ঈশ্বর কে দেখেছে..?
আম-দুধভাতে মধুর বিন্দু মিশিয়ে তৃপ্ত চোখে
আমাকে পরিতৃপ্ত করা আমার বাবা-কে দেখেছি।
গলদা চিংড়ি কিংবা ভাপা-ইলিশের বড়টুকরোটা
আমার পাতে তুলে দেবার মমতাহাসি দেখেছি,
লিচুর পাহাড় বানিয়ে, তালশাসের খোসা ছাড়িয়ে
পরম আদরে আমাকে খাইয়ে দেয়া সুখ দেখেছি,
স্কুল-কলেজের দিনগুলিতে ক্লান্তিহীনভাবে
বানতে দেখেছি বিরতীভোজ।
বাবা-মেয়ের গলা ছেড়ে যুগল গান গাওয়া,
রবীন্দ্রভক্ত বাবা ও আমার রবিগান
কবিতার গম্ভীর আলোচনা কিংবা
ধর্মজ্ঞানের গভীর বাণী বাবার ভরাট কন্ঠে---
যেন পৃথিবীতে শুধু আমরাই আছি।
আমার লেখা কবিতা আদ্যপান্ত মুখস্ত করে
মুগ্ধতা নিয়ে পড়তে দেখেছি,
মন খারাপের দিনগুলোতে পাশে থাকতে দেখেছি,
জীবনের চড়াই-উৎরাই পর্যায়ে বাবাকে
সাহসী ঢাল হয়ে দাঁড়াতে দেখেছি।
শাসনের অপরপৃষ্টে দেখেছি অপার স্নেহ; আর দেখেছি,
অসংখ্য অপরাধের অসীম ক্ষমা........
ঈশ্বর তবে কোথায় থাকেন,
ওই দূর আকাশের সবচেয়ে উচুস্তরে ?
মসজিদ-মন্দির-পেগোডা-গির্জায়,
অলৌকিক বাণীর অসংখ্য শব্দে;
প্রকৃতির মায়াজালের অদৃশ্য ছায়াতে,
নাকি পবিত্রগ্রন্থের প্রতিটি অক্ষরে অক্ষরে..?
আমি দেখিনি কল্পনার সেই বলিষ্ঠ বিধাতাকে
দেখিনি আয়াতের তপসিরে সাজানো খোদা'কে-
পুরাণের প্রকোষ্ঠে মৃত্তিকাসন্ধি ভগবান'কেও,
শান্তিকথনের সিদ্ধাচার্য বুদ্ধ'কে দেখিনি কখনো-
দেখিনি যুগবাণীর পুস্তকবন্দি যিশু-কে,
আরও দেখিনি তনখের চিরন্তন ধাতা-কে..!
কেবল দেখেছি আদিপিতার নিগূঢ়-রূপ
জীবাত্মার অন্তরে পরমাত্মার প্রকাশ।
মায়া-ক্ষমতায় প্রাণোচ্ছ্বল বৃত্ত-হৃদয়
বাবা'র মুর্তিতে যার পূর্ণ বিকাশ।
আমার বাবা... এবং আমার বাবাকে দেখেছি,
পৃথিবীর সবথেকে প্রাচীন ভোর।
যিনি আতুরঘরে ব্যথায় আর্তনাদ করা
মা'কে বলেছিল দেখো: ঐ আলো !
একটি নতুন প্রাণের...!
🍃 ৪ঠা আষাঢ় 🍃
🍁 'বিশ্ব বাবা দিবস' উপলক্ষে সকল বাবা-কে নিবেদন 🍁