পর্ব – ০১
কত আপন ও প্রিয়জন,
ঠিক যেন অনেকটা আমার মায়ের মতন,
দুইবার মাকে ডাকলে, কত মায়া থাকলে তবে সে হয়রে মামা ।
আবছা মনে পড়ে,
বাবার সংগে কিবা মায়ের হাত ধরে,
সেই ছোটবেলা যেতাম মামার বাড়ী, কম করে এক দুইবার বছরে ।
হোকনারে তা কমদামী,
নহে বলার মত তাতে কত খুশী হতাম আমি,
মামায় নিয়ে গিয়ে বাজারে, হাটের দিনে দিতেন কিনে একটা নতুন জামা ।
মায়ের কটু কথা ও কড়া ব্যবহার,
বদলে যেতো বদন ও মেজাজ মামা-মামী দুজনার,
এটা-ওটা পেতে ও খেতে আর খাটাতে গিয়ে তার, বাপের বাড়ীর সবটুকু অধিকার ।
কত সে বাদল-ঝড়,
ধীরেধীরে একেএকে হয়ে গেলো তারা সবে পর,
বদলে বসন্ত সবুজের মাঠের উপর বাধিল বাসা যেন এক ধূ ধূ বালুচর,
নদীর জোয়ারেও নিত্য পড়ে ভাটা, ভিজা মাটির ঐ আত্বীয়তাটা হয়ে গেলো যেন তামা ।
আগের মত হয়না ধান,
অভাবের তাড়নায় বাবা-মায় যেন বড় পেরেশান,
যদিও মুখে হাসি, ভিতরে মন ভার যদি নাবলে বাড়ীতে উঠে আসি কোন মেহমান,
দেখিনা এখন কেনরে ওসব গেলো কই, মোয়া নাড়ূ চিড়া পিঠা ও মুড়ি খই, ভরা ডালা ও ধামা ।
যে যার রিজিকেই খায়,
মেহমানের খাবার নাকি আগেই খোদায়,
ঝুড়িতে ভরে গৃহস্থের ঘরে, গোপনে চুপ করে দেয় পাঠায়,
খোদার উপর বিশ্বাস, আশা, ভরসা ও নির্ভরতায়,
কেউ টের নাহি পায়, ঈমানদারের জীবনটা দেখি বেশ ভালই কেটে যায়,
সব জেনেও কোন কোন বান্দায় কেন পড়ে যায় ভাবনায়, মাথাটা হয়ে উঠে যেন ঘামা ঘামা ।
মন্দ ভালো কিছু নাই,
হালাল হারামেরও কোন বালাই, যাচাই বাছাই,
দূর্বল, অসহায় ও মজলুম নাই চুখে ঘুম কোথায় গেলে পাবে ঠাই,
ন্যায় অন্যায়, চায়না দিতে হক ভুলে গেছে যেন দায়, বিবেকের বিচার গিয়েছে দিগন্তে পালাই,
ওরে কে আছিস কোথায় তোরা, ভুলের সেপথ থেকে তাদেরে ফিরা, নাহলে ঘার ধরে পারলে থামা ।
খাই-দাই নেঁচে গেয়ে ফূর্তি কর ভাই,
কোন নিষেধ মানা, বাধা ও সীমাণা কিবা ক্ষতি নাই,
দুদিনের এ দুনিয়ায় কি আসে কি যায়, ছোট্ট জীবনটার মজা লুটে যাই,
রাজার কাছেতো সমান পানা আমরা সবাই, যে যেমনে তাই ইচ্ছে বা চাহে মনে পারিস কামা ।
তারাই বিজয়ী বীর,
হাতে তাদের বর্শা, বল্লম ও তীর,
কে আছে সম তার, কত সামন্ত ও ঢাল-তলোয়ার, যেন মহা ক্ষমতার পাহাড় ভিমরাজ গামা ।
ভুলে গেছে মানুষগণ,
ছোট্ট এ জীবন আর নিশ্চয় আছে যে তার মরণ,
ফিরে যেতে হবে কাছে তার,
এ জীবন ও ধন-জন সবকিছু ছিল দান যে মহারাজার,
যার ধন দিয়ে তারে সব ফিরিয়ে, আসলে সবইযে ছিল তার দুদিনের তরে দেওয়া ধার,
হবে তার হিসাব ও বিচার, নিতে হবে তার যত সব শাস্তি পুরস্কার, হাতে লয়ে যার যার আমলনামা ।
পর্ব – ০২
আজ আর নেই সে দিন,
বুঝি সে কারণে অনেকের নয়ন ও বদন মলিন,
ভালবাসা ও মায়া-মমতা যেন কে করেছে হরণ, তাই বুঝি বাড়িছে সবার ঋন,
বলবো সেকথা এখন কার কাছে যাই,
যদিওরে আজও তারা মানুষ হয় নাই,
বিদ্যা, রুপ, ধন ও ক্ষমতা বেশী যার, এ দুনিয়াটা যেন তার, তারাই করে শ্রেষ্ঠ হবার বড়াই ।
এমনই তার শাসন ও বিচার,
ওরে সামাণ্য খুঁত কিবা পক্ষপাত নাই যার,
রাজা-রাণী, বিত্ত-বেসাতে ধনী, যত জাত-গোত্র খানদানী, গুণী-মানি কিবা সিপাহসালার ।
মা-মেয়ে ও বাপ-বেটা,
বউ-শাশুড়ি হোক যতই সিনাজুড়ি চাচা-মামা জেঠা,
কেউই আখেরাতে পাবেনা পার,
তার বিচারে ছোট-বড় কারো কোন নাই সমাদর কিবা ছাড়,
কেউ নহে তার পর, এক পরিবার একটাই ঘর, সবাই আপন কাছে ঐ মহারাজার,
সে যে কত মহান, তার কাছে সব সমান, বাদশাহ আমীর উজির নাজির দাস-দাসী পেয়াদা ও খানসামা ।
শ্রদ্ধেয় ছোট মামা,
আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহে ওয়া বারাকাতুহু ।
এই কিছুদিন আগে, আপনার সংগে সাইফুল গত ২০/৩০ বছর কিবা তারচেয়েও বেশী সময়ে জীবনে এই প্রথম আমার বাসায় এসেছিল । ফেলে আসা দিনগুলিতে জীবনের অনেক চমৎকার ঘটনা, নানা সুন্দর ও অপ্রিয় বা তিক্ত মূহুর্তগুলি গত হয়ে গেলেও আজও তা স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে । প্রায় ভুলে যাওয়া ঐ মধুর স্মৃতিগুলির মধ্যে কিছু পীড়া ও বেদনাদায়ক কথাও বিজড়িত ছিল । তা যাই হোক, সে এসেছিল বেড়াতে বা আমাদেরকে দেখতেও নয় বরং একটা কাজে, তার নিজের প্রয়োজনে । ধনীরা সাধারনতঃ কোন গরীব আত্বীয়কে দেখতে বা তাদের খোঁজ-খবর নিতে বা সামাণ্য কোন ফায়দা বা সুবিধা দিতে কখনও আসেনা ।
বর্তমানে সমাজের এ চলমান ধনী-গরীবের ব্যবধানটা শিক্ষিত ধনী সম্প্রদায়েরই সৃষ্টি । আমার বাড়ী-গাড়ী নেই তাতে কি হয়েছে, লোকের চোখে আমি গরীব হলেও তা আসলে ঠিক নয়, শুধুশুধুই কথা প্রসংগে ওসব কথা বলছি । অবশ্য এজন্য কখনও আমার কোন মোহ বা তাড়না ছিলনা আর সে কারণে এখনও আমার কোন দুঃক্ষ নেই বা কখনও মন খারাপ হয়না । আজীবন ভাড়া বাসায় থাকলেও আলহামদুলিল্লাহ মোটমুটি অভিজাত, রুচিশীল, আরামদায়ক ও সম্মানজনক জীবনই কাটিয়েছি । শিক্ষাংগনে বা ঘরে ও বাহিরে চলনে ও খাওয়া-পরায় পরিবারের সকলের সবকিছু ছিল পরিপাটি । তবে এটাও আমার কোন গর্ব নয় বরং তা আমার মনিবেরই বাহাদুরি ও অহংকার, সারা দুনিয়ার সকল প্রসংশা একমাত্র প্রাপ্য যে মহান খোদার ।
সর্ব সাকুল্যে মাত্র ৩৭০/- টাকা থেকে শুরু করে ৭০,০০০/- টাকার দায়িত্বশীল, আয়েসী ও সম্মানজনক চাকুরীর ইতি টেনে অবশেষে বর্তমানে দুজনের একাকি বসবাস । মাত্র ২০/২২ বছর বয়সে আমি আমার জীবন গড়া কিবা সংসারের প্রয়োজনে জীবিকার সন্ধানে শহরে ছুটে যাওয়া । উদ্দেশ্য আমার অশীতিপর বৃদ্ধ সরকারী চাকুরী থেকে অসবরপ্রাপ্ত পিতার অঁচল পরিবারটির হাল ধরা । একবার ঢাকায় আর একবার চট্টগ্রামে এভাবে চলছিল আমার ছুটোছুটি । ১৯৭২ইং সালে মাত্র ১১০/- টাকা বেতনে প্রাইভেট কোম্পানীর চাকরীতে যোগ দিয়ে আমার নতুন জীবন শুরু । তারপর থেকে জীবন রণের এ সুদীর্ঘ পথচলা ।
কষ্টের স্বল্প উপার্জনের অল্প টাকায় আমি তিনটি বোনের বিয়ে দেবার পর বাবা-মা ১৯৮৪ইং সালে আমার ২৯ বছর বয়সে আমাকে বিয়ে করান । জীবনের প্রয়োজনে বিয়ে করলেও যেন মনের মধ্যে কোন হরষের সাড়া ছিলনা । যাই হোক, পরিবারের অধিক পোষ্য সংখ্যা, কম উপার্জন বা আর্থিক অস্বচ্ছলতা ও মাত্র দুকামড়ার একটি বসত ঘরে সকলের বসবাস সংকুলান না হওয়ায় এবং পারিবারিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার সমূহ কারণ সৃষ্টি হওয়ায় বা লক্ষ্য করায়ই সহসা আমি সস্ত্রীক আমার কর্মস্থল চট্টগ্রামে চলে আসি ।
পর্ব – ০৩
আমার চল্লিশ বছরের শহুরে জীবনে আমি পয়তাল্লিশ লাখ টাকা শুধু বাসা ভাড়া দিয়েছি । সন্তানের জীবন গড়ার প্রয়োজনেই বিভিন্ন জেলায় কমকরে ১২/১৩ বার আমি বাসা বদলিয়েছি আর ছেলেমেয়েরা মাঝেমাঝে বদলিয়েছে ঘরের আসবাবপত্র । আল্লাহপাকের অপার করুণা ও মহিমায় এখন আমি যেখানে তার সংক্ষিপ্ত সার হলো আমার সাত ছেলেমেয়ের মধ্যে তিনটি মাষ্টার্স, একটি ইন্জিনিয়ার, দুটি ডাক্তার ও শেষেরটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ছে । এগুলো আমার মহান স্রষ্টা, প্রিয় প্রভু, দাতা, পালক ও মনিবের পরম করুণারই দান ও পুরস্কার । কম উপার্জনের পরিবারে সন্তানের জীবন গড়ার লক্ষ্যের ভিতরে অন্য কোন মোহ বা নেশা ঢুকে পড়লে সম্পদ-সম্পত্তি ও বাড়ী-গাড়ীর আশায় গ্রাম্য ও শহুরে জীবনের দোটানায় পড়ে হয়তোবা শেষে আমার আম ও ছালা দুটোই যেতো । আল্লাহর দরবারে লাখো শুকরিয়া যে, তিনি আমাকে দয়া করে যেন হাতে ধরে রক্ষা করেছেন ।
আমার অনেক অপ্রাপ্তি থাকলেও, যারা আমার ঐ কঠিন জীবন চলার দিনগুলিতে কোন উৎসাহ, প্রেরণা ও মনোবলের সহায়ক না হয়ে বরং বাগড়া দিয়ে দিয়ে নানা মানসিক অশান্তির কারণ হয়েছেন এবং প্রাপ্তিগুলিকে নগণ্য ভেবে ও ছোট করে দেখে আমাকেও হেয় প্রতিপন্ন করার প্রয়াস পেয়েছিলেন ঘৃনায় ও বিরক্তিতে তাদের সংগে আজ এখন আমার মনের দূরত্ব অনেক । বিগত দিনগুলির সাত সাগরের ডুব সাঁতারে কেউ কোনদিন যখন আমাকে বুঝতেও চায়নি, কাছে আসেনি ও কোন খোঁজ-খবর নেয়নি তখন আমার পরওয়ারদেগারই ঐ কঠিন দিনগুলিতে আমাকে করেছেন পার । কেউ কোনদিন আমার কিবা আমার সন্তান ও পরিবারের দশ টাকার কাজেও লাগেনি বা হেন কোন সহযোগিতাও করেনি কেন ও কেমনে তারা আজও সেই আগের মতই বেড়ানোর নামে আনন্দে মেতে পেতে ও খেতে চায় । অনেক দেখেছি, অনেক সয়েছি ও অনেক শিখেছি কত আর । তাদের সংগে আর কিসের সম্পর্ক যারা এটুকু বুঝেনা, জানেনা ও মানেনা যে এ জীবনের সম্পর্কটা লোকের এমনকি খোদ খোদার সংগেও শুধু্ই দেয়ানেয়ার ।
আমার রক্তের সম্পর্কের স্বজনেরাও সবাই দূর থেকে শুধু নিন্দা, কুৎসা বা সমালোচনা ও অবজ্ঞা অবহেলা ছাড়া আর কিছুই কেউ দেয়নি । অর্থ নহে তবে সাহস, উৎসাহ, মনোবল, প্রেরণা, সমর্থন, সান্তনা, সমবেদনা, শুভকামনা, সহানুভূতি ও সৎ বা সুপরামর্শটুকুতো মানুষ তার স্বজনের কাছে নিশ্চয় আশা করে বা করতে পারে । আত্বীয়-স্বজন কেন থাকে ও কেন হয়, সব মানুষেই চায় সুখে-দুঃখে একটুখানি ভাব বিনিময় ও প্রশান্তি । তা নয় বরং ছিল তার উল্টো, তারা আমার বড় মেয়ে যখন সরকারী মহিলা কলেজে পড়ছে তখন তাকে একটা মেট্রিক পাশ ছেলের কাছে বিয়ে দিয়ে দেবার জন্য ও আজকের ডাক্তার ছেলেটি যখন এমবিবিএস ২য় বর্ষে তখন তাকে বিয়ে করানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল । সে কি ছিল তাদের, আমার কিবা আমার পরিবারের প্রতি ভালবাসা । নাকি অভিনয় করে করে হিংসায় যতটুকু পারা যায় ক্ষতি করার প্রয়াস ।
পরিশেষে, যদিও আমার কোন বাড়ীঘর হয়নি বা আজও নেই এবং সে কারণে অহরহই আমাকে নিরব দুঃসহ অত্যাচার সইতে হয় বা হচ্ছে তবুও আলহামদুলিল্লাহ আমি খুব ভাল আছি । স্ত্রী ও সন্তানের চেয়ে বড় কিছু আর কি আছে, তাই আমার জীবনের সবটুকু সময়, শ্রম, ও অর্জন বা উপার্জনগুলি উপচে ঢেলে দিয়ে আজও আমি অন্ততঃ নিভৃতে আলো ও ভালোর মহারাজার বাগিচার ঐ বীজতলাটার সাদর সেবা-যতন করে যেতে পারছি ।
ছোটমামা ও তার ভাইপো মেরিন ইন্জিনিয়ার এসেছিল তাদের একটা বিশেষ স্বার্থ বা প্রয়োজনে । মানুষ মানুষের কাছে বা আত্বীয় আত্বীয়ের কাছে একটু উপকার বা ফায়দা লাভ কিবা কোন সহযোগিতার আশা করা বা সেজন্য কেউ কারো কাছে যাওয়া, তা যেতেই পারে, এটা দোষের কিছু নয় । তবে তাদের আগমনের সে প্রেক্ষাপটটা ছিল একেবারে ভিন্ন । কৌতুহলি সম্ভ্রান্ত রুচিশীল পাঠকগণ যারা আমাদের এ সাতরঙ জীবন, সমাজ ও সমাজের মুখোশধারী বিদ্যান ও বিত্তশালী বহুরুপী ভদ্রলোকদের সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তাদের জন্যই আমার এ কলম হাতে লওয়া । আমার সব লেখায়ই রয়েছে ওসবের প্রতিফলন । স্বজনের গল্প বলতে গিয়ে প্লট বদলে ফেলেছি । যাই হোক, সে এক অন্যরকম গল্প, তা এখন বলছি ।
বড়লোক ইন্জিনিয়ার আত্বীয় বলে কথা । তাই আমার খুব ইচ্ছা হলো, সেদিন তারা এলে তার ড্রাইভার সহ তারা সবাই আমার এখানে চারটে ডালভাত খেয়ে যাবেন আর ছোটখালা ও বড়মামীর জন্য দুটি ভিন্ন বাক্সে করে কিছু খাবার দিয়ে দেবো, কিন্ত তা আর আমার ভাগ্যে হয়নি । সে মোতাবেক আমার অসুস্থ্য গিন্নী সাহেবা বেশ খুশী মনেই তার আয়োজনগুলি করেছিল । চিংড়ির দোপেয়াজা, রুইমাছের ভুনা, মুরগীর রোষ্ট, এক ডেকচি পোলাও ও ফিরনী রান্না করে মেহমানের জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম । যাই হোক বড়ই দূর্ভাগ্য যে, সে দিনটি আসলে আমাদের মোটেও ভাল যায়নি বরং তা যেন ছিল এক অনভিপ্রেত বিড়ম্বনাময় পরিবেশ ।
ছোটমামা ও তার ভ্রাতুস্পুত্র সাহেব এলেন । তারপর কি করলেন, এসেই অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মতই তারা অতিব ব্যস্ততা দেখাতে লাগলেন । আসলেন একটা কাজ নিয়ে কথা বলতে, কিন্ত তা শুরু না করতেই অবাক হওয়া ও দুঃক্ষ পাওয়ার মতই একটা বিরক্তিকর যাই যাই ভাব । এমন একটা ভাব দেখাতে লাগলেন যেন আমি তাদের রায়ত আর সবকিছু আগে থেকেই পাকাপাকি করাই ছিল, এখন শুধু আমার একখানা সই করা মাত্র বাকী । তাহলেই তারা যেন তারেদর কাজ সেরে তড়িঘড়ি চলে যেতে পেরে মুক্তি বা স্বস্তি পায় । মামা, আসলেই কি সেদিনের ব্যাপারটি তেমন ছিল । না, তা তেমন ছিলনা, ছিলনা বিষয়টি এতই গুরুত্বপূর্ণ যেমনটি আপনারা দেখিয়েছিলেন বা প্রকাশ করেছিলেন । মামা, যা আপনার বা আপনাদের কাছে অতি জরুরী বা গুরুত্বপূর্ণ তা অন্যের কাছেতো তদ্রুপ না’ও হতে পারে । তাই নয়কি মামা ।
পর্ব – ০৪
মামা, আপনাদের ইচ্ছে ও চাহিদা মোতাবেক আমি একটা কাগজে সই করে দেই এটাই কি আপনারা প্রত্যাশা করেছিলেন ? তা দেওয়া কিবা না করা ওটাওতো ছিল আমার একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়, যা নিয়ে ইতিপূর্বে আপনি বা সাইফুল আমার সংগে কখনও আলাপ করেননি বা আমিও তাতে সম্মত হইনি বা কথা দেইনি । মামা এভাবে তড়িঘড়ি কাউকে কোন একটা কাগজ লিখে দিতে বলা, এজন্য পীড়াপীড়ী করা বা চাপ প্রয়োগ করাটা নিতান্তই ভদ্রতা বহির্ভুত নয় কি ? আপনি আমার মরহুমা মাতার হক এর আমার প্রাপ্য অংশটি সাইফুলকে দিয়ে দেবার দাবী নিয়ে রীতিমত অনভিপ্রেত চাপ প্রয়োগ করতে চাইছিলেন, কিন্ত তা কেন ? আপনি কেন ও কিভাবে সাইফুলের চামচা ও চাটুকার হলেন বা হয়ে গেলেন, তাতে আপনার কি লাভ বা কি স্বার্থ এসব কিছুই আমার বোধগম্য নহে ।
মামা কেন আপনি, আপনার সব বোনদের অংশটাকে একত্র করে বর্তমানে চরম আপদ ও নিদানে থাকা আপনারই বিধবা ও পুত্রহীন অসহায় সহোদর ছোটবোন মাছউদাকে দেবার কথাটি একবারও ভাবলেন না কিবা সে চেষ্টাটি পর্যন্ত করলেন না, তা কিছুতেই যেন আমার মাথায় আসছে না । তা না করে কেন মামা বরং বড়ই দুঃক্ষজনকভাবে আপনি লজ্বা বা সৌজন্যবোধের মাথা খেয়েই যেন সাইফুলের হয়ে আদাজল খেয়ে কোমড়ে গামছা বেঁধে তার পক্ষে ওকালতিতে নেমেছেন ।
মামা, একটু জায়গা অথবা কিছু টাকা সাইফুলের জন্য অতি জরুরী বা অপরিহার্য কোন বিষয় নয় বা ছিলনা । তবু বুঝি ঐ সম্পদে সে তার ষোলআনা মালিকানা নিষ্কন্টক ও পাকাপোক্ত করতে চাইছিল । সাইফুলতো আশ্রয়হীন কিবা অর্থ-বিত্তহীন কেউ নয় । বরং যে বা যারা পরের সাহায্য বা সহযোগিতার উপর সদা নির্ভরশীল ও গোপনে চুপিসারে অন্যের মুখাপেক্ষি হয়ে থাকে বা থাকতে হয় আপনার বিবেচনায় সে বা তারাই সবচেয়ে বেশী অসহায় নয় কি বা কোন সাহায্য ও সহযোগিতা পাওয়ার অধিক অগ্রগণ্য দাবীদার নয় ? কেন বিষয়টি নিয়ে এভাবে ভাবতে পারলেন না ছোটমামা ।
মামা, এ জগতে সবাইতো তার নিজস্ব অনুধাবন, উপলব্ধি, বিবেচনা, স্বার্থ এবং হিসাবেই চলে আর এটাইতো স্বাভাবিক । তাছাড়া আমিতো কারো পোষ্য, কোন সুবিধাভোগী কিবা কারো কাছে কোনভাবেই দায়বদ্ধও নই । আমি কারো কোন দাদনও খাইনি কিবা কারো সনে এ বিষয়ে ওয়াদাবদ্ধও হইনি । আপনার মত নহে আমি কারো শিষ্য কিবা অনুচর, আপনার কোন স্বার্থ থাকলেও আমারতো তা নেই । একবার আপনি ও ছোটখালা প্রত্যেকেইতো বাস্তবে যা পাঁচ হাজার টাকার পণ্যও নয় এমন কিছু সামগ্রী কিনে (যা না কোন সুখাদ্য, না জীবনের নিত্য প্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যকীয় কোন পণ্য বা না কোন প্রাণ রক্ষাকারী ঔষধ) পঞ্চাশ হাজার টাকা করে একটা বিদেশী প্রতারণা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছিলেন, যাদের এদেশে এখন আর কোন অস্তিত্বই নেই । আমি এখানে বুঝাতে চাইছি যে, কাউকে কিছু দেওয়া বা দান করা, কোন ব্যবসায় পুঁজি খাটানো, কেনা-বেঁচা বা অন্য যে কোন কাজে সম্পৃক্ত হওয়া না হওয়াটাতো ঐ ব্যক্তির একান্তই স্বাধীন এখতিয়ার বা ব্যক্তিগত বিষয় । ঠিক তেমনটি আমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য নয় কি ?
ছোটমামা, নামে বা বেনামে অতীতে এবং বর্তমানেও এমন অনেক বিদেশী কোম্পানী কিছু দেশীয় দুষ্ট লোকের সহায়তায় ধোকা দিয়ে এদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা/ডলার বিদেশে পাচার করছে বা নিয়ে যাচ্ছে । এভাবে কোটি কোটি লোক লোভে পড়ে সামাণ্য তাদের সঞ্চিত সম্বলটুকু লাভের আশায় তাদের হাতে তুলে দিয়ে শেষে তা হারিয়ে হায় হায় করলেও এদেশের কিছু সংখ্যক দালাল ও প্রতারক রাতারাতি টাকার কুমিড় হয়ে যাচ্ছে । এসব গল্প এদেশে মোটেও নতুন বা আমার মনগড়া বানানো কিছু নয় ।
আবার অনেক বিদেশী প্রতিষ্ঠান জনসেবা ও সমাজ কল্যাণের নামে সহজ সরল সাধারণ মানুষগুলিকে নাস্তিক ও ধর্মান্ধ কিবা সুকৌশলে ধর্মান্তরিত করছে । এসব অশুভ কর্মকান্ডের সংগে স্থানীয় কোন প্রভাবশালী মহলের অর্থর্নৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা থাকায়ই সম্ভবতঃ নিরবে ও নিভৃতে তারা এ কাজগুলি চালিয়ে যাবার সুযোগ পাচ্ছে ও সফল হচ্ছে । বিষয়গুলো অতিশয় শুক্ষ্ণ হওয়ায়ই হয়তোবা তা অনেক পন্ডিত ও জ্ঞানী-গুণী মানুষদেরও দেমাগে ঢুকছে না বা তাদের নজর এড়িয়ে যাচ্ছে । অবশ্য সবকিছুর ভাল-মন্দটা যাচাই করা সকলের পক্ষে সম্ভব হয়না । নাহলে চকচক করলেই তা সোনা ভেবে কেনার মূর্খ মানুষগুলি তারা কোথায় পাবে । তাইতো দেখছি অনেকেই দুধ বেঁচে মদ কিনে খায় আবার কেউবা দাম দিয়েই কিনে নকল সোনা ।
পর্ব – ০৫
জানিনা আপনারা ঐ কাজ বা বিনিয়োগ থেকে কতটুকু লাভবান হয়েছিলেন । তা যাই হোক, লাভ বা লোকসান তাতে আমার কিছুই যায় বা আসেনা । আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তেমন কোন ক্ষতি ছিলনা কেননা আপনার পায়ের নীচেতো টাইলস বাঁধানো মেঝে আর মাথার উপরে ঘুরছে পাখা । আপনার ছেলেমেয়েদের অবস্থান তথা আপনার জীবনের মান ও ছোটখালার অবস্থার সংগে আকাশ পাতাল ফারাক, সে বোধ বিবেক মামা নিশ্চয়ই আপনার রয়েছে । কোন মানুষের কষ্টের ভাগ নেওয়া বা কোন উপকার করার সৌভাগ্য আমার না হলেও আপনার মত একজন অসহায় নারী বা অন্য কোন মানুষের কোন হক নষ্টের কারণ যে আমি হইনি এজন্য আল্লাহপাকের দরবারে লাখো শুকরিয়া । সে যাই হোক ছোটমামা, একথা ভেবে সত্যই বড় কষ্ট পাই যে, আমার ছোট মামাটি আসলেই সারা জীবন ছোটই রয়ে গেলো ।
মামা, আমি তেমন জ্ঞানী বা বিচক্ষণ ও বিদ্যান নই । তবু আমার কাছে মনে হয়েছিল যে, আপনার ঐ সকল সিদ্ধান্তগুলিই ছিল একেকটা মস্তবড় ভুল । আর তাই আমি পরোক্ষভাবে আপনাকে তা বুঝাতে বা নিরুৎসাহিত করতেও সামাণ্য চেষ্টা করেছিলাম । মামা, কোন সরল মানুষকে ভুলভাল বুঝিয়ে তাকে কোন ফাঁদে বা বিপদে ফেলে, ঠকিয়ে বা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে নিজে প্রচুর লাভবান হলেও তা আসলে অনেক বড় লোকসান, যা এখন না বুঝলেও পরে কোন এক অসময়ে সবাইকে তা বুঝতেই হবে । মামা কোন অন্যায়, অপরাধ, ভুল বা জুলুমগুলি যার, তার ঐ মাসুলগুলিও ঠিক তারই হয় তথা তার মাথার উপরই তা খর্গ হয়ে ঝুলে থাকে আর এটাই আল্লাহর চিরন্তন প্রথা বা বিধান ।
মামা, ভাল কথা বলা, পরের ভাল চিন্তা করা ও সদুপদেশ দেওয়া বা কোন না কোন ক্ষুদ্র হলেও একটা ভাল কাজ করায় অনেক পুণ্য । হইনি এমন সৌভাগ্যবান, করতে পারিনি তেমন কোন দান ও তাই আমার হয়নি করা তেমন কোন পুণ্যময় ভাল কাজ । শুনেছি একটি ভাল কথা বলা ও কখনও কেউই ক্ষতিগ্রস্ত না হোক এরুপ কিছু চাওয়াটাওতো একটা ভালমানুষি বা মহাপুণ্যের সামিল । মিথ্যা নহে কোরআনের বাণী ও নবীজীর বয়ান যা এই কথাগুলিই বলে । তাই দুচারটে ভালকথা বলে ও লিখে সহজে আমি হতে চাইছি খোদার করুণায় ধন্য ও মহান কিবা কিছুটা পুণ্যবান ।
সে যাই হোক মামা, সেদিন আমি চিরন্তন কিছু সত্য, বাস্তবতা এবং নিরীহ ও দূর্বল মানুষের হক এসব প্রাসংগিক বিষয় নিয়েই আপনাদের সংগে যুক্তিসংগত কথাবার্তা বলছিলাম । কিন্ত কেন জানি বারবারই আপনি অহেতুক চটে যাচ্ছিলেন । মনে হচ্ছিল যেন, আমার কথাগুলি আপনাদের পছন্দ হয়নি । আপনি আমার সত্য ও স্পষ্ট কথায় অহেতুক বিরক্ত ও ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ছিলেন । আর এটাও তখন পরিস্কার বুঝতে পারা গিয়েছিল যে, বিষয়টিতে সাইফুলের আগ্রহ ও প্রয়োজনের চাইতে যেন আপনার আগ্রহ ও প্রয়োজনটাই ছিল অনেক বেশী । যা ছিল সত্যই অস্বাভাবিক, রহস্যজনক এবং দুঃক্ষজনকও বটে । যা কিনা এখনও আমার বোধগম্য হয়নি ।
মামা আপনি উত্তেজিত হয়ে বলেছেন, নালাল দেবেনা তা বুঝা হয়ে গেছে । আসলে মামা আপনার ঐ বুঝ বা ধারণাটা ছিল ভুল, আমার সিদ্ধান্তটা ছিল আপনার ঐ বক্তব্যের সম্পূর্ণ উল্টো বা বিপরীত । তা ছিল আপনার আরেকটু গভীর গবেষণ বা সুচিন্তন পর্য্যবেক্ষন ও অনুধাবন এর অপেক্ষা মাত্র । অধিকতর উত্তম একটা পথ অনুসন্ধান করা, যা হয়তো সময় হলেই জানতে পারবেন । আমার চিন্তা-চেতনা ও ভাবনা ছিল অধিক কষ্টে থাকা কোন মানুষের ক্ষুদ্র হলেও কোন উপকার করা যায় কিনা তা অনুসন্ধান করে দেখা এবং ঠিক এমনই একটা কাজ করা ।
মামা, আপনি বারবারই উচ্চস্বরে বলছিলেন, ঐ সম্পত্তিতে মরহুম জনাব সুলেমান মিয়া সরকার এর ছয় কন্যার কোন হক নেই বা নামই নেই । আপনার ঐ কথাটি ছিল নিতান্তই আপত্তিকর । এটা কি মামা আপনার জন্য কোন গর্ব করা কিবা খুশী হওয়ার মত বিষয় ছিল ? নাকি তা সামাণ্য হলেও কষ্ট ও লজ্বার তা দয়া করে একবার ভেবে দেখবেন । এই ভাবনাটাই মানুষের বিবেকের চক্ষু খুলে দেয় ও মানুষকে দার্শনিক তথা প্রকৃত মানুষ বানায় । আপনার কথায় ঐ দায় ও দোষটাতো গিয়ে আপনার মতই কারো না কারো উপরে বর্তায় । বোনদের কোন অংশ না থাকা বা তাদের হক না দেওয়ার দায় বা অপরাধটাতো মজলুম ঐ বোনদের ভাইগণের উপর গিয়েই পড়ে ।
পর্ব – ০৬
বোনেরা কেউ দাবীদার হোক বা না হোক, কারো অনাদায় হক যা কারো না কারো অজ্ঞাত দায় হয়েই রইলো বা রয়ে যায় এ সত্যটি স্বীকার করতে দোষ কোথায় । কোন হক এর ফয়সালা দুনিয়ায় নিস্পন্ন করা না গেলে তা আখেরাতে অনেকের জন্য মহা বিপদজনক ও অধিক ক্ষতিকর হবে বলেই জানি । বোনদেরকে ঠকানোর কুটিল প্রচেষ্টা বা কৌশল, অভিপ্রায় ও প্রবণতা অধুনা বিদ্যান ও বিত্তশালী পরিবারগুলিতেই অধিক প্রকটভাবে দেখা যায়, যা এক আত্বঘাতী অবক্ষয় ও ধ্বংসের অশনি সংকেত । কোন বান্দার হক না দেওয়া জুলুমকারী বান্দাকে আল্লাহ মাফ করেন না বা করবেন না বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছেন । এরুপ বঞ্চিত কোন পাওনাদার আখেরাতে দুনিয়ায় তার না পাওয়া বকেয়া হক এর বিনিময়ে নায্য পুণ্য না নিয়ে ছাড়বেন না । আর এ ব্যবস্থাটি নিশ্চিত করবেন আল্লাহপাকের নিরপেক্ষ ও নিখুঁত বিচার প্রশাসন ।
মামা আমার বাড়ীঘর নেই, তবে এজন্য আমার কোন আক্ষেপ বা আফসোসও নেই । তবুও আমি কোটি কোটি মানুষের চেয়েও অনেক বেশী ভাল আছি । আপনারও বাড়ীঘর নেই, তবুও মনেহয় আপনিও অনেক ভাল আছেন । কারণ আমরা কোন লোকের মুখাপেক্ষি নয় বা কারো উপর নির্ভরশীলও নহে । যার শিক্ষিত, স্বচ্ছল, স্বনির্ভর ও দায়িত্বশীল ছেলেমেয়েরা রয়েছে ও পায়ের তলে টাইলস এবং মাথার উপরে নিরাপদ ও মজবুত ঠাই তথা একখানা সুন্দর ছাউনিও রয়েছে সে কেমনে অসহায় । তাই যে কোন অর্থে বা বিবেচনায়ই আপনি কিবা আমি আমরা কেউই সামাণ্যতম অসহায় নহে । আর সাইফুলতো মাশাআল্লাহ আমাদের সকলের চাইতেও সেরা, মানে অনেক অনেক ও অনেক বেশী ভাল আছে একথা কি মিথ্যে । অন্ন-বস্ত্র ও বাসস্থান সুবিধার সংগে রোগ-বালাইয়ে চিকিৎসার একটুখানি সংস্থান থাকলেইতো মামা ভাল থাকা যায় । আর সাইফুল সেখানে বিশাল আকারের কয়েকটি ফ্লাট ও গাড়ীর মালিক হয়েও তার মন ভরছে না, চাইছে অসহায় পরের হক মেরে খেতে ।
মামা, আপনি আপনার ভাষ্যমতে নিজের বাড়ীর অংশটিও সাইফুলের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন । তারপর আপনার আর কি প্রাপ্তী যোগ রয়েছে বা থাকতে পারে । পরম প্রাপ্তীর কোন অলীক স্বপ্ন-আশা, লোভ-মোহ কিবা কোন্ সে অমূলক সম্ভাবনা আজও আপনি পোষণ করে চলেছেন জানিনা । তা আমার মোটেও বোধগম্য নয় । তবে কি মামা, সাইফুল আপনাকে ও ছোটখালাকে একটি করে ফ্লাট আপনাদের জীবদ্দশায় বসবাসের জন্য দিবেন এমন মৌখিক আশ্বাসের ভিত্তিতেই কি সে আশায় খুশীতে গদগদ । যার আসলেই কোন দালিলিক ভিত্তি, প্রমাণ ও বৈধতা বা কোনই নিশ্চয়তা নাই । নাহলে কেন আপনি এত পেরেশান হয়ে জনে জনে ঐ ভিখ মাগতে শুরু করেছেন । তা হোক তাই চালিয়ে যান তাতে আমার কোন আপত্তি নেই । শুধু আপনার পরকালের জবাবদিহিতা ও তার প্রায়শ্চিত্তটার কথাটি স্বরণ করিয়ে দিলাম মাত্র । আমার এ ধারণা যদি সত্য হয়, তবে একবার গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার নয় কি – সে দান কি আসলে পত্রমূলে বৈধ চিরস্থায়ী দান নাকি তা এক তামাসার সাময়িক করুণা মাত্র ।
মামা, কেমন করে আপনি সেদিন বড় গলায় খুউব গর্ব করে বললেন, ঐ বাড়ীতে বোনদের কোন অংশ নাই । কেন বোনদের কোন অংশ নাই, তা গেলো কোথায় ? তা কি তবে শরিয়তের বিধানের বরখেলাপ ও নিশ্চিত জুলুম নহে ? তা কি তবে ঐ বঞ্চিত বোনদের সহোদর ভাইগণ তথা তাদের ওয়ারিশগণের জন্য এক বিশাল কলংকের বোঝা বা অভিশাপ ও আখেরাতের দায় হয়ে রয়ে গেলোনা ? বোনদের হক তছরুপ হওয়া বা তাদেরকে মাহরুম করার বিষয়টি নিশ্চয়ই আপনার জন্য কোন খুশী হবার মত নয় বরং তা অপমান ও গ্লানীর । আপনি কি তা জানেন না যে, এগুলো আমার বানানো বচন নহে । কোন হকদার আজ তার হক বা পাওনা না পেলেও বা তা দাবী না করলেও কঠিন আখেরাতে সে তার নায্য হক এর, হোক তা অতিশয় তুচ্ছ ও নগণ্য, অনমনীয় ও আপোষহীন কঠোর দাবীদার হতেওতো পারে শুধু নয়, নিশ্চিত হবেই হবে ।
মামা, আমার বাড়ী-ঘর নেই বা হয়নি বলে আমার কোন আফসোস, আক্ষেপ বা অভিযোগ নেই এবং এজন্য আমি কাউকে দোষারুপও করছি না । আমিতো এখন আমার, আকাশ অভিমুখে নতুন সফরের নানা খুটিনাটি বিষয় নিয়ে ভাবছি আর যতটা সম্ভব তার কিছুটা প্রস্তুতি গ্রহণের চেষ্টা করে চলেছি । আলহামদুলিল্লাহ এখন আমার ছেলেমেয়েরা প্রচুর হালাল ও সম্মানজনক উপার্জন করছে । ইনশাল্লাহ যথাসময়ে তারা যে যার নসিব, সুযোগ-সুবিধা, রুচি-পছন্দ, প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের গাড়ী-বাড়ী করে নেবে । সে আমার ভাবনা নয় ।
মামা, নিশ্চয় আপনি মহৎ, উদার, মহান, বিজ্ঞ ও বিচক্ষণ । তাই আপনি ও সম্মানিত সকল পাঠকগণ নিশ্চয় একথা স্বীকার ও অনুধাবন করবেন যে, মহান প্রভুর বাণী ও পাঠ সমূহ থেকে নেওয়া আমার এ লিখন শুধুই মানুষের শিখনের জন্য নিবেদিত । কোন ন্যায় বিচারের স্বার্থে সত্যটা না বলা কিবা তা গোপন করা এবং কোন অন্যায়কে সমর্থন বা সহযোগিতা করাটাও একটা মস্তবড় অপরাধ । তাই অচেতন বা অসচেতন চক্ষুহীন বিবেকগুলির জাগরণের জন্যই আমার এ লিখন, তা যেন মজলুম ও জুলুমবাজ উভয়েরই কল্যাণ ও মঙ্গল সাধনের এক নিরন্তর চেষ্টা । মামা, আমার এ চিঠি শুধু আপনার জন্য লেখা নয় বরং তা জগতের কষ্টে থাকা সব বঞ্চিত ও অবহেলিত এবং সমাজের অধিক সুবিধাভোগী অপরাধী মানুষগুলির জন্য । সকলেই যেন কিছু পরোপকার, আপদে ও নিদানে থাকা মানুষগুলির কল্যাণ ও মংগল সাধন করা আর নিজের কিছু ক্ষুদ্র সৃজন দিয়ে হলেও বিধাতার এ মহাসৃষ্টিরে আরও সুন্দর করে সাজাবার প্রয়াস পায় ।
যতটুকু জানি মামা আপনার বোধ, বিবেক ও বিবেচনাও অনেক উচ্চমানের । তাই মামা, উক্ত বিষয়ে আপনি যা করেছেন বা করছেন ও করবেন তার সবই একান্তই আপনার ব্যক্তিগত বিষয় তার লাভ-ক্ষতিগুলিও একান্তই আপনার । তাই তাতে আমার কিছুই বলার নাই । মামা, আমি আপনার একজন শুভাকাংখী আর তাই হয়তো অযাচিতভাবেই কিছু অপ্রিয় কথা আপনাকে বলে ফেলেছি, আমার আসলে অন্যায় হয়ে গেছে । যাই হোক মামা, আমার এরুপ কোন অপ্রিয় সত্য কথনে আপনি মনে কষ্ট পেয়ে থাকলে দয়া করে নিজ গুণে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন । আমার জন্য দোয়া করবেন ।
ইতি/আপনার এক নগণ্য ভাগিনা/নালাল