ত্রিশ বছরের সংসার আমাদের।
জন্মের চেয়ে বয়স কিছু কম হলেও
ত্রিশ নেহায়েত কম নয়! বেশ তো ছিলে
মাঝে মাঝে উধাও হও, বছর বছর উঁকি দাও
খারাপ লাগেনি তোমাকে কোনদিন।
আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে যাও, তাও চাইনি
কিন্তু ;
আমার যা কিছু পাওয়া, যাকিছু না পাওয়ার শূন্যতা
সব তোমার নামে, তোমার হাত ধরে।
এই শেষ যেবার এলে পিএসসি’র হাত ধরে
বেশ কিছুদিন ছিলে, কিন্তু মনে হয়নি তুমি ফিরেছো ঘরে।
তোমার চুলে রঙ ধরেছে, শরীর ঝুলে গেছে মাটির দিকে
হাতে সুশ্রী লাঠিও নিয়েছ দেখছি!
এত দ্রুত বুড়িয়ে গেলে!
তোমার আগমনে আমার বসন্ত এলো, এলো আলোকিত ভোর
আমি আবার ফিরেছিলাম আঠারো বছরে
দিনে-দুপুরে, রাত-বিরেতে ঝুলে ছিলাম কিছুদিন
তোমার আঁচলে।
সময় গেলো, প্রয়োজন ফুরালো,
বলা নেই কওয়া নেই, তুমি চলে গেলে!
আমার আইন, বিধি ও পদ্ধতির সাথে ঝুলে থাকা শেষ হলো!
শেষ হলো
অবহেলায় হারিয়ে ফেলা প্রেমিকার মত প্রেমিকের পিছু নেওয়ার অভ্যাস,
টেবিলে ঝুলে থাকা বই খাতাদের সাথে, শেষ হলো সাক্ষাৎ।
শেষ হলো কালো কালির বর্ণে-শব্দে কথা বলা,
শেষ হলো চেয়ে থাকা সকাল বিকেল।
সব বুঝে তুমিও শেষ করে! চলে গেলে?
তুমি সত্যি চলে গেলো সমাপ্তি রেখা টেনে!
জীবন থেকে চলে গেলে?
দেখে দেখে লেখা, ফিসফাস কথা বলা
বন্ধুর পেছনে কলমের গোপন আঘাত চলে গেলো!
চলে গেলো পাশাপাশি বসে প্রেমিকার আড়ালের ফিসফিসানি!
চলে গেলো যৌবন, চলে গেলো সাদা খাতা কালো করার দিন
চলে গেলো রঙিন সকালের জন্য চেয়ে থাকা ভোর
চলে গেলো অনেক স্বপ্ন এক শীটে বয়ে আসা পিয়ন।
চলে গেলো নোটিশ বোর্ডের দিকে চেয়ে থাকা কত প্রাণ
চলে গেলে সময়, নিয়ে গেলো সময়।
মনে পরে তোমার জন্য কতদিন চেয়ে থেকেছি আমি
যেমন চেয়ে থাকে সদ্য বিবাহিতা স্বামীর পথের দিকে,
দীর্ঘ রাতের জন্য, দীর্ঘ ভোরের জন্য চেয়ে থাকে নবদম্পতি!
আমি ঠিক তোমার জন্য চেয়ে থাকতাম এমনি করে এতকাল।
পৃথিবীতে আর যদি ফেরা না হয়, তুমি আর আসবে না এ ঘরে!
আসবে না, পুনঃজন্ম না হলে!
কিন্তু;
রাতজাগা কষ্টরা যে থেকে গেলো যত্ন করে আহত করবে বলে!
যত্ন করে জাগিয়ে রাখবে, অপেক্ষা করাবে নিরুদ্দেশ ভোরের জন্য
আর কেউ প্রতীক্ষায় করবে না প্রেমিকার জন্য।
শেষ নোটিশ প্রকাশ হবে না আর কোনদিন!
বলবে না কোন সহকর্মী, রেজাল্ট বেরুবো কবে?
বলবে না কেউ..
আঁচল বিছাবে না কোন সংবাদ কর্মী, পিয়ন?
জারি করবে না পাশ-ফেইলের ব্যর্থতার বিজ্ঞাপন!
তোমাকে যত্ন করে অবহেলা করতাম-
এ আমি অস্বীকার করবো না
তবুও বুক-পাঁজরে ঠাঁই ছিল তোমার, তুমি কি তা জানো না!
হয়তো বলবে, প্রয়োজন ছিল, তাই বেঁধেছিলাম বুকে!
হতে পারে ঠিক অথবা বেঠিক।
ক্ষমা করো, শাস্তি কম পাইনি জীবনে, তোমাকে যত্ন করে অবহেলা করার।
তোমাকে বেঁধেছিলাম শৈশব থেকে আষ্টেপৃষ্টে,
যেমন করে মা শিশুকে বুকে রাখে।
মনে কি পরে?
যেদিন বাবার হাত ধরে শিশু ক্লাসে তোমার সাথে প্রথম দেখা
প্রেম।
তোমার কাছে সেদিন থেকে আমানত ছিল ক্যারিয়ার
সেদিন থেকে আমি-তুমি ছিলাম নিরবিচ্ছিন্ন প্রেমিক-প্রেমিকা
শাসন করেছো বছরে বছরে, দিয়েছও অনেক;
ঋণী করেছো আমায়, শোধ করিনি কিছুই
শোধ করা যায় না এমন ঋণ।
এত মাখামাখি! এত কাছাকাছি!
সেই তুমি বিদায় নিলে! চুপি সারে
যেমন করে শিশু বড় হয়ে মা'কে ছাড়ে...
ত্রিশ বছর হলো, তুমি ছিলে ক্যালেন্ডারে, পড়ার টেবিলে।
তুমি চলে গেলে! সত্যি গেলে?
পড়ার টেবিলে তোমার পা দুলুনি আর দেখা যাবে না!
করবে না জ্বালাতন সময়ে অসময়ে!
মাঝ রাতে ডেকে তুলে দাঁড় করাবে না আর কোনদিন?
ছেড়ে যাবে না হাইওয়ের মাঝখানে!
কয়েক ঘন্টার জন্য রেখে পালাবেন না আর?
জনসমুদ্রের মাঝখানে বাঘের মুখে!
প্রতি সকালে, রাত শেষের ভোরে
তুমি কি ডাকবে না ক্রিং ক্রিং শব্দে!
ডাকবে না? তুমি ডাকবে না?
টেনে তলবে না গভীর ঘুম থেকে সুখের দেশে ভ্রমনে লোভ দেখিয়ে!
দেখাবে না প্রলোভন আর কোনদিন!
তুমি কি সত্যি চলে গেলে!
শোনা যাবে না তোমার শব্দ সুর!
সত্যি তুমি গেলে! তুমি চলে গেলে!
পর করে গেলে!
অতঃপর তুমি সমাপ্তি রেখা টেনে এ ঘর ছাড়লে!
বিদায় আমার ভালো লাগে না, কোন বিচ্ছেদ তো নয়ই।
হোক সে স্বামী ছেড়ে স্ত্রীর চলে যাওয়া
হোক প্রেমিকাকে ছেড়ে প্রেমিকের প্রস্থান!
বিচ্ছেদ আমার দুর্বোধ্য লাগে, লাগে বেসুরো প্রলাপ।
হতে পারে আমি দুর্বল মানুষ তাই এমন লাগে
খারাপ বেশি লাগে, অনুভূতি বেশি জাগে।
তোমার প্রস্থানে
কারোর কি কম লাগে? না কি লাগে না?
শূন্যতা খাখা করছে পড়ার টেবিলে, কলমে-খাতায়
মস্তিষ্কের প্রতিটি অলস কোষে, চারপাশ জুরে তোমার শূন্যতা
চারিদিক তোমার বিদায়ের করুন সুর।
আসলে কেউ চিরদিন থাকে না, তুমিও থাকলে না
জোর করে কি হবে! বাঁধবো না, বাঁধা যাবে না
বিদায় বন্ধু বিদায়। তোমাকে বিদায়
পরীক্ষা, তোমাকে জীবন থেকে চিরবিদায়।