**************************************
আমার ছেলেবেলার বন্ধুদের উত্সর্গ করে আমার আজকের এই সামান্য প্রয়াস। সাথে সাথে পূজা আসছে, কালীবাড়ির ঠেক জমাতে হবে যে? তোরা আসছিস তো? সবার সাথে দেখা হবে এই আশা করি।
**************************************
আমার ছোট্ট বেলার বন্ধুরা
শুনছিস তোরা,
ঐ যে আসছে আবার পূজা,
কালিবাড়ির চার দেওয়ালের ভিতর
বসবে সেই জবরদস্ত আড্ডা।
আসবি কি তোরা?
নাকি সংসারের ঘেরাটোপে
পড়ে যাবি আটকা।
ভুলে যাবি কি?
বট গাছের চারিদিকের বিল্ডিং এ
আমাদের মাতোয়ারা।
করেছিলাম মারামারি,
খেয়েছিলাম বেতের বাড়ি,
তারপর গলা জড়াজড়ি।
টিফিনে কাড়াকাড়ি,
ক্রিকেটে খবরদারি,
ফুটবলে কাদায় লুটলুটি।
খেয়েছিলাম মায়ের আচ্ছা করে বকা,
আর স্যারদের সামনে কান ধরে ওঠা বসা,
তবুও কি বন্ধ করেছিলাম ইচ্ছা মত নাম দেওয়া মাঠে
আমাদের সেই ক্রিকেট খেলা।
টিউশানের পর সাইকেল নিয়ে ধর্না,
আর চপ ঘুঘনি মুখে ওদের ঝাড়ি মারা।
ক্লাসের ফাঁকে নিষিদ্ধ বই নিয়ে হুড়োহুড়ি,
আর বইয়ের পাতা উলটে ছয় চারের চমকানি।
সেদিন গিয়েছিলাম বাড়ি,
জ্যোৎস্না রাতে ঢুকেছিলাম
ঐ ফাঁকা ধূলা ভরা মাঠটায়।
মায়াবী নিস্তব্ধতায় মেতেছিলাম,
বেঞ্চ বাজিয়ে
আমাদের খালি গলার সুরটায়।
হারিয়ে গেছিলাম ক্লাস টেনে,
স্কুলের দারুণ রেসাল্টের বিশাল সেই আনন্দটায়।
হঠাৎ বটগাছের একাকীত্বের ডাকে,
ঝপ করে নেমে আসি বাস্তবতায়।
বছর গেছে তোরা ছড়িয়ে পড়িয়েছিস,
গোটা দেশে গোটা জগতটায়।
একঘেয়ে জালে আমরা সবাই দিয়েছি ধরা,
আসছে পূজা চলনা,
আমরা আবার হই বাঁধনহারা।
ঢাকের তালে, মায়ের অগোচরে
আকাশে পেঁজা তুলো মেঘের সাথে
কাশ ফুলের শোভায় চোখ ভাসিয়ে
ভোরের শিউলির সুগন্ধে হারিয়ে
মায়ের পা থেকে সিঁদুর মেখে
তালে তালে, পায়ে পা মিলিয়ে
দিগন্তহীন মাঠের ঐ দূরে
ফিরিয়ে নিয়ে যাই নিজেকে
ফেলে আসা সেই ছেলেবেলার স্মৃতিতে।
আমার ছোট্ট বেলার বন্ধুরা
শুনছিস তোরা,
ঐ যে আসছে আবার পূজা,
চলবে চা সিঙ্গারা সিগারেটের আড্ডা
সারাবছর জমে থাকা হাজার কথার বন্যা
হারিয়ে যাওয়া দিনগুলির মজা
জেগে উঠবে সেই ছোট্টবেলার কালীবাড়ি ঠেকটা।