২৮ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে কোলকাতার 'শহীদ সূর্য সেন ভবন'-এ অনুষ্ঠিত কবিদের মিলন উৎসব ও সাংস্কৃতিক আড্ডা ২০১৮-এ উপলক্ষ্যে বাংলা কবিতা ওয়েবসাইটের এডমিন আশফাকুর রহমান পল্লব-এর বাণী-
'আজকের অনুষ্ঠানের সভাপতি, প্রধান অতিথিদ্বয়, মঞ্চে উপবিষ্ট অতিথিবৃন্দ, বাংলা-কবিতা ডটকম-এর সদস্য ও কবি সহ উপস্থিত সুধীবৃন্দ, সুপ্রভাত! প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এমূহুর্তে আপনাদের পাশে আমি সশরীরে উপস্থিত নেই বলে। সময়টাও ঠিক এই মূহুর্ত বলা যাবে না। মানে আপনারা যখন সবাই এখানে বসে আছেন, তার বেশ অনেক আগেই আমি আমার বক্তব্য রেকর্ডিং শুরু করেছি। তবে আত্মিকভাবে এখন আমি ঠিক এখানেই উপস্থিত আছি, আপনাদের মাঝে। কল্পনার চোখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি পুরো হল, মঞ্চ, এবং আপনাদের সবাইকে। টের পাচ্ছি আপনাদের প্রাণের স্পন্দন! এভাবে আপনাদের সাথে থাকতে পারাটাও খুব একটা কম মনে হচ্ছে না তাই।
কোলকাতার 'শহীদ সূর্য সেন ভবনে' আজ 'কবিদের মিলন উৎসব ও সাংস্কৃতিক আড্ডা ২০১৮' শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলা-কবিতা ডটকম যেন তার ভার্চুয়াল গণ্ডী ছাড়িয়ে বাস্তবে পদার্পণ করলো ভারতের মাটিতে! কোলকাতা তথা ভারতে আসরের সদস্য ও কবিদের নিয়ে এমন একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন সম্ভব হবে, তা কিছুদিন আগেও আমি কল্পনা করতে পারিনি। কিন্তু বাংলা-কবিতা ডটকম তো আর শুধুমাত্র যান্ত্রিক কিছু কোডর সমন্বয়ে তৈরি ওয়েবসাইট না। বাংলা-কবিতা ডটকম হলো এই ওয়েবসাইটের সদস্যদের সমষ্টি। প্রত্যেকেই রক্তমাংসের বাস্তব চরিত্র। আর মানুষ যখন একতাবদ্ধ হয়ে নির্দিষ্ট একটি লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন সেখানে অসম্ভব বলে কিছুই থাকে না। তাই আমাদের আসরের পশ্চিমবঙ্গের উদ্দীপিত কিছু সদস্য যখন এমন একটি মিলন উৎসবের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন, তখন থেকেই এর বাস্তবরূপ অনিবার্য হয়ে গিয়েছিলো। যাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজকের এই সম্মিলন সম্ভব হয়েছে, তাদের প্রত্যেককে জানাই কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।
বাংলা-কবিতা ওয়েবসাইটের এডমিন হিসেবে আমি এখানে কিছু বলার সুযোগ পেয়েছি। তবে সার্বিক চিত্রে আমি এর সাধারণ কোনো সদস্যের চেয়েই ভিন্ন কিছু নই। তাই এডমিন হিসেবে না, সাধারণ ব্যবহারকারী হিসেবেই বরং কিছু বলতে চাই।
বাংলা-কবিতা ডটকম বর্তমান সময়ের বাংলা কবিতার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ফিচার-সমৃদ্ধ ওয়েবসাইট, তা আমরা সবাই জানি। তবে কবিতা ছাড়াও এর অন্য একটি দিক আছে, যা আমাকে প্রায়ই আপ্লুত করে। বিশ্ব জুড়ে চারপাশে যখন শুধু বিভক্তি দেখি - দেখি রাজনৈতিক মতভেদ, ধর্মীয় বিভেদ সহ দলে দলে আরও নানারকম ভেদ-বিভেদ - তখন এই একটি প্ল্যাটফরমে এসে তার পুরো উলটো চিত্র দেখতে পাই। এখানে আমি বাংলাদেশী, ভারতীয়, নাকি অন্য কোনো দেশের নাগরিক, আমার ধর্ম বা রাজনৈতিক মতাদর্শ কি, এগুলো সব ছাপিয়ে নিজেকে দেখতে পাই বাঙালি হিসেবে। এখানে আমরা সবাই এক, সবাই বাঙালি। সকল দেশের ভূরাজনৈতিক সীমা ভেদ করে বিশ্ব জুড়ে একক সত্ত্বা। আরও অনেক বাংলা সাহিত্য কেন্দ্রিক ব্লগিং ওয়েবসাইট আছে। কিন্তু দেশ-জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বাঙালির এমন একাত্মতা আর কোথাও দেখি না! কারণ, কবিতা এমনই এক অমৃত, যা সব বাঙালির হৃদয়েই সমানভাবে সুধা বিলিয়ে দেয়। সবাইকে এনে দাঁড় করায় একই কাতারে। কবিতার ছন্দ ও রসে বাঙালির এই ভার্তৃত্ববোধ আরও দৃঢ় হোক, পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য সতত বৃদ্ধি পাক, এটাই কামনা করি।
কবিতা সত্যের কথা বলে, কবিতা স্বপ্ন দেখায়, স্বপ্ন দেখতে শেখায়। তাই কবিতাকে যারা ভালোবাসেন, হৃদয়ে ধারণ করেন, তারা গতানুগতিক চিত্র থেকে কিছুটা ভিন্ন তো হবেনই। তাদের যদি সকলে সমষ্টিবদ্ধ হন, তবে কি হতে পারে আপনি নিজেই একবার ভেবে দেখুন। আমি এখানে উপস্থিত আপনাদের সবার মাঝে সেই সমষ্টিকেই দেখতে পাচ্ছি। এই সমষ্টির উদ্দেশ্যে আলাদাভাবে বলার কিছু নেই আমার। বরং শেখার আছে অনেক কিছু। আপনারা এগিয়ে চলুন। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ুক কবিতার প্রাণ, ভালোবাসার আহবান।
আপনাদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার বক্তব্য আমি এখানেই শেষ করতে যাচ্ছি। সবাই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।'