অনেক বছর আগে এরকমই এক গৃহবধুর সাথে ট্রেনের কামরায় হয়েছিল দেখা।
উঠেছিল গলসি থেকে,এক ঢাউস বেডিং এ বেসামাল!
খাঁচি ব্যাগে আলতা,লক্ষ্মীর সিঁদুর,আর শুকনো ফুল লেপ্টে থাকা ছবি সঙ্গে নিয়ে।
বোধহয় শাশুড়ির কাছে : সতীত্বের পারমিট।
তার যৌবন পেলব হাতে ছিল শাখা-পলার কঠোর নিষেধাজ্ঞা!
অপরিচিতদের উপস্থিতি ভুলে নিরবে কাঁদছিল সে,
যতদুর চোখ যায় সেই চোখে বাইরে দৃষ্টি মেলে,
সৌজন্য বিনিময়ের আড়ষ্টতা ভেঙ্গে আলাপ করল নিজেই,
যখন ট্রেন পিছনে ফেলে এসেছে গলসি অনেক দূর।
হাতে জয় গোস্বামী দেখেই প্রশ্ন করে উঠেছিল,আচ্ছা আপনিই কি....
"না"... জিভ কেটে প্রতিহত করেছিলাম তাকে,
ভেবেছিলাম আশ্চর্য নির্বোধ বটে!
কবি নিজেই তার বই হাতে সফর করেন বুঝি?
তবে হ্যাঁ ট্রেন জার্নি তো একেই বলে,
কত মানুষ, কত পরিচয়, কত বিচিত্রতা।
ছুটন্ত ট্রেনের ঘুমন্ত দুলুনি-সঙ্গতে সারাদিন আলাপের শেষে হঠাৎ ঝাঁকুনি খেয়ে থমকালাম তার প্রশ্নে, আচ্ছা বলতে পারেন :
"আমি না একটাও কবিতা লিখিনি আজ অবধি!
কিন্ত এই যে আমাদের ট্রেন টা যখন ছেড়ে গেল সেই,
আমার গ্রাম আমার মাটি, ভীতর টা কিরকম হাহাকার করে উঠল,
ষ্টেশন্ ছাড়িয়ে দিগন্ত বিস্তৃত ধান মাঠ,সাদা বক, খেজুর গাছের সারি দেখে মনে হলো :
"ওরাও তো আমার, আমার বাপের বাড়ির কত কাছের,
কোনোদিন কেন মনে হয় নি তা!
আচ্ছা বলতে পারেন এটা কি কবিতা?
না হয় মনেই রইলো আমার, না হয় লিখলাম না আমি তার কোনো খাতা!”
এতকাল পরে হঠাৎ মনে পড়ল তার কথা
যারা কবিতা লেখে না তারা কি কেউ কবি নয়!
পূর্বরাগে মন যে মাদকতায় নিজের সামনে এসে দাঁড়ায়,
নয় কি তা এক জনমের কবিতা!
অনুষটূপ ছন্দে গাঁথা নাই বা হলো তা
রইলোই না হয় বেশ খানিকটা জুড়ে
বেহিসাবী,সংসারী আর আটপৌরে কথা!
তাই আজ মুছে নিলাম আমার লেখা হাততালি পাওয়া অনেক কবিতা।
খালি লেগেছিল খুব সেদিন ,আমার সামনের সীট আর মন,
দুইয়ি নির্জন করে চলে গিয়েছিল যখন সে!
আমার অনেক আগে এক ষ্টেশনে নেমে,
পিছনে ফেলে তার এক রাশ জীবন কবিতা!
হ্যাঁ।ট্রেন জার্নি তো একেই বলে,
কত মানুষ, কত পরিচয়, কত বিচিত্রতা।