কখনো ভাবিনি লাবন্যের দেখা পাবো!
লাবন্য ছিল আমার প্রথম প্রনয়, অবশ্য- প্রথম প্রনয় বলে কিছু নেই সব প্রনয়ই নতুন সব প্রনয়ই নতুনত্বের কথা বলে। প্রনয় বাদ দেই য প্রনয়ে'র চেয়ে প্রেমই বলি।
আমার প্রথম প্রেম ছিল লাবন্যের সাথে। হৈমন্তী-বিলাসীকেও ভালো লাগতো, তবে লাবন্যের মাঝে কি যেন একটা আছে, আমাকে টেনে রাখে।
কখনো ভাবিনি লাবন্যের সাথে মিশেছে যেতে পারবো,
লাবন্য আমার সামনে এসে লাল টিপ পরে দাঁড়াবে, হাতের আঙ্গুল গুলো মুঠোতে ভ'রে বলবে চলো একটু অরন্যের কাছে যাই,
প্রকৃতির সৌন্দর্য কে দেখিয়ে দেই আমাদের সুখগুলো ও কিছু কম নয়।
কখনো ভাবিনি আমার প্রেমিকা লাবন্যের সাথে প্রনয়ে জড়াবো।
লাবন্য ছিল আমার প্রথম প্রেম, আমার প্রথম অনুভূতি, আমার প্রথম প্রেমিকা।
ওর সাথে প্রেম হওয়ার পর আমার অস্তিত্বকে চিনতে শিখেছি আমার আমি কে চিনতে শিখেছি।
ওই ছিল আমার একমাত্র প্রেমিকা। লাবন্যের সাথে প্রেম হওয়ার পর বহুবার প্রেমে পড়েছি। 'প্রেমে পড়া' আসলে স্বাভাবিকতা থেকে পতনের কথায় নির্দিষ্ট ক'রে- কিন্তু
প্রেমে পড়ে আমার পতন হয়েছে, সেটা উপরে দিকে পতন।
আমি বিশুদ্ধ হয়েছি, বহুবার সিক্ত হয়েছি।
লাবনের সাথে জড়াজড়ি করেছি ঝুম বৃষ্টির ভিতরে,
তার পর গণতান্ত্রিক প্রেমিক হয়ে গিয়েছি। অনেকের সাথেই একাত্ম হয়েছি
ভিজেছি সিক্ত হয়েছি।
তবু লাবন্যের কথা ভুলতে পাড়িনি, আর বোধহয় কোনদিন পারবো ও না। নবীন কিশোর যেমন তার প্রথমবার দাড়ি কামানোর কথা কিংবা প্রথমবার অন্তর্বাস কেনার কথা ভুলতে পারেনা।
কিশোরটি ধীরেধীরে যুবক হওয়া পর্যন্ত অনেক বার দাড়ি কামায়, বহু অন্তর্বাস কেনে তবুও-
সেই প্রথম মুহূর্তের অভিজ্ঞতা সেই মৃদু কাঁপুনি, সেই অপরিচিত ভয় যেমন স্মৃতিপটে চিত্রিত থাকে স্টোন হরফের মত,
ঠিক তেমনই আমার প্রথম প্রেম লাবন্য আমার সেই বহু কাঙ্ক্ষিত অন্তর্বাস কেনা অভিজ্ঞতা।
সেই আমার প্রথম।
তারপর একদিন বরুনার সাথে কথা হয়েছিল। সে খুব দারুণ অভিনেতা হতে পারতো,
আমাকে ছেড়ে বাজার থেকে নতুন প্রেমিক খুঁজে নিয়েছিলো। তার পর- হঠাৎ সাক্ষাৎ মেলে নিলাঞ্জনার সাথে। রাস্তার ধারেই তাকে বেশিবার দেখেছি।
কোন এক লোকাল বাসে চড়ে সেও চলে গেছে।
তখন আমার শহরে অনেকগুলো গলিপথ, অনেকগুলো রাস্তা
অনেক নাম না জানা নরখাদক ।
একদিন চায়ের দোকান থেকে বেড়িয়ে দেখি বালিকা, আমি তাকে দেখে থমকে গিয়েছিলাম।
আমি প্রতিদিন তার জন্য একই যায়গায় থমকে দাঁড়িয়ে থাকতাম। সম্ভাবত-
এখন এপর্যন্ত সবথেকে বেশি দাঁড়িয়ে থেকেছি তার জন্য।
অনেক দিন পর জানতে পারি ও রায় বংশের মেয়ে, ডাকনাম রুবি।
সেও একদিন না বলে আসা থামিয়ে দিলো।
বহুদিন পর তার সাথে কিছুদিন আগে ভুল রাস্তায় তাকে দেখেছিলাম একবার।
কথাও হয়েছিলো সামান্য, আমাকে নাকি কোথায় যেন দেখেছে।
আজ বহুদিন পর আবার ওই মোড়ে থমকে গেছিলাম ক্ষনিকের জন্য।
সেখানে চায়ের দোকান আগের মতই আছে
শুধু মালিকানা বদল হয়েছে
এখন তাহের চাচার ছেলে বসে ওই দোকান টিতে।
শুনেছি তারও নাকি একটা ছেলে হয়েছে দু বছর হলো। এরপর-
প্রচন্ড ঘোরের মধ্যে একদিন বিলাসী কে দেখলাম, হৈমন্তী ও এসেছিল আমার অসুস্থতার কথা শুনে।
বিকাল নাগাত বসে থেকে দুজনই চলে গেছিলো,
কিছু ওষুধপাতি ও কিনে দিয়েছিল হৈমন্তী। ওর বাবার শরীর ও নাকি ভালো যাচ্ছে না,
বিলাসী র বাবা তো আরো দুবছর আগেই মারা গিয়েছে, শুনেছি সাপে কেটেছিলো। গোখরা সাপ।
এখন বহুদিন আর অসুস্থতা আমাকে আদর করে না,
ওদের ও আর দেখা পাই নি।
ও বলা হয়নি ওরা আমার ছোট বেলার সহপাঠিনী ছিলো।
তখন আমি যুবক তরতাজা প্রাণ আমার, যখনই কোন যুবতী দেখি-
শুধু বিস্মিত হই মানুষের ভেতরে এত সৌন্দর্য কি করে থাকে!
বন্ধুর প্রলভনে প্রথম গেলাম মদের আসরে, বিস্বাদ একটা অখাদ্য মানুষ এত আবেগ দিয়ে খায়!
কিছুদিন যেতে না যেতেই আপন করে নিলাম মদ আর নেশায়।
নিজেকে বুদ করে রাখতাম।
আমার এক সময়ের খেলার সাথী কে বিয়ে দিয়ে দিলো ওরা,
তার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমি নিয়মিত বুদ হই।
মাঝে মাঝে নিজেকে প্রশ্ন করি, কেন পার্বতী কে নিয়ে পালালিনা।
তবে পার্বতী র বিয়ে হয়ে বরংচ ভালোই হয়েছে।
একদিন দেখি বারে এক নতুন কন্ঠ। সুমিষ্ট গান। গেলাম সেখানে, দেখি- গান নাচে একাকার,
একটা বোতল নিয়ে বসলাম।
দুই বাইজীর সাথে পরিচিত হলাম
ধীরেধীরে পরিচয় বাড়লো ঘনিষ্ঠতাও হল।
অনেক ঘনিষ্ঠতা, আসর থেকে বিছানা পর্যন্ত।
আমি কেমন জানি অপরাধী হয়ে গেলাম
একই সাথে দুই বান্ধবীর সাথে বিছানায় যাই নিয়মিত, অথচ-
একদিন চন্দ্রমুখী বললো তুমি কেন রাজলক্ষ্মীর বিছানায় যাও।
এক গভীর রাতে বেড়িয়ে আসলাম নক্ষত্রের জোছনা বসানো রাতে। হাজার বছরের পথে হাটতে গিয়ে পথের পাশেই দেখা হল বনলতার সাথে।
যাবার সময় এখন, আমায় যেতে হবে। কথা দিলাম আমি আবার আসবো।
এই হয়তো প্রথমবার কোন নারীকে আমি অপেক্ষা করতে বললাম।
তার সাথে দেখা টা ক্ষণিকের হলেও প্রেম ছিলগভীর। এই গভীরতার তল আমার জানা নেই।
দেখা হবার পর বললো, এতদিন কোথায় ছিলাম?
জানিনা সে প্রেমে পড়েছিলো কি না, তার প্রেম আমার জানা নেই! তবে- বলতে পারি আমি পরিপূর্ণ ভাবেই পড়েছিলাম। আমি শুধু তার ভেতরে ধুসরতা আর আবছায়া দেখে ছিলাম।
বহুদিন পর নতুন করে আবার মুগ্ধ হলাম সুরঞ্জনার প্রতি।
কিছুদিন প্রনয়ের পর সেও আমাকে ছেড়ে খুঁজে নিলো নবীন যুবক।
আমি বললাম ফিরে এসো, সে আসলো না। এখন অন্ধকারে শুয়ে শুয়ে অতন্দ্রিলাকে বলি, তোমাকে দেখিনা, শুধু অনুভব করি,
আমার এ বুক আমার এ হৃদয় আমার সমস্ত আমি আজ ক্লান্ত।
ভাবিনি লাবন্য আমার হবে, আমি চাইনি হৈমন্তী আমাকে ভালোবেসে যাক কিংবা বিলাসী আমার হাত ধ'রে সবাই কে অস্বীকার করে বেড়িয়ে আসুক। আমি চেয়েছিলাম-
অন্তত রাজলক্ষ্মী কিংবা চন্দ্রমুখী বলুক তোমার চোখটা এত লাল কেন?
এখন আমি জানি, আমার চিবুকের কাছেও আমি অনেক বেশি অচেনা ও একা।
এখন বুঝি, এই বঙ্গে ললিতারাও বিধবা থাকে না।