বিভাজিত বাংলার পশ্চিম অংশের রাজধানী কলকাতা শহরে বিংশ শতকের ষাটের দশকে কাব্যজগতে শুরু হয় প্রবল আন্দোলন, যা Hungry Generation Movement নামে পরিচিত হয়েছিল। আমাদের আসরে প্রাজ্ঞকবি ড: প্রবীর চ্যাটার্জি এই বিষয়ে গত কয়েকদিন যাবত নানা অজানা তথ্য ভাগ করে নিচ্ছেন আমাদের সাথে।
এই ধরণের কবিতাতে যৌনতা এবং প্রচলিত সামাজিকতার বিরোধিতা হওয়ায় হাংরি আন্দোলনকে অশ্লীলতার দায়ে দোষী করা হয়। এই ব্যাপারে কিঞ্চিৎ প্রসংগান্তর হলেও বলি, হাংরি আন্দোলনের অনেক ধারণাই বাংলায় খুব নতুন বা প্রথম ছিল না।
লালন ফকিরের গানে ভেসে আসে,
"গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায়, তাতে ধর্মের কি ক্ষতি হয়?"
তথাকথিত সামাজিকতাকে যেসকল কবি তীব্র আক্রমণ করেছিলেন লোকলজ্জার তোয়াক্কা না করে সব থেকে আগে উঠে আসবে কাজী নজরুল ইসলামের নাম।
কোন উগ্রতা না রেখেও জানিয়ে দিয়েছিলেন,
"ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ"
এছাড়াও তিনি বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ 'সাম্যবাদী'তে 'বারাঙ্গনা' শীর্ষক কবিতায় সমাজমানসের সযত্নলালিত মুখোশ টেনে ছিঁড়ে দেন। প্রশ্ন তোলেন সন্তান কামনার উদ্দেশ্য নিয়ে। এমনকি 'কামজ' আর 'জারজ' সন্তানের পার্থক্য কোথায়, তাও জানতে চান তিনি।
এছাড়াও তিনি 'চোর ডাকাত' শীর্ষক আরো একটি কবিতা লেখেন।
ফলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়, সজনীকান্ত-মোহিতলালের মত চিরায়ত শত্রুরা তো বটেই কবিসমাজের অন্যান্যরাও বিরূপ হলেন। কিন্তু নজরুল কালজয়ী, আজ বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে হয়তো নজরুল গুরুত্ব পেতেন না, হাংরি আন্দোলনের কবিরাও নজরুলের উত্তরাধিকার স্বীকার করেছেন কিনা জানিনা, তবে কারো স্বীকার করা বা না করাতে কিছু এসে যায় না।