রাতের শহর পথে; কাঁদছিল যে শিশু-
ছুটে গিয়ে দেখনি কেউ ঘুমঘুম দুই চোখ,
কি যে ভয় শঙ্কাতে! নিদ টুটে যাওয়া রাত
কোথাকার অভাজন কেন ঘরছাড়া?
ঝলমল আলো মোড়া তোমাদের পথে
ভুলেও দেখনি ফিরে আঁধার পথপার্শ্বে
আবছায়া দেখেছ যারা, মায়াময় অনাথে!
জান কি! একদিন ছিলো তার কোলজোড়া ঘুম
- স্নেহের পরশমাখা আদুরে কোলাহল
তবে কি! নিয়তির নিঠুর চালে এমন জায়গাবদল!
বালিশ কম্বল কোথা? চাদরের আচ্ছাদন!
মমতার আঁচলখানিও অকালে ছিঁড়েছে হায়!
ভালোবাসা বাৎসল্য উদার, বল কে নিয়েছে কেড়ে?
বিস্তৃত রাজপথ সবার, ব্যক্তিগত কারো কি হয়?
হাঁটাপথে মানুষেরা তার সাথে রয়!
অযাচিত ভাগ্য নিয়ে করেনি কোনো আলাপ
জানতে পারেনি তাই! হৃদয়ের ভাঙা টুকরার বিলাপ;
আমি কি তাহার পিতা! স্নেহভরে কেমনে মানি!
কুঁচকানো সার্টের ভাঁজে কত ধুলার পরত
এককোণা ছেঁড়া সেই বুকপকেটে রাখা ছিলো হাত;
মায়ের লেখা চিঠিখানি, আগলাতে বারবার।
শোনা যায়নি যেই কান্না, দেখার কথা কেমনে?
গভীর জিজ্ঞাসা ছাড়ো, তাকিয়েই তো দেখনি কেউ!
না নিয়েছ বুকে টানি, আমি তো জানি
বিরক্ত করেনি বলেই - হওনি অনুরক্ত,
আমি কেন ছুটে গেছি জানো - বিবেকী ইচ্ছায়!
আমারই ছেলে ছিল নাকি! অমায়িক, নিষ্পাপ সে।
আদরের স্থান দিতে চেয়েছি তারে, নিঃস্ব ভগ্নহৃদয়ে!
ঝরে যাওয়া অশ্রু হতে অনুভূত দুচার কণা
মাখতে চেয়েছি খানিক, কালিপড়া আমারই চোখে
পারিনি বলেই জেনেছ সত্যি, সে আমার পুত্র ছিল না,
রাখতে পারিনি তারে; বেঁধেছি যত স্নেহময় বাঁধন
আসলে করিনি সাধন! আয়োজন পূর্ণ;
বহুদিন কেটে গেছে গত, প্রাণে বাজে সেই কাঁদন!
তাহার মায়ের চিঠি কেহ তো দেখনাই
বাবার স্নেহহীন তাহারেও কিছু নয়!
জানলে না! কত বেশি দুঃখ পেয়ে ছাড়িল গৃহতল,
পাষাণী নিঠুর ঐ করিল খালি কেন স্নেহের আঁচল
তুমি নাকি আমি? কে ছিলেম বাবার আসনে!
লেখা ছিল অন্য মিথ্যা! কালো কালি সত্যভাষণে
আজো আমি, খুঁজে ফিরি শিশু ছেলেটিরে -
তার জন্য কাঁদি! আর ভাবি মনে সেই জননীরে!
চরম নিঠুর চিঠিখানি রেখেছি খুব যতনে।।