ভূমিকা - এটি তৃতীয় নয়নে দেখা একটি জীবন দরশন মূলক কবিতা, বিচিত্র রঙে সাজানো এ বিশ্ব জগত এবং জীবনের অসীম অপার শাশ্বত ও সার্বজনীন রুপ এর কলম-চিত্র যা হয়তোবা সকলের দৃষ্টিতে একই রকম না’ও হতে পারে । হয়তো কারো কাছে তা তেমন ভালো না’ও লাগতে পারে, আবার কারো কাছে লাগতেও পারে দারুণ চমৎকার, তাই পড়ুন ।
হাতে তেমন সময় নেই, কিবা ইচ্ছেও করছেনা তবুও, আপনিও নাহয় বিরক্তিটুকু ঝেড়ে নিছক অনুসন্ধিৎসায়ই একবার পড়ুন । আমার প্রায় সব গল্পকাব্য বা নিবন্ধই একটু বড় হয়ে যায়, এ দোষের জন্য তাই আমি মার্জনা চাইছি । জীবনের সুবিশাল পরিসর, তাই জীবন থেকে নেওয়া লেখাগুলো একটু বড়তো হবেই । অতএব, পড়ার আগেই দীর্ঘ লেখনী পাঠের মানষিক ক্লান্তি ও অবহেলায় তা ঠেলে না দিয়ে, পারলে দিননা তারে একটু নিবেশ । শুনেছি যাদের ধর্য্য বা সবর কম তাদের নাকি ব্যস্ততা ও পেরেশানিও বেশী থাকে, সবসময়ই হাতে সময়ের খুউব অভাব এবং তাই তারা অনেক মূল্যবান নেয়ামত থেকেও বঞ্চিত হন বা তা হারান ।
ডানপিটে কিশোর-তরুণের দল তামাসার ছলে যেমনি ছাইয়ের টাল উড়িয়ে খেলে তেমনি পড়াটা’ও হতে পারে অনুরুপ একটা মজার খেলা । কাটবে ভালোয়, ভালো নালাগা বিরস ও অবসন্ন অলস বেলা । অনুভবে চেতনায় হয়তো দেখতে পাবেন, খুলে গেছে আপনার মনের সবগুলো বন্ধ দুয়ার ও জানালা । সব পড়ায়ই রয়েছে জ্ঞানের বিপুল সমাহার, তা লুফে নিতে দরকার পাঠকের সেই চোখ ও মন যা আকাশের মতন বিশাল, উদার ও খোলা  আর সাগর সম অতল গহীন । শিখা ও শিখাবার রয়েছে দায় আর তা শিখতে ও শিখাতে পারলেই কমবে ঋন ।
আমরা ইচ্ছে করলেই, পঠন তথা সব লিখনই বেশী বেশী এবং ভালোকরে পাঠ করা থেকে এমন কিছুনা কিছু জানতে ও শিখতে পারি যা একেবারেই ব্যয়হীন, হতেও পারে সম্পূর্ণ নতুন বা একেবারে ভিন্ন আমেজের অথচ মহামূল্যবান । শিখতে ও জানতে হলে পড়ার কোন বিকল্প নেই । আর এ জানা ও শেখারও কোন শেষ নেই, আছে জীবনের শেষ । আর তা না ফুরাতেই আমার ইচ্ছে সামাণ্য যেটুকু জানি তা দিই বাতাসে ছড়াই সবারে বিলাই এবং এখনও যে অসীম জানার বাকী তাই খুঁজে বেড়াই ও আহরণ করি । ক্ষুদ্র কোন ভালোকথা বলা বা ভালোকাজ করাও বৃহত পুণ্যময় কাজ । তাই সে অর্থেই কবির ভাষায় - যেকোন পাঠেই হয়তো আপনি পেলেও পেতে পারেন এমন কিছু অমূল্য রতন যা হয়তো মৃত জীবনেও হতে পারে নিদানের ঢাল, মেটাতে পারে সমূহ প্রয়োজন ও আমাদের সকলের মুক্তির উপায় ।
এ পড়ায় হয়তো হয়েও যেতে পারে এমন একটু জানা, আরেকটু বেশী শেখা, নিজেকে ও আপন মনিব তথা দাদনের মহাজনকে চেনা, বিনাদামে আকাশে মহামূল্যবান প্রাসাদ কেনা - ইজারা নয় একেবারে চিরস্থায়ী হবে যার মালিকানা, বিধিও আর বলবেনা কানা হবে অনেক দূরে ও গহীনে দেখা এবং সবকিছু আর সবারে হারিয়ে অন্ধকার ঘরে মানুষ যখন হয়ে পড়বে বড়ই নিঃস্ব, অসহায় ও একা । ঐ পড়ায়ই হতে পারে বিকশিত ঐশী জ্ঞান, ব্যক্তি বিচক্ষণ ও তার কঠিন নিদানের সব পরীক্ষায় পাস এবং হাতে পাওয়া তার কর্মে প্রাপ্য যথা প্রতিদান, বিনিময় ও পুরস্কার এবং তার বরাদ্দ, আমন্ত্রণ, অনুমোদন ও ছাড়পত্র ।
বেশী বেশী পড়লে মানুষ হয় এমনই শ্রেষ্ঠ ও মহান ঠিক যেমনটি হবার জন্যই বিধাতায় দুনিয়ায় করেছেন মানুষ সৃজন । পড়ায় মানুষের তৃতীয় চক্ষু খোলে ও কোমায় থাকা বিভোর অচেতন আত্মভোলা আত্মাগুলোকে ঠেলে জাগিয়ে তোলে । আর তাতে একজন সাধারণ মানুষও হয়ে উঠে এমন মস্তবড় দার্শনিক যা তাকে আসল মানুষ বানায় আর লভে সে সবখানে বিজয় । ঐ দার্শনিক, দিক হারিয়েও আবার খুঁজে পাওয়া সঠিক দিক বিধাতার এমন একজন অটল ও অবিচল বিশ্বাসী গোলাম ও অসীম সাহসী পর্যটক নাবিক । আসুন, যেখানে যেটুকু লেখা, নিবন্ধ, আর্টিকেল, ফিচার, আকাশ ও মাটির যত বই ও তার বাণী ও পাঠ চোখে বা হাতে পড়লেই অর্থাৎ সুযোগ পেলেই টেনে নিয়ে তাই পড়ি ও তার সারটুকু আহরণ করে লই এবং ঐ দার্শনিক পর্যটককে খুঁজে পেলে তার কাফেলায় যোগ দিই ও সংগী হই ।  

পল্লীমায়ের শেষ বিকেলের পড়ন্ত বেলা ॥
ছোট ছোট ঘর,
কেউ কারো নহে যেন পর,
দূর হতে দেখা নন্দিত সে মোহন লহর,
কোথাও আছে কোথাও নাই উঠোন বাহির ও অন্দর,
গাঁয়ের ভিতর,
আঁকাবাঁকা পায়ে চলা পথের উপর,
উনুনের ধুয়া কুয়াশার সনে মিতালী করে যেন গাছগাছালিরে জড়িয়ে ধরে করছে খেলা ॥
লোকালয় থেকে বহু দূরে,
এক নিরব নিঝুম ও বিজন প্রান্তরে,
মহাসড়ক হতে সামাণ্য এগিয়ে একটু ভিতরে,
নাই তেমন লোকজন, গ্রাহকের আনাগোনা চোখে নাহি পড়ে,
তাই প্রশ্ন জাগে মনে কে গড়েছে, ছিল কি দরকার, কেন এই বিভূঁই বিজনে এতবড় এক বিশাল বাজার ॥
অনেক উঁচুতে শুধু একখানা টিনের চালা,
হাজার হাজার দোকান চারদিকে যার একেবারে খোলা,
কোমড় অবধি উঁচু পাকা পাটাতন,
কোন দোকানে গ্রাহক বড়জোর দুই/একজন,
আবার কোনটাতে কোন বিক্রেতাই নাই জানিনা কেন এমন ।
কোন গলিতে হেটেচলা গুটিকতক লোকজন,
দেখে মনেহয় নিশ্চয় ভুল নয়, বুঝি করছে তারা পায়চারি ভ্রমণ,  
দুখানা বেগই আমার,  
হয়েছে তা এমন, বহিতে যেন পারছিনা আর,
হাতে লয়ে হেটে দুচার কদম সামনে যাবার সাধ্য নাহি কার,
নানা সওদায় কানায় কানায় ভরে গিয়ে তা হয়েছে যেন এমনই ভীষণ ভার ॥  
কি নাই কি চাই, সব আছে বলো কার কি প্রয়োজন,
দূরে ও কাছে এখানে ওখানে হাতেগণা ক্রেতা কিবা দর্শক ছিলাম আমরা কয়জন,
ঝুলছে সবখানে সব দোকানে একটি করে বিজলী নহে সোলার বাতি আলো ছিলনা যার তেমন ।
ছড়িয়ে সাজানো ঠাসা,
কোথা মোর বাড়ীঘর ঠিকানা ও বাসা,
কে আছে ঘরে, কেনইবা মোর অচেনা এ বাজারে আসা,
বারবার শুধু ভাবছি আমি তবু পড়ছেনাতো মনে আমার কিছুই যেন তার ॥
সবাই ভিনদেশী ও ভিন্নভাষী কারে কি বলি,  
বাহিরে যাবার পথটা বুঝি ফেলেছি হারিয়ে আমি গিয়েছি ভুলি,
হবেনা কেন, উত্তরে দক্ষিনে পূবে ও পশ্চিমে সামনে পিছনে ছিল তার হাজারটা গলি ।
কেনাকাটা হয়েছে সমাপন,
এখানে সেখানে রাখা খুঁজেখুঁজে এবার এখন,
সবগুলি থলে জড়ো করে, একটা গাড়ী ভাড়া করা প্রয়োজন,
কই দেখছিনাতো কোন গাড়ী, এদিকে ওদিকে ফিরে দেখিলাম কিছুক্ষণ,  
প্রান্ত দেখা যায়না যার, লম্বায় হবে হয়ত কমকরেও প্রতিটা গলি যার পাঁচশত মিটার ॥
থলেটা ভরে গেছে বলে,
বহিতে তাই বড়ই কঠিন হলে,
যেথা হতে কেনা ঐ দোকানেই তা রেখে যাই,  
অনেক দূরে দূরে, এই করে করে ঘুরে ঘুরে সওদা করে ভাই,
সবগুলি গলি ও সব দোকানই যেন একই রকম মনেহয়, হেন গোলক ধাঁধায় পড়েছি তাই ।
আগের দোকানটা যেন আর এখন খুঁজে নাহি পাই,
এমনি করে তাই, ভিন দোকানে রাখা তিনখানা বেগই আমি ফেলেছি হারাই,    
যখন শেষে হারিয়ে এলোমেলো দিক,
সারা দেহমন ও মাথাটা জুড়িল আমার তীব্র তাড়নার হিড়িক,
বললো হেসে যেত হবে তাড়াতাড়ি জলদি আসুন স্যার,
অবশেষে পেলাম একটা গাড়ী ছিল যার একজন সুহৃদ ও সুজন বয়স্ক ড্রাইভার ॥  
বড়ই ক্লান্ত ও পেরেশান,
সারাটাদেহ ও মোর অবসন্ন এ পা দুইখান,
হাতের দুখানা বেগ তার কাছে রেখে বললাম একটু বসেন এখনই আসছি ভাইজান ।
তারে আমি তা কি করে বলি,
বাজারের থলি দোকান আর বাহির হবার পথ ও গলি,
ক্লান্তি ও জড়তা ওরে,
বলছে কে যেন তারে মিনতি ভরে,
আর কত এবার সুবোধ সুজনের মত বিশ্রামে যা, এ দেহখান চলছেনাযে আর ॥
ঘুরে ঘুরে সময় পেরলো অনেকক্ষণ,
ফিরে এসে দেখি নাই ড্রাইভার ও তার গাড়ী, কি করি এখন,
বেগ দুইখানার বদন বিষন্ন মলিন,
পড়ে আছে ওখানেই মালিকহীন অসহায়ের মতন,
কিছূ বুঝে উঠার আগেই, দেখিলাম এদিক ওদিক দ্রুতবেগে ছুটছে সব লোকজন ।
এখানে নাকি প্রায়ই হয় এমন,
শুনিলাম আমি প্রচন্ড শব্দে সাইরেনের গর্জন,
কি ব্যাপার, শুনি মোখেতে সবার, শুরু হবে নাকি এখনই সাইক্লোন আসিবে প্লাবন ।
নিমেষে করিবে ষোলআনা গ্রাস,
বাঁচিবার আশা নেই, মহাহাহুতাষের ঐ ত্রাস,
অথই সাগরের জল আর জল ঘিরে আছে বাজারের চারপাশ,
আগ্নেয়গিরির জলন্ত লাভার মতন সবার চোখে নাকি অদূরে দৃশ্যমান ঐ মহাজলোচ্ছাস ।
সব ফেলে শেষে আমিও এক নিমেষ,
উদভ্রান্ত ক্ষিপ্র গতি সাহেব নহে পাগলের বেশ,
এটা নাকি মহাসাগরের মাঝে ছোট্ট এক সোনালী দ্বীপদেশ,
নাজেনে তবে এখানে কেন আসিলাম, এক হদ্দবোকার একোন ‍উদ্ভট খায়েস,
তাই বুঝিলাম হায় আর কে বাঁচায়, কোন আশা নাই এই বুঝি জীবনের শেষ ।
দূরে মহাসড়কের গায়,
বিশাল যন্ত্র দানবেরা বিকট শব্দে চলতে দেখা যায়,
অনেক পরে পরে দু/একটা তাদের ক্ষিণ আলোক ছড়ায় ও ভয়াল দাঁত দেখায় ।
হয়নিতোরে বেশী রাত,
কোন ত্রাসে মন যাচিছে এখন দারুণ কাতরে প্রভাত,
তবু কেন এমন মনেহয়,
কিছুই আমার নহে আমিও কারো নয়,
কেনযে আমার রঙমাখা জগতটার ঢাকা চারিধার নির্মম এক কালো চাদরে হতাশার ॥    
একটাই আছে বিশাল বড় ফেরী,
একবারই যায়, আর এক্ষুনি যাবে ছাড়ি,
যেদিকের ঢল তার অনুকূলেই তা ধরবে পারি,
বাজিছে সেই ঘন্টাধ্বনি, হারাতে হবে হলে একটু দেরী,
এ এলাকার কোনদিকে কি, তার সবকিছু মোর অচেনা ও অজানা ।
শুধু বাঁচিবার তরে তীব্র বাসনা,
অচিন প্রবাসে দোচোখ থাকা সহস্র যুবকও যেন কানা,
একি ছুটছি আমিও যেন লোকের দেখাদেখি পিছুপিছু তবে কোনদিকে যাবো তা নেই জানা ।
মাঝেমাঝে কেন এমন হয়,
কোনটা আসল তা না জেনেই এত ভয়,
আমি কি একজন ঐ মহাভুল করা,
নাকি এখন এমনই এক ফাঁদে পড়ে গেছি ধরা,
বুদ্ধি নাশা আধমরা, তাড়ায় শোনা কথার শংকা সেকি ভুল ধারণা,
কত ভাল লাগে বলো হয়ে হেন অপরাধী আসামী আকুল করেছে যারে মরণ তাড়না ।
সাইক্লোন শেলটার,
ঐ সেন্টার একটাই নাকি শুধু ঐ এলাকার,  
যে যেখানে ছিল ছুটছে সেদিকে, বাঁচিতে রাক্ষুসে গ্রাস হতে মরণ থাবার ।
সোলার বাতিগুলো নিমেষে নিভে গেলো সব,
ঘন অন্ধকারে ঘিরিল সবারে, শুরু হলো আপদ ও নিদানের আর্ত চিৎকার ও মহা কলরব,  
পড়ে গিয়ে উঠে আবার ছুটে যেন তা শেষ চেষ্টা বাঁচার,
প্রাণপণ এ যেন জীবনের শেষ রণ, যদিও এখান থেকে কমকরেও হবে তিন কিলোমিটার ॥  
দৌড় আর দৌড়, ঝরছে ঘাম,
মন বলছে ওরে বেটা এবার তবে একটু নাহয় থাম,
না, ক্ষণিকের তরে মোটেও থামা যাবেনা, কেননা এ জীবনটারযে অনেক দাম ।  
তারপর, হঠাৎ যখন ভাংলো ঘুমখানা,
চমকে উঠে থমকে বসে মাথায় এলো এলোমেলো সব ভাবনা,
কোথায় আমি, কিভাবে কখন এখানে এলাম, কেমনে হলো এ ভিজা বেলাভূম আমার বিছানা ।

রচয়িতা/লেখক/কবি

আবু সাইয়িদ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক
সেল ফোন-০১৬২৭৮ ৯৪৭৯৭/০১৩০১৭ ১৯৫৫৩
ইমেইল-abuhaawk@ymail.com   &  dactarkhana24@gmail.com