জুলাইয়ের প্রখর রোদে, কাঁপে শহরের ইট-পাথর,
বাতাসে ভারী রক্তের গন্ধে, দম বন্ধ করা দৃশ্য।
তুমি দেখেছো কি সেই তরুণ মুখগুলো,
যারা বুকের ভেতর সাহস নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল?
তারা ছিল নিঃশব্দ, কিন্তু চোখে ছিল শপথ,
তাদের স্বপ্নে আঁকা ছিল স্বাধীনতার নতুন মানচিত্র।
আমাদের তরুণ হৃদয়গুলো যখন
ঘেরাও হয়েছিল অস্ত্রের মুখে,
তখনও তারা সাহসিকতার কথা বলেছে।
তোমাদের চোখে ভয়,
আমাদের চোখে আগুন।
তোমাদের হাতে শক্তি,
আমাদের হাতে চেতনার মশাল।
রাস্তায় নেমেছিল মিছিলের ঢল,
স্লোগানের তালে তালে কাঁপছিল বুলেটের প্রতিধ্বনি।
তোমরা গুলি ছুড়েছিলে, কিন্তু থামাতে পারোনি,
জুলাইয়ের বিদ্রোহে জ্বলে উঠেছিল
একটি জাতির চেতনার নবজাগরণ।
তোমরা ভেবেছিলে, গুলি থামাবে কণ্ঠস্বর,
তোমরা ভেবেছিলে, চোখের জল হারাবে সাহস।
কিন্তু ভুলেছিলে, এই বুকের ভিতরে জ্বলছে
বাবার স্বপ্ন, মায়ের প্রার্থনা আর বন্ধুর প্রতিজ্ঞা।
তোমাদের গুলিতে লুটিয়ে পড়া শরীর থেকে
জেগে উঠেছে লাখো অগ্নিস্ফুলিঙ্গ।
সেই মায়ের কান্না, সেই পিতার ক্রন্দন,
সেই শিশুর ভাঙা স্বপ্ন—
সব একত্র হয়ে রচনা করেছে
একটি জাতির নতুন সূচনা।
তোমরা ভেবেছিলে, ইতিহাস রচনা হবে বুলেটে,
কিন্তু ইতিহাসের কালি তো চলে তরুণদের রক্তে।
২৪-এর রাত্রি থেকে আজও শুনি,
শহীদদের কণ্ঠে জেগে ওঠা স্বাধীনতার চিৎকার।
সেই দিনগুলো, সেই রাত্রিগুলো—
কেমন ছিল সেই বন্দুকের ছায়া,
যে ছায়া আড়াল করতে চেয়েছিল সত্যকে?
তোমরা গুলিতে স্তব্ধ করেছিলে কিছু প্রাণ,
কিন্তু স্তব্ধ করতে পারোনি প্রজন্মের চিৎকার।
রক্তমাখা সেই মাটি থেকে আজও ভেসে আসে তাদের কণ্ঠ,
যাদের হৃদয় ছিল অটল—সত্যের জন্য নিবেদিত।
আমাদের চোখে ঘুম নেই, কিন্তু স্বপ্ন আছে।
আমাদের হাতে বন্দুক নেই, তবু সাহস আছে।
আমাদের কণ্ঠে সুর নেই, তবু স্লোগান তোলার গর্জন আছে।
আমরা সেই অমর গান গাই,
যা কোনো কালো অধ্যায় থামাতে পারে না।
আমরা এসেছি ইতিহাসের সেই রণাঙ্গনে,
যেখানে ওয়াসিম, মুগ্ধ, আবু সাঈদের মতো
অগণিত নামের বিসর্জন।
তোমরা বলেছিলে, "চুপ থাকো!"
তোমরা চেয়েছিলে, "নত হও!"
কিন্তু আমরা বলেছি, "স্বাধীনতা!"
জুলাইয়ের সেই দাবদাহ,
তোমরা যখন নির্বিচারে মাটিতে লুটিয়ে দিলে জীবন,
তোমরা কি ভেবেছিলে, ভয় পাবো?
তোমরা কি ভেবেছিলে, থেমে যাবো?
না! আমরা এসেছি প্রতিজ্ঞা নিয়ে—
তোমাদের নির্মমতার বিচার করতে,
এই প্রান্তরে, এই মাটি আর আকাশের নিচে,
তোমাদের ক্ষমতার মিথ্যা আসন ধ্বংস করতে,
আমরা জেগে আছি, আমরা জেগে থাকব,
যতক্ষণ না ইতিহাস আবার সঠিক পথে দাঁড়ায়।
তোমাদের পতন অবশ্যম্ভাবী।
না! আমরা আজ কাঁদছি না,
আমরা এসেছি প্রতিশোধের দাবিতে।
যারা অমানবিকতার শাসন চালালো,
তাদের বিচার চাই—শাস্তি চাই উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে।
তোমাদের ফাঁসির কাঠ হোক আমাদের বিজয়ের চিহ্ন,
তোমাদের অপরাধের বিচারে জ্বলুক ন্যায়ের আলো।
তোমাদের গুলির আওয়াজ থামবে,
কিন্তু আমাদের স্লোগানের প্রতিধ্বনি থাকবে—
প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে।
আমরা শুধু কথা বলবো না,
আমরা ইতিহাসকে লিখব নতুন করে।
আমাদের রক্ত বৃথা নয়, আমরাই ২৪-এর স্বাধীনতা।