ভূমিকা – আল্লাহর বিশাল সৃষ্টি জগতের শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ । তাই আল্লাহপাক তার প্রতিনিধি রুপে লাখো নেয়ামতের বিনিময়ে ছোট্ট এক জীবন দিয়ে মানুষকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন । আর এটাই হলো মানুষের সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্বের যোগ্যতা এবং একমাত্র প্রধান কাজ ও দায় । আমরা সবাই জীবনে অনেক পড়েছি ও অনেক কিছু দেখেছি । যার বয়স হোক যাই আমরা বলে থাকি এমনটাই যে, এই বয়সে আমি অনেক দেখেছি, জেনেছি ও শিখেছি । আসলে কি ঠিক তাই, তাহলে বলুন আমাদের নিজ জীবনটাকে দেখা হয়েছে কি ? মস্তবড় বিদ্যান হতে পারলেও আমরা সত্যিকার অর্থে জ্ঞানী ও প্রকৃত মানুষ হতে পেরেছি কে কে বা কয়জন ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় বই পড়ে কিবা জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আসলে কি শিখেছি । আমাদের নিজের জীবনটাকেইবা আমরা কতটুকু দেখেছি, জেনেছি ও চিনেছি এবং তা থেকে যা শিখেছি তা কোথায় বা তার সারকথাইবা কি । বিদ্যা ও জ্ঞান যতটুকু আমার অর্জনে আছে বা জমা হয়েছে তা বুকে নিয়ে বসে থাকলে হবেনা তা অপরকে দান বা বিতরণ করতে হবে ।
আরব দেশে সদ্যজাত সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ পান না করানো, কন্যা সন্তানের জন্ম হলে জীবন্ত মাটিতে পুতে ফেলা ও ভারতে পতির মরণে স্ত্রীর সতীদাহ প্রথার নামে জীবন্ত নারীদেরকে পুড়িয়ে মারা, সে নাহয় শত শত বছর আগের কথা, এবং অতি সভ্যতার এ যুগেও বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে ছাত্র-শিক্ষক ২০/৩০ জনে মিলে উল্লাস করে একজন তরতাজা মানুষকে হত্যা করার নির্মম ও বিভৎস্য ঘটনার ঐ ব্যক্তিরাওতো মানুষ হবার দাবীদার । তবে আসলে মানুষ কারা, মানুষের সঙ্গাটাইবা কি ? দুনিয়ার এ মানব জীবন আসলে মানুষের এক কর্ম্মশালা যা ছোট-বড় সহস্র পরীক্ষার সমাহার, মরণের পরজীবনে শতভাগ সঠিক ফলাফল যার নিশ্চিতই পাওয়া যাবে তার ।
জীবনের পিঠেই সারাক্ষণ চড়ে বসে আছে অদৃশ্য মরণ, তা কি আমরা কভু ভেবে দেখেছি ? যদিও আসলে মরণ বলে কিছু নেই । মরণের নামে জীবনের সে এক নতুন সফর, অচিন ভিনজগতে স্থানান্তর ও আমাদের এ জীবন ও দেহ কাঠামোটার এক অভিনব রুপান্তর । নাইবা হলো তা মরণ, তবুওতো দুনিয়ায় নিজের সবকিছুর মোহ, মায়া ও মালিকানা ছেড়ে ও ফেলে রেখে দিয়ে সংগে করে কি নিয়ে হলো চিরতরে তিরোধান । তাই অল্প কিছু সময়ের জন্য আমাদের রুহুটাকে দেহ থেকে আলাদা করে না নিলে কবরে যাওয়াতো দূরের কথা কেউই গোসল, কাফন, জানাজা ও দাফনের উদ্দেশ্যে ঐ মরণ খাটিয়ায় একবার শুতেই চাইবেনা । তাই মরণ নামের এ সহজ ও সুন্দর ব্যবস্থা । মরণে এ জীবনের শেষ নয় বরং এক নতুন জীবনের শুরু । দুনিয়ার আমাদের এ ছোট্ট জীবনের ওপারে যে জীবন তা অনন্ত ও অসীম এবং দুই ধরণের – ক) পরম সুখ, শান্তি, আরাম ও আনন্দময় স্বর্গবাস আর খ) জলন্ত আগুনের দু:সহ জ্বালাময় সুবিশাল কারাগার এ বন্দি এক জীবন্ত লাশ । সুনিশ্চয় মানুষের দুনিয়ার জীবনের সমুদয় কর্ম্মের উপরই মরণের জীবনে তার ঐ ফলাফল শাস্তি কিবা পুরস্কারের ফয়সালা হবে বা হয়ে থাকে ।
আমরা যদি আমাদের এ জীবনটাকে একবার ভালকরে দেখার কাজটা সম্পন্ন করতে পারি বা করে থাকি তাহলেই নিজেকে চেনা হবে – কে আমি ? অত:পর আমার স্রষ্টা মহান আল্লাহপাক কে চেনা ও জানার কাজটাও খুব সহজ হয়ে যাবে ও যায় । এজন্য একটু সময় দিতে হয় । একটু সাধনা ও মনন বা গহীনে গবেষণ প্রয়োজন । তাহলেই অদৃশ্য ঐ তৃতীয় চক্ষুটার ঢাকনা খুলে যাবে । কবির ভাষায় তার দার্শনিক চোখের আরশিতে আর আপনাকে দেখতে হবেনা । আপনি নিজেই তখন এমন অনেক কিছু দেখতে পাবেন যা সবাই দেখেনা বা দেখতে পায়না । আর শুধু দেখা নয়, হবে নতুন কিছু চেনা, জানা ও মহামূল্যবান অনেক কিছু শেখা । বিজ্ঞ ও বিচক্ষণ পাঠক-দর্শকগণের জন্য হতেও পারে এটি জীবনের বিশদ বিবরণ সমেত ঠিক তেমনই একটি শিক্ষণীয় কাব্যগল্প ।
পর্ব – ০১
বাঁশের তৈয়ার,
ছোট-বড় ও মাঝারি হয় যার পরিধি ও আকার,
মাঘে মাঝে বেতের বাঁধন ও জোড়া, একমন মাছের ধারণ ক্ষমতা তার ।
ক্ষুদ্র জেলেরা মাছ আনে ধরে,
রাতভর জাগি অনেক কষ্টে ৩/৫/৭/১০ কেজি করে করে,
আর ঘাটে বসে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা, আড়তের দালাল, কমদামে কিনে তাদের কোড়া ভরে ।
কে আমি, কে আপনি ও সে বা তাহারা,
শান্তিময় জীবনের লাগি বানিয়েছেন বিধাতায় জোড়ায় জোড়া,
কেমনে চিনিবে স্রষ্টারে ঐ হতভাগারা,
সব থেকেও হায় জগতে রইলো যারা মূর্খ, অন্ধ, বধীর ও খোড়া,
ধনী-গরীব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত জগতের যত পেশাজীবি সদা বেঁচা-কেনা করছে যারা ।
সকলেরই সমমান,
বাদ দিলে সব জাত-ভেদ ও ব্যবধান,
একই মাটির দেহখান, যেথা সদা একই খুন বহমান,
ছোট্ট একটা মাটির ঘরে বানিয়ে দিয়ে করে পরাধীন এক বন্দি সমান,
এক খোদার সত্তা ঐ রুহুটা মাটির মানুষেরে শুধু অল্প কিছুদিনের তরে করেছেন দান ।
করে মানুষের অধীন,
সেইতো ইনসানের মস্তবড় দায় ও ঋন,
ওপারে হলেও অনন্ত, দুনিয়ায় তার শুধু অল্প কিছুদিন.
অ মানুষ জানো নিজের অস্তিত্ব ও পরিচয় খান, সবাই মানুষ ও আসলে সবাই সমান ।
কে ছিল জগতের প্রথম মানুষ,
কেনো আজ তেজে সব ভয়-লাজ উড়ছো হয়ে রঙের ফানুস,
আমরা সবাই মাটির মানুষ ঐ একই বাবা-মার, মা হাওয়া ও বাবা আদম এরই সন্তান ।
আমাদের আদি ও প্রথম পিতামাতা,
মূর্খ ও অন্ধ বিনা সবারই জানা দুনিয়ার যত কলম,কাগজ ও বই-খাতা,
বিবরণ সাবলীল রয়েছে তার দলিল, করছে ও করিছে এ সত্য সদা প্রমাণ, দুজনই ছিলেন মুসলমান ।
তা কারো বিশ্বাস না হলে,
আবু হকে তাই সবারে ডেকে ডেকে বলে,
যদি সাহস থাকে শিরে ও বুকে, কেহ তা চাও ও পারো তবে আসো তাহলে, ঐ সত্যগুলি খন্ডাও দিয়ে প্রমাণ ।
খোদ খোদার হাতে তৈয়ার,
বেহেস্তে জন্ম ও বিয়ে হয়েছিল যে দুজনার,
শুধু মাটি, পানি, আগুন ও হাওয়া বা বায়ু উপাদান ছিল যার,
ঐ দুজনের জন্ম ও সৃষ্টিতে হয়নিতো প্রয়োজন ওরে তাদের কোন পিতা-মাতার,
এমনই কুয়ত, কুদরত ও কেরামত ঐ স্রষ্টা বিধাতার, আর তার সব ইচ্ছা ও বাসনাগুলি এতই সুন্দর ও সুমহান ।
দরিদ্র সতীস চন্দ্র দাস,
খুবই ভালমানুষ, করতো এক অজ পাড়াগায়ে বাস,
পেশায় মৎস্য শিকারি, বয়স ষাট মাঝেমাঝে থাকতে হতো আধপেটাহার কিবা উপবাস ।
স্ত্রী মৃত ও পুত্রহীন, ঘরে এক যুবতী রুপসী কন্যা,
করতো সে মায়ের ছিল যত সংসারের ঐ সব শত কাজ ও রান্না-বান্না,
পেটের ক্ষুধা ও দেহের ভোখ দুটোই তার ছিল হার নামানা,
বয়স হয়েছে মাত্র কুড়ি, তাতেই লোকে বলে বুড়ি, হয়তো গরীব বলেই তার বিয়ে হচ্ছিলোনা ।
পর্ব – ০২
বুঝি তারাও হয়েছে বড় অসহায়,
কেজানে এখন তারা, কে কোথায় কি করে, পায় ও খায়,
যত সব জলাশয় যখন বিত্তশালী ও রাঘব বোয়ালদের দখলে ও আওতায়,
কেন দিন-রজনী কাটে দু:সহ পেরেশানি ও ভাবনায়,
জীবন হয়েছে কঠিন, আছে ছোট-খাট কিছু কিছু ঋন, দুজনের সংসার চালানোই কেমনে হলো এত বড় দায় ।
এলাকার যত পুকুর, দীঘি ও খাল-বিল,
ফলন্ত গাছে কেউ ছুড়লে যেমন শুধু একটা মাত্র ঢিল,
বনের যত মাছ খেয়ে বাঁচা পাখীগুলো মাছরাঙা, পানকৌড়ি ও চিল,
একটা বড়শী ফেললেও ঠিক তেমন পড়বে পিঠে যেন অগণিত লাথি, ঘুষি ও কিল ।
শীতে বিদেশী পাখীরা এখন আর আসেনা বেড়াতে এদেশে,
দেশী পাখীরাই পেটভরে খেতে পায়না, হয়তো এ খবর জেনেছে অবশেষে,
আমার নেই জানা, মানুষের কেন আকাশ ছোবার মোহ ও বাসনা, মুসাফির হয়ে ভিনদেশে এসে ।
৬/৯ মাস বছরের পর বছর,
আহা কজনেইবা রাখে ও জানে সে বেদনার খবর,
মনেহয় হেন তারাই যেন সবকিছুর মালিক আর, তাদের রাজ্যে আমরাই যাযাবর ও পর ।
চারদিকে কৃত্রিম জলাশয়ের মাছের খামার,
ধানী জমিগুলিতে পানি ধরে রেখে হয় মাছের আবাদ তার,
কত ঘরে মাছ আছে, চালের চড়া বাজার তাই বুঝি ভাতের নিরব হাহাকার,
খাটায় তারা জবর দখলের চমৎকার অধিকার, যে জুলুমে নিমেষের ঘুমে রাজ্য ও রাজত্ব হয় ছারখার ।
কি করা আমরা খাচ্ছি তাই,
তাছাড়া দৃশ্যমান আরতো কোন উপায়ও দেখি নাই,
ভোক্তারা কত অসহায়, নানাবিধ রাসায়নিক উপাদানের মিশ্রণে হয় মাছের চিকিৎসা ও খাবার ।
কি বিহিত তার কবে হবে আর,
পায়না ধান ও পায়না টাকা ঐ জমিগুলি যার,
মজলুম কি কভূ পায় তার সঠিক পাওনা, কিবা নায্য বিচার,
প্রভাব আর ক্ষমতার বলে সত্যটা চিরকালই ঢাকা পড়ে রয় আর, মিথ্যাটারই যেন জয়জয়কার ।
সময়ের এক এমনই হাল,
তবে কি হয়েছে বিধাতার মনে করুণার আকাল,
পুড়ে কি গেছে সারা বন, নাকি ভেঙ্গে পড়েছে বৃক্ষগুলির সব ডাল,
নাহলে কেন যেথা পাখীরা ভাবেনা, মানুষ কেন ভাবে হায় কি হবে আর কিবা কি খাবে কাল ।
নদীতেও যেন আর তেমন মাছ নাই,
ঘরে কর্মঠ ও রোজগারী ছেলে, তবে কে করিবে কামাই,
গায়ে নেই আগের মত জোর, কোন বড় জাল, বুঝি জীবন এত কঠিন হয়েছে তাই ।
একটা ভাল ছেলে ছিল কর্ম্মহীন বেকার,
স্বজাতি ও স্বগ্রামের, এক দরিদ্র সূতার সাতজন পোষ্যের বড় পরিবার,
আমার মেয়েটার সনে, গোপনে ভাব হয়েছিল তার,
তবুও না দেওয়া গেলো বিয়ে, না তারে আমার পেশার কাজে নেওয়া, তাই শেষ নাই দূর্ভাবনার ।
কেজানে কি বলবে লোকে,
কেমনে ওরে কে রাখবে ধরে সব নিন্দুকের মুখে,
এমনিতেই বড় কমদামী, শেষে যদি আমি আরও ছোট হয়ে যাই সমাজের চোখে ।
পর্ব – ০৩
দেশ বিভাগের আগের একদেশ,
অবশেষে একদা নিরবে ঐ সুবোধ ছেলেটি রমেশ,
রমেশের সমবয়সী অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু যে দুজনের হৃদ্যতা ছিল বেশ,
খানপাড়ার আব্দুর রশিদ দুজন ছিল দুধর্মের, কই তবু তাদের সম্পর্কটা হয়নিতো শেষ,
তার বিরহ বেদনে নাকি জীবিকার টানে, কোন কারণে হায় কেজানে, আচমকা একদিন হলো নিরুদ্দেশ ।
নাও বাওয়া ও জাল টানার,
জন্য ছিল একটা যুবক ছেলের খুবই দরকার,
কি বলবো বিবরণ রশিদ ছেলেটার,
সে’ও ছিল ঠিক রমেশেরই মত অতি দরিদ্র ও বেকার,
তবে দেখতে যেমনই সুন্দর, তেমনই চমৎকার তার চলন, বলন ও ব্যবহার ।
বিমুগ্ধ ঐ মেয়েটার,
বিধাতার ভেদ বুঝা আসলেই অতি ভার,
নিরবে কাঁপানো ঘর, আবারও উঠিল তুমুল ঝড়, ঐ দুজনার ভাললাগা ও ভালবাসার ।
হলো তা জানাজানি,
সারা পাড়ায় ও গায়ে একে দুয়ে কানাকানি,
পাড়া ও গায়ের সকলের জাত-মান লয়ে যেন তাই শুরু টানাটানি ।
অবিরত চলছে কত সালিস দরবার,
একটা বিহিত নাহলেই নয়, এবার করতেই হবে শক্ত ও সঠিক বিচার,
গ্রামবাসী মিলে আচমকা এক বিকালে এসে ঐ রশিদ, মিনতি ও তার বাবা সতীসকে দিলো প্রচন্ড মার ।
মার খেয়ে রশিদ ছুটে পালায়,
তা হায় যদিও কোনমতে সয়ে যায় মিনতির দেহটায়,
গণপিটুনির ঐ মার খাবার পর, ব্যথা-বেদনায় এলো ভীষণ জ্বর বৃদ্ধ বাবা সতীসের গায় ।
একেতো হাড় কাঁপানো জ্বর,
অসহায় বেচারা তার উপর প্রচন্ড ব্যথায় কাতর,
তারপর ৮/১০ দিন জ্বরে ভোগার পর, হায় বিনা চিকিৎসায় আহা মরণ হলো তার ।
ঘটনা শত বছর আগেকার,
গ্রাম পঞ্চায়েত বিয়ে দেবে মিনতি মেয়েটার,
আর যে বিয়ে করবে, সে পাবে বাড়ী-ঘর যা কিছু আছে সব তার বাবার ।
সারা গ্রামে পিটিয়ে ঢাক,
জানানো হলো, বিয়ের আয়োজন সব ঠিকঠাক,
এক বিপত্নীক পঞ্চাশোর্ধ বৃদ্ধ হলো রাজি, তা কি দোষের নিশ্চয় রয়েছে তার একজন স্ত্রীর দরকার ।
সন্ধা বাতির ১/২ ঘন্টা না হতে পার,
রাতের খাবার খেয়ে, কেরোসিন প্রদীপ নিভিয়ে সময় ঘুমাতে যাবার,
সবাই এখন ঘুম, এইতো গেরাম চারদিক গহীন নিঝুম, ঢেকে দিয়েছে বাড়ী-ঘর সবার ঘন অন্ধকার ।
ভুলে বিপদের কথা ঠেলে অন্ধকার,
বিবেকের কাছে হলে হার, রশিদ এলো জানিতে সত্য সব ঘটনার,
কাল বিলম্ব নাহি সমীচীন আর,
দেখিতে মিনতিকে তাই এখনই যাওয়া দরকার,
কষ্টের ঐ খবর পেয়ে ছুটলো ধেয়ে, হঠাৎ যখন মনে পড়েছে বন্ধুর সনে করা তার ঐ অংগীকার ।
পর্ব – ০৪
সব শুনে, বাজ পড়িল মাথায়,
ছোট্ট একটা বাসা ভাড়া নেওয়া হলো দশ টাকায়,
বুদ্ধি হলো তার সনে পালিয়ে যেতে অনেক দূরের শহর কলকাতায়,
যত বিপদই হোকনা কেন সাহায্য করিবেন আল্লায়, হবেই হবে তার একটা বিহিত উপায়,
চাহিলে মানুষ পাহাড় ডিঙাতে পারে, নিয়তি কিবা নিদানের কাছে কভু নাহি হারে, অনেক কিছুই পায় ।
প্রচন্ড ব্যথা ও জ্বর তার সারা গায়,
বেঁচে দিতে তার বাবার নাও ও জাল পঞ্চায়েতের অনুমতি চায়,
গঞ্জে গিয়ে চিকিৎসার জন্য তার, এখন হয়ে পড়েছে অনেক টাকার জরুরী দরকার ।
ইতিমধ্যে মিনতির বিয়ে হয়ে গেছে,
নগদ টাকায় তার বাবার জাল ও নাওখানি দিয়েছে বেঁচে,
প্রায়ই রাতে এসে, মিনতির কাছে রশিদ সব খবরই পায়,
প্রবীণ ঐ বাবুর সনে, বিকালে আসে আর বাজার করে খায়, সকালে আবার সে নিজ বাড়ীতে চলে যায় ।
এখন তারা থাকে কলকাতায়,
নতুন পরিচয়, নিতাই বাবুর স্ত্রী মিনতি রায়,
এখন সে মিনতিকে হেফাজতের জিম্মাদার,
প্রথম বিয়ার বাবুর সনে হয়নি তালাক কিবা একশত বিশ দিন পার,
তাছাড়া মাথায় তুলে নেওয়া তার দায়, কেমনে সে ভুলে যায় বন্ধুর সনে করা ঐ অংগীকার ।
স্বামী-স্ত্রী নয়,
সেতো শুধু এক অভিনয়,
মিনতি পড়ে আছে কষ্টের এক বিষম ফাঁদে,
পাশে থেকে শুয়ে কিবা দুটি পায় ধরে জড়িয়ে তাই রাতভর কাঁদে ।
শেষে আদালতে গিয়ে করে নালিশ ও চায় বিচার,
এক ঘরে থেকে কোন যুবক-যুবতীর নিজেকে সামলানোর বলো সাধ্য কার,
দুজনে বিয়ে করা ও তার নিজের লাগি, কেন রহিবে সে ভুখা রাতভর জাগি, চায় স্ত্রীর মর্যাদা ও অধিকার ।
মানুষতো নয়, যেন এক লৌহ মানব,
কেমনে সে নিজেরে সামলায়, থেকেও পেয়েও হাতের কাছে সব,
যতই যাচি টলেনা ও গলেনা, কেমনে সহে জানিনা রহে সে পাথরের মতই কঠিন আর নিথর ও নিরব ।
আমার ঐ জবান ও আমানতদারি,
দেহের ক্ষুধার কাছে কেমনে বলেন, হুজুর আমি যাইগো হারি,
শুনে বিজ্ঞ আদালতের রায়,
অবাক বিস্ময়ে হতবাক হয়ে সবে যখন আবার সম্বিত ফিরে পায়,
বিনয়ে আদালত দাড়িয়ে তাদেরকে শ্রদ্ধা জানায়,
দুজনেরই নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীন অধিকার সহ, এভাবেই শেষে তাদের দুজনের বিয়ে হয়ে যায় ।
যদি সত্যই হয় আদি ও প্রথম জন্ম মুসলমান,
তবে কেমনে, কেন ও কবে হলো, কে বানালো এত জাত হিন্দু বৌদ্ধ ও খৃষ্টান,
রয়েছে যার শাসনের অগণিত মহাকাশ, জগত ও জাহান,
যে মহান স্রষ্টা, প্রভু, মালিক, দাতা ও পালক বানালেন সাত জমিন, সাত সাগর ও খুটিহীন সাত আসমান ।
নহে কোন ভেদাভেদ তাই,
একই পিতা-মাতার সন্তান সবে মোরা ভাই ভাই,
তাই জানা দরকার, সাম্য ও মমতার কোথায় গলদ তার কে খোদা, কে ঈশ্বর আর কেবা ভগবান ।
তবে কোথায় ভেদ ও বিভেদ যদিরে আমরা হই,
আজীবন আমরণ আমরা সবাই সবার সুহৃদ ও সুজন বন্ধু হয়ে রই,
যখন একই পিতার সন্তান একই লক্ষ্য, পথ, ঠিকানা ও একই প্রভুর পোষ্য গোলাম হই,
তারা কয়জন, কি তাদের পরিচয়, আল্লাহ ও খোদা যদি একই হয় তবে তার কি তফাৎ বা কোথায় ব্যবধান ।
পর্ব – ০৫
জানা হয়েছে কি কভু,
আসলে কে স্রষ্টা, দাতা, পালক ও প্রভু,
কেন এত কষ্ট করে, অর্থ ও মূল্যবান সময়ের অপচয় তবু ।
আকাশবাণীর পাঠ,
পবিত্র তার এ মহাবিশ্ব জমিন মাঠ,
শুনেছি নাকি পার হওয়া যায় নিমেষে অনায়াসে কঠিন সব ঘাট ।
সব হালতে ও সদা সব জায়গায়,
কোন পূজায় কি লাভ আর, কোন অর্জন বা কোথায় কি পাওয়া যায়,
বিধাতায় শুধু তার গোলামের বিশ্বাস, ভক্তি, বিনয়, নির্ভরতার মনের চাওয়া ও দেহটার পবিত্রতা চায় ।
জগতের যত মসজিদ, গীর্জা ও পেগোডায়,
যদিরে জীবনের সব হারিয়েও মরণে তারচে অনেক বেশী পায়,
কি ক্ষতি যদিরে হয় সব সাধন, এ দেহমন নত শিরে মন্দিরের আঙ্গিনায় পড়ে শুধু একখানা সিজদায় ।
ফিরে গিয়ে ঘরে,
স্বেচ্ছায় মিনতি কিছুদিন পরে,
সারাক্ষণ শুধু সে চুপ করে কি যেন খুঁজে মরে,
যাদুর ভালবাসায় যখন তার দেহ-মনটা কানায় কানায় গিয়েছে ভরে,
নিজেই শেষে হায় নানা দ্বিধা, দন্দ ও ভাবনায় পড়ে একেবারে গহীনে ডুবে ঘুরপাক আর হাবুডুবু খায় ।
শেষে যদি পড়ে গিয়ে এক ও একক,
পরম পাওয়া ষোলআনা লাভ ও জিত, যেথা নাহিরে একতিল ঠক,
প্রসারিত ও বিরাজমান ঐ করুণা সবে পায়, যে যেথা ও যেমনে চান তার সারা দুনিয়ায়,
আসল খোদার অদৃশ্য পায়, প্রভু তার খোশ দিলে তা কবুল ফরমায়, তবে আর কে ছুতে পাবে তারে ও ঠেকায় ।
ভেদ বুঝা ভার সবখানে সদা কি ঘটে হয় কার ইচ্ছা বা ইশারায়,
পরমানন্দে শান্তি-সুখে ঐ স্বামীর বুকে তার রাত কাটে দিন যায়,
সপে দিয়ে নিজেরে পরম বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, ভক্তি, বিনয় ও মমতায়, সব নাম বদলায় মুসলমান হয়ে যায় ।
দারুণ এ খবর যখন রটে যায়,
সবখানে লোকের মুখে মুখে, রেডিও ও পত্রিকায়,
একদিন রমেশ এসে কোর্টের বারান্দায়,
সে এখন মস্তবড় উকিল রয়েছে বেশ ভাল অবস্থান ও অবস্থায়,
কায়:মনে তাদের দুজনের নব জীবনের সব কল্যান, মঙ্গল ও সুখ-শান্তি কামনায়,
নিজে পরিচয় দিয়ে রশিদ ও মিনতির চরণ ছুয়ে তাদের দুজনের কাছেই কাতরে ও সবিনয়ে ক্ষমা চায় ।
আল্লাহর অঢেল নেয়ামত ও দান,
তার অপার করুণায় কেউ পান আবার কেউ নাহি পান,
যদিও মানুষ হিসাবে ঠিকই তার কাছে ওরে সবাই সমান,
তবে মননে, বচনে, চলনে, আচরণে ও কাজের মূল্যমানে কিবা মূল্যায়নে হয়ে যায় যে ব্যাপক ব্যবধান ।
কি আসে যায় এ পাওয়া না পাওয়ায়,
জীবনতো থেমে থাকেনারে, কোনমতে দিন চলেই যায়,
বলো তবে এই পাশ-ফেল কার দায়,
দুই জীবনেই আপন কর্ম্মফলে কেউ ঢের পায় কেউবা সব হারায়,
প্রাচুর্যে, সচ্ছলতায় কিবা অনটনে সবাই রয়েছে সারাক্ষণ বিধাতার নজরদারিতে ও পরীক্ষায় ।
নিজের দোষ ঢেলে দিয়ে পরের মাথায়,
সব লেখা আছে জায় জায়, মহারাজার হিসাবের খাতায়,
জানলে বলো কি নাহি তার ভান্ডারে আর কি পারেনা সে বা নহে তার ক্ষমতায়,
চাইলেই কি জেতা যায়, চালাকি ও ক্ষমতার বলে এভাবে বলো আর কদিন চলে, বা তোমার চলবে হায় ।
মরণে নিতেই হবেযে সব মেনে,
রাজ সিপাহীরা নিয়ে যাবে ধরে চুল ধরে টেনে,
হাত-পা বাধা মহারাজার আগুনের জেলখানায়,
আজীবন আপন অপরাধের সব দায়, তুলে দেওয়া হবে ওজনের পাল্লায়,
কোন কারচুপি, পক্ষপাত ও বৈষম্য হবেনা ও নেই যেথায়, পালাবে কেমনে কোনপথে বা কোন দরজায় ।