এইতো সেদিনের সেই তুমি আমি
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের গেট ঘেসানো রাস্তায়
টঙ দোকান গুলোর পাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায়
হয়তো তখন সন্ধ্যে ছয়টা কি সারে ছয়।
কতগুলো দীর্ঘশ্বাস আর দীর্ঘ অপেক্ষিত
সময়ের চাপায় নিষ্পেষিত আমি।
তুমি ও ব্যস্ততার অজুহাতে নাকি নির্মমতায় আমার বিপরীতে!
ডিম ভাজি আর পরোটার ঘ্রাণে
ক্ষুদার্থ আমি কতখানিই না দুর্বলতা আমায় ঘিরে।
সেই যে বেরুলাম খুব সকালে,
মালিবাগ ফ্লাইওভার এর পাশে
ছোট্ট এক বালক ছেলের ছোটো দোকানে
দুটো ঠান্ডা সিঙ্গাড়া খুব তারাহুরোয় খেয়ে।
যেনো গত দিনের মতো
কাছে গিয়েও মাত্র দশ মিনিট এর ব্যবধানে
তোমায় দেখতে না পারার আক্ষেপে মাঝরাতে
ফুপিয়ে চোখে ঝর্ণার ধারা বইয়ে যাওয়ার অসময়
আবারও আমার নাগালে এসে
কষ্ট হয়ে মিশে না যায় দীর্ঘশ্বাসে।
৮৭৫ শয্যার ৬ তলা হসপিটালে
প্রতিটি ভবনের প্রতিটি ওয়ার্ড-এ
তোমাকে খুঁজে পাওয়ার পায়তারাতে
কতখানিই না বিভোর আমি।
জানো, আমি মোটেও ক্লান্ত হই নি!
তোমায় পেলাম শেষের তলায়
ছয়শ আটত্রিশ নাম্বার ওয়ার্ড এর শেষ মাথায়।
সবুজ জামা সাদা এপ্রোন মাথায় সবুজ স্কার্ফে
তুমি হেটে আসছিলে সেথায়
যেথায় দূরে দাঁড়িয়ে আমি হঠাৎ তোমাকে দেখে
উচ্চরক্তচাপ আর শ্বাসরুদ্ধকর হয়ে
দেখে যাচ্ছি এক অবয়ব, বিশ্বাস কর এই প্রথম তখনি
তোমায় একদম মায়াবতী লাগেনি
বরং, বার বার অন্ত আত্মা বলছিলো
এ অবয়ব আমার কাছে আসলেই আমি মৃত মানুষ হবো।
কত বিতর্ক অদৃশ্য আমার সাথে চালানো হলো!
তুমি কাছাকাছি এসে আমায় দেখে হয়তো
ক্ষিপ্ত হবে নয়তো
ভুলে যাবে সেই সবকিছুকেই, ভুলে যাবে তুমিও
তুমি আর আমার বিচ্ছেদ-ও।
তুমি এসেই বলবে আমায়, কখন এলে বলতো?
আমাকে জানিয়ে আসলে কি হতো
এতো গরম যে তোমার কোথা থেকে আসে।
ঘেমে কি অবস্থা হয়েছে বলে
মুছে দেয়ার ছলে স্পর্শ করবে আমার গালে।
হলো না তার কোনোকিছুই
দেখছি তুমি ধীর পায়ে এগিয়ে
আসছিলে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম যেদিকে।
আমার আর দাঁড়িয়ে থাকার সাহস হলো না একদমই
জানি না কি ভয়াবহতায় আমি পালিয়ে গেলাম তখনই
নিজেকে তোমার দৃষ্টির আড়াল করে
কি ছটফট টাই না করেছিলাম নাজানা অনুভবে।
না বসে থাকা যাচ্ছিলো
না দাঁড়িয়ে, মনে হচ্ছিলো
আমি পৃথিবীর সবথেকে ভীতু পুরুষ।
নিজেকে সামলিয়ে তোমার অগোচরে ৬৩৮ নাম্বার ওয়ার্ড-এ
এসে বাইরে বসে দেখে যাচ্ছিলাম তোমাকে।
তুমি তখন বেজায় তাড়াহুড়োয় ছুটে
যাচ্ছিলে শুধু এ বেড থেকে ও বেডে।
কখনও রিপোর্ট এর কাগজ হাতে,
বা কখনো ০.৫ কিংবা ১.৫ ইঞ্চির সুই বিধানো সিরিঞ্জ নিয়ে
কি কোমল স্পর্শে তুমি রোগীর রক্ত ধমনী যাচ্ছিলে খুঁজে।
আমি তখন সেই বেডে রোগী হিসেবে নিজেকে
কল্পনায় বসিয়ে তোমার ওই নরম ছোয়াকে
অনুভব করার চেষ্টায় কি অবুঝ বোঝাপড়ায় মেতে
অদৃশ্য সুখী স্পর্শ মাখিয়ে নিতে
চেয়েও ব্যর্থতায় গিয়েছিলাম ডুবে।
তারপর আমার অপরাধী শরীর
এবং পাপ মাখা চোখ অবহেলার ছোয়ায়
দৃষ্টিগোচর হলো তোমার গাড়ো কাজলে আঁকা চোখের দেখায়।
তুমি আকাশী-নীল রঙের মাস্কের আড়ালে
কৃষ্ণচূড়ার পাতার মতো তোমার সুক্ষ্ম চিরল ঠোঁট ও
নিশ্বাসে নেশা ছড়ানো গড়ম স্পর্শ দেয়া নাক নিলে লুকিয়ে
যেনো আমার অসহায় দৃষ্টি তোমায় দেখতে না পারে।
তখন আমার মনে কতটা বিষাদ ভির করেছিলো
কতটা অসহায়ত্ব মাখিয়ে বলতে ইচ্ছে হয়েছিলো
দোহাই তোমার মাস্কটা সরিয়ে নাও না।
সেই কবে কোন শনিবারে দেখেছিলাম তোমায়!
এর পর তোমাকে দেখতে চাওয়ার আক্ষেপ জমে
তৃষ্ণার্ত আমার হৃদয় ফেটে চৌচির হয়ে
কতো কোটি মূহুর্ত অপেক্ষা করেছে
তোমাকে দেখার আকাঙ্খায়।
আজ আরেক শনিবার, আর একটু দেখতে দাও না আমায়।
আমি ভিষণ ভাবে বিষন্নতায় ডুবে
বৃষ্টি ঝরে যাওয়ার ঝুমুর শব্দে
নিজেকে হারিয়ে বৃষ্টি বিলাসে মগ্ন হলাম।
সন্ধ্যে হলো,
তুমি আমি দাঁড়িয়ে ফুটপাতে টঙের দোকানের পাশে।
আমি কাক ভেজা হয়ে তোমার কাছে
মিনতি করেছিলাম
আর একবার ফিরেয়ে দাও সেই ভালোবাসা
যা তোমার কাছে রাখা।
তুমি ভাবলে বৃষ্টির জলে ভিজেছে
শরীর এর সাথে আমার চোখের পাপড়িও।
বুঝালে না সামনে দাঁড়িয়েও
আমার গাল বেয়ে গড়িয়ে যাওয়া এ জল
শুধু মেঘের কান্না নয়।
তুমি সেদিন-ই বা বুঝলে কই,
হয়তো বুঝতেই চাইলে না দীর্ঘ ৩০ মিনিটের বৃষ্টিতে
কতটা অসুখ করেছে আমার ভেজা শরীরে।
শীতল হয়ে গেছে দেহ , ঝিম ধরেছে হাতে পায়ে
শিরা উপশিরায় ঠিক নেই রক্তের চলন
তুমি শুধু দেখে গেলে, জানলে না শোকের কারণ।
অথচ তুমি মিনিট কয়েক আগেও
রোগীদের মাঝে ছিলে
অধিকারী স্বরে শাসন করে যত্ন টাও নিলে
রাখনা খোঁজে, শুধু এই বোকা প্রেমিকেরে।
নদীর স্রোতে ঘর ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া নিঃস্ব মানুষের মত
আকুতি করেছিলাম সেদিন তোমার পানে।
আমার এ আকুলতা স্পর্শ করে নি তোমায়।
তুমি চলে গেলে, একবারও তাকেলে না পেছন ফিরে।
জানো,
আমি ভাবতাম তুমি আমার চোখে
তাকিয়ে পারবে না বলতে
তুমি আর চাও না আমায়।
আমি ভাবতাম এটা সম্ভব না কিছুতে
তুমি আমায় ছেড়ে যাবে।
ভাবতাম ভালোবাসায় আবার বিচ্ছেদ কিসের।
আমি কত কি ভাবতাম ভালোবাসা আর তোমায় নিয়ে।
আমি আমার প্রতিটি ভাবনার বিপরীতে দাঁড়িয়ে
অপরাধের বোঝায় চাপা পরে দেখছিলাম বিচ্ছেদ।
আমার ৪ বছরের ভালোবাসার বিচ্ছেদ।
সেই যে হয়েছিলো শেষ দেখা
এর পর আরও কোটি মূহুর্ত পার হয়ে যাচ্ছে
তোমায় দেখা হয় না।