দেনা-পাওনা

চেয়েছিলে একটি কালো শাড়ি
অনেক দিনের শখ তোমার,
বলেছিলাম, কিনে দেব।
তবে একটু সময় দিও-
মাস শেষে বেতন পেলে দেব।

তুমি অপেক্ষার প্রহর গুণলে।

ব্যাংক থেকে টাকা তুলে যখন
পাওনাদারদের দিলাম,
হাতে অল্প কিছু টাকা ছিল।
সে টাকায় পাওয়া যাবে না
তোমার শখের শাড়ি।

মনে পড়লো, বড় জাতের ইলিশ
তোমার ভীষণ পছন্দ।
ভাবলাম, শাড়ি না পেলেও ইলিশে
তোমার রাগ পড়বে।

শখ করে বাজারের সবচে বড়
ইলিশটা কিনলাম।
বাড়ি এসে ডাক দিলাম, লামিয়া!
এ লামিয়া! দেখো কী এনেছি।

তুমি দৌঁড়ে এলে। আমি জানতাম,
তুমি দৌঁড়ে আসবে।
কিন্তু আমার ডাকে ছিলো না
অন্যদিনের মতো উচ্ছ্বাস।
আমি কালো শাড়ি কিনতে পারিনি
কালো শাড়ি আমার সাধ্যের অতীত!

ভেবেছি, তুমি মেনে নেবে
যেমনটি মেনে নাও সব সময়।
এ বেলাও বুঝবে সীমাবদ্ধতা,
বুঝবে আমার ভেতরের কাতরতা।

কিন্তু তুমি,
তুমি মাছই স্পর্শ করলে না।
বললে, তোমার ইলিশ তুমিই খাও-
ওসবে আমার নেই দরকার।

তুমি চলে গেলে।
আমি দাঁড়িয়ে রইলাম তোমার
রাগের সমান দুঃখ নিয়ে।
তবুও তোমার মায়া হলো না।

ভাবলাম, সীমাবদ্ধতা আমার,
আমাকেই করতে হবে বিহিত।

ইলিশ হাতে গেলাম রান্নাঘরে।
কখনো মাছ কাটিনি।
কাটতে হয়নি কখনো।
কাটতে দাওনি কখনো।
আজ না হয় তোমার জন্যই কাটি!

যা হওয়ার ছিল, তা-ই হলো,
ওহ করে ওঠলে তুমি
সকল অভিমান ঠেলে দৌঁড়ে এলে।
লাল টকটকে রক্তে তোমার
সব মান-অভিমান ভাসিয়ে দিলে।
কাপড় জড়িয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলে।

বললে, কে বলেছে মাছ কাটতে?
‘তুমিই তো চেয়েছিলে রক্ত,
লাল টকটকে রক্ত,
তাই রক্ত দিলাম,
তুমি সুখে থাকো।
সুখে থাকুক আমার পৃথিবী।

তুমি বললে, আমার কিছুর নেই দরকার।
কেবল তুমি ভালো থাক।
তুমি ভালো থাক।
বললাম, কালো শাড়িরও নেই দরকার?
বললে, না। দরকার নেই কিছুর-
কেবল তোমার বুকের মাঝে প্রেমময়
এক টুকরো জায়গা দরকার।

বললাম, বুকের সবটুকু তোমার জন্য
বরাদ্দ দিলাম।
ভালোবাসার দলিলে লিখে দিলাম-
লামিয়া, আমি তোমার।
কেবলই তোমার।

তুমিও বুঝে নিলে-
আবু সাঈদ কেবলই তোমার।
কেবলই তোমার।