আমি দেখি শিমুল জারুল তেতুল গাছে পাখিদের হাসাহাসি,
দেখি নদীর স্রোতে ভেসে চলা কচুরিপানায় পানকৌড়ির ঠাসাঠাসি,
রূপকথার গল্পের মতো নদীর তীর ঘেষে পরিদের আগমন।
শিমুল জারুল তেতুল -তলে পরিদের ঘিরে আনন্দের আয়োজন।
তাদের থেকে মধ্যবয়সী এক পরিকে গাছের আড়ালে ডেকে
চুপিসারে জিজ্ঞাসা করি, —তোমাদের ভীড়ে হারিয়েছি তাকে।
একটু কি দেবে খুঁজে? কতোদিন হয়না কথা! হৃদয় আনচান।
কতোদিন শুনি নাকো তার কণ্ঠের গান, মন পেরেশান।
অবাক দুটি নীল চোখে তাকিয়ে আমার পানে,
আড়াল থেকে আরও আড়ালে গিয়ে শুধায় কানেকানে,
—নাম কী তার? দেখতে কেমন? আমাদের মাঝে আছে?
চিনব তাকে কেমন করে? ডাকব কত কাছে?
বললাম, —হাজার পরির ভিড়ে তাকে আলাদা করা যায়।
ছিপছিপে শরীর, ছিপছিপে কণ্ঠে মধুর সুরে গান গায়।
অন্ধকারের মতো কালো চুলে খেলা করে বেলির সুবাস,
নাম মনীষা; হাতের তালুর এলোমেলো রেখা যেন দূর্বাঘাস।
আমি দেখি শিমুল জারুল তেতুল গাছের তলে,
বয়ে চলা নদী হতে পানকৌড়ি পাখা তুলে।
বালকেরা চলে যায় খেলা ছেড়ে; সন্ধ্যা নামে।
সব কিছু থেমে গেলে, জোছনা ঝরে গ্রামে।
মনে পড়ে, কতোদিন একসাথে খেলেছি খেলা,
এই খানে, এই তটে, এই শিমুল জারুল তেতুল তলায়।
পূর্ণিমার চাঁদের মতন রুপালি আলোর বদন,
সারা পায়ে আলতা মাখা, সারা অঙ্গ সোনার বরণ।
পূর্ণিমার আলোয় তখন দখিনা বাতাস অবিরাম,
কলকল ধ্বনি তুলে স্রোতস্বিনী নদী চলে; নাই বিশ্রাম।
আসলো সে খালি পায়ে শিমুল জারুল তেতুল তলে,
কোমরে কলস নিয়ে রেশমি হাতে জল ভরার ছলে।
কচ্ছপের মতো ধীরে ধীরে নদীর জলে পা রাখে এককোণে।
শাড়ির আচলে মুখ লুকিয়ে কলসিতে জল ভরে সাবধানে।
ঢেউ উঠে গরজে, কুল যায় ভেঙ্গে, মুহূর্তে সে অতল।
মনীষাকে কেড়ে নেয় সর্বনাশা পদ্মা নদীর জল।
আমি দেখি শিমুল জারুল তেতুল তলে বালকেরা করে খেলা,
এক যুগ এমন করেই নিত্য আমার কেটে যায় বেলা।
নিত্য বসে পরিদের গান শুনি, হঠাৎ কাউকে বলি ডেকে,
—খুঁজে দাও। বহুকাল আগে তোমাদের মাঝে হারিয়েছি তাকে।