বিধি হাঁকিলেন :
হে মর্তবাসী— শুনো,
দৃশ্য অদৃশ্যের সহচরেরা শুনো—
এই পরম শূন্যতায় পূর্ণতা আনতে
এক নক্ষত্র ধূলিতে দিতেছি প্রাণ।
আমারে চিনাইতে দিতেছি অভিধান।
বানাইতেছি এক মানবপ্রাণ।
৷৷
শুনিয়া সবার খানিক নীরবতা...
সমস্বরে কহে—হে বিধাতা,
সর্বাগ্রে চাইছি ক্ষমা,
শূন্যতা আপনার পরম ধর্ম।
কেন চাইছেন পূর্ণতা?
তারা একে অন্যকে করিবে খুন।
রক্তপিপাসুরা খুন করিবে পান।
লোভে পাপ পাপে মৃত্যু জানিয়াও
করিবে লোভ! হিংসুকেরা জ্বলিবে অন্যের
উন্নতিতে, পুড়াইবে আপন মনপ্রাণ।
ভুলিয়া যাইবে আপনার পরম অভিধান।
৷৷
জবাবে বলিলেন—
অত্যল্প জানো বলিয়াই এমন শুধাইলে,
শূন্যতাকে চতুরঙ্গ করিতেই এ প্রয়াস!
শুধু কি বানাইছি মানবপ্রাণ?
প্রতিপ্রাণের অতল গহীনে মোহর
এঁটে দিয়েছি মহাবিশ্বসম শূন্যতার!
মহাসমুদ্রের ঢেউয়ের তরঙ্গিতে যবে
উল্টাইবে জাহাজ, পথভ্রষ্ট নাবিকেরা
বেলাশেষে ফিরিবে আমার দ্বারে।
জেনে রেখো—
আমার দুয়ার খোলা ছিল,
খোলা রইবে সকলেরই তরে।
৷৷
আমি বানাইছি মানব, তারা বানাইবে শ্রেণি।
উচ্চ-মধ্য-নিচু জাতপাতের লড়াই হইবে ভূলুণ্ঠিত,
অজস্র রক্তস্রোতে ভাসিবে পাতালপুরী।
এসবই আমার জানা, তন্মধ্যে আমি বাছাই
করিয়া লইব আমার আশরাফুল মাখলুকাত।
সহচরেরা বলিল :
হে পরমায়ু—
তবে তাই করো যদি ভালো মনে করো।
৷৷
বানাইয়া লইলাম আদমকে কাদামাটি রূপকার্যে,
ফুঁকিয়া দিলাম কিয়দংশ রূহ্ পরম থেকে ধরমে!
সহচরদের বলিলাম :
নিজ মাথা করো নত মোর পরম করমের সমনে,
সযতনে গড়া প্রাণ সৃজি নাই কভু পূর্ব জনমে।
সবে লুটাইয়া দিল আপন শির, একজন গৌরবে গম্ভীর।
যুক্তি ছুড়ি'ল—"আমি আগুনের শিখা সে তো নিঃস্ব মাটির।"
হে প্রভু, কেমনে নুয়াই মাথা নিজাপেক্ষা নিচু শ্রেণির?
শুনিয়া বিধির মেজাজ গেল চটে,
করিলেন তারে চির বিতাড়িত।
৷৷
আদমকে বলিলেন:
সে তোমার বন্ধু নহে জেনে রেখো।
প্রতি স্নায়ুর রন্ধ্রে ঢুকাইবে বিষ।
সে পুরোদম শেষ অব্ধি থাকিবে,
মহাসৃষ্টি থেকে বিতাড়িত ইবলীস।
৷৷
মোর স্বর্গে করো পদচারণা,
আরোহণ করো মহানন্দে,
মহাসৃষ্টির সব একই ছন্দে।
ভোগিও না কভু এ দ্বন্দ্বে
কেন, কী, কীভাবে এ সৃষ্টি?
আদম দেখিলেন চোখ মেলিয়া
স্রষ্টার অপরূপা সৃষ্টি,
চমকে চমকে ওঠে তনু মন
রহস্যময় কি দারুণ দৃষ্টি!
একা একা বহুদিন চলিয়া
থাকিয়া থাকিয়া হন ক্লান্ত।
স্রষ্টার খেলার চাল নিদারুণ
কখন কে-ই বা জানতো?
৷৷
তিনি সেই কবেই জানিতেন
শূন্যতা সৃষ্টির মহৎদ্দেশ্য।
আদমের প্রতি ক্ষণিক সদয়
সদাশয় চূর্ণিকা মিলায়ে হাওয়া!
সেই থেকে হইলেন আদম-হাওয়া
তব শূন্যতা গেলনা তো চুকে।
হৃদয় স্পন্দনে শূন্য ফুঁকে ধুকে!
পরম শূন্যতা থেকে এ চূর্ণিকা
কোথা খোঁজে মরে পূর্ণতা?
৷৷
হে আদম, হে অপূর্ণতা —
ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে গড়া তুমি
এক অভিন্ন সত্ত্বায়!
শূন্য জীবন নিয়া হইয়না ক্ষান্ত,
এ তোমার জনমের পরম ধর্ম,
আমার উৎকর্ষের চরমে!
(অসমাপ্ত)