৭১ এর ২৫ শে মার্চ বিভীষিকা রাতে
হঠাৎ গোলাগুলির শব্দ
কিয়ামত রাত্রি
আতঙ্কে জড়সড় বাঙালী
পালাবার পথ নেই বুলেটে চলছে নর নিধন
বাঙালীর বুক ঝাঁজরা করল
নর পিশাচ, রক্ত পিপাসু
যতসব শকুনের দল।
লাশের উপরে পরছে লাশ
রক্তে লালে লাল
চারিদিকে কান্নার ধ্বনি
বিভৎর্ষ চিৎকারে কম্পিত দেশ।

শুরু হল যুদ্ধ
স্বাধীনতার যুদ্ধ
মুক্তির সংগ্রাম।
বুলেটের আঘাতে পথে প্রান্তরে
পরে আছে কত নিরাপরাধ বাঙালীর লাশ
কারও চোখ নেই, কারও নেই মস্তক
কারও অর্ধদেহ পরে আছে
কারও নেই চিহ্ন।
কুকুর হল মোটাতাজা
শকুন মনে প্রফুল্ল
মাংস শুধু মাংস
কামড়ে ধরে বাঙালীর মাংস
চোখে ঠোক মেরে
সারা দেহ কামড়ে কামড়ে
ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে খায় বাঙালীর মাংস
রক্তে সিক্ত দেশের মাটি
লাশের প’রে লাশ
ক্ষত-বিক্ষত মৃতপ্রায় প্রাণ
বক্ষে শকুনের বাস।

ওহ কি নিদারুন কষ্ট
বিভীষিকা, বিভীষিকাময় দৃশ্য
কাঁচা মাংসের লোভে কত শকুন/হায়না
ঠোক মেরেছে ষোড়শী বোনের বক্ষে
কত মা হারিয়েছে ইজ্জত তার
শত শত ভগ্নী-মাতার ক্রন্দনে কম্পিত
ইস্রাফিলের শিঙ্গার।
কিয়মতের আগেই কিয়ামত
বাংলা বুকে
কাঁপে থরে থর
বাংলার প্রতি ঘর
অস্ত্রের ঝংকারে
অর্ধমৃত মানুষের করুন আর্তনাদ
আকাশে বাতাশে ধ্বণিত হয়
স্তম্ভিত হয় আরশ কুরসি
পলায়ন করে আজরাইল।
বুদ্ধিজীবী মধ্যমণি
দেশের প্রিয় প্রাণ
১৪ই ডিসেম্বরে বৈরীর অস্ত্রাঘাতে
জীবনের অবসান।

তবু বিমর্ষ নয় জাতি
হাতে তলোয়ার, মেশিনগান
হৃদয়ে স্বাধীনতার শ্লোগান
যাবে যদি যাক প্রাণ
তাতে জাতি নয় ম্লান
রাখব ধরে দেশের মান।

স্বাধীন হল এদেশবাসি
অনেক ত্যাগের পরে
দুঃখ দিনের শেষ
বুকের তাজা রক্ত স্রােতে জন্ম নিল
আমার প্রিয় বাংলাদেশ।

তবু লাশের গন্ধ আজও পাই
যুদ্ধে সন্তান হারা
মাতার শুণ্য বুকে
প্রিয়জন হারানো স্ত্রীর ক্রন্দনে
বোনের চোখে হারানো ভাইয়ের শোকে
বাংলার পথে-প্রান্তরে
বৃদ্ধ পিতার বুকফাঁটা
করুণ আর্তনাদে।