ভালোবাসা মরে না, সে মৃত্যুরও ঊর্ধ্বে,
শত যুগান্তরের দাহে পুড়েও–
অভিশপ্ত শপথের মতো অমর!
একটুখানি সান্নিধ্য, একফোঁটা ছোঁয়া—
শরীরে ছড়িয়ে দেয় মহাপ্রলয়ের স্পন্দন।
আকাশভেদী বজ্রের মতো,
আত্মা কাঁপিয়ে তোলে!
যন্ত্রণা যদি বিষ হয়, তবে সে অমৃত,
দুঃসহ রাতের অন্ধকারে,
তাকে জড়িয়ে ধরা ছাড়া উপায় কোথায়?
দূরত্ব যদি শাস্তি হয়,
তবে স্মৃতি হয় শাশ্বত উপাসনা,
স্বপ্নের দংশনেও সে-ই মোক্ষের সন্ধান!
সে-ই তো স্রষ্টার শ্রেয়তম আশীর্বাদ,
যার একফোঁটা অস্তিত্বেই নরক হয় স্বর্গ,
যার স্পর্শে সমস্ত শূন্যতা পূর্ণতা পায়,
যার ভালোবাসায় মৃত্যুর-পরেও
জীবন খুঁজে পাওয়া যায়!
তার নামের উচ্চারণেই হৃদয়ের দরজায়
আঘাত হানে নিঃশব্দ ঝড়।
তার অনুপস্থিতিতে শূন্যতা হয়ে ওঠে
আত্মার গভীরতম অতলান্তিক।
সে-ই তো একমাত্র আলো,
যার উপস্থিতি অস্তগামী সূর্যকেও ফিরিয়ে আনে।
যার অভাবেই পৃথিবীর সমস্ত রঙ,
কালো-সাদা দুঃস্বপ্নে রূপ নেয়।
ভালোবাসা যদি অভিশাপ হয়,
তবে এ-ই সৃষ্টির সর্বোৎকৃষ্ট যন্ত্রণা।
যেখানে কষ্টই প্রার্থনা,
বেদনাই মোক্ষ,
তবু তার ছায়াতলে নতজানু থাকা—
শ্রেয়তম আনন্দ!
স্মৃতির প্রতিটি পাঁজরে সে-ই খোদাই করা নাম,
ঘুমের শহরে নিঃশব্দ পদচারণা,
দুঃস্বপ্নের রাতেও যার ছায়া,
শ্রাবণের প্রথম বৃষ্টির মতো–
স্নিগ্ধ অথচ ধ্বংসাত্মক!
সে-ই দুঃখের প্রতিটি ধাপে স্থির দাঁড়িয়ে,
ভাষাহীন অথচ মুখর,
প্রাণহীন অথচ সর্বাধিক জীবন্ত।
সে-ই তো অন্তরের ঘুমন্ত আর্তনাদ,
যে গোপন দীর্ঘশ্বাসের মতো
হৃদয়ের প্রতিটি ধমনীতে বয়ে চলে!
তার চোখের ভাষা এক মহাকাব্য,
যা বোঝার সামর্থ্য নেই নির্বোধ এ বিশ্বসংসারের!
তার হাসি এক রহস্যময় সংলাপ,
যার প্রতিটি শব্দে দগ্ধ হয় অন্তরাত্মা।
তার একটি ‘হ্যাঁ’ জাগিয়ে তোলে এক মহাযুগ।
একটি ‘না’ ভেঙে চুরমার করে,
সহস্র স্বপ্নের নগরী।
সে-ই তো নিরবধি শাস্ত্রের একমাত্র মন্ত্র,
যার আরাধনায় হৃদয় পুড়তে ভালোবাসে।
যার অস্বীকৃতিতে মৃত্যু,
শ্রেয়তম আশীর্বাদ বলে মনে হয়!
সে-ই তো শেষ সত্য,
যে ভালোবাসার সংজ্ঞাকে,
একবার স্পর্শ করলেই–
অনন্ত দহনও আশীর্বাদ বলে মনে হয়!
তবু সেই একই নাম,
যা উচ্চারণ করলেই–
স্বর্গ ও নরকের বিভেদ লুপ্ত হয়ে যায়!
যার অভিশাপে পুড়তে পুড়তেও মনে হয়,
এটাই প্রকৃত মুক্তি!