পর্ব-০১

কত মধুর প্রবচন,
শুনে সুখে ভরে যায়রে মন,
লোকে নাকি বলে, পুত বাঁচলে কামাই আর ঝি বাঁচলে আইবোরে জামাই ।
কথা সত্য, করিনা মানা,
তবে আমি তা কভু মানিনা,
এসব অন্ধ বিশ্বাস ও ভুল ধারণা,
পুত না থাকলে নাকি নাই মজার খানা,
যতই বলুক লোকে, শুনিরে বোকার মোখে, পুত বাঁচলে নাকি হয়রে কামাই ।
গোঁফে তেল মাখে, দেখে কাঠাল ঝুলছে গাছে,
দেখেছি এ সমাজে কত পরিবারে এমন কত অকর্মন্য পুত আছে,
নাই কোন স্বপ্ন ও আশা,
ছোট্ট এ জীবনটার প্রতি মমতা ভালবাসা,
বসে খাওয়ার লাজ, উদ্দোগ প্রেরণা ও চেষ্টা কিবা হাতে কোন কাজ তাদের কাছে,
খানা আর ঘুম,
সারাদিন চলছে ধূমপানের ধুম,
ঠিক আছে তার,
জামা-জুতা পোষাকের বাহার,
একটু হাল্কা করা চাই বোঝাটা তার বুড়ো বাবার,
কেন নেই এইটুকু সহানুভূতি তার,
কিছু উপার্জন রোজগার করা দরকার, আশা করে তার পরিবার,
ছেলেটা কেমন, নাই একটু সহযোগিতার মন, নাই কোন তার মাথাব্যাথা কিবা ভাবনা নিয়ে তাই ।
কোন কাজে না লাগা এক ভান্ড,
মূর্খ অপদার্থ অলস অকর্মণ্য ও অকাল কুষ্মান্ড,
কাজে নয় কথায় পটু, মাঝেমাঝে ঘটায় অনাহুত অনাকাংখিত কোন কান্ড,
খোশ গল্প আড্ডা ও তামাসা
না ছাত্র, না শ্রমিক, না সাহেব, না ওরে চাষা,
অকারণে ঘুরে হাটবাজারে ও চার দোকানে শুধু তার যাওয়া আসা,
কাটছে দিন, দুনিয়া রঙীন, একেবারে ভাবনাহীন, যার যেমন ইচ্ছে করে ঘুরে ফিরে হেটে বেড়াই ।  
খেতে বসে করে উড়াঝাড়া,
কেমনে ভাত খাওয়া হয় বলোনা মাছ-মাংস ছাড়া,
পুতের আশা করে যারা,
ভরসা করো বিধাতার, নাহলে হবে তারা দিশাহারা,
রিজিকের মালিক আল্লাহ,
যাই বলো মাছ-মাংস-ডিম, দুধ-কলা, শাক-ডাল, ভাজি ও ভর্তা,
সব হেফাজত যত মসিবত আপদ নিদান ও বালাহ,
তার মুখাপেক্ষি হও, হাত পেতে চেয়ে লও, যার করুণায় হয় সব ফয়সালাহ,
চাল-চুলা কিবা ঝি-পুত নাই যার,
কোন যোগান ও যোগাড় নাই ঘরে একবেলার খাবার,
কেমনে পেটভরে নিত্য ওরে আজীবন খায়, কোথা হতে তা আসে পায় - সোবহানাল্লাহ,  
চার পুত আছে ঘরে, শুধু মোখ দেখেকি আর মন ভরে, নাই কামাই, নাই টাকা, মনেও তাই সুখ নাই ।

পর্ব-০২

লোকের মোখে শুনেছি কথা এমন,
পুত বাঁচলে আসে বউ, বউয়ের ভাগ্যে নাকি হয় ধন,
আর পুতের ভাগ্যে মিলে জন,
ভরে উঠে ঘর, ফুলে-ফলে সাজে সংসার বাগানের মতন,
হয় ধন্য বাবামার জীবন,
আর সুখ ও হরষে ভরে উঠে তাদের মন,
আসুন সুসন্তান চাই আমরা সবাই, যাই হোক তার বিদ্যা ও ধন,
বুড়োকাল আরামে কাটায়, সুখে থাকে শুয়েবসে খায়, নাতী-নাতনীর সনে করে বিনোদন,
হতাশা ও ভাবনা নহে অকারণ, আশায়ই সফল হয়রে জীবন, ওরে সবে বাঁচতে হবে বুকে লয়ে তাই ।
জীবন মানে রণ,
কিছু ভালো কাজের পণ,
সহন, বহন ও সাধনায়ই হয় সাধন,
খাটি মানুষ হলে, ঝি-পুত যাই বলো ঐ সন্তানগণ,
চিরকাল শোভা ও সৌরভ বিতরণ,
সুন্দর ফুল ও রসেভরা মিঠা ফল গন্ধে ভরায় মন, যে করিবে দান, ঠিক এমন গাছের মতন,
বাঁচিলে পুণ্য হবে,
আলো ও সকল ভালোয় জীবন ভরিবে,
জীবনের একটুখানি পুণ্যও হয়তো মরণে তোমারে তরায়ে লবে,
বাসনা সাধনা সততা ও চেষ্টায়, মিথ্যে নহে সব পাওয়া যায়, একথায় বিশ্বাসী হলে সবে,
নাহলে মরণে হায় দেখিবে মন,
তব ধনজন অজানায়, কখনযে সব হয়েছে বিলীন ও হরণ,
সব ধার আঁধারে একাকার, আর আশেপাশে হাতে কিবা সাথে তোমার, কিছু নাই ও কেউ নাই ।
শুনছি নিজে বাঁচলে বাপের নাম,
ভালো কথা ভালো কাজে বাড়ে কিবা হয় মানুষের দাম,
তেজে যত সব মিথ্যা, মন্দ, জুলুম, হারাম, বিনোদন ও বেশী সুখ-আরাম,
অন্ধকারে জ্বালাবে মশাল, আখেরাতে হবে ঢাল, পথ দেখাবে দুনিয়ার একটু তোমার পুণ্যকাম,
দুনিয়ায় তা হোকবা নাহোক,
মন্দ-ভালো যাইবা বলুক সমাজের লোক,
যার দশা বেহাল,
হবে তার হিল্লা সুখ-ভাল,
সামাণ্য সেবা উপকার কিবা দীনজনে দান,
অসহায় মানুষের উপকার ও কল্যাণ একটু আরাম ও আহসান,
সব হারিয়ে কেউ লাভবান, কেউবা হবে অস্থীর নাজেহাল রবে দিশাহারা ও পেরেশান,
লয়ে মাথায় ভারী বোঝার দেনা-দায়, নিঃস্ব, বড়ই একা আর অসহায় একদিনতো হবেই সবাই ।

পর্ব-০৩

যাই হোক আয় উপার্জন,
তাই করে ব্যবহার, তাই দিয়ে মিটিয়ে সব আয়োজন,
ওরে সবার আগে, তা বাকী রেখে যাই হোক ভবিষ্যতের ভাগে, মিটাতে হবে জরুরী সব প্রয়োজন,
কোন হতাশা নয়,
ওরে নেই তাতে কোনই ভয়,  
সব আপদ ও নিদান তার বিশ্বাসে ও ভরসায় করে জয়,
এমন মানুষগণ যার কেউ নাই কিছু নাই, তারাওতো দেখেছি বাঁচে খায় সেতো মিথ্যে নয়,
বারবার পড়ে যায়, তবু উঠে আবার দাড়ায়, রক্ষা পায়, তার ধনজন মান-ঠাই ফেলেও সব হারাই ।
নাই ঝি-পুত ও জায়গা জমি,
একদিন সবে পর হয়ে যায়, নিঃস্ব ও শূন্য হয় কমি,
কত পরিবার, নাই কিছু আর, তবু মানেনাতো হার, বসেও থাকেনা তবু দমি,
এইতো দেখেছি জনম ভর,
নিরবে সয়, সব মেনে লয়, অনুগত অন্তর,
কারো পৌষ পার্বণ কারো মাথার উপর ঘূর্ণায়মান দূরন্ত ঝড়,
কখনো দয়ার সাগর, কখনো কূলভাংগা ঢেউ আবার কখনো কঠিন পাথর,
বিধির ঐ খেলা দেখেছি আজীবন সারাবেলা, কাউকে করে আপন আবার কাউকেযে পর,
গিয়ে সহসা সব ভুলে, মাথা তুলে আকাশ পানে চাই, সবাই সবার মনের হাহাকার ফেলিছে জুড়াই ।
মিথ্যে নয় আবু হকে বলে,
একদা সবই হবে যা এখন ওরে বিফলে,
বাগান-বাড়ী রাজপথে চলে গাড়ী, গড়ে উঠে হয় থইথই অথই জলে,
আবার দেখেছি কত নগর শহর ও বন্দর, দূর্ভাগার বাড়ীঘর তলিয়ে যায় অতল সাগর তলে,
খেয়ে-পরে শেষে কিছু পড়ে থাকলে,
মুঠ করে ধরে চোখ বুজে তা খুঁতিতে যতনে ভরে রাখলে,
যেমনই দিন যায়, মনটারে ভালো করে বুঝায়, কষ্টগুলি কভু গায়ে না মাখলে,
সেইতো পরম পাওয়া বড় সঞ্চয় ও সম্বল ওরে, মরণের হাত থেকে এ দেহ-প্রাণ ও জানটা বাঁচলে,
শেষে সবই হবে সবই পাবে,
অনটন আর কষ্টগুলি এমনি করেই ধুয়েমুছে যাবে,
যা প্রয়োজন কিবা নাই, নগন্য জীবন ধন্য হবে, শেষ হবে সব নাইনাই, আবার তার সবকিছু পাই ।  
সততার চেষ্টা ও ঘাম,
কভু হারেনা, ওরে পাবেই পাবে তার দাম,
তা পাইবা না পাই,
আমি ওরে খাইবা না খাই,
হে বিধাতা দিওনা আমারে এমন মন, যা করে শুধু খাইখাই নাইনাই,
সেইতো অনেক যা আমার আছে,
তুমি নিওনা মোরে ওগো কারো দ্বোরে কোন লোকের কাছে,
সহিতে দিও মিনতি তাই, আমি যেন পথ না হারাই, কভু নাহি কিছু চাহি শুধু তব করুণায় বাঁচিতে চাই ।

পর্ব-০৪

সব হারালেও না হই আমি দিশাহারা,
চাই শক্তি তোমার দেওয়া বোঝাটা বহিতে পারা,
হে প্রভু আমি কভু, তোমারে না হারাই, যেন শুধু তুমি ছাড়া,
বিশ্বাস অটল অবিচল,
আশা ভরসা সাহস ও মনোবল,
সারাদিন সারাবেলা,
বোঝাই মালের ঐ ঠেলাগাড়ীটা প্রাণপণ শুধু ঠেলা,
সবটুকু ভার বহিতে পারি,
যতই কষ্ট পাই তবু না হই আকুল না যেন যাইগো হারি,
যদিরে আর পেরে না উঠি,
তবু না যেন যায় তব ঐ রশিটা টুটি,
আমি পাইবা নাপাই, ওরে খাইবা নাখাই হে প্রভু, যেন আমি আর কোথা কভু নাহি যাই ।
ধন-জন সুখ-মান নিরাপদ ঠাই,
অনটন প্রয়োজন, যা বলি আর তা হোক যাই,
উনা হলোকি তব ভান্ডার বলো তাই,
নাহলে তুমি কি পারোনা, আর কি তোমার কাছে নাই,
নই আমি একা নহে অসহায়, এই বিশ্বাস ও ভরসাটাই যেন আমরণ থাকে পাই,
রেখো মোরে তব ভিখারী করে,
নাহয় না দিও কভু মোর, বিছানো ঐ ডালাটা ভরে,
আমি জনম ভরে তোমার দুয়ারে ওরে দুহাত পেতে, তব রোশনিতে মজে ও মেতে কাতরে রহিব দাড়াই ।
ভরে মম মন প্রাণ,
পরের সবা উপকার দীনজনে দান,
করিতে যেন পারিগো অসহায় মানুষের কিছুটা কল্যাণ,
আর ঐ কাজে যেন আমি সহজে পাই, তোমার সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হবার মর্যাদা ও সম্মান,
সেইতো আমার পরম চাওয়া,
হবে তোমার দীপ্ত আলোর ঝিলে ডুবিয়ে নাওয়া,
মুছে দিবে সব ঋন, তা কভু কোনদিন বালাম হতে মুছে না যাওয়া,
জানি তোমার ঐ একটু ছাড়, ভরাবে আলোয় দিগন্ত ভরা ঘন অন্ধকার, এমন সে মহান পাওয়া,
চির অক্ষয় সঞ্চয়, মরণেও মহাকাল সংগে রয়, তাই হয় মোর সম্বল ও কামাই শুধু ঐ ক্ষুদ্র পুণ্যটাই ।
পেয়ে ঢের ধনজন,
হর্ষ ও পঞ্চরসের ভোগবিনোদন,
সুখের শিখরে থাকা সমাজের ঐ ধনী মানুষগণ,
কুটুম দেখে হয় যাদের বদন মলিন,
দিনেদিনে অজানায়, বাড়িছে তাদের হায়, লোকের ও রাজার ঋন,
যদিও ভাবিছে ধন আর সিংহাসন করেছে তারা জয়, আসলে তা মিছে মনেহয়, তাদের ঐ সুখ-সাফল্যের বড়াই ।

পর্ব-০৫

কেউরে দেয় দালানকোঠা,
কপালে রাজ তিলকের লক্ষ্ণী ফোটা,
কারো বড় কঠিন পেটভরে দুবেলার ভাত জোটা,
কত ফুল না ফুটিতে হায়, কেন ঝড়ে পড়ে যায় হতে তার বোটা,  
কি দোষ ওরে কপালের,
ঐ সবইতো বিধির লিখন নিয়তির ফের,
হতে পারে তা দোষ কিবা জের, কারো বচন আচরণ ও কর্ম্মের,
সে সাধ্য কার বলো হয়ে যাবে বার, ছিড়ে বিধির বিধানের যাতনা ও কষ্ট দুঃখের ঐ ঘের,
কেন লোকে দেয় কপালের খোটা,
নদী ভেংগে দেয়, যার ধন সে কেড়ে নেয়, কতজনের ঠিকানা ও বাড়ীঘর ভিটা,
পরিচয় ও বাহাদুরি সবটাই,
সবটুকু ধন জাত কুল মান সুখ যা ছিল তাই,
কি ভেদ তার জানেন মালিক সাঁই, কেন কেউরে শূন্য করে কেউরে দেয় সে ভরে ঝুড়িটা পূরাই ।
ঝি-পুত ধনজন নয়,
যখন যাকে তার যেমন ইচ্ছে মর্জি হয়,
নহে শুধু বিদ্যা ও ধন সবে যেন লভে খাটি মানুষের পরিচয়,
দেয় ঢেলে নেয় কেড়ে, কেজানে আসলে কোনটা কার জয় কোনটাবা পরাজয়,
একবার দিয়ে ও একবার নিয়ে মনেহয় শাস্তি দেয়, কিবা রাজায় তার গোলামেরে পরীক্ষা করে লয়,
যাই হোক যাই,
ছিড়ে গেছে পাল বৈঠাও নাই,
মাঝ দরিয়ায় ঐ তরীটার যে ছিল মাঝি ভাই,
সব হারানো কাঙাল, ভেংগে পড়া ডাল, তবু আশার হালটা ধরা চাই,
বিশ্বাস আছে যার, ঐ বিধাতার করুণা অপার, রেখেছেন নেয়ামত ধন আকাশ ও মাটির দুনিয়া ছড়াই ।
ছেলেমেয়ের বিয়ে হবে,
পড়শী কুটুম ও অতিথিরা খাবে সবে,
বাবার বদন মলিন,
শেষে না আবার হয়ে যায় তার বড় ঋন,
বুঝি মোখে তার সে ভাবনার চিন ও একটু নকল হাসি,
কি করবে খুঁজে নাহি পায়, কি যেন বলিতে চায়, ঘুরেঘুরে বারবার আসি,
আহা কত ধুমধাম,
শত লোকের ঝড়ছে মাথার ঘাম,
বিয়াই বাড়ীতে যেন টিকে থাকে তার সবটুকু সুনাম আর দাম,
সে এক মহা আয়োজন,
না যেন হয় কোন বদনাম, তাই মান বাঁচাতে বুঝি বিচলিত মন,
মনে তার ঐ শংকা ও ভয়টাই,
বুঝি তার সব টাকার এখনও যোগাড় হয় নাই,
ঘুরছে সে বারবার,
জায়গা নাই বসার নাকি বলার,
তবু ব্যস্ত রহে একাই বহে ও নিরবে সহে কারে না কহে, সারাক্ষণ মোখেতে খুশীর সাতরঙ প্রলেপ ভরাই ।