পথের ধারে নদীর কূলে আয়না ভাঙা ঢেউ,
খানিক দূরে দাঁড়ায়ে আছে সজল চোখে কেউ।
চোখের কোণে অশ্রু ভাঙে, আঁচল চাপা মুখে,
কাহার বধূ দাঁড়ায়ে যেন, কাঁদছে কেমন দুখে।
শুধাই তারে- "কে গো তুমি? কীসের তোমার দুখ?"
জবাব আসিল- "কত বছর গেল, দেখিনি তাহার মুখ।"
"কাহার কথা বলছ ওগো?"- শুধাই জিজ্ঞাসু মনে।
"আমার স্বামী, যুদ্ধে গেছে, এক রাতে গোপনে।
বলেনি আমায়, পাছে তারে যেতে করি মানা,
যুদ্ধের ডাকে ছাড়িল ঘর, মোর কথা ভাবলনা।
মেহেদীর রঙ হাতে আমার মুছে নাই তখনো,
রঙ মুছিয়া চুল সাদা হইলো, দাঁড়ায়ে আমি এখনো।"
"আসেনি ফিরে?" শুধাই তারে, "পাওনি তাহার দেখা?"
"সেই যে গেল, যুদ্ধ ফুরাইলো, আমি বসিয়া একা।
মাঝে একবার আসিয়াছিল, দেখিতে কেমন আছি।
ডাকিয়া কহিল, তোমারে ছাড়িয়া বড় কষ্টে বাঁচি।
কত করিয়া কহিলাম তারে ফিরিয়া না যাইতে,
ধমক দিয়া চলিয়া গেল দেশটারে বাঁচাইতে।
স্বাধীন দেশে ফিরিয়া আসিয়া একসাথে খাইব ভাত,
বলিয়া গিয়াছিল পেছন ফিরিয়া হাতে রাখিয়া হাত।
সেই যে সে চলিয়া গেল, আর আসিল না ফিরে,
একলা আমি কাঁদিয়া মরি মোদের ছোট্ট নীড়ে।"
দীর্ঘশ্বাস ফেলি আগাইয়া চলি রাখিয়া একা তারে,
এমনি করিয়া কত গল্প আছে, কেইবা কইতে পারে।
কত বধূ, কত মা চাহিয়া আছে, কান্না কিংবা অভিমানে,
সালাম সালাম, হাজার সালাম, সকল শহীদের পানে।