👤 খালুবাবা’র স্মরণে 👤

আকাশ দরিয়ায় ঝড় উঠেছে..... কালো ঝড়
সংবাদ পেলাম কোকিল ভোরের জড়-গানে।
লিখে দিয়ে আষাঢ়-শ্রাবণ কান্না, এ তোমার কেমন যাওয়া?
আমার অবাক নেত্রযুগলে অপলক বিস্ময়ের নীলমেঘ !
হারানোর বেদনায় সমস্ত কায়া যেন অসাঢ়।
শোক সাম্রাজ্যে আজ খেদ নেই, বিষাদ নেই
তবে অভিমান আছে, বড্ড বেশিই আছে—
বলা নেই, কওয়া নেই, হঠাৎ করেই যেতে হলো !
কত্ত কিছু যে বলার ছিল, কত্ত কিছুর যে আবদার ছিল,
কত যুগল গানও যে বাকি ছিল—
আরও ছিল কিছু ক্ষমা প্রাপ্তির প্রবল আশা..!

শেষ যেবারে আমার বিয়ের স্বর্ণহারটি এনেছিলে,
আর বলেছিলে, “তোকে পরলে পরীর মত লাগবে”!
আরও কত কাঁকন, হার, দুল জোড়া পরিয়ে পরিয়ে
আনন্দিত চিত্তে সবাইকে দেখাচ্ছিলে
আর বলেছিলে,”এগুলো সব তোর”,
তখন আমি লজ্জায় প্রায় লাল !
সেদিনকার তোমার সেই উচ্ছ্বল-আনন্দ দেখে
তৃপ্ত হৃদয়ে সহস্র কৃতজ্ঞতা নিবেদন করলাম মনে মনেই।
কই সেভাবে তো আর কেউ বলে না, আর কেউ দেখে না,
কেউ আর আদর করে ডেকে বলে না ——
            “মা আমার মাথা টা একটু খুটে দিবি!”

১১ নাম্বার বাড়ির তৃতীয় তলা’র সেই চেনা চেয়ারটা
এখনও আছে এককভাবে দন্ডায়মান।
যেখানে রোজ তাঁর সকাল হতো আর চলতো
ঘন্টার পর ঘন্টা প্রিয়জনদের সাথে আলাপচারিতা।
বন্ধু বৎসল তিনি সবসময়ই চাইতেন স্বজনে ঘেরা পরিবেশ,
সবাই যখন তাদের প্রাত্যহিক সমস্যার ঝুলি নিয়ে আসত
তাঁকে দেখেছি হাসি মুখে তা সমাধান করতে।
আরও দেখেছি দুঃসময়ে নির্ভরতার প্রদীপ হয়ে পাশে থাকতে।
সে মানুষগুলো এখনো আছে বুক ভরা আশা নিয়ে,
চেয়ারটিও আছে কাষ্ঠখন্ডের শুষ্কতা নিয়ে,
শুধু নেই সে স্থানের শোভা-বর্ধনকারী মানুষটি...!

বাড়ির মেইন ডোর খুলতেই সামনের
দেয়ালছবির ফ্রেমে তাঁর হাস্যোজ্জ্বল ছবির সমাহার।
শোবার ঘরটিও আছে আগের মতোই,
ভাঁজহীন বিছানার শুভ্রতা ছড়িয়ে আছে ঘরময়।
তাঁর প্রিয় ব্র্যান্ডেড পারফিউমগুলো সারিবদ্ধ ভাবে সাজানো, যেমনটা তিনি রেখেছিলেন।
লোভাতুর বাচ্চাদের জন্যে লুকানো চকলেটগুলোও
হয়তো আছে আলমারির কোন গুপ্ত কোণে।
যা তিনি ছাড়া কেউ জানতো না....

তুমি জানলেই না কোনদিন....
সাদা কাফনে ঢাকা লাশবাহী গাড়ির কাঁচের ও’পারে
তোমাকে যখন দেখেছিলাম শেষযাত্রার মলিন সাজে-
সে যে কী ভীষণ যন্ত্রণা, কী ভয়ঙ্কর অগ্নিদহন!
আমার স্নায়ু-ধমনীর প্রতিটা শিরায় শিরায়  
যেন প্রবল মৃত্যুকূপের প্রচন্ড আঘাত হেনেছিল...
মহাপ্রলয়ের তীব্র গর্জন শুনতে পাচ্ছিলাম রিক্ত অঙ্গনে!
বিধাতার দিকে তাকিয়ে তখন করুণ আর্তিতে শুধালাম——
“কেন তুমি শূন্যে মিলালে এ প্রমোদ কোলাহল!
কেন তুমি ভরে দিলে চোখ, কান্নার সরোবরে...
কেন তুমি পৃথিবীর মায়া মুক্ত করে তাঁকে নিলে বিদগ্ধ রজনীতে—
আর সবাইকে করলে কারাশিকের বেড়িতে বন্দীবাস ?”

সেদিনের পরে সে বাড়িতে আর যাওয়া হয়নি
রাস্তার উপর দিয়ে যখনি বাড়িটি পেরিয়েছি,
বুকের মধ্যে অজানা চিনচিনে ব্যথা
ছেঁদ করেছে হৃদয়ের এপার-ওপার।
তা কেউ-ই জানলো না,
তা জানতে দেইনি কাউকে আমি........!


স্মৃতির পৃষ্ঠা থেকে
🌑 ৪ ঠা সেপ্টেম্বর ২০১৯ 🌑