পর্ব-০১
কাকের বাসায় জন্ম লভে ও ধীরে ধীরে উঠে বেড়ে কুকিলের ছানা ॥
আহারে দরদী মায়,
ছানারে তার পরম আদরে পেটভরে খাওয়ায়,
সোহাগে বাছারা পরম সুখে মায়ের বুকে পাখনার চাদরতলে ঘুমায়,
হঠাৎ যখন বুঝিল একদিন, বুঝিরে মায় এবার মেরে নিজ সন্তানেরে তাড়াতে চায়,
ছানারা ভাবে কি কারণ তার, মনে কষ্টের হাহাকার, কেনরে মায় আমাদেরে আর চায়না ॥
যখন মায়ের ভুল ভাংগে হায়,
ছানাগুলি নয়যে তার, যখন ওরে তা জানা হয়ে যায়,
আহা, ছেদ পড়ে যেন মায়ের মায়া-ভালবাসায়, বুঝি বন্ধ হলো তার হাতের মজার খানা ॥
ওরে বাঁচিতে হলে,
অবুঝ শিশুর মনটা তাদেরে বলে,
পালানো ছাড়া এবার, বুঝি উপায় নাহি আর, একথা আজ অতি স্বচ্ছ-পরিস্কার হয়েছে জানা ॥
ভয়কি আর আহারে,
বিশাল বড় দুনিয়া ডাকছে তাদেরে,
কতনা খাবার আর সাজানো তার হাজার রঙের বাহারে,
এখনতো সে ওরে উড়তেই পারে,
মা নহে তবু, এতদিন ধরে কষ্ট করে যে খাওয়ালো তারে,
সেতো সকলই পারে, কেউতো কভু নাহি হারে, বরং জিতে যায়, পেলে স্রষ্টার সামাণ্য করুণা ॥
এডালে ওডালে গাছে গাছে,
অনেক দূরে ভিন্ন বনে, নয়রে শুধু কাছে কাছে,
দুই পা আর এই ডানা দুখানায় যতক্ষণ তার বিধাতার দেওয়া বল আছে,
যেথা খুশী উড়ে যেতে, দিনভর ঘুরে ফিরে বেড়াতে, আর নানান খাবার খেতে নেই কোন মানা ॥
শুধু দুঃক্ষটা এই,
মনখুলে কথা বলার জায়গাটা যেন নেই,
মাবাবার দেখা পেলাম না, এ জীবনে তাদের সনে বুঝি আর আমার হলোনা চেনাজানা ॥
অনাহারে মোর কাটেনিতো একদিন,
কে সে দয়ালু এমন, কেমনে শোধিব কবে আমি তার ঋন,
দুনিয়া জোড়া তার,
জানি রয়েছে এক বিশাল পোষ্য পরিবার,
সবারে সে বারো মজার খাবার খাওয়ায়, তাতেই সুখ ও আনন্দ পায়, নিজে কভু কিছুইতো খায়না ॥
সন্তুষ্টি আর কৃতজ্ঞতায়,
সিজদায় পড়ে দেহ ও মনের মাথা নোয়ায়,
হয়ে তার দাস ভক্তি, বিনয় ও বিশ্বাসে তার দুখানা অদেখা পায়,
তাকেই বেশী ভালবাসে আস্থা ও নির্ভরতায় যে যত বেশী চায় ও বসে থাকে সে আশায়,
গোলামের বশ্যতা, আনুগত্য, মান্যতা, মুখাপেক্ষিতা ও সুবাধ্যতা ছাড়া আর কিছুতো কভু সে চায়না ॥
পর্ব-০২
কারো মা যদি যায় মরে,
বাবাও পালায় অচিন দূর দেশান্তরে,
বোনেরা সবাই যে যার স্বামীর বাড়ী সে তো পরের ঘরে,
নারীর কারণে পর হয় ভাই তাই আর নহে ঠাই, যদিও দেয় বাড়ীর বাহির করে,
কেউ নহে ওরে অসহায় যদিরে খোদার করুণা পায়, পড়েও গহীন রাতের অকূল দরিয়ার দামাল ঝড়ে,
ওরে নেই কোন ভয় কিবা ভাবনা স্রষ্টা, দাতা ও পালক বিধাতা এ জীবনে কভু কারো পর হয়ে যায়না ॥
কই থাকে ঐ মহান মহাজন,
মনের ঘরের বন্ধ সকল দুয়ার ও জানালা খুলবে যখন,
তীক্ষ্ণ আলো ও সকল ভালো আর সুদূর দিগন্তে দেখার ফুটবেরে ঐ তৃতীয় নয়ন,
দুটি চোখ থেকেও যারা রইলো কানা, হয়না সাধন বৃথা এ জীবন, পাবেনা সন্ধান তারা কভু পায়না ॥
আর বাড়ী কই তার, সে দেখতে কেমন,
প্রভু ও মনিব আর এই মহাবিশ্বটার একক মালিক ও রাজন,
সামনে-পিছনে ও সংগে থাকে,
কেন অবিরত এক দরদী রক্ষীর মত সে আগলে রাখে,
কে সে মহাশক্তিমান সহস্র যার করুণার দান তবে কেন ওরে সদা রহে সে করে পলায়ন,
মহারাজার কুটুমবাড়ীতে একবার বেড়াতে যেতাম, যদিরে আমি পেতাম ঠিকঠাক তার ঠিকানা ॥
মাটিতে সোনাফলা,
এমন একখান সোনার বীজতলা,
আলো ও ভালোর ক্ষেতিচাষে এক চির শান্তির বসবাস,
যারা সত্য বলে, নিয়ম ও বিধানে চলে, অদেখা রাজায় ষোলআনা বিশ্বাস,
যারা কখনও আর অমানুষ হবেনা, এমন একখানা মানুষ গড়ার বিশাল কারখানা ॥
কত বড় খোলা নীল আকাশ,
মহারাজার সবুজ বনানী অযুত ফুল ও নিযুত ফলের চাষ,
তার ভোগ-দখলে আমরণ বারোমাস,
যদিও মনেহয় আসলে তা মালিকানা নয়, শুধুই দুদিনের পরবাস ।
আছে পরীক্ষা ও ফেল-পাস,
রঙীন মজার খেলার কত বিনোদন ও শত ভোগ-বিলাস,
আসা-যাওয়ার রয়েছে সৃষ্টি পোষ্য তার অগণিত জীব আর অস্থায়ী ইজারার গোলাম দাস,
হয়ে নিরব দেখিছে সব, অন্তরে যার অর্ন্তযামী ফিট করে দিয়েছেন দামী একখানা ঐ আয়না ॥
চলরে হেথা, কে আমার সংগে যাবি,
ভাগ্যটা তোর ভাল হলে হয়তো তার দেখা’ও পাবি,
ওরে, যখন যেমন চাহে তোর মন, বারোমাস সহস্র মজার খানা খাবি,
বলনা ভয় কিবা আর কিসের ভাবনা, এখনতো ওরে তোর গজেছে ডানা ॥
কই আমি এত খুঁজিলাম,
পেলামনাতো আজও খুঁজে তার ঠিকানা ও ধাম,
নাই হিতাহিত কেমন পন্ডিত কারো কাছে নাহি পেলাম তার আসল পরিচয় ও নাম,
উড়েউড়ে কাছে ও দূরে বনবাদারে তেপান্তরে ঘুরেঘুরে ক্লান্ত হয়েছে মোর এই দুখানা পাখনা ॥
পর্ব-০৩
ওরে অবুঝ বোঁকা,
তামাসার প্রহসন ও কুহেলিকা,
সারাবেলা এটাও যেন এক মজার খেলা মোহ-ধোকা,
দারুণ সাজানো সে মেলা,
যাদুর আবেশ ছোয়ায় সময় বয়ে যায় হন্নে হয়ে ছুটে চলা,
ওরে মন তার দেখা,
বিজনে বসে থেকেও সারাদিন চুপ করে একা,
জীবন কেটে যায় তবু কেউ পায় কেউ একবারও পায়না দোচোখে যার দেয়া রয়েছে ঢাকনা ॥
মনিবে গোলামেরে কয় ইস,
ওরে বোঁকা মন, তুই ওরে যেখানে থাকিস,
আর তোর প্রিয় সব ধন, আমি সব জানি গোপনে তুই যেথা লুকিয়ে রাখিস ।
ওটাইতো আমার ঘর আমার বাড়ী,
আমি কি ওরে কভু তোরে, ছেড়ে যেতে পারি,
বলো নাহলে বহিতে কেমনে, হলে তা সাত জমিন সমান ভারি,
আমার জলে ধোয়া অক্ষয় সত্তা আর, মিশে বাতাসে হয়ে গিয়ে একাকার দিয়েছি উজারি,
অদেখায় ঢেলে তব সারা গায়, শুধু সেইতো পায়, করে গবেষণ পেলে দরশন হয়েছে যার সমাপন সাধনা ॥
কালো পাখী কুকিলের,
কোন বাসা নেই কেনরে তার নিজের,
সে কি বিধাতার সৃজন বাহার, নাকি কোন ভাগ্যের ফের ।
নেই নিজের একটা ঘর,
এত বিশাল বনানী সবুজে অনিন্দ্য সুন্দর,
বলো তবে কেন আর কি ভেদ ছিল মনে বিধাতার কি হবে তারপর,
কেন আহারে শিখায়নি তাহারে বানাতে আপন ঘর, নিবিড় শান্তির নীড় ছোট্ট একটা বাসাবোনা ॥
শুনে কুকিলের কু কু ডাক,
কেমনে হয়েছিল সু পথিক ভুলে যায় যতই ক্লান্তি থাক,
হেন মোহনীয় ও যাদুময়, মিথ্যে নয় যা শুধু শোনতেই মনে কয় এমনই মধু ভরপুর ।
কাকের কা কা কর্কশ রবে,
দেখেছি সদা ক্ষিপ্ত ও বিরক্ত হয় সবে,
কাকেরে বলে সবে কুৎসিত ও ধূর্ত-চতুর,
যখন ডাকে কা কা লোকে বলে আল্লারে ডাক, ঢিল ছুড়ে করে দূরদূর,
বেড়ে যায় যেন মনের পেরেশানি তাড়না, তা কেন মনেহয় যেন জ্বালাময় এক মস্ত বিড়ম্বনা ॥
ডিম পারিব প্রভু কোথা যাই,
ছানাগুলির কেমনে কোথায় বলো হবে ঠাই,
তোমার এত বড় দুনিয়ায়, তাদের তরে কি একটু জায়গা নাই,
মম আরজি-বাসনা পূরাও,
মোর সব ভুল, অপরাধ ও গুনাহগুলি ভুলে যাও,
একটা ঘর বানাবার শক্তি, সুযোগ ভাগ্য ও সক্ষমতা আমারে তুমি দাও,
আমি উঠে নিত্য ভোরে ভক্তি, বিনয়, বিশ্বাস, ভয় ও ভালবাসার জোরে, করি তোমার পূঁজা-অর্চনা ॥
পর্ব-০৪
কিসের এত কষ্ট কেন ঐ হাহাকার,
তব চোখে ওরে কেন সবই মন্দ লাগেরে তার,
চারিদিকে ছড়ানো কত শোভা ও সুখ ভরানো এ দুনিয়াটার,
অ কুকিল তব ঐ কন্ঠ, সে কি নহে বিশাল প্রাপ্তি তোমার,
এত কালো হয়েও ধন্য তুমি, কেউ তবু কুৎসিত বলেনা ও ভর্ৎসনা করেনা,
কত বিরহী বিরহিণী আপন মনে, বসে দূর বনে তব গান শোনে তবু যেন কারো মন ভরেনা,
যারা ধৈর্য্য ধরেনা চরণে পড়ে যাচেনা করুণা কেমনে তাদের হবে বেশুমার মম সৃজন বাহার ধারণা ॥
তব কন্ঠগুনে শুনিতে বুঝি লাগে তা এত মধুর,
শ্রবণ ও হৃদয় যেন সুশীতল হয়, মোহ আবেশে ভরপূর,
কু – মানে মন্দ তাই হতে পারতো, হয়ে যা ওরে তুই আমা হতে দূর,
তোমার ঐ মধুর কন্ঠ জানোকি কার দান, দুনিয়ার বাড়ীতে কে কদিনের মুসাফির মেহমান আছে কি জানা ॥
তাই বুঝি হয়েছিল কাকের বংশের যম,
কার ভাগে জয়-পরাজয় ও কতটুকু সুখ বেশী কিবা কম,
কাক ও কুকিলের ডিম ও ছানাগুলি কেন দেখতে হয় প্রায় একই রকম,
চতুর কাকের চেয়েও কুকিলের, কুট-কৌশল দেখছি যেন বেশী ঢের, যা আমার আগে জানা ছিলনা ॥
দুষ্ট বুদ্ধির সেই সুবাদে,
হেরে গিয়ে বেচারা কাক পড়ে বিষম ফাঁদে,
কুকিলকে দেখলেই তাই সে মারতে ছুটে যায় কষ্টে, ক্ষোভে ও বিষাদে,
কুকিল এসে কাকের বাসা থেকে, ডিমগুলি তার দিয়ে ফেলে,
ডিম পেরে রেখে হেথা, তড়িঘড়ি চম্পট দেয় কোন সুদূর বনে পাখনা মেলে,
অনেক পরে তা বুঝতে পেরে, অসহায় কাকে বসে হায় নিরবে আফসোস করে আর কত কাঁদে,
কেমনেবা তা মেনে লয়,
কারেবা সে তার ঐ দুঃক্ষটা কয়,
মরণও যদি হয়, যায় কি কুকিলের কাছে কভু তার এ পরাজয় কিবা হার মানা ॥
কত বিত্তশালী, বিদ্যান ও পন্ডিত,
দেখি হায় তাদের ঐ পথটা যেন বাঁকা ও বিপরীত,
তবে জানিনা কবে, আহা তারা সবে, ফিরে পাবে ঐ সঠিক সম্বিত,
করছি ভয় শেষে না এমন হয়, চতুর কাকের মতই হয় তাদের হার, না হয়ে জিত ।
হয়না হবেনা তাদের,
চারপাশে মিথ্যা, মন্দ ও ভুলের ঘের,
ছোট্ট আমাদের এ রঙ মাখানো ছবি আঁকানো মাটির জীবনের,
পাওয়া না পাওয়া, জয়-পরাজয় ও লাভ-ক্ষতির ঐ হিসাবটা সকলের শুধুই তার নিজের,
জীবনের মজার ভেদগুলি জানা, এ জগতে যারা আজও পথহারা, চোখ থেকেও যেন রয়েছে কানা ॥