যে মফস্বল শহরটিতে আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা।সেই শহরটিতে রবিবার ও বৃহস্পতিবারে হাট বসত।সেই হাটে নানা রকমের পণ্যের ভীড়ে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় চট বিছিয়ে নিয়মিত দুই তিনটি বইয়ের দোকানও বসত।
সেখান থেকে মদন মোহন তর্কালঙ্কার প্রণীত "শিশু শিক্ষা" বইটি বহুবার কিনেছি।লাল রঙের কভার পেজের বইটি বহুবার ছিঁড়ে গেছে এবং বহুবারেই কিনেছি।শিশু শিক্ষা বইটির মূল্য ছিল দুই টাকা।সেই সময় পাঁচ পয়সা,দশ পয়সারও মূল্য ছিল।পাঁচ-দশ পয়সায় চকলেট কিনতে পাওয়া যেত...।
আমাদের বাড়িটা শহরের খুব কাছে।হাটুরে মানুষের ভীড়ের গমগম শব্দ আর কেরসিন কুপির আলো আমাদের বাড়ি থেকেই শোনা এবং দেখা যেত...।
সেটা এক অদ্ভুত অনুভূতি!
সেই চট বিছানো বইয়ের দোকানে নানা কিছিমের বই পাওয়া যেত।গোপাল ভাঁড়,ঠাকুরমার ঝুলি,যাদু টোনা,বশিকরণের মন্ত্র আরও কত বই!
তবে সেই চট বিছানো বইয়ের দোকানের "হট কেক" ছিল কিন্তু বিভিন্ন ক্লাসের নোট বইগুলো।
স্পট মনে আছে,পরীক্ষায় নকল করার সুবিধার্থে আকার আয়তনে ছোট "পপি প্রকাশনীর" গাইড বইগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে এক সময় তুমুল জনপ্রিয় ছিল।
এক সময় "মুনিরের ফাঁসি " নামক বইটি মাইকিং করে বিক্রি করতে দেখেছি।
"শোনেন শোনেন দেশবাসী শোনেন দিয়া মন/ মুনিরের ফাঁসির কথা করিব বর্ণন..."
আসলে পুঁথি সাহিত্য বলতে যা বুঝি--গ্রামীণ জনপদের মানুষকে নিয়ে,গ্রামীণ সহজ সরল ভাষায় লেখা,যেখানে ব্যকারণের তেমন কোন গুরুত্ব নেই,তবে মানবিক গুণ সম্পন্ন সহজ-সরল সাহিত্য...।
একটা সময় এই জনপদের মানুষ গুলোর ''পুঁথি সাহিত্য"-ই ছিল বিনোদনের বিশেষ উপকরণ।তিন চার দশক পূর্বও এর প্রভাব ছিল।
গ্রামীণ কবি,কবিয়াল কিংবা কবি গানের আসর এসব এখন আর চোখে পড়ে না।তবে বাঙালী সংস্কৃতি বলি আর বাঙালী ঐতিহ্য বলি -- এগুলোকে বাদ দিলে তেমন আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না।
এখন এসবের আর কোন বাণিজ্যিক মূল্য নেই,তাই হয়তো হারিয়ে গেছে কিংবা হারিয়ে যাচ্ছে।তবে আজকের পৃথিবীকে মানবিক পৃথিবী হিসাবে গড়ে তুলতে হলে এই গ্রামের সহজ সরল কবি ও কবিয়ালদের রচিত "পুঁথি সাহিত্যের" ধারাকে রক্ষা করতে হবে।সব কিছুতেই অর্থের লাভ খোঁজা ঠিক নয়।পুঁথি সাহিত্য পুনঃজীবন ফিরে পাক।গ্রাম বাংলার পুঁথি সাহিত্যের জয় হোক।