আরও এক বার জন্ম নেবো।
রেল কলোনির দুই কামরার ঘরে। ছোট্ট একটা উঠোন আর -
চেরা বাঁশের বেড়ায় ঘেরা বাগান, কাপড় মেলার তার।
উঠোন জুড়ে আলো ছায়ার খেলা,
গাছের ডালে কাক শালিখের মেলা।
সকাল বিকেল নিয়ম ক'রে আধ ঘন্টার সরু কলের জল।
শ্যাওলা ধরা চৌবাচ্চায় হালকা লাগার খেলা, চান করার ছল।
আর থাকবে তুমি। রান্নাঘরে তোমার চুড়ির রিনিঝিনি
ঘুম ভাঙাবে সকাল বেলায় ..........
তোমার কিন্তু ঘুমিয়ে পড়া বারণ !
ঘুম পেলেও, তোমার কিন্তু ঘুমিয়ে পড়া বারণ !
বালতি কেটে মাটির উনুন। কাঠের আগুন, ঘুঁটের আগুন।
সাত সকালে কয়লা ভাঙা ...... বোশেখ, শ্রাবণ, ফাগুন।
সারা ঘরে সাদা ধোঁয়া যত,
ধোঁয়ার গন্ধে নেশার মতো -
আঁচের জন্য অন্য লড়াই। তাল পাতার হাতল ভাঙা পাখা।
ভারী একটা শিলের পাথর, মিহি ক'রে আদা, হলুদ মাখা।
আর থাকবে তুমি। সকাল থেকে কুটনো কোটা, বাটনা বাটা,
হাজার কাজের মেলায় .........
তোমার কিন্তু ছুটি নেওয়া বারণ !
অবসাদেও, তোমার কিন্তু ছুটি নেওয়া বারণ !
পড়াশুনোয় থাকবেনা মন। বিকেল হলেই খেলার জন্য ছটফটানি রোগ।
ঘড়ির কাঁটায় চোখ। চারটে বাজার সঙ্গে থাকবে স্বাধীনতার যোগ।
ভূগোল যেন গিলতে আসে,
ইতিহাসের অত্যাচারে পিষে -
পাটিগণিত বড্ডো জ্বালায়। বন্ধ থাকবে চৌবাচ্চার সব ফুটো।
ইস্কুলেতে রোজ বকুনি। কানাকানি, টানাটানি সইবে কান দুটো।
আর থাকবে তুমি। কড়া শাসন, নিয়ম ক'রে পড়তে বসার তাড়া,
সকাল সন্ধ্যে বেলায় .........
তোমার কিন্তু ভুলে যাওয়া বারণ !
ভুল করেও, তোমার কিন্তু ভুলে যাওয়া বারণ !
ঠান্ডা লেগে সর্দি জ্বরে কাবু। সবার মনোযোগে তখন আমি বড্ডো দামী।
পড়া, খেলা বন্ধ থাকবে তখন। বকবে না কেউ, যদি, শুধু গল্প শুনি আমি।
অন্ধকারে বাইরে যাওয়া মানা।
কোথায় যেন উঁকি মারে সত্যি ভূতের ছানা।
জড়িয়ে কাঁথা, একলা শুয়ে, ভাবনা আজব, ছুটবে জোরে।
ওষুধপত্র ভীষণ তেতো। ফেলে দেবো একটু আড়াল ক'রে।
আর থাকবে তুমি। কপাল ছুঁয়ে দেখবে তুমি জ্বরের ওঠা নামা।
হাত বোলাবে মাথায়, বুকে, গলায়. .........
তোমার কিন্তু জ্বরে পড়া বারণ !
জ্বর হলেও, তোমার কিন্তু জ্বরে পড়া বারণ !
এতো বারণ ছিলো তোমার। তবু হঠাৎ কোথায় গেলে চলে ?
ফিরে এসো..........
আর জন্মে তোমার কিন্তু চলে যাওয়া বারণ।
মা গো, আর জন্মে তোমার কিন্তু চলে যাওয়া বারণ !!