ইংরেজদের সাথে ঘাতকদের আপোসে কস্ট পেলেন
শাহ আবদুল আযীয দেহলভী জেগে উঠলেন,
শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভীর উত্তরাধিকার
যদিও সন্তান, হিসাব নাই জমিজমার,
ফতওয়া দিলেন ভারতবর্ষ দারুল হরব
শত্রু কবলিত এলাকা, দ্রোহের কলরব,
শত্রুদের সাথে কোন আপোস নাই
হয়তো অস্ত্র কম বা নাই,
হয়তো আমরা জিহাদের ময়দান থেকে দূরে
যাই হোক, একদিন যাব মরে,
আকাশে বাতাসে ফতওয়া ধ্বনিয়া উঠিল
বিভিন্ন এলাকায় পৌছে গেল,
মরি বা বেঁচে থাকি, আসল শত্রু ইংরেজরা
তাদের দোসর জমিদার, তাবেদাররা,
দারুল হরবের ধ্বনিতে লড়াই অবিরাম
বহু বার হয়েছে আজাদীর সংগ্রাম।

সুন্দর ছিল বালাকোটের দিনকাল
নেতা আলেম সাইয়্যিদ আহমাদ, মোলভী ইসমাইল,
ঈমানের আলোকে হল সমাজ সংস্কার
বিচার ব্যবস্থা হল ইসলামের,
তাদের বিরুদ্ধে ছুটে এল ইংরেজরা
সাথে ছিল পা চাটা গোলামেরা,
কাফেরদের বাহিনী দেখে পা কাঁপেনি মুজাহিদের
বালাকোট থেকে সুগন্ধ আসে শাহাদাতের।

মহিশুরে টিপু সুলতানের সহযোগী
বদলে যায় যুদ্ধের ধরন, গতি
শাহাদাতের বাঁশের কেল্লায় তিতুমীরের সাথে
নীলকর, জমিদারের অন্যায়ের প্রতিবাদে
আলেম ওলামা ছিল এক সাথে।

হাজী শরিয়তুল্লাহ গড়ে তোলেন ফরায়েজী আন্দোলন
কুফর, শিরক আর বেদআতের বিদায় আন্দোলন
ঐশী আলোয় ইসলাহী সংস্কারের আবরণ
বঙ্গদেশে পেল ব্যাপক নব জাগরণ,
যেখানেই থাকি ঈমান তো থাকতে হবে শ্বাঁসে
তারপর তার পুত্র দুদু মিয়া আসিল বাংলার আকাশে,
সংস্কার আন্দোলন থেমে থাকে নি এই বাংলায়
চলেছে এক সিনা থেকে আরেক সিনায়।

সিপাহী বিদ্রোহের সময় জিহাদের বিশাল ময়দান
অমুসলিমরাও ছিল সাথে, মর্দে মুজাহিদের শান,
আলেম সমাজ জিহাদী চেতনার বুদবুদ
সিপাহি বিদ্রোহে কাঁপিল ইংরেজ মসনদ,
নই গোলামির জাতি, শুরু হল যুদ্ধ
আলেম, সিপাহী, জনতা একতাবদ্ধ,
সবচেয়ে বড় ইংরেজ বিরোধী গণজাগরণ
ঘাতকদের কারণে হল না আজাদীর ক্ষণ,
কাপরুষ ইংরেজরা শুরু করল হত্যা
শাহাদাত পেল লক্ষাধিক ওলামা,
বিচারের নামে প্রহসন, ফাঁসির রায় শুনে
জাফর থানেশ্বরী, ইয়াহিয়া আলী হাসে,
ফজলে হক খায়রাবাদী বলে আসবে শাহাদাত
এই শাহাদাতের জন্য কাটিয়েছি দিনরাত।

এক সাথে লক্ষ আলেমের শাহাদাত
এক সাথে জিহাদ ও দাওয়াত,
দাওয়াতের ময়দানে সাময়িক শূন্যতা নিয়ে আসে
সিপাহী বিদ্রোহে পরাজয়ও আসে,
মুসলমানের শানে নাই কোন পরাজয়
মরা বাঁচা উভয়ই বিজয়,
শুরু হল দাওয়াতের মারকাজের পাবন্দ
জেগে উঠল মাদ্রাসা দারুল উলুম দেওবন্দ,
উস্তাদ কাসেম নানুতুবী
সিলেবাস দরসে নিজামী,
বিভিন্ন জায়খায় শাখা আছে দেওবন্দের
আজ তা ছড়ায়েছে বিশ্বময়।

ইলমি জ্ঞান ছারা বিদ্রোহ, আন্দোলন
শয়তানী ও কুফরির আন্দোলন,
অনেক আলেম ময়দানে ছিল, এখনো আছে
জানা নেই, তাতে কি, আমলনামায় লেখা আছে,
আবেগের কথা নয়, এটা বিবেকের কথা
না বুঝলে ক্ষতি? তোমার জন্য সতর্কতা,
মুসলমানের জয় হল শুধুই বিজয়
মৃত্যু সরাসরি জান্নাত, এটাও বিজয়,

আদর্শ মিল্লাতে নববী, জীবন্ত কুরআন
সমাজ সংস্কারের আন্দোলন করে বেগবান,
ইলম বিতরণ, তারবিয়্যত, সুন্নাতের পাবন্দী
জান্নাতর পথে চলার জিন্দেগী,
ওযু ভঙ্গের কারণ শিখানো
ঈমান ভঙ্গের কারণ জানানো,
কুসংস্কার, বিজাতীয় সংস্কৃতি নিপাত যাক
ইলমে হাকীকত মুক্তি পাক,

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সারা দুনিয়া টালমাটাল
কে হারে? কে জিতে? বেশামাল,
শায়খুল হিন্দ মাহমূদ হাসান রাহবার
বিদ্রোহ করার এখনই সময়, দূর হবে অবিচার,
শুরু হল মুনাফেকি, গ্রেফতার
শুরু হল প্রহসনের বিচার,
সফল হল না গণবিদ্রোহ
থেকে গেল ভারত জাতির দ্রোহ,
রক্ত দানের চেতনা কখনো মরে না
বিপ্লবীরা কখনো হারে না।

শায়খুল হিন্দ কাটালেন মাল্টার জেলে
ফিরে এসে বসে থাকেন নি, বিছানায় হেলে,
খিলাফত আন্দোলনে শামিল সেই বন্দী
শত্রুরা করে ধান্দা আর ফন্দি,
এত দূরের খিলাফত, বলে লোকে
খলিফা তো সবার, ইসলামের আলোকে,
খলীফা বিপদে জাতি তখন থাকবে বসে
দূর হও আহাম্মাক, তুমি কে? আছ পিছে,
আজাদীর আন্দোলন থেমে থাকে নি
চলেছে এক আলেম থেকে আরেক আলেম, রুহানী।

প্রখ্যাত আনোয়ার শাহ কাশ্মিরি
ত্রিশ বছর মনে থাকে যার স্মৃতি,
হুসাইন আহমাদ মাদানী, উবাইদুল্লাহ সিন্ধী,
মাওলানা মুহাম্মদ আলী, শওকত আলী,
এদের ভূলবেনা মানব জাতি।
প্রতিবাদ আলেমদের চিম্তার প্রতিফলন
আজাদী আন্দোলন, ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন
আরো আছে অসহযোগ আন্দোলন,
জামানার আলেমরা গর্জিছে বারে বারে
কংগ্রেস তো সেদিন হল, মুসলিম লীগ আরো পরে,
আজাদীর বীজ থেকে যখন ফল আসে
গান্ধী, জিন্নাহ শেষের দিকে আসে
যাই হোক আজাদীর আন্দোলন শেষে
ভারত স্বাধীন হল মুল্লুকে।

সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, তার অনুগ্রহে আমরা ধন্য,
মাফ চাই বারবার, দাও মোদের পূণ্য।

ঈমান নস্টের ফেতনা, একটার পর একটা আসে
মির্জা গোলাম কাদিয়ানী নিজেকে নবী দাবি করে বসে,
আহম্মক নিজেকে বলে ঈমাম মাহদী
তাকে ঠেকালো এল সানাউল্লাহ অমৃতসরী,
কাদিয়ানী মতবাদ ধূলা হয়ে উড়ে যায়
ময়দানে আতিউল্লাহ শাহ বুখারী দাড়ায়,
রক্ষা পেল খতমে নবুওয়াতের মান
যা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শান,
কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা সময়ের দাবি
ঘোষণা না হলেও তারা কাফির হবি।

বাটোয়ারা প্রায় শত বছর আগে
দারুল উলুম হাটহাজারী, পটিয়া পেল বাংলা ভাগে,
দেওবন্দের ছায়ায় আরো মাদ্রাসা হয়েছে
হক দ্বীনের প্রচারে নিমজ্জিত আছে,
হাফেজ্জী হুজুর, শামসুল হক ফরিদপুরী,
ফজলুল হক আমিনী, জুনায়েদ বাবুনগরী
শায়খুল হাদিস আজিজুল হক যোগ্য উত্তরসূরী,
আলেম বুড়ো হোক, ইলম তো নওজোয়ান
ইলমে পাপ হয় ধ্বংস, হয় অসম্মান।

তুমি আলেমের বিরোধিতা কর, সময় অসময়
ইংরেজরা সন্তান রেখে যায়, পালানোর সময়,
শরিয়ত ছাড়া বিবাহ হয় ব্যভিচার
বাচ্চা হবে জারজ, ফতওয়া দুরবার,
শরিয়ত ছাড়া নামায বাতিল, রোযা বাতিল
শরিয়ত ছাড়া তোমার ঈমান বাতিল,
শরীয়ত ছাড়া রাষ্ট্র কি হবে বলো?
আলেমরা বলবে, তুমি বলো বা না বলো!
ব্রিটিশ ভারতের সাথে তফাত বর্তমান রাষ্ট্রের
আইন কানুন এখনো সব দারুল হরবের,
কুফরি মতবাদ ধর্মনিরপেক্ষতা, নাস্তিকের ফিতনা
আরো আছে হজ্জ, কিসাস, পর্দার বিরোধিতা,
উলামায়ে দেওবন্দ হাত গুটিয়ে বসে নেই
থাকবেনা কোনদিন বসে, হয়তো তোমার চোখ নেই,
কুফর থেকে ঈমানকে স্পষ্ট করার দাওয়াত
জাতিকে সতর্ক ও সাবধান করার দাওয়াত,
জান্নাতের পয়গাম, জাহান্নাম হতে সাবধান
হালাল রুজি দরকার, হারাম হতে সাবধান
ইলম কিছু শিখেছ তা আলেমের অবদান,
যখনই এসেছে অত্যাচার, নির্যাতন, স্বৈরাচার
আলেমরা জেগেছে, জেগেছিল বারবার
প্রয়োজন ছিল যতবার, জেগেছে ততবার,
ইসলামিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন বনাম বাস্তবতার গান
তোমার সামনে খোলাসা ফাঁকা বুলির ময়দান,
তোমার সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম নাই
তুুমি বল, রাষ্ট্রে ইসলাম চাই,
তুমি ইসলামের কোন বিধান মানো
ইসলামিক রাষ্ট্র আসার দিন গুনো।


তথ্যের জন্য বইঃ দেওবন্দ আন্দোলন ইতিহাস, ঐতিহ্য, অবদান
লেখকঃ মাওলানা আবুল ফাতাহ্ মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া