আজ এই আড্ডায় বাংলা-কবিতা ওয়েবসাইটের ইতিহাস সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলবো আমি।
এক সৌখিন কবি ছিলো, আপনাদের অনেকের মতোই। তেমন পরিচিত কিংবা প্রতিভাবান কবি বলা যাবে না। পেশা ভিন্ন হলেও মনের তাগিদে মাঝে মধ্যেই দু'চার লাইন কবিতা লিখে ফেলে। আর কিছু একটা লেখা হলেই অতি উৎসাহে নানা ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করে। তো সেই কবি একদিন বিয়ে করলো। স্ত্রীও কবিতার প্রতি বেশ অনুরাগী। স্বামির কবিতা নিয়ে তার উৎসাহের কমতি নেই কোন। কিছুদিন যেতেই স্ত্রী একদিন কবিকে বললো যে তুমি নিজেই তোমার মনের মতো করে নিজস্ব একটা কবিতার ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলছো না কেন? সেই ওয়েবসাইট কেমন হবে, কি কি ফিচার থাকবে তা নিয়ে উৎসাহে নানা পরামর্শ দিতে থাকে স্ত্রী কবিকে। কবি নিজেও উৎসাহী হয়ে কিছুদিনের মধ্যেই সাদামাটা এক ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলে। তারপর এক বিশেষ দিন দেখে যাত্রা শুরু হয় www.bangla-kobita.com নামক ওয়েবসাইটটির। দিনটি ছিলো ২০০৯ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী।
বাংলা-কবিতার প্রাথমিক সেই ওয়েবসাইটের ফিচারগুলো ছিলো খুবই সাধারণ। খ্যাতিমান কবিদের কবিতার সংকলনের পাশাপাশি কবিতার আসর নামে এক বিভাগ ছিলো। কবিতার আসরে কারও কবিতা প্রকাশে তেমন কোন নিয়মের বালাই ছিলো না। যে কেউ তার আসল কিংবা ভূয়া ইমেইল এড্রেস দিয়ে লগইন করে কবিতার নামে যা খুশি প্রকাশ করতে পারতো। কবির নাম হিসাবে তার লগইন নামটিই দেখানো হতো। চাইলেও সে আর এই লগইন নাম কিংবা পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে পারতো না। পাঠক কবিতায় মন্তব্য করতে পারতো, তবে প্রতিউত্তরের ব্যবস্থা ছিলো না। কয়েক বছরের মধ্যে দেখা গেলো এই সাদামাটা কবিতার ওয়েবসাইটেই শতাধিক কবি অতি উৎসাহে যোগ দিয়ে নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন, তেমন কোন পরিচালনা ছাড়াই। লেখার পরিবেশও বলতে গেলে অন্য যেকোন বাংলা ব্লগিং ওয়েবসাইটের তুলনায় অনেক ভাল।
আসরের কবিদের উৎসাহেই এবং তাদের নানারকম আবদার ও পরামর্শ মাথায় রেখে গত বছরের মাঝামাঝি আমরা এই ওয়েবসাইটে আমূল পরিবর্তন আনি। পুরো নতুনভাবে তৈরি নতুন ওয়েবসাইট দিয়ে শুরু হয় বাংলা-কবিতার নতুন যাত্রা। তারপর সময়ের সাথে আরও নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলা-কবিতা ওয়েবসাইটটি আজকের এই অবস্থানে এসেছে। শুরু থেকে নিয়ে ৫ বছরের উপর সময় পার হয়েছে। এর মধ্যে আমরা পেয়েছি অসংখ্য নিবেদিত কবিকে। তৈরি হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন দেশে অবস্থানরত কবিদের এক অভূতপূর্ব মেলবন্ধন। আজ আমাদের আসরের মোট কবির সংখ্যা ৩৫০০-এরও বেশি। নিয়মিত ৭০-৮০ জন কবি প্রতিদিন কবিতা প্রকাশ করছেন। সেসব কবিতায় মন্তব্য আসছে শতাধিক। কিন্তু পথ এখানেই শেষ হবার নয়। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে আরও সামনে, আরও বড় কোন লক্ষ্যের দিকে। তবে ভবিষ্যতের তাড়নায় বর্তমান থেকে বিচ্যুত হলে চলবে না।