১৯৭৮ সালে শক্তিপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য তাঁর ২৫ বছর বয়সে এই কবিতাটি লিখেছিলেন। কবিতাটির কবি খুব বেশি পরিচিত নন, এবং কবিতাটিও বিশেষ প্রচারিত না হওয়ায় আলোচনার আগে কবির অনুমতিক্রমে পুরো কবিতাটি দেওয়া হল।
ছিনতাই করে নেবে স্বাধীনতা
অজস্র মানুষের পদধ্বনি
আর ধর্ষিতা কন্যাকে
বুকে নিয়ে পিতা,
আজ তিরিশ বছর ধরে সে
অপেক্ষা করে,
কবে তার কন্যার সনতান
ফিরে যাবে সেই দেশে
আর ছিনতাই করে নেবে স্বাধীনতা
অজস্র মানুষ আর পরাজিত বৃদ্ধেরা
উবু হয়ে বসে ভাবে, আর
কেঁদে কেঁদে খোকন বালিতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিল,
কবে তার কন্যার সন্তান ফিরে যাবে
সেই দেশে
আর ছিনতাই করে নেবে স্বাধীনতা
প্যালেস্তাইন তার মাতৃভূমি
ফোটাফোটা রক্ত দিয়ে গড়া
ঘর হারানো মানুষগুলোর স্বদেশ
কবে তার সন্তান ফিরে যাবে সেই দেশে
আর ছিনতাই করে নেবে সেই দেশ
আর ছিনতাই করে নেবে সেই দেশ, আর ছিনতাই করে নেবে সেই দেশ।
কবি পুরনো লেখার মাঝে খুঁজে পেয়ে ৪ই এপ্রিল এই কবিতাটি আমাকে পাঠিয়েছিলেন।এতে তাঁর সংযোজন,
" সেদিন ১৯৭৮এ হামাস ছিলনা তবে এই খোকন বড় হয়ে আজ হামাস হয়েছে।"
আমি শক্তিপ্রসাদ ভট্টাচার্য্যের প্যালেস্টাইন বিষয়ে কিছু পুরনো লেখা বঙ্গানুবাদ করছি। সেই জন্য বেশ কিছু পুরনো লেখাজোখা-কাগজপত্র ঘাঁটতে গিয়ে এই লেখাটি বেরিয়ে আসে। এই কবিতাটিতে সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে এক পরাজিত এবং নির্বাসিত জাতির মনোবেদনা। ততকালীন পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনী জাতির হতাশাক্লিশট মনোবৃত্তি এই কবিতার মূল উপজীব্য। তখনও ইন্তিফাদা হয়নি। ইজরায়েলের কাছে একের পর এক(১৯৪৮/১৯৫৬/১৯৬৭/১৯৭৩) যুদ্ধে পরাজয়ে প্রায় বিবর্ণ হয়ে পড়ে আরবপক্ষ। অন্যদিকে নির্বাসিত বিতাড়িত ফিলিস্তিনীদের কথা কোথাও গুরুত্ব পাচ্ছিলনা। ফিলিস্তীনিয়রা ছিল নিজদেশে ইজরায়েলের হাতে পরবাসী বন্দী আর অন্যান্য আরবদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অবাঞ্ছিত উদবাস্তু। সেসময় ফিলিস্তিনী জাতির প্রাপ্তি ছিল কেবল যুগযন্ত্রণা, যেখানে ফিলিস্তিনী বৃদ্ধদের মনে ছিল দেশত্যাগের যন্ত্রণা, যুবতীদের মনে সতীত্বহানির লজ্জা, আর শিশুদের মনে ছিল শৈশব হারানোর আতঙ্ক। সেই পরিস্থিতিতে মর্মস্পর্শী ভাষায় কবি এই কবিতাটি লেখেন।
পরে এই কবিতাটি নয়া দিল্লীর PLO দূতাবাসে পাঠ করেন। এই কবিতাটি সমস্ত আসরের বন্ধুদের সাথে ভাগ করে নিলাম।