প্রিয় হুমায়ুন আজাদ,
আজ আপনাকে আমার বড়ো প্রয়োজন।
আপনাকে আমি সবকিছু বলতে চাই।
সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর বিষয়গুলো আপনাকে দেখাতে চাই।

আপনি জেনে খুশি হবেন যে,
সব কিছু নষ্টদের অধিকার থেকে ছিনিয়ে আনা হয়েছে।
আমাদের রাষ্ট্র, রাজপথ, রাজধানী, রাজনীতি সবকিছু;
সব কিছু টগবগে টাটকা রক্তের বিনিময়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা, স্কুল, কলেজ, মাদরাসা—
সব কিছু আজ মুক্ত। নষ্টদের হাতে আর কিছুই দেওয়া হবে না।
হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, বাঙালি, অবাঙালি, সবাই;
সবাই আজ স্বাধীন। নষ্টদের গুণগান আর গাওয়া হবে না।

মায়ের মুখের ঘুমপাড়ানির গান, শিশুর মুখের অবুঝ হাসি,
উড়োজাহাজ দেখতে ছুটে চলা বালকের চিৎকার, সবকিছু;
সব কিছু নষ্টদের হাত থেকে রক্তের বিনিময়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
ঊষার আলো, নির্মল বাতাস, মসজিদমুখী হাটন্ত মুসল্লি,
বই হাতে ছুটন্ত বালক, মেঠোপথ, ধানক্ষেত, পুরাতন পল্লি;
সব কিছু! সব কিছু নষ্টদের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
একইঞ্চি মাটি, মেঘনার স্রোত, পদ্মার ইলিশ, সাগরের ঢেউ
কোনো কিছুই আর নষ্টদের হাতে নষ্ট হতে দেওয়া হবে না।


ইতিহাসের সোনালি অধ্যায়, ইতিহাসের কালো অন্ধকার;
কালো কালির প্রতিটি বাক্য, শব্দ, বর্ণ, এমনকি এক একটি বিন্দু;
সাহিত্য, সাহিত্যের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এমনকি সাহিত্যের নির্মাতা;
কালি, কলম, কাগজ, কবিতা আর কবি; গান আর গায়ক; সব।
টেলিভিশন, সংবাদপত্র, নাট্যমঞ্চ, থিয়েটার; সকল ধর্মীয় উৎসব;
সব কিছু! সব কিছু নষ্টদের অধিকার হতে জীবনের ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

প্রিয় কবি,
যে ভবিষ্যৎ আপনি দেখেছিলেন, তা সত্য।
যদিও আর কিছুই নষ্টদের অধিকারে দেওয়া হবে না,
তবুও শঙ্কা হয়। হৃদয়ের একটি অংশ কেঁপে ওঠে
এই ভেবে যে- নতুন 'অধিকারী'রাই আবার নষ্ট হয়ে যাবে না তো!