গত সপ্তাহে আমার সাথে আমাদেরই আসরের এক বিশিষ্ট সদস্য যোগাযোগ করে জানান যে ইতিপূর্বে আসরের বেশ কিছু সদস্য একত্রিত হয়ে বাংলাদেশে বাংলা কবিতার একটি কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং এবিষয়ে আরও অগ্রসর হতে আগ্রহী। যেহেতু ইতিপূর্বে কি আলোচনা হয়েছে তার বিস্তারিত আমি জানি না, এবং আমার পক্ষ থেকেও এ নিয়ে বলার কিছু আছে, তাই বলেছিলাম একদিন সরাসরি এ নিয়ে কথা বলতে চাই। তার সুবাদেই গত ১৮ তারিখে বাংলাদেশ সময় ৬ টার সময় আলোচনার দিন ধার্য হয়। কবি চাঁছাছোলার বদান্যতায় এ উপলক্ষে তাঁর অফিসে আলোচনা ও ইফতারের আয়োজন করা হয়েছিলো, এজন্য তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
বাংলা-কবিতার আসরের সদস্যেরা নিজেদের মতো সংগঠিত হয়ে (নিজস্ব কমিটি তৈরির মাধ্যমে হোক বা কমিটি ছাড়াই) কবিতা তথা সাহিত্য বিষয়ক কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেই পারেন নিজ নিজ এলাকায়। এর সাথে বাংলা-কবিতার কর্তৃপক্ষের সরাসরি সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রয়োজন নেই। তবে যদি অনুষ্ঠানে বাংলা-কবিতার ব্যানার ব্যবহার করা হয়, সেক্ষেত্রে কিছু নীতি মেনে চলতে বলেছি ইতিপূর্বে বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রতিটি অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রেই। এর মূল সারমর্মটি এরূপ ছিলো:
১) অনুষ্ঠানটি পুরোপুরি সাহিত্য-কেন্দ্রিক হতে হবে। এর মধ্যে ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা অন্য কোনো এজেন্ডা যোগ করা যাবে না।
২) অনুষ্ঠানের জন্য কোনো সদস্যের ওপর নির্ধারিত কোনো চাঁদার বোঝা চাপিয়ে দেয়া যাবে না, তা যতো কমই হোক না কেন। যারা চাঁদা দিবেন তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজের মতো করে দিবেন।
৩) অর্থনৈতিক বিষয়ে পুরোপুরি স্বচ্ছতা থাকতে হবে। কে কতো টাকা দিয়েছেন, এবং কোন খাতে কতো খরচ হয়েছে তার স্পষ্ট হিসেব রাখতে হবে এবং অনুষ্ঠান শেষে আলোচনা সভার মাধ্যমে তা সবার সামনে উপস্থাপন করতে হবে।
৪) প্রতিটি ক্ষেত্রে কি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তা আগেই আমাকে অবহিত করতে হবে, যেন কোথাও কোনো অসঙ্গতি দেখলে আমি তা তাদের জানাতে পারি।
৫) অনুষ্ঠানের সুষ্ঠু ও সার্বিক পরিচালনার দায়ভার এর আয়োজকদের, বাংলা-কবিতার কর্তৃপক্ষের নয়।
ইতিপূর্বে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে সদস্যদের উদ্যোগে বাংলা-কবিতার ব্যানারে যেসকল অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে, প্রত্যেকটিতেই ওপরের নির্দেশনা মেনে চলা হয়েছে। অন্তত আমি তাই জানি।
যাক, এবারের আলোচনায় এবিষয়ে আমি যা বলেছি তার মূল মর্মার্থও এখানে উপস্থাপন করছি, যেন সবার কাছেই বাংলা-কবিতা ডটকম-এর পক্ষ থেকে আমার অবস্থান পরিষ্কার হয়:
"বাংলা-কবিতার ব্যানারে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা ও এজন্য একটি কমিটি তৈরির ক্ষেত্রে দু'টি বিষয় সামনে চলে আসছে। অর্থসংস্থান, ও পদবী। অর্থ ও পদবী, দু'টোই বড় সংবেদনশীল বিষয় যা নিয়ে নানা বিতর্ক ও বিভেদের সৃষ্টি হতে পারে। (কেউ কেউ এই দু'টি বিষয়কে নিজের স্বার্থেও কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে পারেন।) তাই সবাই মিলে যদি এই দু'টি বিষয়ে সব রকমের বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে পারার নিশ্চয়তা দিতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমিও চাই এ নিয়ে আপনারা এগিয়ে যান। অর্থনৈতিক বিষয়ে কোনো সদস্যের ওপর নির্ধারিত চাঁদা চাপিয়ে দেয়া যাবে না। তবে কোনো অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে উপস্থিত সদস্যদের জন্য ন্যূনতম একটি চাঁদা ধার্য করা যেতে পারে। (যা আমার ইতিপূর্বের অবস্থানের তুলনায় নমনীয় অবস্থান।) তবে প্রতি ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক লেনদেনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকতে হবে। এছাড়া কমিটির কি কি পদবী থাকবে, এসব পদবীতে কি কি দিক বিচার করে কাউকে দায়িত্ব দেয়া হবে, এগুলো নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে একটি খসড়া নীতি তৈরি করে আমাকে দিন। তখন সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। আলোচনা করে সবাই কি কি সিদ্ধান্ত নিলেন তা আসরের আলোচনা সভায় প্রকাশের আগে অবশ্যই আমাকে জানাবেন, (যেন এ নিয়ে আমার কিছু বলার থাকলে তা সর্বসমক্ষে প্রকাশের আগে নিজেদের মধ্যেই পরিষ্কার করে নিতে পারি)।"
আমার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে যে বিতর্ক তৈরি হয় এমন কোনো কাজই করা হবে না। আমার পরামর্শ মেনে ও আমাকে জানিয়েই সব সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
পরদিন কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তদের তালিকার হাতে লেখা একটি খসড়া আমাকে পাঠানো হয়, যার ফ্রেস কপি আমাকে পরে পাঠানোর কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত পাইনি। তালিকা দেখেই আমার প্রশ্ন ছিলো কি কি দিক বিচার করে কাউকে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে তার কোনো নীতিমালা তৈরি হয়েছে কিনা। এ নিয়ে আপনারা কি আলোচনা করেছেন আমাকে জানান। আদৌ কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা দায়িত্ব বণ্টনের নীতিমালা নিয়ে তার উত্তর এখন পর্যন্ত পাইনি। বরং উত্তর পেয়েছি যে আমি যেভাবে বলছি তা সনাতনী ভাবনা। এভাবে ভাবলে কিছুই করা যাবে না। এছাড়া আমাকে এও জানানো হয়েছে যে মাস-প্রতি সদস্যদের জন্য ২০০/- টাকা করে চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে। সব কিছুতেই আকর্ষণ থাকা লাগে। সাবস্ক্রিপশন ছাড়া নাকি তা চলবে না। তবে কোন কোন সদস্য এই চাঁদার আওতায় পড়বেন তার স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা পাইনি।
যাক, সেদিন আমার বক্তব্যে অপর যে বিষয়ে আলোকপাত করেছিলাম, তাও এখানে সকলের জন্য তুলে ধরছি:
"যেহেতু অনেকেই আজ এখানে উপস্থিত আছেন, তাই অপর একটি বিষয়েও আমি কিছু বলতে চাই। আপনারা জানেন ইতিপূর্বে বাংলা-কবিতার পক্ষ থেকে, এবং সদস্যদের নিজস্ব উদ্যোগেই বিভিন্ন সময় কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। এসবের অনেকগুলোরই সফল সম্পাদনা করেছেন আমাদের আসরের অনিরুদ্ধ বুলবুল। যেহেতু বই প্রকাশে অর্থনৈতিক একটি বিষয় থেকে যায়, তাই গত কয়েক বছর যাবতই পরিকল্পনা করছিলাম নিজস্ব একটি প্রকাশনী তৈরির, যার মাধ্যমে আরও কম খরচে বই প্রকাশ সম্ভব হবে। গত বছর এজন্য বাংলাদেশে গিয়ে 'অর্ক প্রকাশনী' নামে একটি প্রকাশনীর রেজিস্ট্রেশন করে এলেও বিদেশে বসে তা পরিচালনা সম্ভব হচ্ছিলো না। অবশেষে অনিরুদ্ধ বুলবুল দা-র সক্রিয় উদ্যোগে এ প্রকাশনী থেকে বই ও ম্যাগাজিন প্রকাশ শুরু হয়েছে গত বছর থেকে। আমাদের লক্ষ্য প্রচলিত বাজার মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে বই প্রকাশ, ও পরবর্তীতে আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই সদস্যেরা যেন তাদের বই বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের পাঠকের কাছে পৌছাতে সক্ষম হন সে ব্যবস্থা করা। তবে এই প্রকাশনী থেকে বই প্রকাশ কোনো সদস্যের জন্যই বাধ্যতামূলক না। ইদানীং দেখা যাচ্ছে আসরের নানা মন্তব্যে এই প্রকাশনী নিয়ে পরোক্ষ অভিযোগ ও বিরূপ মন্তব্য পাচ্ছি। আমি বা বুলবুল দা, প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্ন পেশায় ব্যস্ত, এবং এই প্রকাশনী আমাদের কারো জন্যেই আয়ের এমন কোনো উৎস না যার ওপর আমরা নির্ভরশীল। তাই নানারকম অভিযোগ মাথায় নিয়ে এমন একটি প্রকাশনী চালানো সঠিক হবে বলে মনে করেন কিনা তা আপনারা আমাকে জানাবেন।"