দু:খের কথা কাকে কবো?
কাকে শোনাব ব্যাথ্যার প্রলাপ!
কাকে দেখাবে বুকের দহন?
কাকে দেখাবো রক্তক্ষরণ,
কাকে দেখাবো রক্তের স্রোত!
আমরা নাকি একই পথের লোক?
আমরা নাকি এক পরিবারের লোক?
আমরা নাকি উচ্চভিলাষী! তোমরা নিয়ন্তা!
খাতায় লেখো, স্বীকার করো
সুযোগ বুঝে ওষ্ঠা মারো! এ কেমন আচরণ!
তবে বলি শুনে রাখো-
সারারাত জেগে পড়েছি আমি ১৮ বছর ধরে
পড়ছি আজো দিনিরাত্রি প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে।
পড়তে পড়তে বড় বোনটা গেলই গেল মরে!
পড়ার দিনে কতদিন আমি না খেয়ে গেছি স্কুলে
ফিরেই ধরেছি বাজারের ব্যাগ, মা দিয়েছেন হাতে তুলে
বিকেল শেষে ফিরেছি সেই অনেকটা রাত পেরুলে!
মা আমার দুখিনি ছিল, দুঃখ বারো মাস
সারা রাত ধরে রান্না করতো ঢুলে ঢুলে।
রান্না যদি না হতো শুকনো খাবার আমায় দিত
মা থাকতো সেদিন উপোষ!
আমরা তারই পাশে বসে পড়েছি কষ্ট করে
একটা লাইন না পারলে মা পড়া বলতো কত যত্নে!
দুঃখ ছিল শত শত, আশাও ছিল কত!
আমরা তখন ছোট্ট ছিলাম, তখন অধ্যয়নরত।
বারবার মাথায় হাত বুলাতো, বলতো অনেক কথা!
বিরবির করে বলেই যেত সে অনেক ব্যাথ্যা।
দিনের জন্য মায়ের প্রলাপ শুনেছি খুব কাছ থেকে
দিন তো দেশে প্রতিদিনই আসে, দিন আসে না আমাদের ঘরে।
অনেক কষ্ট, অনেক ঋণ, ত্যাগ করলাম মায়ের আঁচল
দুঃখ আবার আপন হলো সুখগুলো সেই কবেই পর।
১২টা বছর বলতে গেলে আমি পরবাস
তোমরাই নাও স্বাধীনতার সকল সুবাতাস।
আজও আমি বই পড়ি তাদের চেয়ে বেশি
হোক সে আমলা অথবা যে কোন শিক্ষার্থী।
সারাদিন পড়ি, সারারাত জেগে সাদা কাগজ লাল করি
নম্বরগুলো গুনে গুনে তাদেরই আবার খুশি করি।
প্রতিদিন করি ভিন্ন-ভিন্ন নতুন নতুন কাজ, প্রতিদিন এমনই খারাপ কাজ!
আমি তো তোমাদের সংজ্ঞায় খারাপ, ফাঁকিবাজ।
এত এত কাজ, এত এত লাজ বয়ে চলি আমি, আশা একটাই
বাবা-মায়ের দুঃখ যাবে, বুকটা বেধে কত সকাল জাগি।
কি হতে কি হলো, ঝড় বয়ে গেলো, নতুন নতুন পে-স্কেল হলো
আমার জন্য চতুর্থই সর্বচ্ছো!
অর্থ নাই, সম্মান নাই; দুঃখ রাখার জায়গা নাই
কর্মস্থলে দাঁড়াবো কোথায়?
ঠিক নাই, কিছুই ঠিক নাই।
ও দিকে তো;
বাবার দুঃখ আজো ঘোঁচে নাই; বৃদ্ধের চোখে ধোয়াশা কাটে নাই
ঘন মেঘটা বাড়ির আকাশ আজো ছাড়ে নাই,
মা'য়ের আঁচল ছেঁড়াই আছে, আজও জোড়া লাগে নাই
আঁধার চারপাশ।
চারপাশে কত ভাইয়েরা আমার, বৃটিশ হলো, চাকরি পেলো
দুঃখ ঘোঁচালো বাবা-মায়ের, দঃখ গেলো শ্বশুর-শ্বশুরির; বড় বড় ভবন হলো
শালা-শালীদের সিনেমায় নেয়, দশটা পাঁচটা কুরবানি দেয়
সমাজে তাদের সম্মানটা পাহাড় সমান উঁচু রয়
আমার কপাল পোড়াই রইলো, কিছুই জুটলো না।
আমার মায়ের কঁড়ে ঘর আজও ভিন্ন হলো না!
মা তবুও সামান্যটুকুও দুঃখ করে না!
আমার মায়ের বড় আঁচল, ওতো সুখ লাগে না
দুঃখ করতে চোখের পানি অনেক লাগে!
বুক ফাটালেও তেমন সাগর আর দেখা যায় না।
আমার বাবার আজকাল আর ওতো লাগে না
ছোট্ট ছোট্ট সোনা মনিরা সরকারিতে পড়ছে এখন
তাদের জন্য বিদেশ যাওয়া লাগে না।
আসলে কথা একটাই-
আমাদের আসলেই ওতো লাগে না, উচ্চভিলাষী কেন হবো না?
রাত জাগি পরিশ্রম করি, পারিশ্রমিক নেই না
সম্মানি যা দিয়ে থাকেন, খোটায় ফুরায় না!
চাকর-বাকর কতই বলেন, কষ্টও লাগে না!
সারাটা রাত জেগে পড়ি, পড়াই আমি শরীর ধরে না।
রাত জেগে কাজ করি, খাতা দেখি, ক্লাস লেখি; কষ্ট হয় না।
তোমার ছেলের নোটগুলো সব আমার লেখা!
মনে পরে না?
সচিব হয়ে স্যারের বাড়ি কেউ তো চিনে না।
তবুও ভাই, আমরা বুঝি এই রাষ্ট্রের কেউ না!
ঐ যে বলেন, আমরা কোন কাজই করি না!
ঘরে ঘরে এ প্লাস পায়, আমলারা সব মিষ্টি বিলায়
মন্ত্রীরা সব ক্রেডিট নেয়, বছর বছর রেটিং বাড়ায়
নেতারা সব স্বপ্ন দেখে ছেলে মেয়ে ডাক্তার হবে
বড় বড় চেয়ার পাবে, দশ গ্যারামের শক্তি হবে
মালিকানা সব তোমার হবে।
আমরা কেউ না।
গাঁধা পিটাই মানুষ বানাই, রক্ত শুকাই, আমি কেউ না!
এ প্লাস পায় হাজার হাজার ধন্যবাদটুকু কেউ দেয় না।
ঐ যে বলে! আমি কেউ না!
সন্তান যে আপনার! অহংকার তাই মাটি ছুঁয় না!
সন্তান আপনার সচিব হবে, কৃতিত্বও আপনার রবে!
আমরা কেউ না;
উচ্চভিলাষী হবেন আপনি, আমাদের কেবল মানা!
অন্য হলে হোক না সবই, শিক্ষক হবে না।
শিক্ষক এখন প্রশাসক হলে আসলেই জাত যায়!
মাঝি, তুমি বুঝে দেখ নাউটা কিন্তু তোমার না।
শিক্ষক হলেও হোক না কেন, ওরা যেন না হয়
ওরাই ক্যাডারের বেমানান!
আপনার কি মনে পড়ে না?
সন্তান আপনার, মানুষ করি
পারিশ্রমিক কিন্তু নেই না।
সম্মানি ঐ যতটুকু দেন, পেটে কুলায় না।
তবুও আমি মানুষ দেখি, অন্যার সন্তান দেখি না
সেবাই যখন প্রথম পণ, উচ্চভিলাষী সত্যি মানায় না।
অনেক গল্প গোপন থাকে, প্রকাশিত হয় না
কিছু গল্প চোখের জলের, কিছু আনন্দের
রম্য গল্পই বেশি আছে, জাতি কি জানে না?
গল্পগুলো তোলাই রাখি, বলবো অন্যদিন।
আজকে শুধু জিগাই তোমায়-
ভেবে উত্তর দাও
যখন আমি রাত জেগে পড়ি, তখন কারা সিনেমা দেখতে যায়?
কারা যেত টাংকি মারতে মোরের উপর চৌরাস্তায়!
ফোর-টুয়েন্টি ঘুরতো কারা? তারাই মোরে চাকর কয়!
রাত-দুপুরে ফোনে-ফোনে তদবির নিয়ে কারা এখন ধরনা দেয়?
রাতদিন তো কত গেছে ভাত পড়েনি পেটে
মেসের বন্ধু কতবারই আনন্দে পড়েছে ফেটে!
কেউ কোনদিন একটু আদর দেয়নি মানুষ বলে
আজকে তারা ফুটানি দেখায়, ন্যায় বিচার নাই বলে।
জমিদারী আর উচ্চভিলাষী ভাগী তারা একাই
কেড়ে নেবে ছলে-বলে আর কৌশলে!
কতকিছু করেছে সবাই, করেছি তাদের ক্ষমা
সবকিছু আজ ভুলে যাব আমি তেমন সন্তান না।
পাঁচ লক্ষ মেধাবীকে হারিয়েছি কয়েকবার
যখন খুশি আসতো পারো তৈরি আছি আবার, থাকবো বারবার
বাংলাদেশটা স্বাধীন রাষ্ট্র, সমান অধিকার সবার।
উচ্চাভিলাষী একা হবেন! সমান অধিকার সবার।
ভালো থাকি মন্দ থাকি এক চোখে দেশটা দেখি
যদুর ছেলে মরুকগে, আমারটা বাঁচুক না! এমন ভাব ধরি না।
একা একা উচ্চভিলাষী!
আপনারাই পাজেরোগামী।
বিদেশগামী।
উর্ধ্বগামী।
আমরা কেবল নিম্নগামী।
আপনি যদি হতে পারেন, আমিও কেন হবো না?
স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষ, অধিকারটা সমান দেখি।
আমার শিক্ষা আমি দেখি, প্রশাসনটাও আমারই
সোনার মানুষ আমরাই গড়ি,
সুশাসন নিশ্চিত করি, সোনার বাংলা হবেই হবে
দুর্নীতির গলায় দেবো, দেবই দড়ি।
স্বদেশ প্রেমের শপথ নেব; প্রতিরোধটা গড়ে দেবো
মেধায় কিংবা প্রতিযোগিতায়;
কোনটাতে আর ছাড় নয়।
"উচ্চভিলাষী একাই হবো।"
কোন সাহসে এমন কয়?
যুদ্ধ করে দেশ পেয়েছি, মেধায় পেয়েছি সুযোগটা
কারোর দানে পা্ওয়া নয়।
আমিও একজন বীর যোদ্ধা, মানুষ গড়ার কারিগর
উচ্চাভিলাষী হবই হব, দেশটা মোদের যেমন চায়।
আবারও বলি, এখনও বলি
আমি তো তেমন নয়, তারা যেমন টাকা কামায়
শপথ যখন সেবা'ই দিব, উচ্চভিলাষী আমিও হবো
জীবন দিতে, রক্ত দিতে, দেশের তরে সেবা দিতে
উচ্চভিলাষী হবই হবো,
মন চায়, আত্মা চায়
উচ্চভিলাষী হতে কয় , দেশের তরে উচ্চভিলাষী হতে কয়
শিক্ষা পরিবার রক্ষা করতে এই বিষয়ে আর ছাড় নয়।