পর্ব–০১
একটা কবিতার নাম – ”সবার আমি ছাত্র”,
জানিনা কজনে পড়েছে, ভেবেছে ও বুঝেছে আর, কজনে লিখেছে একটা কবিতা ভাব ও আদর্শে ঠিক ঐটির মত,
কবি সুনির্মল বসু আজ পরলোক গত,
মনন, দরশন, চলন, বলন ও কর্ম্মগুণের অর্জনে কেজানে হয়েছেন তিনিও স্বর্গবাসী হয়তো ।
আসুন ঐ কবিতাটা পড়ি আর একবার,
যদিরে নতুন কিছু শেখা ও জানা হয় কোন মূর্খ ও বিদ্যান কানার,
সবকিছু জানা কিবা সব জ্ঞান আহরণ,
অবিরত আমরণ পড়েও জীবনে কভু শেষ হয়না ও হবেনা পঠন,
তবে পঠনে বড় হয় মন, অনুভবে চেতনায় অসাড় দেহটার জাগরণ ও খুলে যায় বুজে থাকা তৃতীয় নয়ন ।
এমনই অসীম বিধাতার ঐ জ্ঞান ভান্ডার,
অতল গহীনে গমন ও মহাশূন্যে বিচরণ করিতে অন্তরের সব জানালা-দুয়ার,
খুলে গেলে একবার, সেজন পেতেও পারে দরশন ঐ অরুপ বাহার,
রহস্য যার আজও অজানা ও অনন্ত অপার, অতল মহাসাগরের তলেও যে মাটি কেজানে কি রয়েছে তলে তার ।
”পড়ো” শিখতে, বুঝতে, চিনতে ও জানতে কোন বিকল্প নেই পড়ার,
তাই ওরে ভাই ভালকে ভালো বলার এবং আলো ও ভালোটা চেনার সৌভাগ্য যেন হয়রে সবার,
বুঝিরে তাই জগতের সব মানুষের তরে, যেন বাতি জ্বলে জনেজনে ও ঘরেঘরে, ছিল ঐ প্রথম বাণী ও আদেশ খোদার ।
সবার আমি ছাত্র
কবি সুনির্মল বসু
আকাশ আমায় শিক্ষা দিল
উদার হতে ভাই রে
কর্মী হবার মন্ত্র আমি
বায়ুর পাই রে ।
পাহাড় শিখায় তাহার সমান
হই যেন ভাই মৌন মহান,
খোলা মাঠের উপদেশে
দিল খোলা হই তাই রে ।
সূর্য আমায় মন্ত্রণা দেয়
আপন তেজে জ্বলতে,
চাঁদ শিখালো হাসতে মেদুর,
মধুর কথা বলতে ।
ইঙ্গিতে তার শিখায় সাগর
অন্তর হোক রত্ন আকর
নদীর কাছে শিক্ষা পেলাম
আপন বেগে চলতে ।
মাটির কাছে সহিষ্ণুতা
পেলাম আমি শিক্ষা,
আপন কাজে কঠোর হতে
পাষাণ দিল দীক্ষা ।
ঝরনা তাহার সহজ গানে
গান জাগালো আমার প্রাণে,
শ্যাম বনানী সরসতা
আমায় দিল ভিক্ষা ।
বিশ্ব জোড়া পাঠশালা মোর,
সবার আমি ছাত্র,
নানান ভাবের নতুন জিনিস,
শিখছি দিবারাত্র ।
এই পৃথিবীর বিরাট খাতায়
পাঠ্য যে সব পাতায় পাতায়,
শিখছি সে সব কৌতূহলে
সন্দেহ নাই মাত্র ॥
পর্ব–০২
হর্ষ, উল্লাস, তামাসা, বিনোদন আর আয়েশ ও আরাম,
কেনযে দেমাগে নাই ন্যায়-অন্যায়, পাপ-পুণ্য আর হালাল ও হারাম,
শুধু ঘুম আর খানা, দুটি চোখ থেকেও কানা, হলোনা দেখা, শেখা, চেনা ও জানা ছিল যেই দায় ও কাম ।
কজনে আহা পেরেছে হতে মহারাজার খাস গোলাম,
কি কাজে ফুরালো সবটুকু সময়, আহা যেন অপচয়, আজীবন শুধু ঝড়ালো ঘাম,
হয়তোবা তাই হয়েও সৃষ্টির সেরা, আজ আর তা অনেকেই নয় তারা, তাদের নাই সঠিক সম্মান কিবা ঐ সে দাম ।
আদম সন্তান, কোটি কোটি অগণিত,
আজও এ জগতে মানুষ নামের ও ঐ একই সুরতের পশু কেজানে রয়েছে কত,
জীবন ও জতগটাকে আমরা কেন দেখি নাই তার মতো,
অনুভবে ও চেতনায় আর বোধ, বিবেক ও বিবেচনায়, কত ভাল ছিল যদিরে সবাই ওরে ভাই ঐ মানুষ হতো ।
এ জগত ও জীবনটা আসলে কি ?
আসুন ঐ কবিতাটি পড়ি, কি গেছেন কবি তাতে লেখি,
পড়া হলে তা একবার, তারপরে দয়া করে সবে ওরে ভালকরে তা ভেবেও দেখি,
পেয়েও বিধাতার এত অপার করুণার পরম নেয়ামত আর দান, জীবনটা ওরে হলো নাকিরে সবার মিথ্যে ও ফাঁকি ।
কেউই যেন পড়তে চায়না,
বললে সবাই বলে, এত ব্যস্ত একটু সময়ই পায়না,
আসলে ভাবটা এমন যেন তার সবই জানা, তাই বুঝি পড়াগুলি সব রাখছে ঢাকি,
কে আমি আর কেনইবা এখানে হয়েছিল আগমন, কি ছিল দায় আমার করার ও কি তার আজও হায় রইলো বাকী ।
পাঠগুলি হয়নি পড়া,
তার মনের মত করে এ জীবনটারে গড়া,
রাজ হুকুমের সহজ ও ছোটছোট কাজগুলি সব হলোনা কেনরে যতনে করা ।
জীবন মানে অল্প কিছুদিনের সময়,
শুধু ঐটুকু এক দমও তার বেশী নয়, যার যতদিন এ দুনিয়ায় বেঁচে থাকা হয়,
জীবন হলো একটা পৃথিবী আর, ছিল যার যেটুকু দেখার সীমাণায় ও সে তার যেটুকুর হয়েছে মালিক,
সুখ ও ধন যেন সে এক প্রতিযোগিতা সারাক্ষণ, বেশী পাওয়া কিবা অর্জন, কৌশলে জবরদখল ও কেড়ে নেবার হিড়িক ।
হারানোর আগে সবকিছু ও সব দিক,
চারিদিকে অনেক আঁধার, দেখালেও এ পৃথিবীটা ঝলমলে ও চিকচিক,
এ মহাবিশ্বটা হলেও সাজানো ও ভরানো ছড়িয়ে ঢেলে দিয়ে মূল্যবান হিরা, মোতি, রতন ও মানিক ।
বিজ্ঞ বিচক্ষণ রসিক বেরসিক ও দার্শনিক,
ছাড়াতো আর কিছু নয়, পান খেতে মুখ ভরে উঠা তিক্ত রস ছুড়ে ফেলা পিক,
দিনেই যারা দেখেনা পথ, গহীর রাতের অন্ধকারে কেমনে চিনিবে তারা আহারে খুঁজে পাবে তার ঠিকানার দিক ।
যখন সবই ছেড়ে যেতে হয়,
ওরে আর কিছু নয় শুধু নিজের পাপ-পুণ্যটা সংগে লয়,
সব হারিয়ে অসহায় প্রার্থী ও মুখাপেক্ষী হয়ে যাচিতে বিধাতার ক্ষমা ও করুণার ভিখ,
আপনার, তাহার ও আমার কার চোখে তা আসলে কেমন আর, সে ভাবনার সব প্রশ্নের কোনটাইবা পূরো সঠিক ।
পর্ব–০৩
রঙ-তামাসার বিশাল এক রঙ্গ মঞ্চ ?
সবাই খেলোয়াড় এমন এক প্রান্তহীন বিশাল খেলার মাঠ ?
বিশাল ব্যবসা ও বানিজ্য কেন্দ্র, পণ্য ও পেশার পসার সাজানো বেঁচা-কেনার বাজার ?
সারাক্ষণ চলছে ছলনা ও অভিনয়,
তাই বুঝিরে ভালটা চেনা ও কেনা আজ এত কঠিন হয়,
যেমন খুশী সাজো, নাঁচো-গাও ও হর্ষ-বিনোদনে বাঁচো’র আলো ঝলমল এক বিশাল নাট্যশালা ?
কারো মিটেনি সাধ ও পূরেনি আশা,
কারো ঝামেলা অফুরান, তাই কেউ পেরেশান, কারোবা পরম খাসা,
শুধু কি ঘুরে বেড়ানো আর ঘুম ও খানা, কাজের কথাটি কারোই নাই কেনরে মনে, নাকি তা হয়নি জানা ।
এক মালিক এক মহারাজার,
যতনে গড়ানো তার নিযুত কোটির নিখুঁত ঐ সে অরুপ সৃজন বাহার,
আমরা সবে যার চিরন্তন আসা-যাওয়ার, পোষ্য প্রজা ও প্রাণীর তাবেদার গোলাম তার, বিশ্বজোড়া এক সংসার ও পরিবার ?
বসন, আবাসন, সংগীর সনে বিনোদন ও খানাপিনা,
হুকুম মানো কিবা কাজ করো আর নাইবা করো, আমরণ সবকিছু মূল্য বিনা,
ঈমানদার, বেঈমান, নিমকহারাম ও নাফরমান কারো লাগিই মহান ঐ মহারাজার নাই কোন মানা,
ভিনদেশে সফরে আসা বাধা সীমাণা,
কেউ বেধেছে সুন্দর বাসা, অগণিত যাযাবর নাই বাড়ী-ঘর কাফেলার এক পান্থ নিবাস বা মুসাফিরখানা ?
পরম বিশ্বাসে, ভরসা ও আশায় নির্ভর,
যে করে তার, এমনই এক রাজা নাই যার কোন মূল্য কিবা খাজনা কর,
থাকিলে বিবেচনার সদয় বোধ,
যত বড়ই হোক ঐ দেনার দায়, হয়ে যায় সব পরিশোধ,
নাহলে রাজায় পারে, ষোলআনা সবকিছুর মালিকানা যার,
প্রজায় কেমনে পারে তার মহাজনের দাদন করিতে অস্বীকার ও ভাংগিতে সব অংগীকার,
হতেও পারে এমন যে মনন, চলন, বলন, দরশন আর সবর ও ক্ষুদ্র, তুচ্ছ ও নগণ্য তার একটা মাত্র কাজের উপর ।
ঐ রাজায় এমনই মহান,
যেজন কভু তারে অতি সামাণ্য করে দান,
একটু বশ্যতা, বিনয়, মান্যতা, ভয় ও কৃতজ্ঞতায় বড় খুশী হয়ে যান,
প্রকাশে, গোপনে, অন্তরে ও জবানে কোন জনে করিলে তার একটুখানি গুণগান,
তাতেই হয়ে যায় দেওয়া তার, সহস্র অজস্র অঢেল করুণার দানের একেবারে সবটুকুর প্রতিদান ।
মহারাজার কাছে কেনরে এত মূল্যবান,
করুণা গলে উথলে গেলে তারে আকাশ সমান দিতে দাম ও সম্মান,
কিবা আবার ক্ষিপ্ত হলে, কোটি সেনা থাকুক তার দলে, কে ঠেকায় আর বাদশাহ তার সিংহাসনটা হারান ।
রাখিতে খোদ খোদার অংগীকারের মান,
অধম প্রজা ও গোলামের অনুগত দেহ-মনের সিজদা শুধু একখান,
জমিন হতে আসমান সমান, ঝিল-বাগানের একটা প্রাসাদ কুটুমবাড়ী করিবেন তারে মালিকানা সহ চিরতরে দান ।
সবারই মুখোশ পড়া, নাই হেথা আপন পর,
মসজিদ নয় আজ যেন মনেহয়, একটা বাজার হয়েছে ঘর,
বেশী ধন, বেশী বিদ্যা, বেশী হ্যান্ডসাম ও স্মার্টগণই এখন মাথাউঁচু সমাজের শিখর,
বনে ও ঘরে সবখানে বিচরে, সভ্যতা ও বন্যতায় কে তাদেরে ছুতে পায় কিবা হার মানায় তারাযে অদৃশ্য উভচর ।
কেউ শুভংকর,
আবার কেউবা বহুরুপী ও গোপনে ভয়ংকর,
বাদ্য-বাজনা তুলে তুমুল ঝড়, নাঁচ-গান, হর্ষ, উল্লাস ও ভোগ-বিনোদন আর মদ্যপানের হৈ হুল্লোরে বিভোর ঐ মাতন আসর ?
কেউ বলে মহাপুণ্যতা আর,
খোদার সনে তার খাস গোলামের করুণার দিদার লাভের চির পবিত্রতার,
বিশাল তৃণ, তরু-লতা-গুল্ম, ফুল, মধু, ফল, শষ্য ও ফসল উৎপাদন, বীজ সংগ্রহ, বপন ও চারা রোপণের বীজতলা ও খামার ?
পর্ব–০৪
কি দুর্ভাগ্য ও আফসোস আহারে,
পলকে চোখ জুড়ানো ও মন ভুলানো যে রুপের বাহারে,
কোন সে নিপুণ কারিগর, কি ঠিকানা কই তার বাড়ী-ঘর, কেনরে চেনা হলোনা তাহারে,
মদির জোছনা, বৃষ্টি ও ঝর্ণার রিমঝিম সাতরঙে সাজানো অপরিসীম সুন্দর, মধুর বাঁশরী ও মনোহর ছবি আঁকা এক মায়াপুরী ?
করে অঙ্গীকার মাথায় তুলে লয়ে তার দায়,
স্বাধীনতা পেয়ে শেষে ও ডুবিয়ে নেয়ে এসে ভোগের এ রঙীন দুনিয়ায়,
তার জমিনে বসবাস করে, অন্ন-জল খেয়ে ও বসন পরে, কেমনে শেষে হায় বেমালুম সব ভুলে যায়,
অগণিত মানুষের সংগ্রাম বাঁচার, মহাজনের দেওয়া তার সামাণ্য কাজ আর যত মানুষ তত জীবিকার আজব এক কর্ম্মক্ষেত্র ?
অধিক ধন উপার্জন আর,
ক্ষমতার আসন লাভ করা ও তা জুড়ে থাকার,
জিততেই হবে নহে কোন হার, এমনই এক মনোভাব যেন হেথা সবার,
কথা শোনা, বিধান মানা ও তার পথে চলা খুশীর তরে রাজার, শুধু এই একটাই কাজ ছিল চব্বিশ ঘন্টার ।
যাই হোক তাই দৃশ্য কিবা অদৃশ্যমান,
এত ব্যস্ত সবাই একটু অবসর সময় নাই, কখন গাহিবে তারা মহারাজার গুণগান,
সে এক কঠিন প্রতিযোগিতার চলমান, যেন বাঁচা-মরার রণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ এক প্রাণপণ লড়াই এর ময়দান ?
ও
ঠেকাতে অবক্ষয় ও পরাজয়,
ধরে নিয়ে যাবে এসে মরণ, কেন সেকথা নাই স্মরণ নাইরে ঐ ভয়,
মাটি, জল ও বাতাসে মাখিয়ে ভরানো, দশদিকে ছড়ানো ভরপুর ঝিলমিল জ্ঞানের আলো ও ভালোয় ।
সহজে এ জীবন মহাপুণ্যময়,
যদিও কেউ কেউ জানে, তবে অধিকাংশেরই তা অজানা রয়,
পঠন ও শিক্ষণ হয় কি নাহয় তা সমাপন, হবেই হবে জীবনের অবসান যথা সময়ে নিশ্চয়,
পরীক্ষা কেন্দ্র, দিবানিশি অবিরাম আমরণ, কই অবাধ্য ও উদাসীন সকল ছাত্রগণ, চলে পাঠ দান ও পরীক্ষা দিতেই হবে হয় ।
হাতে পেয়ে সুখ, ধন ও স্বাধীনতা,
ফেলেছে হারিয়ে সবে তার নিজের দেনা-পানার হিসাবের খাতা,
কেউবা আবার হায়, ভুলে গেছে তার সব দায়, পাপ-পুণ্যটা কেন নাই ভাবনায়, মহারাজার যত ফরমান আর বাণী ও বারতা ।
সব শেষ মৌখিক পরীক্ষায়,
মহাকঠিন ঐ দিন লোকের ও মহাজনের সকল ঋন লয়ে মাথায়,
যত বাহাদুর ক্ষমতাধর সবে ওরে দাড়াতেই হবে, মহারাজার মহাআদালতের সত্য ও ন্যায়ের শেষ বিচারের কাঠগড়ায় ।
যদি সব পাওনাদার ও স্বাক্ষীর মুখ ফুটে যায়,
আর সব অপরাধী আসামীর বন্ধ রয় জবান, তবে কি হবে তখন উপায়,
কে পাস আর কে ফেল, সুপারিশ ধরবে কারে মেখে কার পায়ে তেল, বলো আর কে নেবে তার দায়,
কেজানে কার কি জবাব আর হবেযে তার বিচার, কে ছিল কোন দলের তাবেদার বা চামচা ও চাটুকার কে দিবে কোন পরিচয় ।
সবার হাতের কাছে,
সবইতো সদা’ই ছিল, আজও আছে,
কেন অন্তরালে পরম করুণাময় সে কোন মহান দাতা,
খোলা তার সকল জানালা দুয়ার, অন্ন-জলে করছে লালন যেন স্নেহময়ী মাটি-মাতা,
অযতনে অনাদরে রয়েছে পড়ে, কেউ তা যেন দেখেনা ধরে, কলম কই, অগণিত অদৃশ্য ঐ মূল্যবান কত বই-খাতা ।
চোখ থেকেও কত বাকী রইলো দেখা,
এই বলেকি দিবে কপালের দোষ, ছিল তা নিয়তির লেখা,
হায়রে নাহলে তারা কেন মূক, বধীর ও হেন অন্ধ যেন হলোনা চেনা-জানা ও শেখা ।
দেখেছি ঘুরে ঘুরে,
তৃতীয় নয়ন মেলে আমি কাছে ও দূরে,
ছিল ও আছে অসীম আকাশ আর মাটি ও জলের এ মহাজগতটা জুড়ে,
সাতরঙ ও ধূসর মাটি, পাথর ও জলের উপর মহারাজার নীল-সবুজের কি মোহন ও কোমল একটা বিছানা পাতা ।
হয়তো বুঝিবে সবে, কি লাভ হবে আর তবে ফুরালে সময়,
দায় ছিল যাহা, কত পাঠ আহা হলোনা পড়া, ইচ্ছে মত চলা ও করা, তা নহেতো জয়,
হলোনা দেখা রইলো কানা, শেখা ও চেনা-জানা, কেন সোনালী জীবন আজও হলোনা গড়া এ কোন সে অবক্ষয় ।
পর্ব–০৫
অদৃশ্য ঐ গুরু ও তার বিশাল শিক্ষালয়,
জ্ঞানের আলো ও সকল ভালোয় ভরা, সহজ পড়া তাতো মিথ্যা নয়,
তাই আমরা সবাই যার ছাত্র, যেথা হয়নি শুরু কিবা আহরণ পূরো কেমনে তবে সে গুরু হয়,
তাই বুঝি মহারাজার করুণায় করা, উম্মুক্ত বিশাল বিদ্যাপীঠ হয়েছে গড়া, মহাবিশ্ব জুড়ে একটাই ঐ মহা বিশ্ববিদ্যালয় ?
হাতে লয়ে ঐ সব ধন,
সবে তা জনেজনে করিতে অকাতরে বিতরণ,
সহন অপার, করিছে বারংবার, ওস্তাদ হয়ে কেন শিষ্যরে আকুল ঐ নিবেদন,
তবু কেনরে কানার হলোনা জানা, বধিরের কাছে পশিল না আকাশ বাণীর বিজয় ও চিরশান্তির ঐ সে সুমহান বারতা ।
ভালকথা, ভালকাজ ও ভাল মানুষের নেই কোন দাম,
ধুয়ে-মুছে গেছে বুঝি সব ন্যায়-অন্যায়, লাজ-ভয়, পাপ-পুণ্য আর যত হালাল ও হারাম,
তবু তারা পেতে চায় ও দেখি যেন অনায়াসে পায় সহস্র সালাম,
কারোই এক কিবা ঠিক নয়, মিথ্যে নয় ঘাটেঘাটে তবু হচ্ছে জয়, ভিতর ও বাহির আর যত তার মিষ্টি কথা ও মন্দ কাম ।
ওরে বিচক্ষণের কাছে,
যার হাতে আর অল্প যেটুকু সময় ওরে বাকী আছে,
আসুন তবে এখনই সবে আবার করি শুরু,
ভুলগুলি শুধরে লয়ে সব দীনতা ও ব্যর্থতা তাতেই হয়তো হয়ে যাবে পূরো,
পড়ে পড়ে, দেখে দেখে ও শুনে শুনে শিখেনা যেজনে, শিখবে কি তবে হলে ওরে অচল বুড়ো,
ষোলআনা বিশ্বাসে সাদরে টানি, একথা অন্তরে লয়ে জানি ও মানি, জগতের সবাই ও প্রভুর সব সৃজনই মোদের সবার গুরু ।
সে কথাতো ওরে মোটেও মিথ্যে নয়,
মরণ যেন হয়, ফিরে গিয়ে স্রষ্টার কাছেতো দিতেই হবে মানুষের পরিচয়,
মানুষেতো পড়েপড়ে, দেখেদেখে, শুনেশুনে ও করে করেই আলো ও ভালোয় নিজেকে ভরে জ্ঞানী, গুণী ও সুফি সাধক হয় ।
অহম, জুলুম ও বাহাদুরিতো খোদার দিলে নাহি সয়,
সাবধান হে বিদ্যান ও বিত্তবান ক্ষমতাধর সমাজপতিরা হয়ে আছো যারা অকুতোভয়,
আর অবিশ্বাস ও অবহেলা নয়, আসছে ধেয়ে মরণ নামের নিঠুর পাষাণ লয়ে জীবনের অবসান, ভরাডুবি ও পরাজয় ।
ঐ মানুষই দরকার, ঐ মানুষ চাহেন খোদায়,
মাটির দুনিয়ায় একদা ইনসান পরম করুণায় প্রভু সৃষ্টি করেছিলেন যে আশায়,
সুরতে ও লেবাসে নয়, অংগীকার করে সৃষ্টির সময়, দুনিয়া জোড়া আলো ও ভালোর বীজতলা গড়ার নিয়েছিল যে দায় ।
বিধাতার সাজানো এ জগত সংসার,
রাহুর কবলে, জবর দখলে যেন এখন রাজ্য চলে, জুলুমের এ দুনিয়াটার,
মানুষ নামের ঐ মানুষগুলি,
মরণ আর রাজার কাছে তার দাদন ও দায়-দেনার কথা সব ভুলি,
পঠন, সাধন ও নিজের সহজ সব কাজগুলি রেখেছে তারা ধূলি-বালি ও কালিমায় ঢাকা শিকায় তুলি ।
আবার অনেকেই তারা রাতারাতি,
হতে চায় অনেকে হয়েও যায় কেন সবে যেন পরের ধনে কোটিপতি,
হয়েছে এখন এমন, অঢেল পাওয়ায়ও যেন ভরেনা মন, কল্যাণ, মঙ্গল, সুখ-শান্তি ও উন্নয়ন ও প্রগতির হুমকি ও ভয় ।
সে যে এক এমনই অবক্ষয়,
অস্তবেলার আলো-আঁধারির ঐ গোঁধূলি ডেকে কয়,
মূর্খ পন্ডিত, অন্ধ-বধির ও বোকার দলতো কখনো ওরে ঐ বুঝ মানার মত নয় ।
ভাবে তাহলেই বুঝি হলো তার পরাজয়,
সে ইতো পেরেছে ও পেয়েছে নিজের ও মনিবের সঠিক পরিচয়,
আর কোন অহম নয়, সব সত্য জেনে বিবেকের কাছে গোপনে হার মেনে ওরে যেজনে লয়,
আয়ুটাতো বাড়েনা, যমদূত কেউ কভু ফিরাতেও পারেনা, সবারেই একদিন নেবে ধরে, মরতেই হবে ওরে হবেরে নিশ্চয় ।
পর্ব–০৬
অজান্তে দমে দমে,
এ জীবন ছোট হয়ে যাচ্ছে অতি দ্রুত কমে,
চুপচাপ আমাদের পিছনে সবার রয়েছে দাড়িয়ে, অদৃশ্য ভয়ংকর অচেনা যমে ।
আজও মহারাজার কাছে,
অজানায় বহু অনাদায় কেনরে বকেয়া পড়ে আছে,
মাথাভারী ঋন যার, নাই কেন তার সেসব স্বরণ আর ঐ হিসাব ও মরণের একটুখানি ভয় ।
মিথ্যে এ দুদিনের মর্ত ধামে,
ফেলে রেখে সব বিত্ত-ধন যেখানে রয়েছে যেমন তা অনাদরে ও বিনাদামে,
নিরাকারে হঠাৎ একদিন এসে,
হয়তোবা নোটিশ বিহীন শুধু এক পলকের নিমেষে,
চলে যেতে হবে, এক কাপড়ে শূন্য হাতে একাকি সবে, গহীন রাতের অসহায় এক মুসাফির বেশে,
হাত-পা ও চক্ষু বেধে নিয়ে যাবে শেষে, সমুদয় সবকিছু মরণের নামে এক নতুন দেশে, সেযে আসলে নিরবে সব অসীমে নিলাম ।
সুজন কবি সুনির্মল বসু তার,
মহাকালের বাংলা ভাষীদের কাছে রেখে গেছেন যে মূল্যবান উপহার,
কজনের কাছে যথার্থ অনুধাবন ও মূল্যায়ন হয়েছে তার, কালজয়ী বিশাল ভাবের ঐ ছোট্ট কবিতাটার ।
কেন তা হয়নি ভবে এ ব্যর্থতা তবে কার,
এ যুগেও তেমন কবি ও এমন অনেক কবিতার ছিলযে অতীব দরকার,
তিনি যা দেখেছেন, পড়েছেন, শিখেছেন, জেনেছেন ও লিখেছেন তাদেরে শিখাতে যাদের বাকী এখনও চক্ষু ফোটার ।
নগণ্য এ মনন ও গবেষণ আমার,
বর্ষিত হোক তার নিজের ও আওলাদ ওয়ারিশ সবার,
জীবনে ও মাথার উপরে খোদার পরম করুণার কল্যাণ, মঙ্গল ও সুখ-শান্তি অপার,
কজনে পারে ও পেরেছে করিতে পালন ও সমাপন, স্রষ্টার দেওয়া দুনিয়ায় তার সব কাজগুলি ও অনাদায় ঐ দায়ভার ।
এ ভুবন নিজে শিখা ও অন্যকে শিখাবার,
নহেতো যত পারি শুধু এক বাহারি ভোগ-বিনোদন বিহার,
ঐ কাজেই আজও শ্রেষ্ঠ ও অমর হয়ে রয়েছেন তিনি লোকের কাছে আর,
কেজানে বিধাতার কাছে জমা হয়ে আছে তার, এ দরশন ও কলম সৃজনের অপার কি মহান পুরস্কার ।
এ প্রশ্ন পাঠকের কাছে এবার,
জয়-পরাজয় ও পাওয়া নাপাওয়ার আশা ও ভয়ের মহান বাণীর পাঠ সমাহার,
পড়তে বলেছেন, কলম, খাতা ও বই সব দিয়েছেন, দুই জীবনের চির শান্তির দেখানো সরল পথ ও মসৃন তার উম্মুক্ত দুয়ার ।
কত নেয়ামত ও মহা করুণার কত ছাড়,
তবে ঐ পরীক্ষাটা কবে হবে ও সে ফলাফলটা ইবা হাতে পাবে তার,
হচ্ছেতো গোপনে প্রতিনিয়ত ও প্রতি ক্ষণে,
কথায়, কাজে, চলনে, আচরণে ও মননে, যারা ভোগে ব্যস্ত বলো তারা বুঝিবে তা কেমনে ।
জীবন জগত মহাপাঠশালাটার,
মিথ্যে নহে চূড়ান্ত ফলাফলটা অজান্তে হওয়া কোটি পরীক্ষার,
কেউ নেবেনা যখন কারো দায়, তখন এ ভাবনাটা সবারই তাই ওরে তার নিজের ও শুধুই একার ।
কাজ হবেনা কোন ছলে কিবা কৌশলে,
না ভরিলে পুণ্যের ঝুলিটা, কোন মূল্য বিনা কেমনে কিসের বলে,
পাবে কি বিধাতার বিশেষ ক্ষমা ও করুণার ছাড়,
ভালকরে না পড়িলে, জানিনা লয়ে মাথায় ঐ বিশাল পাপের ভার,
একাকি শূন্য হাতে, ঐ গহীন আঁধার রাতে, না তরালে পাকজাতে, অকুল দরিয়াটা হবে পার,
প্রিয়জন অবাধ্যতা ও অমান্যতায় অপরাধী হয় যখন, হবেইতো হয় তবে, অতিশয় ক্ষোভ ও অভিমান তার,
ফুল, ফল ও ফসলে ভরে সাজানো ঐ প্রাসাদ ঝলমল, দেখতে পাবে ওরে যখন হাতে তুলে দেওয়া হবে মরণের পরে সবার ।
দেখি কারোই পড়ার ইচ্ছা, আগ্রহ ও চেষ্টা নাই,
জানতে ও শিখতে চায়না কেউ, ছাত্র নাহয়ে ওরে যেন তাই কেন শিক্ষক হতে চাহে সবাই,
না পড়া, না জানা ও না শেখার নাই কোন অনুতাপ, ভাবনা কিবা তাড়না, বরং রয়েছে যেন সবজান্তার বাহাদুরি ও বড়াই ।
একটু পড়েই হয়ে পড়ে তারা ক্লান্ত,
না শিখে না জেনেই সময় ও ব্যস্ততার অজুহাতে হয় তাতে ক্ষান্ত,
নাহলে লোক সমাজের কাছে যেমনই হওনা কেন, আমার কাছে তুমিযে বড়ই অবজ্ঞার পাত্র,
এমন যারা ছুতে চায় অসীমের প্রান্ত, বিধাতায় বলে ওরে মূর্খ আগে বেশীবেশী পড়ো ও জানো, অবিরত পড়ায় হও ভাল ছাত্র ।