পর্ব – ০১

ছোট্ট একটা ছনের ঘর ।
কি ছিল অপরাধ আমার জানিনা,
কেন দিলেনা মোরে কেন আমি পেলাম না,
কি নাই তোমার কাছে আর বলো প্রভু তুমি কি পারোনা,
নাহয় আমি অধম গোলাম, আসলে কি মনিব আমি ছিলাম তোমার এত পর ।
পাইনি সময় হয়নি সুযোগ,
সে কি আমার দোষ, সেতো ছিল প্রভু তোমারই ইচ্ছা ও ক্ষমতার প্রয়োগ,
এই বুঝি মোর ভাগ্য লিখন, লোকে বলে নিয়তির যোগ,
ছিলনা আসলেই আমার কোন বাড়ীর নেশা, যা বলা যেতেও পারে এক ধরণের মনোরোগ ।
রাজার কাছে প্রজার তা কি ছিলনা পানা,
নাহয় দেখলোনা তারা চোখ থেকেও যারা কানা,
আহারে শুধু একটা ছনের ঘর, কেন তুমি প্রভু তাহারে দিলানা,
তার মনে না পাওয়ার কষ্ট আর, অক্ষমতা ও ব্যর্থতার গ্লানী রয়ে গেলো আমার মনের ভিতর ।
সুখের সংসার দিলা,
সাজানো বাগান আর একখানা বীজতলা,
পারিনি তবু আজও আশা ও চেষ্টা ছাড়িনি, গড়তে তা করে মনের মত পুণ্যময় ও সুফলা ।
টেনে আনতে যেন ছিড়ে যায়,
নুন-তেল, পেয়াজ, আলু আনতেই ঘরের চাল-ডাল ফুরায়,
জীবনটা যেন এক হেন কঠিন পরীক্ষা ও দায়,
রয়েছে বিত্ত-ধন সবাইতো আপন, তবু কেউ নাহি কারো পানে ফিরে চায়,
পা ঢাকলে মাথা উদোম, হয়না আরামের ঘুম, দিয়েছিলে তুমি মোরে এমন একটা যাদুর চাদর ।
ছিল স্ত্রী ও সন্তান,
সেতো তোমারই পরম নেয়ামত ও দান,
পা হতে মাথা জন্ম থেকে মরণ,
সবটাই ‍যার ঋন ও ষোলআনা অক্ষম সেজন,
কেমনে হবে সে দরিয়া পার, না যদি ওরে দয়া করে দুটি হাত ধরে তার ঐ মহারাজায় তারে তরান ।
কেন লোকের কাছে চাইবো আমি থাকতে আমার পালক প্রভু মহান,
তুমিনা করুণার সাগর অপার, কেমনে কেন তবে হয়েছিলে সেদিন এতই কঠিন প্রাণ,
কার কি আছে কি নাই, তুমিতো সকলই জানো তাই, তুমিই সবার প্রয়োজন ও সব সমস্যার সমাধান ।
মুক্ত বনে অগণিত পাখীর সমাহার,
আহা কি চমৎকার রুপের বাহার আর কি সুন্দর গানের গলা তার,
কৌশল করে শিকার ধরে খায় যোগাতে জানে নিজের আহার, কেন শুধু বানাতে পারেনা তার আপন ঘর ।
হে বিশ্ব মালিক,
বয়ান আমার মিথ্যা কি সঠিক,
সব কাজ ফেলে বন্ধ আঁখিটা মেলে দেখেছি সবদিক,
যদিও দেখা হয়নি শেষ নিরবে বিজনে একা, হিসাবের ফের অনেক বকেয়া কাজের হিড়িক ।
আমি যেটুকু জানি ও যাহা বলি সত্য সবই মনিব আমার লাশরীক,
তুমি ভিতরে ও বাহিরে, আর কেউ কোথাও নাহিরে, যেদিকে চাহিরে রেখেছ ঘিরে তুমি দশদিক,
তুমি একজন, চির একক, চিরন্তন ও অবিনশ্বর,
যাই হোক জয় পরাজয় সেতো মিথ্যে নয়, তুমিই শুধু স্রষ্টা, পালক, দাতা, মহাজন ও দয়াময় মহান ঈশ্বর ।
যদিও তার মনটা ভার,
অমূল্য ধন যা পেয়েছি দরবারে তোমার,
তার তরে প্রভু শোকর আমার, অযুত লক্ষ নিযুত ও শতকোটি বার,
এ মহাবিশ্বটার সবটুকুর একক মালিকানা যার আকাশ ও পাতালের ক্ষুদ্র বিশাল ও মন্দ-ভাল যত খবর ।

পর্ব–০২

মহারাজার নেই তার সব জানা,
আমার পক্ষে তাহা সম্ভব নহে বিশ্বাস করা কিবা মানা,
সৃজন ও ফানা কিছুই কভু হয়না ও হবেনা,
যার হুকুম বিনা, ইয়া রব তুমিই মোমিনের সব ইয়া রাব্বানা,
জগতের যত বিশ্বাসী অবুঝ ও কানা,
যারা আলো ও ভালোর সহজ ও সরল পথটখানা খুঁজে পায়না,
কি উপায় আর কে হবে সহায়, তুমি যদি না পথ দেখাও তাদেরে তরাও ও মাফ করে দাও তাদের গুনাহ
ঐ ভরসায় ও তোমারই পুরস্কারের আশায় সদা যারা আপদে, নিদানে, রোগ-শোক ও অনটনে করছে সবর ।  
মম দীনতা অপারগতার,
বুকে চেঁপে থাকা অদেখা ঐ বিশাল পাহাড়,
বুঝি তার মনে তাই ছিল ঐটুকু না পাওয়ার আক্ষেপ ও হাহাকার,
একখানা মাথা গোজার ঠাই, ছিলনা কি তার নীড় নাহি যার ঐ অভাগার অতিব দরকার ।
কেউ দেখে নাই কেউ জানে নাই,
তবে তুমিতো দেখেছিলে ও জানতে ষোলআনা সবটুকু তাই,
তবু নিরবে সব সয়েছি, প্রশান্ত বদনে প্রসন্ন রয়েছি, শিরে-কাঁধে বয়েছি লয়ে দুঃসহ অদেখা ঐ কষ্টের ঝড় ।
জুলুম করেছে ও করছে সবাই,
গোপনে অবহেলা ও নিন্দা করে সবইতো বুঝতে পাই,
কতজনে কাঁদে গোপনে তার হক হজম করে ফেলেছে বলে কে বা কারা খাই,
তার প্রতিকার কিবা প্রতিশোধ নিতে রক্তচক্ষু, বজ্রকন্ঠ ও মোর হস্ত দুটি আমিতো কভু নাহি বাড়াই,
বলেছি কত ওগো তুমি কেঁদোনা বিশ্বাস রাখো বিধাতায়, রোজ হাশরে পাওনা তোমার কড়ায় গন্ডায় নিশ্চয় তুমি পাবেই পাবে তাই ।
লয়ে মোর ধন কভুতো আমি তবু হে প্রভু করিনি বড়াই,
অভিনয় ও ছলনা যদিও মোটেই ভাল লাগেনা, এড়াবার যেন তার কোন সুযোগ নাই,
সব দেখি সব বুঝি, সহিবার কৌশল খুঁজি ও সে শক্তি পাই,
নিজেরে লয়ে শান্ত, ম্রিয়মান ও ছোট হয়ে, চুপচাপ আপন ঘরের ক্ষুদ্র বলয়ে রয়েছি পড়ে তাই ।
ঐ লোভী, কুটিল ফন্দিবাজ ও স্বার্থপর,
বলন ও চলনে বাহিরে যতই তারা রঙমাখানো শোভন ও সুন্দর,
বলো কতদিন আর ঢেকে রাখা যায় মিথ্যা ও মন্দে ভরা তাদের ঐ নষ্ট কলুষিত অন্তর,
পরিবার ও সমাজের কীট এরা ভয়ংকর,
এমনি করে করেই তিনযুগ ধরে তাই, একই রক্তের ভাই একে অপর জনে আমরা গোপনে হয়ে গেছি পর ।
ধন ছিল অগণন তবে মন ছিলনা,
এখনও বহুরুপী এমন মানুষ জগতে রয়েছে আগণা,
অপ্রিয় হলেও এটাই সত্য, তথাপিও সবার মেনে নিতে কষ্ট হয় কেন এ ধারণা,
যদিও বাহিরে সবাই সবার আপন তবে ভিন্ন কথা বলে মন, সত্য বচন আসলে এ জগতে ওরে কেউ কারোনা ।
ধন যার বেশী,
সে ই বেশী আপন ও হয়যে বড় খেসী,
নাহয় নাহোক আত্বীয় কিবা নাইবা হলো সে কোন নিকট প্রতিবেশী ।
এইতো ডিজিটাল সমাজ,
ভদ্র, শান্ত ও ভাল মানুষেরই যেন বেশী ভয় ও বেশী লাজ,
আর তারাই আজ সরদার, ধারেনা কারো কোন ধার, অনেক লাঠি যার ও রয়েছে লৌহ পেশী,
হে মোর প্রভু ভুবনেশ্বর,
তোমার রাজত্বে তারা হেন দূরন্ত দামাল যেন বাঁধনহারা এমনি প্রভাব, দাপট ও প্রতাপে তোলে প্রবল তান্ডব ঝড় ।  
সাধ থাকলেও অনেক বেশী, সাধ্যটা যেথা এক তিল,
কি হবে দিয়ে বলো বড় মন, বড় জাত কিবা হলেও কুলীন, সম্ভ্রান্ত ও রুচিশীল,
মন ভরে যাওয়া, মনে সুখ পাওয়া, বাস্তবতার সনে ঢের অমিল,
তার কেউ নাই যার, অন্তরে নিরব আহাজারি ও হাহাকার, জীবনে যেন বেশী নিদান ও বেশী মুস্কিল ।
বন্ধু, ভাই বা আত্বীয় কোন্ টা সে নয়,
অর্থ ও সময়ই বলে দেয় মানুষের ঐ সে অচেনা রুপ ও অজানা আসল পরিচয়,
মনের সব জানালা ও দুয়ারে তারা এঁটে দিয়ে তালা কিবা খিল,
ধন যার যত বেশী হয়, এইতো রীতি বিলাস ও হরষে ভাসে ক্রমেই তত ছোট হয়ে আসে তার চোখ ও দিল ।

পর্ব–০৩

আমার কথা মিথ্যা না হলে,
হাজার বছরের ইতিহাস তার সত্য প্রমাণে দেয় বলে,
দূর্বলের পাকা ধানে মই আর চড়, লাথি, ঘুষি ও কিল,
কে কবে কোন অসহায় ভিখারী পাথচারিকে হয়তোবা অযথাই মেরেছিল ঢিল,
কত রাজা, রাজ্য, প্রাসাদ ও তার রাজ পরিবার এখন ভুতের বাড়ী ও ভিখারী, হয়েছে বিরান, বিজন খিল ।
অহংকার, জুলুম, অন্যায় ও অবিচার খোদার আরশে আঘাত করারই সামিল,
শুনেছি লোকে কয় পুড়ে গেলে ভিটাখানি রয়, নদীতে ভেংগে নিলে হয়, থইথই একাকার জলে ভরা নীল,
কত কওম ও রাজ্য হালাক হয়েছে কোরআনে প্রমাণ তার,  
মানবতার প্রতি করা নিষ্ঠৃরতার অসদাচরণ ও দূর্ব্যবহার আর কোন ক্ষমা নেই যার,
আসমানী গজবে অগনিত এমনি কত সোনার রাজপুরী হয়েছে একেবারে ছারখার ও নদী, বিল কিবা ঝিল ।
বিশাল বাহিনী রণে মশার সনেও হয়েছে বিফল,
এক পুরুষের তথা এক পরিবারের অন্যায়, অপরাধ, অবিচার ও কর্ম্মের প্রতিফল,
হতে পারে হয় ভরাডুবি ও পরাজয়, সেইতো এমনই এক অবক্ষয় হাটুজলে যেথা হাতী-ঘোড়া হাবুডুবু খায়  পড়ে তল ।
চরম আত্মঘাতী ও পরম ক্ষতিকর,
নির্মম ঐ পরিণতি ও প্রতিফল হতে পারে ও হয় যা মহাভয়ংকর,
কোরআনের বাণী চিরসত্য জানি, নিশ্চয় মিথ্যে নয় প্রায়শ্চিত্ত যার চলতেও পারে শত শত বা সহস্র বছর,
কেউ জানেনা কোথায় এখন অসীম বিত্ত-ধন আর ক্ষমতার ঐ রাজা-বাদশাগণের ওয়ারিশ কিবা বংশধর ।
ছিল মোর সাধ্যে ও নাগালে যেটুকু যাই,
পরের আশা করিনি তবু, লোকের কাছেতো কিছুই কভু আমি নাহি চাই,
আজও না তোমার না কোন লোকেরে জড়াই,
তবু নাই মোর প্রভু কোন লোভ, অভিযোগ, আফসোস, ক্ষোভ, নালিশ বা ফরিয়াদ নাই,  
তোমার করুণার ছাড় ও ঘোষণার সব পুরষ্কার যেন আমি না হারাই, যখন আবার হবে আমার সুদূর অচিনের নব ঐ সফর ।
রোজ হাশরের পারাপারে,
আপদ ও নিদানের ঐ সে মহা হাহাকারে,
সংগে থেকো বন্ধুর মত, সদা কাছে পাই যেন প্রভু তোমারে,
পড়বে বিশাল তালা দয়া, সাহায্য, সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও মানবতার সব দ্বারে,
কত নির্মম ও নিষ্ঠর যখন আহারে, অসহায় ও অস্থীর ঐ কাফেলার কেউই আর ওরে চিনিবেনা কাহারে ।
জানি আমার এ রুহুটার নেই মরণ,
অবনত শিরে আর কেহ নাহিরে শুধু তোমার পূঁজার অদেখা চরণ,
এ জীবন অনন্ত ও অন্তহীন, তুমি রাজন শোধিবে মোর সব ঋন, ওগো মোর দাদনের মহাজন,
প্রভু তুমি শুধু একজন, শাস্তি পুরষ্কার যাই হোক যার জীবন ও মরণ, নিরন্তর মহাকাল চিরতর ।
ছিল মনে কত সাধ ও কতযে আশা,
তোমাতে মান্যতা, বশ্যতা, ভয়, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, ভক্তি, বিনয় ও ভালবাসা,
বেহেস্ত মানে সুখ আর সুখ, শান্তি ও আরামের বাসা,
আর অফুরন নেয়ামত ও ধনে শুনেছি কহে বিজ্ঞজনে, নাকি তা একেবারে কানায় কানায় ঠাসা ।
ঐ এত সুখ আর ধন যদি মোর না হয় প্রয়োজন লাগেরে খাসা,
আমি তা কি করিব তখন, কোথা পাবো লোকজন কাহারে দিবো মনে ঐ ভাবনার হতাশা,
যদি আবারও আমারে তাড়ায়, ফের মন চায় যত অসহায় দীনজনে দান করিবার জাগে ঐ দূর্নিবার  পিপাসা ।
গরীব গোলাম,
আমিযে অতি গুনাহগারও ছিলাম,
তাই বলেকি এত চেয়েও কত কিছু শেষে আর নাহি পেলাম,
আছে ঋনের বোঝা, কি রাজা কিবা প্রজা তাইকি কোথাও নেই যেন মোর এতটুকু দাম ।
পেয়েছো তুমি সাত ছেলেমেয়ে,
আরাম ও সম্মানের থাকা, খাওয়া-পরা ও লেখাপড়ার জীবন পেয়ে,
হয়েছে তিনটে যার মাষ্টারস ও দুটো ডাক্তার,
একটি ইঞ্জিনিয়ার ও ছোটটি সবার আইন পড়ছে, বাসনা তার জজ হবার,
কোন ভাগ্যবান বাবা-মার, কোন্ সে কষ্টটা তোমার, তারচেয়ে বেশী আর কি পাবার থাকে বলো তারপর ।

পর্ব–০৪

সুখ, শান্তি ও আরাম,
মাথা হতে পায় ঝড়ে পড়া যত ঐ ঘাম,
সত্য বলায় ও সুপথে চলায় পরকালে সবে সুখ-শান্তি পায়, যাই হোক দুনিয়ায় কষ্ট-আরাম ও বদনাম কিবা সুনাম ।
আছে তার অফুরান মূল্যবান ফিরতি এনাম,
নবীজীর রওজায় বিশ্বাস ও বিনয়ে যেজন সদা পাঠায় শ্রদ্ধা ও ভক্তির সালাম,
শোকর কোটিবার দরবারে তোমার, দমে দমে নিতে পারছি তোমার কুয়ত, কুদরত, ক্ষমা ও করুণার নাম ।
কেন তবু হয়নি সাধন তার বাসনা পূরণ,
তবু বলেনি সে টলেনি, হে প্রভু কেন গলেনি তোমার কোমল মন,
জানি তোমার নিজের যার কোন ছিলনা, কভু হবেনা এখনওতো নেই তব তার কোন প্রয়োজন ।
সত্য চিরন্তন যা একটু উনা হয়না ও হবেনা কভুও কখন,
দিনভর রোদে পুড়ে কাম করে, বৃষ্টিতে ঝুপড়ী ঘরে পানি পড়ে হেন অগণন,
তব গোলাম নীড়হারা ও বিত্তহীন আর, হে রাজন পড়ে আছে ভান্ডারে তোমার কতনা ধন-রতন,
প্রভু আমার এ ত্রিভুবনে নাহি কেহ আর, বলো তবে কোথা যাই কে দেবে কবে মোর ঐ শত প্রশ্নের উত্তর ।
কতজনের সুরম্য প্রাসাদ বাড়ী,
থাকার মানুষ নাই, বিশ্ব ভ্রমণে দিয়েছে আকাশ পারি,
চোখ পড়েছে ঠিকই তবে কভু মন পড়েনি, দৃষ্টি তখনই সহসা লয়েছি কাড়ি,
কত লোকের নাই একটুখানি মাথা গোঁজার ঠাই, নীল আকাশের নীচে তাই তাদের নিরব আহাজারি ।
নাই প্রয়োজন তবুও তাদের ধন এত কাড়ি কাড়ি,
তবুও কেন বানায় আরও নতুন বাড়ী, যদিও জানে দুদিন পরে যেতে হবে সব ছাড়ি,
কোন হিংসা ছিলনা, ছিল কিছু মনোবেদনা, পারেনি যদিও চেয়েছে শতবার দিতে সে আমার সনে আড়ি ।
অবশেষে সংগী এখন মোরে গিয়েছে ছাড়ি,
দেখেছে সে গোপনে ঘাটেঘাটে জনেজনে আমিযে শুধু বারবার গেছি হারি,
অধম গোলাম এ জগতে নেই কোন দাম, সাধ্য কি আমার কি বিহিত বলো আমি তার করিতে পারি,
ছিল প্রয়োজন তবে ছিলনা লোভ, ছিল তার যত ক্ষোভ আর অভিমান কারো প্রতি নয়তো প্রভু, শুধু আমারই উপর ।  
চমৎকার তোমার সব বিধান ও রীতি,
দিয়ে স্বপ্ন, আশা ও ভালবাসা আর শিখিয়ে স্নেহ, মায়া-মমতা ও পিরিতি,
ছেড়ে বাড়ীঘর, চলে যায় সবে করে হয়ে জনমের পর, রেখে গোপন যাতনাময় যা বলার মত নয় এমন কত স্মৃতি ।
জানিনা সুখ কারে কয়,
তারে যে যেমনে ওরে দেখে ও মেনে লয়,
অল্পতেই যাতে মন ভরে আর প্রসমন, প্রসন্ন ও পুলকিত হয়,
সেখানেই তার আপন ভুবনটার লুকিয়ে রয় সব সফলতা, হার কিবা জয় ও পরাজয়,
এই সুখ বাঁচে নাঁচায় ও নাঁচে, আকুলতায় সকলেই তা যাচে, সংগী আর তার নিজের মনের উপর দিয়ে ভর ।
একাকিত্ব ও নিরবতা,
যাই বলি এ নিঃসঙ্গতা ও বিষন্নতা,
কখনও যাতনাময় কখনওবা লেখায় তারে কবিতা,
কেন এত প্রিয় কথা প্রিয়জন, দিলে জীবনের এ কেমন প্রহসন বারতা,
কখনও ভীষণ ভাবায়, তারে অকুলে ভাসায়, আহারে বলবে সে কেমনে কাহারে সে বিষাদ কথা ।
অল্প চাওয়া,
পাওয়া কিবা না পাওয়া,
স্মৃতিগুলি চুপিচুপি কত রকমের কথা কয়,
মরমে তা যেন তীক্ষ্ণ ভারী পাথরের মত, হয়ে জ্বালাময় ক্ষত আজীবন লেগে রয়,
সেতো আর এখন আমার কেউ নয়,
সারাক্ষণ খুটখাট নানান সাড়া যেন তার কাজ করা ও বিচরণ ঘরময়,
বহেনা পরাণে আহা কেউ নাহি জানে, চুপিসারে আসে ও ঘুরে বেড়ায় কেন তা শুধু আমাকেই সহিতে হয় ।

পর্ব–০৫

জানিনা কখনও মনেহয় কেন এমন,
খুঁজে পেলাম কি জীবনের অমূল্য কিছু অভিনব দরশন,
যত তৈজস আসবাব সবকিছু হেন আবর্জনা যেন তা একেবারে নিস্প্রয়োজন,
তিনযুগ ধরে সাজানো জীবন কেন মনেহয় এখন বিরস, বিরান ও বিজন যেন এক বিশাল ধূ ধূ বালুচর ।
শুধুতো তুমি নেই,
সবইতো আছে আগেরই মত সেই,
কেউ এলে বড় বিরক্ত লাগে, তারে আমি কি খেতে দেই,
শোনতে ও বলতে ভাল লাগেনা, কটাক্ষ ও তীর্যক প্রশ্নের বাণ যেন সব কথাতেই,
সবইতো আছে মোর ঘরে তবু কেন না খেয়েই কত বেলা কাটে, ঝামেলা তার সদা আর সব কিছুতেই ।
একটা শশা ও পেয়াজ কেটে খাওয়া,
তাও যেন সহেনা গায় নিত্য নিজের দুটো কাপড় ধোওয়া ও নাওয়া,
গাঁয়ের যানহীন পথে তিন কিলোমিটার হেটে যাওয়ায়ও কোন কষ্ট নাই কেন বরং যেন সুখ পাওয়া ।
মনেহয় যেন মস্ত বোঝা, ক্লান্তিরও শেষ নেই,
বড় বেশী ভারী কাজ কেন এমন লাগে আজ, যেন মোর পানির গ্লাসটা ধুতেই,
কিছুটা প্রাণ যেন আমি খুঁজে পাই, খাবার টেবিলে পাতা লেপটপ আর এলোমেলো ঐ মোটা বইগুলিতেই,
আমার শূন্য বিছানা ও বিজন নিজের ঘর, একাকিই ভাল লাগে এখানেই সুখ পায় মোর খা খা করা অন্তর ।
বাড়ীর পাশে পথের ধারে,
গাছগাছালির গভীর ছায়ায় ঘেরা পদ্দপুকুর পারে,
সবাইকে আর সবকিছুই গেছ ছাড়ি,
পেয়েছো তুমি মহারাজের ঝিল-বাগানের বিশাল এক কুটুমবাড়ী,
আশা কিবা প্রয়োজনের চেয়ে, ঢের বেশী তুমি পেয়ে তাই কি আমার সনে হয়েছে গোপনে তোমার জনমের আড়ি ।
আমারে নিতেও হয়তো সহসা গাড়ী আসিবে তারপর,
হয়তো অটুকু তোমার জীবনের পাওনা পুরস্কার যেটুকু ছিল তব সালাত ও সবর,  
হলেও তা লোকের চোখের দেখায়, ঘেরা চৌদিক বাঁশের বেড়ায়, নয় তা ছোট্ট মাটির ঘর তোমার ঐ কবর ।
ছেড়ে গরীবের টানাটানির সংসার,
এখন আর নেই তোমার কোন ভাবনা, পেরেশানি, তাড়না ও দায়ভার,
পরের বাড়ীতে ভাড়ায় থাকার বাসা ও সন্তানের টাকার আশায় অপেক্ষার সে পীড়নে তোমায় থাকতে হবেনা আর ।
জীবনের বারমাস ছিল যেন একই রকম তার,
এটা সেটা যখন তখন যদিও চাহেনা মন, নানান কত ফরমায়েসও আমার,
ঝামেলা দুই বেলা ইনসুলিন আর রুটি তৈরী ও খাওয়ার,
টিভির রিমোট লয়ে হৈচৈ কাড়াকাড়ি বিশ্রামে গেলে বিছানে প্রিয় নানী-নাতনী দুজনার,  
স্বামী ও সন্তান শিরতাজ ও পরাণের পরাণ, সবার লাগি কত ভাবনা, কত কাজ হয়েছে আজ অবসান হয়েছো পার ।
ছিল মোর শত দোষ জানি,
ওগো মোর নাখোশ প্রিয়া, হে অভিমানি,
কেজানে এমনি কত রোষ, হয়তো তুমি ক্ষমাই করোনি,
এখন তুমি পরম সুখে অন্য জগতের বুকে, বেশ ভালোই আছো তা আমি জানি,
হিরা, মতি, মানিক ও রতন তোমার জঠরের ধন, রেখো পরম আদরে বুকে ধরে দুহাতে তাদেরে কাছে টানি,
শত হুর এখন তোমার রয়েছে হয়ে তাবেদার, তারা সারাক্ষণ করছে কত সমাদর ও যতন অবিরত নিচ্ছে খবর ।
তোমার হয়েছে প্রাসাদ বাড়ী, আমার হয়নি ঘর,
বিধাতার করুণায় দেখিবো কি হয় কি ঘটে অপরুপ মনোহর,
আর কি কভু দেখা হবে, আমায় নাহয় থেকোই ভুলে একবার যখন ওগো হয়েছি পর ।
তোমার আমার এই দুজনার,
দূরত্ব ও ব্যবধান হয়তো ঘুচবেনা কোনদিনই আর,
বিধাতার মহিমার কি মহান কুদরতি ছাড়,
কোন সে তরী জানিনা কবে তা হবে কেমন করি, ধরবে পারি করবে আমাকে পলকে পার ।
বিনিসূতার ঐ বাঁধনখানি,
হঠাৎ সেদিন টুটে গেছে যা সামাণ্য একটুখানি,
লাভ নাকি লোকসানী আমি তা নহে ভাবি নাহি জানি, তবুও ঐ ডোড়ে রাখবো ধরে দুহাতে টানি সারা জনমভর ।