সত্যি; ধর্ষণ হয়েছে,
মানুষ নির্যাতিতার আর্তনাদে ছুটে এসেছে।
ধর্ষক পাপিষ্ঠকে বেঁধে রাখা হলো,
নেতা আর চামচারা আসলো।
টাকা নিয়ে আপোসের দেন দরবার,
মানবে না নির্যাতিতার পরিবার।
পুলিশ আসলো, ধর্ষককে ধরলো,
থানায় মেয়ের পিতা মামলা করলো।
নির্যাতিতা হাসপাতালে ভর্তি,
পুলিশ আসলো; শুনবে কুকীর্তি।
মামলা রজ্জু হবে,
জবানবন্দি এজাহারে থাকতে হবে।
আজব! সব প্রশ্ন হবে এখন,
সভ্য নারী শুনবে তা কতক্ষণ?
কখন, কিভাবে, কোথায় ধর্ষণ হয়েছে?
কে করেছে? কে কে পাহাড়া দিয়েছে?
আগে ধর্ষককে চিনতো কি?
প্রেমের সম্পর্ক ছিল কি?
শুধু ধর্ষণচেষ্টা হয়েছে?
নাকি ধর্ষণ হয়েছে?
নাকি শুধু কাপড় খুলেছে?
ধর্ষিতার মৌনসম্মতি ছিল কি?
টাকার লেনদেন ছিল কি?
পুলিশ একই প্রশ্ন বারবার করছে বিদ্ধ,
অসম্পূর্ণ উত্তর হবে না লিপিবদ্ধ।
মামলার কাগজ প্রস্তুত,
লাগবে শুধু দস্তখত।
আসামী কোর্টে হাজির,
একি! আসামী নির্দোষ দাবিদার।
দাবি; এ মহাকান্ড করেনি আসামী,
আসামিকে করা হচ্ছে অসম্মানী।
বিজ্ঞ বিচারক শুনলো এজাহার,
গতানুগতিক আদেশ হলো এবার।
ধর্ষিতার ডাক্তারি পরিক্ষা করাও,
আসামীকে রিমান্ডে পাঠাও।
ডাক্তার আসলো; জমা দাও, প্রস্রাব,
দেখা হবে আছে কিনা বীর্যের প্রভাব?
জমা দাও কাপড়চোপড়,
হয়তো লেগে আছে ফোটা বীর্যের।
জমা দাও মুখের থুথু,
থুথুর সাথে মিলাতে হবে ধর্ষকের থু।
সব মিলিয়ে দেখা হবে,
ডিএনএ টেস্ট করা হবে।
লজ্জাস্থানে টু ফিঙ্গার টেস্ট হলো,
ভিতরের নমুনা নেয়া হলো।
যত্নে রাখা হবে সব প্রমাণাদি,
সুবিচার হয়তো পাবে বাদী।
লাইট, ক্যামেরা নিয়ে হাজির সাংবাদিক,
সেজেছে আজ সাংঘাতিক।
কোথায় কিভাবে ধর্ষণ হলো?
কে ধর্ষণ করলো?
ধর্ষিতার স্বাক্ষাতকার নিবে,
ইউটিউবে পোস্ট দিবে।
ভিউ হবে! অ্যাড হবে,
মাস গেলে টাকা পাবে!
আসামী রিম্যান্ডের কাষ্ঠে বন্দী,
দেখা করলো ধর্ষকের আইনজীবী।
রিমান্ডে দোষ স্বীকার করলে সমস্যা নাই,
কোনো ভয় নাই।
বিচারকের সামনে বলবা; কিছু করি নাই,
আমি ধর্ষণ করি নাই।
এভাবে যত দেরী হবে,
জামিন তত সহজ হবে।
তিনদিন রিম্যান্ড শেষে আসামী দুর্বল,
আমার মক্কেল অসুস্থ, নাই বল।
মক্কেলকে চিকিৎসা করা হোক,
মক্কেলকে জামিন দেয়া হোক।
পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হলো,
ডাক্তারকে ধর্ষকের ডিএনএ টেস্ট করতে বলা হলো।
নতুন রিম্যান্ড বাতিল হলো,
আসামীকে কারাগারে পাঠানো হলো।
বাদীপক্ষের উকিলের বক্তব্য,
যাই বলুক; ধর্তব্য।
ডিএনএ টেস্টে কয়েক মাস লাগতে পারে,
আসামীপক্ষ রিভিউ ডিএনএ টেস্ট চাইতে পারে।
ডিএনএ টেস্টের পর স্বাক্ষীরা সাক্ষ্য দিবে,
উভয়পক্ষের স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য নিবে।
আসামীপক্ষ স্বাক্ষীদের অসুস্থ দেখিয়ে,
ছলে বলে মিথ্যা কয়ে,
সময় আবেদন করবে,
স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য একদিন শেষ হবে।
পুলিশ সবকিছু মিলিয়ে তদন্ত করবে,
তদন্ত শেষে রিপোর্ট জমা হবে।
স্বাক্ষীর জবানবন্দি,
বাদী বিবাদীর জবানবন্দি,
পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন,
ডিএনএ টেস্টের বিবরণ।
সব মিলিয়ে রায় লেখা হবে,
রায়ের বিপক্ষে আসামীপক্ষ নারাজি দিবে।
আপিল হবে,
জজ কোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, আপিল বিভাগ ঘুরবে,
তারপর আসামীর সম্ভবত কারাদন্ড হবে,
ফাঁসি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম,
আইনের ফাঁকে নিবে দম।
তারা বলবে, রেপ করে নাই,
দেশে বিচার নাই।
ফেঁসে গেলে বলবে মিথ্যা সাজিয়েছে,
উভয়ের সম্মতিতে হইছে,
প্রেমের সম্পর্ক ছিল অনেকদিন,
ঝামেলা হয়েছে শুধু ঐদিন।
মিথ্যার খেলা চলবে,
খারাপ খারাপ কথা বলবে।
তিন বছরের আগে নিম্ন আদালতের রায় হবে না,
বিচারকার্য তাড়াতাড়ি শেষ হবে না।
হাইকোর্ট ঘুরে আসতে দশ বারো বছর লাগবে,
তারপর একটা কিছু হবে।
বাদী উকিলের কথা শুনে হতাশ,
করছে হা হুতাশ!
মেয়ের হারিয়েছে প্রথমে সম্মান,
তারপর জবানবন্দিতে হলো অপমান।
ডাক্তার কি টেস্ট করলো?
অপমান করে ছাড়লো।
সাংবাদিক সাংঘাতিক ভিডিও করেছে,
সারাদেশে ছড়ায়ে দিছে।
বিচারক, উকিল, পুলিশ আসে সাধুর বেশে,
হাজির আমি ধর্ষিতার পিতা; অপরাধী সেজে।
দশ বারো বছর মামলা চালাতে হবে,
না জানি কতো খরচ হবে?
এত খরচ কে দিবে?
মেয়ের তো বিয়ে দিতে হবে!
দুচোখ কাঁদিয়ে ভাসায়! ফেলে জল,
অথই সাগরতল!
বিচারের নামে অবিচার,
বিচারের নামে অত্যাচার।
নির্যাতিতার পিতা রাত্রি নিশিতে,
স্বপ্ন দেখে বিছানাতে,
জজ সাহেব, আমার টাকা নাই,
উকিলের খরচ দেয়ার সামর্থ্য নাই।
কোর্টে আসা যাওয়ার ভাড়া নাই,
থানায় যাওয়ার ভাড়া নাই।
আমার জন্য ন্যায়বিচার নাই,
মামলা প্রত্যাহার করে দেন, চলে যাই।
যেদিকে মনে চায় চললাম,
হাশরের মাঠের বিচারের অপেক্ষায় থাকলাম।
রক্তশিখা কাব্যগ্রন্থ,
উচ্ছ্বাস