অনেকের ধারণা অক্ষরবৃত্ত ছন্দে শব্দের মধ্যখণ্ডন ঘটে না। এ-বিষয়ে আমার মতামত চেয়ে অনেকে ফেসবুকের ইনবক্সে ম্যাসেজ পাঠিয়েছেন। অসুস্থতার কারণে এতদিন বুঝিয়ে বলতে পারি নি। শুধু বলেছি ২০১৫ সালে আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত আমার “বরেণ্য কবিদের নির্মাণকলা” বইটির ৫২ পৃষ্ঠা দেখুন। এবারে সংক্ষিপ্ত হলেও সবার জন্য একসঙ্গে একটি উত্তর দিচ্ছি:
অক্ষরবৃত্ত ছন্দে মধ্যখণ্ডন সচরাচর চেখে না-পড়লেও তা হয় না এমনটি বলা যাবে না। কবি শামসুর রাহমান তাঁর অক্ষরবৃত্তীয় রচনায় গদ্যসুলভ ধ্বনিরণন সৃষ্টি করেছেন অনেক ক্ষেত্রে্ই মধ্যখণ্ডন ঘটিয়ে। ৮-মাত্রার পর্ব সাধারণত ৩+৩+২ মাত্রার সমন্বয়ে গঠিত হয় যেখানে অসচেতন পাঠকও ছন্দের দোলা অনুভব করতে পারেন, যেমন জীবনানন্দের “হাজার(৩)+বছর(৩)+ধরে(২)”। এধরনের অতিস্বাভাবিক পর্ববিন্যাস অন্যদের মতো শামসুর রাহমানও প্রচুর করেছেন বটে, তবে অনেক ক্ষেত্রে পরবর্তী পর্বের ২-মাত্রার একটি অংশকে টেনে এনেছেন ৮ কিংবা ১০-মাত্রা পূরণের জন্য, যেমন “ওষুধের শিশি, থার্মো-(৮)মিটার ইত্যাদি অপসৃত”, “পিতার প্রাচীন ফটো-(৮)গ্রাফের সান্নিধ্যে প্রজাপতি”। এধরনের সুক্ষ্ণ মধ্যখণ্ডন অজস্র ব্যবহারের ফলেও অনেক পাঠক তাঁর অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত কবিতাকে গদ্যকবিতা মনে করেন। কখনো কখনো ৪-মাত্রার পর্ব নির্মাণের জন্যও অভাবনীয় মধ্যখণ্ডনের আশ্রয় নিয়েছেন শামসুর রাহমান, যেমন “দেয়ালে সর্বদা জয়-(৮)/নুল আবে-(৪)/দিনের দুর্ভিক্ষ” ইত্যাদি। (-) চিহ্ন দিয়েে উপরোক্ত পঙক্তিগুলোতে ‘থার্মোমিটার ‘, ‘ফটোগ্রাফের’‘, ‘জয়নুল’, ‘আবেদিনের’ শব্দগুলোর মধ্যখণ্ডন দেখানো হলো। শামসুর রাহমান ছাড়া অন্যদের রচনায় এধরনের ব্যবহার খুব একটা চোখে পড়ে না।