কবিতা জীবনবোধের এক সূক্ষ্ণ তন্তু
সবার কাছে ধরা পড়ে না।
কবিতা কাউকে ভাত দেয় না কাপড় দেয় না
অসুখে ঔষধ দেয় না, এমন কি কবির
বাস ভাড়াটা পর্যন্ত দেয় না-
তবু কেন যে কবি এত ভালোবাসে কবিতাকে
মমতাময়ী মায়ের মতো!
যারা ষোল আনা বা তারও বেশী জাগতিক
তারা কবিতাকে প্রশ্রয় দেয় না মনে...
তারা শেয়ার বাজার আর নগদ প্রাপ্তিকেই বেশী ভালোবাসে!
জাগতিকতার মাত্রা যার যত কম
তার ভিতর কবিতা তত বেশী বাজে...
গড়পড়তা কবিরা আট আনা জাগতিক!
এর চেয়ে কম মাত্রার জাগতিক যে সব কবি
তারা বেশিদিন বাঁচতে পারে না-
যেমন জীবনানন্দ, আবুল হাসান, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ!
কবিতা কবির কল্পনার রমণী...
রক্তমাংসের বাস্তব রমণীতে ডুবেও কবি খোঁজেন কবিতাকে
যদিও কবি তা বুঝতে দেন না-
তবে তিনি তার জাগতিকতাকে হারিয়ে ফেলেন
পরাবাস্তবতার কাছে!
কবি কখনো সুখী হতে পারেন না!
কাব্য-স্কেলে তিনি জীবনটাকে মাপতে চাইলেও
তাঁর পরিবার-পরিজন নিজেদের মাপতে থাকে
সামাজিক স্ট্যাটাসের স্কেলে-
ফলে সংঘাত হয়ে যায় অনিবার্য!
কবিকে মাঝে মাঝে অপ্রকৃতস্থ মানুষ বলেই মনে হয়
মনে হয় কেমন ক্ষ্যাপাটে- কী শয়তানি আছে মনে!
কী সব বিড়বিড় করে বকে, কী যেন ভাবে
কান পেতে থাকে কিসের আশায়
একটু কেমন যেন ভাব দেখায়...
কবির মৃত্যু হলে সমাজ আর রাষ্ট্রের ক্ষতি নাও হতে পারে;
তবে ক্ষতি হয় ফুল পাখি ঘাস নদী জ্যোস্না গোধূলি আকাশ
মেঘ বৃষ্টি পাহাড় আর নারী ও শিশুদের!
কারণ প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধ-সুর কবি ছাড়া কে আর ভাল জানে?
অগোছালো এলোমেলো উদাসী লাজুক প্রিয়া আর কোমল শিশুদের
কবি ছাড়া এত ভালো কে আর বাসে এই স্বার্থের সংসারে?
(কাব্যগ্রন্থ- ‘কবিতার বান্ধবীরা’/শব্দশিল্প প্রকাশনী/স্টল নং: ২১০-২১১/একুশে বইমেলা-২০১৭)