ঝুলছে তালা,
আর কপালে টিপ পরিয়ে মৃত্যুকে সাজিয়ে রাখা হয়।
গলির মুখে মরা প্রশ্নের স্তূপ,
উত্তরগুলো দাফন হয় বিচারহীন মাটিতে,
চোখের জ্বলকে ডুবে মরে আশার কণা,
আর বিজ্ঞাপন চিৎকার করে–"এটাই নতুন স্বপ্ন!"
তর্জনী উঠলেই গুঁড়িয়ে দেয় অদৃশ্য হাত,
স্বাধীনতা শব্দটি এখন ভয়ঙ্কর অভিশাপ,
যে সত্য বলে, তার জিভ কেটে নেয় সময়,
যে সত্য শুনতে চায়, তার কানে গলিয়ে দেওয়া হয় সীসা।
শাসনের নামে শেকল,
শৃঙ্খলার নামে নরক।
ধুলো হয়ে উড়ে যায় ন্যায়,
শূন্যের গহ্বরে বিলীন হয় সত্য।
শবের মিছিল ছুঁয়ে যায় ব্যস্ত রাস্তাগুলো,
নগরীর বাতাসে ভাসে জ্বলে যাওয়া স্বপ্নের গন্ধ,
অন্ধ জানালাগুলো জানে, কাদের চোখ উপড়ে নেওয়া হয়েছে, আর রাত জানে,
কারা হারিয়ে গেছে নিঃশব্দ গলিতে।
শব্দেরা জেলখানায়, কবিতারা নির্বাসনে,
অক্ষরগুলো লুকিয়ে থাকে অন্ধকার খুপরিতে,
এখানে গান মানে নীরবতা,
এখানে প্রতিরোধ মানে চিরদিনের ঘুম।
হাসির শহরে জন্ম নিলেও,
প্রতিটি ঠোঁটে পেরেক ঠুকে দেওয়া হয়,
চোখের কোণে জমে থাকা শিশির;
এখানে কান্নার একমাত্র স্মৃতিচিহ্ন।
ঘামের দামে বিকোয় বেঁচে থাকা,
কফিনের বোঝা হয়ে জন্মায় প্রতিটি শিশু,
নিষ্পাপ চিৎকারকে শৃঙ্খলার শেকলে বেঁধে
মুখে পুরে দেওয়া হয় নিয়মের বিষ।
শপথের নামে অঙ্গীকার হয় ছিন্নভিন্ন,
দুর্নীতির কারাগারে আটকে থাকে ন্যায়বিচার,
লাল গালিচার নিচে পচে যায় আদর্শ,
আর ক্ষমতার হিংস্র দাঁতে কুঁকড়ে মরে মানুষ।
এই শহর এক কসাইখানা,
যেখানে রক্তের দর নির্ধারিত হয়,
যেখানে বিবেকের মূল্য এক টুকরো রুটি,
যেখানে মৃত্যু সবচেয়ে সহজ লেনদেন।
শরীরের নিচে মাটি নেই,
জীবন ঝুলে আছে কাচের সুতোর ওপরে।
এক চুল নড়লেই,
নিচে শুধু শূন্যতার অতল খাদ।
শাসকের পায়ের নিচে পিষ্ট হয় সত্য,
রাতের অন্ধকারে গুম হয়ে যায় ভবিষ্যৎ,
পিছনের গলিতে হারিয়ে যায় ইতিহাস,
তবুও কারও মুখে প্রতিবাদের শব্দ ওঠে না।
এ শহরে প্রশ্ন করলেই নিখোঁজ হওয়া যায়,
অস্বীকার করলেই বাঁচা যায় না,
কুয়াশার চাদরে ঢাকা প্রতিটি সকাল,
নতুন বিভীষিকাকে স্বাগত জানায়।
বুক চিরে উঁকি দেয় শূন্যতা,
ভবিষ্যৎ কবরের মতো ঠান্ডা,
সময়ের কফিনে পেরেক ঠুকে
আমাদের অস্তিত্বকে বন্দি করা হয়।
স্মৃতিগুলো এখন এক-একটা ভাঙা আয়না,
যেখানে মুখ দেখলেই রক্ত ঝরে।
স্বপ্নগুলো এখন শ্মশানের ছাই,
যেখানে উষ্ণতা মানে শুধু জ্বলন্ত লাশ।
নির্বাচনের নামে একঘেয়ে প্রহসন,
আইনের নামে অসহায়ের গলাকাটা উৎসব।
মিথ্যার চাদরে ঢাকা প্রতিটি ঘোষণা,
আর ন্যায়বিচারের কফিনে শেষ পেরেক ঠোকে লোভ।
ক্ষুধার্ত পেট এখন ব্যারিকেড ভেঙে দেয় না,
শুধু লুট হয়ে পড়ে সময়ের সামনে,
ঘুণপোকায় খাওয়া নীতির স্তম্ভগুলো
বাতাসে ভেঙে পড়ে ধুলোর মতো।
বন্দুকের নলের ছায়ায় জন্ম নেয় প্রতিটি ভোর,
প্রত্যেক সন্ধ্যা মানে আরেকটি আশার মৃত্যু,
প্রতিটি রাত এক নিরব হত্যাযজ্ঞ,
যেখানে প্রতিরোধ মানে এক নতুন কবরে ঠাঁই।
রক্তাক্ত ইতিহাসের চোরাবালিতে,
বিস্মৃতির লাশ জমা পড়ে স্তরে স্তরে।
যারা কথা বলে, তাদের নাম মুছে ফেলে সময়,
যারা নীরব, তারাই বেঁচে থাকে মৃতের মতো।
এই নগরী এক অভিশপ্ত সাম্রাজ্য,
যেখানে মানুষ পোড়ে,
আর ছাই দিয়ে গড়ে তোলা হয়
আরেকটি নতুন নরকের প্রবেশদ্বার।