এটি কোরআনী দরশন ও আদর্শের আলোকে রচিত একটি জীবনের গল্প । একটি অসহায় গাছের কষ্ট ও বিষাদের করুণ উপাখ্যান । যারা আমার উক্ত কবিতাটি পড়েছেন তাদের মনের চোখে হয়তো “পরগাছা” কাব্যে বর্ণিত বা রুপায়িত পরগাছাটির একখানা ছবি এখনও ভাসছে এবং কারোকারো তা স্বচক্ষে দেখারও ইচ্ছে করছে । তাই যারা কবিতাটি পড়েছেন কিবা যারা পড়েননি কিন্ত ঐ পরগাছাটি বাস্তবে দেখতে ইচ্ছে করছে তদের সবার জন্য এবার ফেসবুক এ তার ছবিসহ ঐ কবিতাটি পেশ বা উপস্থাপন করছি । প্রিয় পাঠক/পাঠিকাগণ এবার ঐ কবিতাটি সচিত্র উপভোগ করুন এবং স্বছন্দে আপনার মন্তব্য, পরামর্শ কিবা সমালোচনা লিখুন ।
পর্ব - ০১
আমার বাড়ীর পুকুর পার,
ঠিক দক্ষিন পশ্চিম কোণায় তার,
পাঁচ পুরুষের পারিবারিক গোরস্থানের পার্শ্ব ধার,
ছিল হেথা একটা ছোট খেজুর গাছ ।
দেখা হতো, হতো কত কথা,
মনের যত তার লুকানো কষ্ট আর দুঃক্ষ-ব্যথা,
কদিন পরে পরে,
দিনের দুপুর অবসরে,
ঐ পুকুরের পারে পারে ঘুরে ঘুরে,
দেখতে পেতাম যখন আমি জাল নিয়ে ধরতে হেথা যেতাম মাছ ।
ছিল বয়স তার খুব বেশী নয়,
তখন আমার নীল-সবুজের সনে ছিলনা তেমন পরিচয়,
জানতাম আমি তাতে ফল ধরেনা,
তবে সঠিক বয়সটা তার কত হবে ছিলনা তা জানা,
হয়ত ৪/৫ কি ৬ হাত লম্বা হবে খেজুরের ঐ চারা বৃক্ষখানা ।
কি করা যায় দুঃক্ষ নাই,
একবার এমন বুদ্ধি করা হয়েছিল তাই,
ওটাকে কেটে ফেলে তবে,
একটা আমের চারা হেথা লাগানো হবে,
তাই হবে তাই হবে একবাক্যে একমোখে বলেছিল সবে,
শীত এলে তাতে এসে রসের কলসী দিতো গাঁয়ের এক গাছি ভাই ।
ঐ প্রস্তাবে সম্মতি ছিল আমার,
তাই দেইনি বাধা করিনি তাতে মানা আর,
কিন্তু অবশেষে কেন জানি আর সফল হয়নি সবার ঐ ইচ্ছাটার,
তবু সেকথা শুনে ঐ চারা গাছটার,
শুনেছি আমি আহা সে কি বুকফাটা তার করুণ অস্ফুট আর্তচিৎকার ।
বহুদিন আগেকার সেকথা,
কিছু ভুলে যাওয়া কিছু মনে থাকা সে কত হর্ষ-ব্যথা,
তখন আমি কলেজে পড়ছিলাম,
কালের অতল গহ্বরে কতনা স্মৃতি এমনি আহা হয়েছে নিলাম,
ছোট্ট একটা বটের চারা,
মাথা উঁচূ করে সবে হয়েছিল খাড়া,
সেই প্রথম দেখিলাম বৃক্ষ বাঁচে মাটি ছাড়া,
ধীরে ধীরে সে হয়েছে বড় কই যায়নিতো মারা,
মাঝে মাঝে আসা বৃষ্টির জল স্রষ্টার সে মহান অবদান,
করেছে বারবার তরতাজা ও সবল ছোট্ট দূর্বল ঐ বটের চারাটার প্রাণ ।
পর্ব - ০২
জন্ম হয়েছিল তার ওরে,
ঐ খেজুর গাছের ডগার ভিতরে,
মাটি হতে প্রায় তিন চার ফুট উপরে,
দেখেছিনু সেইযে কবে আজও তা মনে পড়ে,
হয়ত আগমন হয়েছিল তার কোন পাখীর বিষ্টার সনে,
নাহলে কোথা হতে কেজানে এখানে কবে এসে জন্মেছে তা কেমনে ।
খেয়ে তার আশ্রয়দাতার সবটুকু রস,
করেছে তিলেতিলে গ্রাস ঐ তার সারা দেহটা অক্ষম ও অবশ,
তার দেহ ও জীবনের আনন্দ বাস ঐ বটের চারাটাইতো করেছে ওরে সবটা বিনাশ,
পরগাছা হয়ে সে কলংক লয়ে, এক অন্য গাছের কোটরে নিভৃতে ছিল যার বেড়ে উঠা ও বসবাস,
না চেয়ে পেলাম আমি এ কোন জীবন বিষাদ নাকি বিলাস,
আমিতো এ জীবন চাইনি, হে বিধাতা তুমিতো সবই জানো না’ও যদি কেউ মোরে করে বিশ্বাস ।
ঐ খেজুর গাছটা,
প্রাণে বেঁচেছিল, হয়নি তারে কাটা,
তবে বেঁচে গিয়েও প্রাণটা তার, নিরীহ অসহায় ঐ বেচারার, জীবনটা হয়েছিল দুর্বিসহ ও ছারখার ।
কেন মোরে দিয়েছিলে হেথা ঠাই,
এত বড় তব জগতে আরকি ওরে জায়গা নাই,
এ কলংক বদনাম বুঝি সেই হতে আমি পেয়েছিগো তাই,
তাতো আমি পাইনি আজও, তব দরবারে সকাতরে চেয়েছিনু যাই,
জানিনা কেন তুমি দিয়েছিলে উদরে মোর এত ক্ষুধা আর বুকেতে ঐ অনন্ত পিয়াস ।
মাঝে মাঝেই আমি যেতাম বাড়ী,
এমনি করেই এক যুগ কবেযে গেছে কেটে দিয়াছি পারি,
বড়জোর মাসে হবে তা একবার,
তবে আর যাওয়া হয়নি ঐ পুকুরের দক্ষিন পার,
বহুদিন হয়নিযে দেখা কিবা জানা আর, একঘরে দুটি জীবনের ঐ সে সমাচার,
কেমন আছে তারা ও চলছে কেমনে ঐ একমূলে দুটি গাছের জীবন ও সংসার ।
দীর্ঘ দিনের অদেখার ব্যবধান,
তার বাড়ীর পাশেই ঐ গাছ দুটোর অবস্থান,
এদিকে আসেন একটা দারুণ জিনিস দেখে যান,
ছোটভাই হঠাৎ একদা আমারে ডেকে বলে - অ ভাইজান,
কলমে আঁকিলাম আজিকে সে ছবি যা হয়েছিল সেদিন মোর নয়নে দৃশ্যমান ।
দূর্বল সরু ঐ খেজুর গাছটা লম্বা হয়েছে ১০/১২ হাত,
তবে অনুভবে চেতনায় দেখিলাম হায়, কিযে কষ্টে কাটিছে তার জীবনের দিবস রাত,
অতিশয় চিকন তার শীর্ণ দেহ,
কাছে যায়না ফিরে চায়না বাঁচাতে আসেনা তারে ছুটে কেহ,
শাখা ও পাতাগুলি সব তার হয়েছে সরু ও হলুদ বরণ,
খেজুর বৃক্ষটা কহে ওরে নালিশ নহে, নাহি আমি করছি কোন বিচারের আবেদন,
হয়ত আমার পাওনাই ছিল তাই, বলোনা কেমনে পালিয়ে কোথায় যাই নিরবে তা এখন করছি গ্রহন,
ফিসফিস করে বলিছে আমারে ওরে ভাই,
মনেহয় অতি কাছেই আমার মরণ, বাঁচার বুঝি আর কোন আশা কিবা পথ নাই ।
পর্ব - ০৩
বাঁচিবার ছিল বড় সাধ,
বুকভরা তার কত হাহাকার ও বিষাদ,
এ যুগে কে শোনে কে বুঝে ওরে বলো কার আর্তনাদ,
বসে বুকে চড়ে যেন অষ্টহাতে ঝাপটে ধরে একোন আপদের বাধ,
এ বিশ্ব চরাচরে জীবনটা ওরে যেন কারো কাছে সাজানো রঙীন এক ঝলমলে প্রাসাদ ।
কারো তা অবার,
হেন এক নির্মম কারাগার,
যার নাহি ওরে কোনই জানালা কিবা দুয়ার,
নয় শুধু হাতেপায় যেন ওরে সারাগায় জড়ানো এক লৌহ জাল,
অক্টোপাশের হাতে পড়ে, অকারণেই মিছে লড়াই করে বাঁচার চেষ্টা করা মন্দ কপাল,
নাই একফোটা জল, নিষ্ঠুর এ ভুতল, একটু খোলা বাতাস যেন বড়ই যাতনাময় এক মরণ ফাঁদ ।
ঐ বটগাছটার অসংখ্য মোটা মোটা শিকড়,
নিমকহারামীর এমন নজীর আর দেখি নাই বড়ই সে নিষ্ঠুর ও পর,
চারপাশ থেকে ঘুরিয়ে পেচিয়ে ধরে ঐ খেজুর গাছটারে শেষে বেয়ে নেমে গিয়ে ঢুকেছে মাটির ভিতর ।
নহে সে বন্ধু কিবা ভাই,
বুঝেছি এখন ওরে তা আগে বুঝি নাই,
যদিও তার চার হাতপায়ে মোর সারা গায়ে ধরেছে জড়াই,
সেদিনের ঐ ছোট্ট বটগাছটা,
ছড়িয়ে তার অসংখ্য ডালপালার ঝাটা,
হয়েছে এখন অনেক বড়, কাবু করে ঐ খেজুর গাছটারে,
গিয়েছে ছেড়ে অনেক উপরে, রেখে নীচে তারে চেপে ধরে জোর করে আরকি পারে,
প্রহরী, পেয়াদা ও সিপাহীর কাছে হারে,
দেখেছি কত রাজা উজির শেষে ঘুরে বেড়ায় দেশে দেশে হাটবাজারে পথেঘাটে দ্বারে দ্বারে,
এইতো বিধির বিধান ওরে,
কেউ প্রাসাদে কেউ গাছতলে থাকে পড়ে,
নাই সামাণ্য ঠাই একটা পাতার নীড়, ঘুরে বেড়ায় বনবাদারে মরুবালুচরে,
ঐ ভেদ জয়-পরাজয় ও হার-জিত আহারে,
কেমনে ঘটে হয়, কেন সবার লাগি তা এক নয় কে বুঝিতে পারে,
বিশাল এ ভুবন ও তার কোটি সৃজন আহারে,
তরুলতা ও জীবের লালন-পালন জীবন ও মরণ সাজানো তা এক বিচিত্র মনোহর বাহারে ।
যতই সে ক্ষুদ্র হোক, আছে যার প্রাণ,
এ জগত কল্যাণে রয়েছে কতনা তার দান কিবা অণুদান,
বায়ু দেয় আয়ু বাড়ায় ও বাঁচায় প্রাণ,
পরকে মধু বিলায়,
ফুলের সুবাসে ভরায় চারপাশ সহস্র ফল ফলায়,
কিছু তার নিজে নাহি খায়, কভু চাহেনা মূল্য কোন বিনিময় কিবা প্রতিদান ।
সবারই দুঃক্ষ বেদনা ও কষ্ট আছে,
কে শুনিবে কে বুঝিবে, কে করিবে উপকার কিবা বলবে তা কার কাছে,
তাইতো তাদের বদন মলিন,
পরম বন্ধু ও পড়শী হয়েও বৃক্ষরা বড় অসহায় তারাযে বাকহীন,
তাইতো এ সবুজ প্রকৃতি ও সকল সৃষ্টির কাছে দিনদিন, বাড়িছে মানুষের রয়েছে যে অদেখা অসীম ঋন,
হঠাৎ বদলে যেতে পারে সময়,
কেজানে ওরে কার, জীবন কখন কেমন হয়,
ওরে তাই রাজ কোষাগারে ভাই করো সবে করতেই হবে কিছু সঞ্চয়,
নাজানি ওরে কখন কার ফিরে যাবার আসে সমন, হঠাৎ হয় উত্থান কিবা ভরাডুবি ও পতন ।
পর্ব -০৪
ওরে ভাই এ দেহে থাকিতে প্রাণ,
অসহায় জনে গোপনে করো সামাণ্য দান,
ওরে জগতের যত বিদ্যান ক্ষমতাশালী ও ধনবান,
করো পরের তরে কিছু সেবা উপকার মংগল ও কল্যাণ,
বিশ্বজোড়া উম্মুক্ত পাঠশালা থেকে আজই করো সমাপন তব পাঠখান,
এ জীবন সময়টুকু না করে অপচয়,
যা আছে তোমার ওরে নাও গোচরে আমলে দেখোনা হিসাব করে তা মোটেও তুচ্ছ নয়,
ওরে অমূল্য আমানত ধন,
বিধাতার অপার করুণার দান তব মাটির দুনিয়ার এ জীবন,
সেকথা করে স্বরণ, করো হেন গবেষণ,
হয় যেন নিজেরে চেনা ও সব জানা আর এ সফর হয় তব সফল ও সবটুকু সাধন ।
বড় সাধ ছিল মনে,
রঙ মাখানো তব এ মাটির ভুবনে,
সাজাবো কানন আমি শত শোভা আর সৌরভে,
হবো অনেক দামী ও মরিব যখন আমি সে মহান সফলতার গৌরবে,
আকাশ বাতাস সাগর নদীর দিগন্তজোড়া এ ধরার চারপাশ করিয়া তোমার আলো ও ভালোর চাষ ।
কেন হলেম আমি পরবাসে এক নগন্য পরগাছা,
বিধিরে যারা ভালো কাজ খুঁজে ফিরে তাদের সবারে ঐ পরিচয়ে তুই বাঁচার মত বাঁচা,
নাহলে ওরে মেঘের ভেলায় চড়ে,
ভেসে ভেসে লক্ষকোটি তারকার দেশে উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে,
তব সব অদেখা সৃজন দেখিতে আমার বড় ইচ্ছে করে চায় মন, ফেলে রেখে গিয়ে এই মাটির খাঁচা ।
জানিনা এ জীবন মম কেমন দান হে প্রভু তোমার,
বলে অদেখা চোখের জলে, পায়ের তলে একটুখানি মাটি নেই যার,
ঐ চোখ দূরে দেখিবার,
সাধ আছে কোন সাধ্য নেই, কোন পাখা শূন্যে উড়িবার,
মম হাসি পায়,
মন চায় তোমারে মেপে দেখায়,
এমন আজব ছোট্ট পরিসর যে চাদরখানা,
যা দিয়ে পা ঢাকিলে আর হায়রে মোখ তার ঢাকেনা,
তাই দেখে আর খেজুর গাছে বলে, আমার ওরে কোন কষ্টই থাকেনা,
বিদ্যান ধনবান ও ক্ষমতাবান সব মানুষের, চারিধারে সীমানার ঘের দীনতা আর অক্ষমতার ।
পর্ব - ০৫
ওরে আমি মেনে লয়েছি তাই,
মোর কোন অভিযোগ অভিমান কষ্ট কিবা ক্ষোভ নাই,
একটু শুধু লোভ আছে,
সেতো তোমার জানা বলেছি আমি তোমার কাছে,
যদিগো অদেখা অজানা তোমার সব অরুপ সৃজন বাহার দেখিতে পাই,
ভেবে তব করুণার জালেতে ঘেরা মোর লাগি তাইতো হবে সেরা নেয়ামত দান ও উপহার ।
ছিল কি প্রয়োজন বলো ছোট্ট ঘরে,
হাতপা বেধে ওগো রেখে আমারে বন্দি করে,
যে জীবন মাত্র কিছুক্ষণ তাও আবার পরের আশ্রয়ে বাঁচার,
কারো মোখপানে চেয়ে থেকে কিবা আশা করে বসে থাকা তার সহযোগিতার ।
কই কেউইতো এলোনা করিতে ত্রাণ,
একি সবাইযে দেখি আপন স্বার্থে তার হয়েছে কঠিন পাষাণ,
বলো কি নাই তোমার কিবা তুমি কি পারনা, মহাপবিত্র চীরসত্য তব বাণী পাঠ ও জবান,
কায়ক্লেশে চেষ্টা করেও কায়ঃমন,
মোর সাধনা বাসনাগুলির হয়নি আজও সাধন কিবা সমাপন,
এক পরাজিত দাস দীনতা যার ঘিরে ছিল চারপাশ তব সৃষ্টির কল্যাণে নেই কোন অবদান,
তোমার দেশে সফরে এসে হলোইতো অবশেষে মোর জীবনটা বিফল আর মহামূল্যবান এ প্রাণটা সংহার ।
আমিই বয়সে বড় তাই,
ছিলেম দেখায়ও অনেক লম্বা ভাই,
তাই বলে কই আমি কখনওতো ওরে করিনি বড়াই,
দিয়েছি মোর দেহ বাকলে তার জন্ম, বসবাস ও বড় হবার ঠাই,
কেমন নিমকহারাম এত পাওয়ার সামাণ্য একটু দামও কিরে এ জগতে নাই,
আশ্রয়দাতারে জোর করে ঘাড়ে ধরে তিলেতিলে করিছে বিনাশ তার সবটুকু রস শুষে খাই ।
এখন আমার অবস্থা এই বুঝি যায় যায় প্রাণ,
যে রাজা এত মহান ও যার সব দান, তার সৃষ্টি কেমনে হয় এত বেঈমান,
করলাম লালন পালন করে আজীবন এত ত্যাগ ও এত বিসর্জন, এই বুঝিরে তার পুরস্কার ও প্রতিদান ।