যে বসন্ত দূর, বহু দূরে নির্জন দ্বীপে,
সেজেছিল পূর্ণিমা রাতে, একান্ত গোপন
যৌবনসভায় প্রতিটি কথার বিপরীতে।
ফুলের পাপড়ি, সবুজ পাতায় প্রেমের
অঙ্কুরে নতুন কুঁড়িতে,
পলাশ ছিল তখন নতুন, রঙে,
গন্ধে, মকরন্দে সবুজ,
ভ্রমর ছিল মাতোয়ারা, গুনগুন উড়ত
দোলে দোলে তার চারপাশে,
সে কবেকার কুসুমের সৌরভ,
কার ছোঁয়ায় এমন অমর,
কার রঙে এত রঙিন, কার ভূষণে অলংকৃত!
আভা, রস, হারিয়ে এখন কেমন নিথর হয়ে
যেন নির্বাসন, বিরহিণী একা ষোড়শীর বিরহ দহনে,
ফাগুনের আগুন জ্বলে উঠে পুণ্য নিয়মে।
ঝড়ে যখন সব ভেঙে ছারখার হয়ে গেল চারদিক,
আমার রঙীন সে বাগান আজ শুধুই গল্প,
কেহ স্বীকার করেনা তার কোন অস্বিত্ব,
করবেওনা, “বিলুপ্ত” এ কথাটাওতো শুনিনা,
কোথায় আর খুঁজে পাবো অপেক্ষার জীবাশ্ম?
কে খুঁজে বের করবে সে
সব লিপিকার অমর কাব্য,
হ্রদয়ের তারে, কুসুমের দলে,
সুলেখা কলমে লেখা প্রেমপত্র,
এখনও স্বপ্নময় রাতে ঘোলাটে চোখে ভেসে
আসে, প্রথম কবিতার সেই প্রথম পান্ডুলিপি,
প্রথম নিষ্কলঙ্ক প্রেমপত্র,
সব কেমন হঠাৎ ফিঁকে হয়ে যায় যান্ত্রিক শব্দে,
অচেনা, অজানা নম্ভর থেকে ডিজিটাল প্রেমে,
ছন্দও আছে, ছবিও আছে, কবিতা ও আছে,
অস্বীকার করা যাবেনা,
নদী থেমে থাকেনা, তবে অনেক পার
হারিয়ে যায় বানে, নতুন পারে কি আর
হারানো মিতা গাইবে হারানো আবেগ?
কোথায় শুয়ে আছি পাহাড়ের পাদদেশে,
শক্ত নুড়িতে, ঢেউ আছড়ে পরে দূর
সাগরের দেশ হতে ভিন্ন স্বাদে,
উন্মুক্ত আদিমের চেয়ে আরো আদিম,
মীশরের চেয়েও পুরনো, কে জানে কার কি
ইতিবৃত্তান্ত, পলাশক এখন রঙীন দেখি
শুধুই ফেইসবুকে ফটোশপে এডিটে,
মনের পলাশ যেন কেমন ধূসর হয়ে
গেছে ধূলো জমে, খুঁজে পাওয়াওতো দুষ্কর,
হারানো কোন বইয়ের মলাটে
শুকিয়ে গেছে পথ চেয়ে চেয়ে,
রঙ, আভা, শোভা, প্রভা, দীপ্তি,
কোমলতা অনুপস্থিত চোখে,
যেন কেহ নির্দয় ভাবে কেটে নিয়েছে
অনুভূতির অন্ত্র, যন্ত্র করে দিয়েছে
লোহার খাঁচায় পুরে দিনে দিনে
চিৎকার করে কাঁদছে সে মানবী
অহোরাত্র তুষের আগুনে
পলাশের ছবিতেই শুধু
আঁকে মুক্তির ছাড়পত্র।
ফাগুন হঠাৎ হঠাৎ জীবিত হয়ে উঠে কবিতায়,
কথায়, কতটা বসন্ত কে জানে, আর কতটা
আবেগে জীবন্ত হয়ে উঠে মৃত পলাশের মকরন্দ,
মৃত মানবের শেষ অস্ত্বিত্ব,
কেমন যেন ছুইয়ে ফেলি আমিও তোমায়,
ঠোঁটের অমৃত সুধায় যেন মেতে উঠি তরঙ্গের ঢেউয়ে, বাঁকা সে নুইয়ে পরা শাঁখে কে দেয় প্রাণ এমন দুর্বারে, তোমার শ্রাবন, তোমার ধারায়, সুধায় ভেসে যায় শুকনো সে তীর, সে হারানো বসন্ত কেমন জেগে উঠে চোখে, স্মৃতির ভ্রমণে, তৃষ্ণায় মৃত যত এপস জীবিত হয়ে উঠে তারের কানেক্শনে। ক্ষীণকাল সিন্ধু বয়ে চলে যৌবনস্রোতে, উন্মাদী-মুক্ত গনতন্ত্রে,
মধুমেহ, কোলেস্টেরল যত সব নেগেটিভ
কেরেকটার, কখনো ভিলেন বটে,
মুক্ত জীবনে নাটকের চরিত্র সব,
ছন্দপতন হয় গানের সঞ্ছারীতে,
কখনো আবার শুরুতেই মনের
ফাগুন পথ ঘুরিয়ে নেয় আবার
বুদ্ধিজীবির চিন্তনে, চরম নিঃশব্দে
ঘরে টিক্টিক্ ডাকে কেমন বখাটে
ভঙীতে, ঘুম যখন ভাঙে ভোরে, অস্পষ্ট
কুয়াশার চাঁদরে মোরে, কদর্য যত সব
খোলসের ভ্যাপ্সা গন্ধে, বাতাস ভরে উঠে,
কি আর হবে, সে শাঁখে আমিই
জল ঢেলে গেছি নিজেরে ভুলে,
পলাশ আর কবে হবে রঙীন,
তবু কবিতায় আশা অসীম,
আমি বেড়োব বারবার ডিজিটালের
মুখোশে এনালগীর সন্ধানে
সুলেখা কলমের সেই প্রেমপত্রের
আবিষ্কারে কলম্বাস হয়ে,
ভগ্ন মিনারে ফসিলের আবিষ্কারে
ক্যাক্টাসের গুল্মে, কাঁটার ঘায়ে রক্ত
ঝড়িয়ে অপবাদের বৃষ্টি চিরে, তোমায়
পেতে পলাশ; সেই সবুজের অনিন্দ্য
শোভাতে, উপসংহারে, আমার নিথর
দেহ ডেকে দিতে তোমার পাপড়িতে,
হয়ত অনেকের অনেক দেরী হবে,
আসবে আবার তোমায় "সমবেদনা"
জানাতে দেনা পাওয়ার হিসেবে,
পলাশ, তুমি নির্লিপ্ত হয়ে পরে যেও কবিতা,
তোমার সকল বেদনা, তাপ, ক্ষোভ, রাগ,
অভিমান ঝরে যাবে, অনেক বসন্তের নীরব
বিদায়ে, নতুন বসন্তের আগমনে,
পলাশ তুমি বয়ে নিবে প্রেমের বার্তা যুগে যুগে,
মাধ্যম, ভাষা, ভাব বদলাবে, তুমি;
তুমিই রয়ে যাবে, মননের থিয়ের্টার ভূমিতে,
প্রাকৃতিক - জৈবিক সারের সারাংশ হয়ে,
কবিতার পলাশ, সেই পলাশই রয়ে যাবে,
ক্ষণকাল গ্রহণে কখনো আকাশ ডাকে,
তুমি নতুন, তুমি অমর, বিমল ঝিনুক,
মুক্তো খুঁজে নেবে জহরী,
তুমি শুধু তোমার ডাল মেলে দিও প্রসারে,
পলাশ ছিটুক হ্রদয়ে হ্রদয়ে আলোর শিখার
প্রজ্জ্বলনে, অন্ধকার হতে পূর্ণিমার জোছনায়,
জগ্রত বিবেকে শুভ বন্ধনে, জাত, বর্ণ, লিঙ্গ,
দেশ ভুলে এক মঞ্চে সমবেতকন্ঠে, আকাশ
বাতাস আলোড়নে, বন্ধ দুয়ার খুলে প্রেমের
নিমন্ত্রণে, বাঙলার বিজয়ধ্বনিতে, পলাশের তিলক হ্রদয়ে পরে, অহংকার ত্যাগে, সরলের ছাই মাথায় ঠেকে, সৃষ্টির বীজে,
পলাশ ছিটুক মনে-মনে,
মন্দিরে উলুধ্বনিতে, গির্জায় প্রার্থনাতে,
তোমাকে পলাশ দিলেম, তুমিও দিও একটি
পলাশের পাপড়ি বিদেহী স্পর্শে।