হে সত্য প্রেমী
         বল্ আকাশের বিশাল আমি
              অচেনারে করি চেনা
              অজানাকে করি জানা
সবার সাথে মিশি,সবাইকে ভালবাসি
ছলনাময়ী কাতর প্রিয়াকেও আমি নমিঃ।
                    হে সত্য প্রেমী
                    বল্ অজ্ঞ আমি
                    নিস্বঃ আমি বল্-
অজীর্ণ মানুষের জীর্ণতা সাথে নিয়ে চল্।
ফাঁটা রোদ্দুরে ক্রন্দণ দীর্ঘশ্বাসে কাতর অভিমানে
                       বল্
              আমার সাথে বল্-
আমি অদিতি নন্দন,গিরি কুমারীর স্বামী,
তাজা ফুলের সুবাসিত গন্ধে প্রেম আমি।
আমি ভুলে যাওয়া ক্ষণ,স্মরণের অনুক্ষণ,
অশরীরীর ডাকে,আয়তীর প্রেমে-আমার ভোলা মন।
আমি অবোধ্যরে করি বোধ্য,অযুক্তিকে করি যুক্তি,
আমি আমার দেশের কাঁদামাটিতে মিশে ৭১ এর মুক্তি।
আমি শহীদ মুক্তিযোদ্ধার ক্রন্দনরত এক অবুঝ শিশু,
আমি আমাকে করেছি স্বাধীন আমি ৭১ এর যীশু।
আমি সোনালী ক্ষেতে সবুজ ফসল আদল বারি,
আমি যুদ্ধ ময়দানে বিজয়ী বীর খালিদের তরবারি।
                আমি মানিগো স্রষ্টা,
                আমি ন্যায় অ-পথ ভ্রষ্টা-
আমি জাতির জীবনে এগিয়ে এসে হয়েছি নব দ্রোষ্টা।
আমি কবি নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা,অন্তেবাসী-অদৃশ্যমানব,
আমি আপনার ন্যায় চলিফিরি,বন্ধু হতে চায় দানব।
আমি শত্রুকে রাখি সম দূরত্বে মৃত্যুকে করি জয়,
আমি অজিতের চোখে বিজিত নেইতো আমার ভয়।
আমি শীষ দিয়ে ভাই পথ চলি কাউকে দেখে নয়,
আমি এতদিনে বুঝি পেলাম খুজেঁ আমারই পরিচয়।
                     হে সত্য প্রেমী-
                      বল্ সত্য আমি
আমি অত্যয়,আমি প্রত্যয় আমি উদ্ভাস,
আমি আমার চিন্তার উদ্ভাবক,আমি তারই উৎপ্রাস।
আমি উদিরণ,দিনের বেলায় বিকিরণ,
আমি চাঁদের মাঝে পেয়েছি সে প্রেম আসঞ্জন।
             আমি সত্যে পথের পথিক
              আমি বাঁধার বিন্ধ্যাঁচল,
অঘাটেরই ঘাট আমি আত্মজ্ঞ উদায়চল্।
আমি আনকা,আমি আবেশ,আমি ঔর্ব,
আমি রবের দেয়া জ্ঞান সূধা পান করেছি সর্ব।
আমি ঋৃতম্বর, আমি কণাদ,
আমি সবকিছু পেয়েও আজ হয়েছি অনাথ।
আমি অক্ষয়,তন্ময়,আমি অবুঝ বাঁধনহারা,
আমি আমার ভেতর পেয়েছি ভগবান-যেখানে দেয় সাড়া।
আমি অণিমা,আমি অতনু,অকায়,অঝর,
আমি প্রিয়া অন্তঃসলিলানদী,ঘুম ঘোরে অঘোর।
             আমি অধিদেব ,অধ্রুব,
              অশুভতে আমি শুভ।
আমি ক্ষীরোদ সমুদ্রে নাগের উপরে দেই বিষ্ণুরুপে
শয়ন,
আমি দুঃখে কষ্টে সংগ্রামী কবির সুনির্বাচিত চয়ন।
আমি স্বর্গীয় পিতার তিনটি বাণী-ন্যায়,চরিত্র,সত্য
এই বাণীতে থাকব আমি আজীবন প্রেমী মত্ত।
আমি প্রেমী,প্রেম দিয়ে জয় করব অখিল বিশ্ব,
আমি প্রেমহীন এই ধরণীতে হাওয়ায় উড়া অশ্ব।
আমি শিশুর হাঁসি, নব পথবাসি আমি
সৃষ্টির শুরু থেকে সব শিশুদের খেয়েছি যত হামি।
              আমি ফুল শিশু আর গান,
               আমি প্রিয়ার অভিমান-
আমি বাগানের যত ফুটে উঠা ফুল প্রেমেরই জয়গান।
আমি অবুঝ কিশোরীর আধো আধো বোল,
আমি অধরের জড়তা তার প্রিয় মায়ের কোল।
আমি গোপন প্রিয়ার গোপন হ্রদয়ে পেয়ে ঠাঁই,
আমি সেই প্রেমেতে ডুব দিয়ে চরাই-উৎরাই।
             আমি প্রিয়ার অবসর-
আমি অসময়ে ভাবনা তাঁর হ্রদয়ের ছোট্ট ঘর।
আমি তার প্রতীক্ষার চোখের চাতক পাখী,
আমি তার অক্ষিপুটে নিজেকে লুকিয়ে রাখি।
আমি বর্ষাকালের অবিশ্রান্তের ঝড়,অস্থির সাকী,
আমি হন্ত্যদন্তে বসে থাকা কারও ঘরে পাখী।
             আমি পাপেরে বলি পাপী,
           আমি মন্দকেও হায় !শাপি-
আমি বিচরণ করি স্বর্গ নরক অখিল ভূবন ব্যাপী।
আমি ক্রুদ্ধ বালিকার অভিমানী চোখ,অভিমানে পথ চলা,
আমি নব বধূঁর যত হায়া শরম,অস্ফুট কথা বলা।
         আমি সারা রাত ভর জেগে
           যাই প্রভাতে রেগে
            অস্থিরতার বেগে
           দিই নিজেকে গালি-
আমার অস্থিরতায় আমিই হেয়ালী।
আমি আমার প্রেমে এনেছি বশে যত বৈশ্ব্য দেবী,
আমি নিখিল ধরার অখিল প্রিয় আমি বিশ্বকবি।
                 আমি সত্যপ্রেমী
            আকাশের বিশাল আমি।
            আমি বিন্দু,মহাসিন্দু
অচেনারে করি চেনা,আমি অপরিচিতের বন্ধু।
আজীর্ণের বুকে জীর্ণতা আমি অঝরার চিতে ঝরা,
আমি সংগ্রামী সংগ্রামেই আমার জীবন গড়া।
আমি দুঃখের ছায়ায় সুখ,আমি অকালের ঝড়,
আমি সব হ্রদয়ের বন্ধু স্বজন সবারই আপন পর।
আমি নিশাচর,নিশিকে করি চিরসাথী,
আমি নগ্ন নির্জণ পথের মাঝে করি মাতামাতি।
                 হে সত্য প্রেমী
                 বল্ অজ্ঞ আমি
বৃষ্টিভেজা জ্বরে কম্পন থরথর সুরে
বল্
              পুনঃপুনঃ বার বল্-
ধর্ম নিয়ে যত বাড়াবাড়ি অধর্মের ততসুর,
আমি ঈশ্বর, আল্লাহ,প্রফেট,ভগবান রেখেছি অন্তঃপুর।
আমি প্রিয় প্রভুর মনোনীত ধর্মের গোপনে ক্রীতদাস,
আমি ধরণীর বুকে মানবতা ধর্মে করছি বসবাস।
যদি বলে কেউ যবন কাফের যদি বলে খারেজী,
আমি বলব জানিনা গীতা বন্ধু পড়িনীতো হাফেজী।
আমি জানি মানুষ মানুষের তাই মানুষ ভালবাসি,
আমি বুঝিনা কোন ভেদাভেদ তাই সবার সাথে মিশি।
আমি স্রষ্টার সৃষ্টি অনক্ষ,আমি অধ্যেতা,
আমি না বুঝেই বলি হ্রদয়ের আছে যত কথা।
আমি মসজিদ মন্দির গীর্জায় খুজেঁ পাইনি রব,
আমি আমার ঘরের দরজা খুলে হয়েছি স্তব্দ।
আমার কাছে ভিখ্ মাগে প্রভু
ছেড়াঁ গেঞ্জি আর ছেড়াঁ টুপি বেশে,
আমি বাকাঁ সিলভার থালা হাতে
দেখেছি দরজায় প্রভুকে অবশেষে।
              আমি ধন্য হয়েছি ধন্য,
মানুষের মাঝে আছেন ঈশ্বর সে কথা জানার জন্য।
আমি আরশ পাকের সারস পাখী ঘুরে দেখি ধরা,
আমি আরশ দেখেছি লেখা দোযখ-বেহেশতী কারা।
সত্য মুক্তির পথ সর্বদা দেখিয়েছেন যাঁরা,
আমি দেখেছি স্বর্গবাসী হয়েছেন তাই তাঁরা।
আমি কৃষক দেহের ঝরনো ঘাম আমন ইরি রোপা,
আমি প্রিয়ার দেহের কাশ্মীরি শাল,ইরানী গোলাপ খোঁপা।
আমি শাহানা ,শরাব সূধা গোপন প্রিয়ার,
আমি প্রিয়ার মাঝে ডুবে থাকি,খোঁজ রাখিনি হিয়ার
                 আমি সদয়,আমি সঞ্জয়
                   আমি বিশ্বের নব সংশয়,
আমি পেয়ে গেছি আজ মহাগ্রন্থে আমারই পরিচয়।
আমি আমার অধরের বাঁধ ছাড়া কথা সাধ ছাড়া আহ্লাদ,
আমি খাক্কুম খেয়ে করব পূরণ জাহান্নামে নব সাধ।
আমি যত পাপীরে নিয়ে করব আড্ডা ঐ সে জাহান্নামে,
আমি আগুনে গোসল করব শতবার জীবনের পরিণামে।
আমি পাপকে দূর করে পাপীকে করব বন্ধু স্বজন,
আমি বিচারে আন্দোলন করব সেদিন চলবেনা আত্মীয়করণ।
আমি বিধাতার কাছে জানাব ফরিয়াদ’প্রভু ওদের কর ক্ষমা’-
আমি বলব -আমার নামে সে পাপ কর জমা।
তবুও বিধাতা ক্ষমা কর ওদের করোনা অভিমান,
তাদের প্রেমে পড়েছি আমিকরোনা অপমান।
আমি সত্যের প্রেমী
আমার হ্রদয়ের সব কথা সত্য এবং সত্য আমি।
                    হে সত্য প্রেমী
                   বল্ সত্য আমি
                 নিস্বঃ যদিও বল্
মানুষের প্রেম প্রীতি নিয়ে বন্ধুর পথে চল্।

(কবিতাটি জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের
বিদ্রোহী কবিতার ছন্দ)