আমার প্রাণের ভাষা বাংলা
আমি বাংলায় ভালোবাসি,
আমি বাংলায় হাঁটি পথ,
আমি বাংলায় বড় খুশি ।
ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত বাংলা ভাষা । যেসব ভাষা ইউরোপের অনেকটা অংশজুড়ে এবং বৃহত্তর দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথমে বিস্তৃতি লাভ করে তাদের সম্মিলিতভাবে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবার বলা হয়। অবশ্য এসব ভাষাভাষী গোষ্ঠী বর্তমানে সারা পৃথিবীজুড়েই ছড়িয়ে পড়েছে। পৃথিবীর অর্ধেকের চেয়েও বেশি মানুষ এ পরিবারভুক্ত ভাষায় কথা বলে থাকেন। আমাদের মাতৃভাষা বাংলাসহ গ্রিক, ল্যাটিন, ইংরেজি, হিন্দি, ফারসি, ডাচ, নেপালি ইত্যাদি ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। আনুমানিক পাঁচ হাজার বছর পূর্বে এই মূল ভাষার অস্তিত্ব ছিল। এই ভাষা-পরিবারের ভাষা-শাখাগুলোর মধ্যকার পার্থক্যগুলো সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে আজ থেকে তিন বা চার হাজার বছর আগে।
এভাবে দিনের পর দিন পরিবর্তিত হতে হতে বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছে এবং প্রতি নিয়ত বাংলা ভাষার অভিব্যক্তি ঘটে চলেছে এবং চলবে । যেখানে কিছু কিছু শব্দ যেমন আমরা ব্যবহার করা ছেড়ে দিয়েছি তেমনি অনেক নতুন শব্দ সংযোজিত হয়েছে এবং হচ্ছে বাংলা ভাষায় । উদাহরণ হিসেবে আমরা দেখতে পাই চর্যাপদ, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, বৈষ্ণব পদাবলী, রবীন্দ্র কাব্য এবং আধুনিক বাংলা সাহিত্যের মধ্যে গঠনগত দিক থেকে প্রত্যেকটি অনেকাংশে আলাদা ।এর ফলে আমরা সুস্পষ্ট প্রমাণ পাই যে বাংলা ভাষার পরিবর্তন চলে আসছে তার জন্মকাল থেকেই এবং ভবিষ্যতেও তা পরিবর্তিত হবে ।
কিন্তু বর্তমানে, সহজে লক্ষ্য করা যায় একটা বিষয় যা আমার মনে হয় খুব সদ্যই বাংলা ভাষায় প্রভাব ফেলবে । যা হলো 'ড়' ও 'র'-এর মধ্যে দ্বন্দ্ব ।
দুটি বর্ণের মধ্যে উচ্চারণগত দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় দুটি দুটি বর্ণ সম্পূর্ণ পৃথক । য, র, ল, ব- এদেরকে অন্তঃস্থ ধ্বনি বলা হয় । তাই 'র' হলো একটি অন্তঃস্থ ধ্বনি এবং 'ড়' হল তাড়নজাত ধ্বনি । তাই বিচার করলে দেখা যায় ধ্বনি গত দিক থেকে এই দুই ব্যঞ্জনবর্ণে কোনরূপ মিল নেই । ফলে এই দুই বর্ণের মধ্যে গুলিয়ে ফেলা এবং একটির পরিবর্তিত রূপ হিসেবে আরেকটি ব্যবহার করে এগিয়ে নিয়ে চলা একটি অপ্রীতিকর ভ্রান্ত ব্যাপার ।
তবে কেন এই বর্তমানে গুলিয়ে ফেলা:-
________________________________
এই দুই ব্যঞ্জনবর্ণের মধ্যে গুলিয়ে ফেলার পেছনে দুটি কারণ হিসেবে আমার মনে হয় । প্রথমত, অশুদ্ধ উচ্চারণ ও দ্বিতীয়টি ইচ্ছাকৃত ।
প্রথমটির কারণ হল সাধারণত এরূপ, কিছু ক্ষেত্রে কিছু জনের 'ড়' উচ্চারণে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় । শিশু বয়স থেকেই এই ভুল হওয়ার কারণে তিনি আর পরে এটি শুদ্ধ করতে পারেন না এবং উচ্চারণের ক্ষেত্রে 'ড়' কে 'র' হিসেবে ব্যবহার করেন ।এভাবে পর্যায়ক্রমে চলতে চলতে এক সময় তিনি লেখার ক্ষেত্রেও বা তার পরিবারে, শিক্ষাদান ক্ষেত্রে এই ভুল করে চলেন । তিনি এটি স্বাভাবিক ভাবেই ব্যবহার করে থাকেন বলে প্রতিনিয়ত ভুল করে চলেন । যার প্রভাব কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পড়বে তাদের যদি সঠিক শিক্ষা না দেওয়া হয় তার এটিকে তারা স্বাভাবিক ভাবেই জানবে ।
এই কারণটি যদিও মেনে নেওয়ার মধ্যে পড়ে পড়ে তবে দ্বিতীয়টি অনেকটা হাস্যকর । উদাহরণ হিসেবে বলি, আমার স্কুলে পড়ার সময় একজন শিক্ষিকার ক্ষেত্রে আমি লক্ষ্য করেছিলাম চায়ের ক্ষেত্রে 'কড়া চা' কে 'করা চা' বলতেন এবং 'কড়াইশুঁটি' কিন্তু স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করতেন । এক্ষেত্রে বোঝা যায় উনার 'ড়' উচ্চারণ ক্ষেত্রেই কোনোরূপ অসুবিধা নেই । বোঝা যেত, তিনি কথার মধ্যে একটু ন্যাকামি আনার জন্য এই ধরনের বর্ণ বিভেদ ইচ্ছাকৃতভাবে করেন এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে এই বিষয়টা অনেকেই করে থাকেন । তার প্রভাব আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষেত্রে পড়বেই ।
একটু ভেবে দেখুন তো, যদি এই দুটো বর্ণের ক্ষেত্রে গুলিয়ে ফেলা হয় তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অর্থ গুলো কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় । যদি 'পড়া' শব্দটিকে 'পরা' বলা হয়, পাড়া/পারা, খুড়ো/খুরো, বড়/বর, ইত্যাদি ।
এই ভুলগুলো ভবিষ্যতে বাংলা ভাষায় বেশ বড় পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে, এবং 'ড়' ব্যঞ্জনবর্ণ টি ধীরে ধীরে বাংলা বর্ণমালা থেকে হারিয়ে যেতে পারে ।
(নিজস্ব মতামত)