কবজিতে ভিষণ টান পড়েছে হে
আঙুলে রক্ত জমছে, চামড়া ছিঁড়ে যাচ্ছে
গলার শিকলটা বেশ আঁটসাঁটে বাঁধা, রক্তের দাগ বসেছে
তীব্র যন্ত্রণায় হৃদপিণ্ড থমকে যাচ্ছে বার বার
তোরা কে কোথায় আছিস? আমার শিকল খুলে দে।

পঁচা গন্ধে ছাড়পোকাও আসে না আর আমার দেহে
তীব্র রক্তের নেশাতেও মশারা আমাকে ছুঁয়ে না আর
আমার বিষাক্ত শরীরে এখন তেলাপোকাও আসে না
জঙ্গলে পরে থাকা মৃত পশুর চেয়েও বীভৎস হয়ে গেছি
এমন বীভৎস হওয়ারই কথা
দীর্ঘ বাইস বছর হলো, এই বন্দী দশার
বহুদিন হলো সূর্যের আলো দেখা হয়নি
বহুদিন হলো স্বাধীন বাতাস ছোঁয়া হয়নি
অস্ফুট তীক্ষ্ণ আলোও এখন তীর্যক লাগে
আঁধারকেই বেশ আপন করে নিয়েছি এখন
এই আঁধারেই আমি বহু স্বপ্ন বুনেছি নতুনত্বের।

মাঝে-মধ্যে কিছু ইঁদুর আসে আমার কাছে
তাদের সাথে বেশ ভাব হয়েছে আমার
কাব্যালাপে দারুণ জমে আমাদের আড্ডা
অবলীলায় তাদের বলি আমার দুঃখ-ভোগ
তাঁদের শুনিয়েছি আমি, বহু ধ্বংসের ইতিকথা
নতুনত্বের জন্য যে ধ্বংস অনিবার্য
শান্তি বা শৃঙ্খলার অন্তরালে যে রক্তপাত আবশ্যক
রক্তপাত ছাড়া যে পৃথিবীর ভূমি উর্বর হয় না
লাশের গন্ধ ছাড়া যে পৃথিবীতে নাব্যতা আসে না
টাটকা রক্ত না শুষে পৃথিবী যে কখনো অপরূপ হয়না
এমন বহু নস্টালজিক কথা শুনিয়েছি তাঁদের
তাঁরা কখনো প্রতিত্তর করে না আমার কথাতে
হঠাৎ সেদির কি হলো, একটু ইঁদুর আকস্মাৎ বলে উঠলো—নতুনত্ব সবখানে ইতিবাচক নয় হে মহাশয়
আরেরকটি ইঁদুর বললো, আপনি যে সবসময়ই সত্যদ্রষ্টা হবেন; তা কিন্তু নয়।
বুঝে গেলাম, তারা আমার কথাতে একমত নয়।
রক্তপাত বা লাসের গন্ধ তাদের পছন্দ নয়।
যাইহোক, তাদের কথাতে একমত পোষণ করলাম।
ওরা তো ঠিকই বলেছে, আমি তো আর সর্বজ্ঞানী মহাজন নয়।
আমি চার দেওয়ালে বন্দী এক তুচ্ছ মানুষ
দেয়ালের কাছে যা শিখেছি; তাই আমার প্রাপ্তি।
তবে হে, আমি স্পষ্টভাষী; যা বলি, তা উচ্চ-স্বরে।
মেনে নিলাম তাদের কথা। এ আমার উপায়হীনতা।
মেনে নেওয়ার বিনয়টুকু ছাড়া কোন উপায় নেই আমার।

পরিশেষে, বুকভরা আশা রাখি
একদিন আমার মুক্তি হবেই
তোমরা গণজাগরণে আমার লৌহ-কপাত ভেঙে দিবে
আমার শিকল খুলে দিবে
আমি আবার স্বাধীনতা ফিরে পারো
আমি আবার স্বাধীন কন্ঠে গর্জে উঠবো
অহংকার আর ভৎসনা মাখা হুংকার সেদিন আমায় রুখতে ব্যর্থ হবে
ঔহার্যের গর্ব আর প্রতিহিংসা সেদিন মাটিতে লুটাবে
সত্যের কাছে সকলে সেদিন নতজানুতে পরাজয় মানবে
সত্যান্নেষীরা আবার জ্বালাবে সেদিন সত্যের মশাল।

২৩/০৬/২০২০ইং