প্রথম যেদিন দেখেছিলাম, মেহেদি রাঙ্গা হাত,
বদন ভরা হাসির সাথে এনেছে প্রভাত।
সূর্য কেবল উঠবে বুঝি, কিরণ পাবে ধরা,
ধরার আগেই কিরণ পেলাম রূপের যাদু কড়া।
কোথায় থাকে সোনার মেয়ে, কে কে আছে তার,
কিছুই আমার নেইকো জানা, জানা দরকার।
একটু হলো মায়া আমার, ছুটলাম পিছু পিছু।
বাসার কাছে গেলে দেখি, নেইকো মেয়ের কিছু।
ছোট্টো একটি টিনের ঘরে, বৃদ্ধ মায়ের দেহ।
মা ছাড়া তার এই ধরাতে, নেই মেয়েটির কেহ।
দিন কেটে যায় রাত কেটে যায়, ভাবনা নিরন্তর,
মন মানসী থাকলে কাছে, কাটবে কালান্তর।
আমায় মেয়ে ডাকতো তখন ভীন্ন কোনো নামে,
সূর্যমুখী নাম ছিল তার, হৃদয় কোণের খামে।
সূর্য ভেবে আমায় মেয়ে, থাকতো কাছে কাছে,
হৃদয় মাঝে ভয়ের ছবি, হারাই বুঝি পাছে।
সারাবেলা খবর নিতাম, ভয়ের কিছু নেই,
সান্ত্বনা দেই আনবো ঘরে, বয়স হবে যেই।
সূর্যমুখীর মায়ের কাছে, জানাই মিনতি,
আমায় যেনো কন্যা দানে করেন সম্মতি।
সকল মা-ই মেয়ের বেলায়, ছাড় দিতে না চান,
মন-কামনা মনের মতো, জামাই যেনো পান।
ভাবনা উনার জামাই যেনো চাকরিটা পায় পাকা,
বিয়ের তরে খরচ হবে, জমায় ব্যাংকে টাকা।
বছর তিনেক গেলে শুনি, মায়ের মনের কথা,
কন্যদানে রাজি এখন, পাত্র হাতে যথা।
সূর্যমুখীর মুখের পানে তাকানো না যায়,
কান্না ভরা দুচোখ নিয়ে জানায় সে বিদায়।
পাশের বাড়ির রতন মিয়া করবে তাকে বিয়ে,
লোক ধরেছে, ক'মাস বাদে চাকরি পাকা পেয়ে।
থাকবে সুখে নিজের মেয়ে, সকল মায়ের চাওয়া,
যে করেই হোক রতনের এবার, চাকরিটা হোক পাওয়া।
পাঁচ বছরের জমানো টাকা দিলেন তার হাতে,
লোক ধরেছে টাকা হলেই চাকরি পাবে তাতে।
যেমন চাওয়া, তেমন পাওয়া, গলায় ফুলের মালা,
চাকরি পেলো রতন মিয়া, কন্যা দানের পালা।
অভাগা মা সব দিয়েছে, চাকরি পাবার তরে,
অনাড়ম্বর বিয়ের বাড়ি, নেই কিছু তার ঘরে।
একটি বছর পরে শুনি নানান লোকের কাছে,
রতন মিয়ার বাজে স্বভাব পড়ছে ধরা পাছে।
নিত্যদিনই নির্যাতনে তুলছে বাড়ি মাথায়,
সূর্যমুখীর দিন চলে আজ, স্বামীর অবহেলায়।
তিনটি বছর পার হয়েছে, সহ্য হয় না আর,
নির্যাতনের মামলা দিবে, না-থাকুক সংসার।
মা বোঝালেন জামাই তার চাকরি করে, সরকারি সেনা।
মামলা দিলেই কিইবা হবে, বাড়বে শুধু দেনা।
অবশেষে মামলা হলো, রতন যাবে কোথায়!
আদালতের শুনানি আজ, শাস্তি যেনো পায়।
কেসটা এখন আমার হাতে, আমিই জেলার জজ।
আমায় দেখে মায়ের চোখে, নামলো যেনো ধ্বস।