বহ্নি-গ্রাসে স্টীফেন কোর্ট, ২০১০
সবে লাঞ্চ সেরে কম্পিউটারে শুরু করলাম কাজ ।
মোর আশে পাশে মৃদু ধোঁয়া আসে দিনটা ২৩শে মার্চ ।।
যেই শুনি কানে ভয় আসে প্রাণে পাশে ভয়াবহ আগুন ।
শর্ট সার্কিটে পড়েছে আটকে লিফ্টে বন্দি কজন ।।
দরজাটা খুলে দেখি আঁখি মেলে ধোঁয়া ঢোকে কালো কালো ।
বিশেষ আদেশে নিভে দিল শেষে কম্পিউটার, পাখা, আলো ।।
চোখে জল আসে সকলেই কাশে কালো ধোঁয়া আর গ্যাসে ।
পরি মরি করে সকলে বাহিরে আসে খোলা পরিবেশে ।।
আগুনের গ্রাস ছড়ালো যে ত্রাস সকলেই দিশাহারা ।
বন্ধ দুয়ার তাই পালাবার পথ নেই, বলে তারা ।।
মায়ের কৃপায়ে সহজ উপায়ে আমরা সকলে মিলে ।
খোলা সিঁড়ি দিয়ে প্রাণ হাতে নিয়ে নেমে পড়ি দলে দলে ।।
দেখি নীচে নেমে ওঠে ক্রমে ক্রমে কত লেলিহান শিখা ।
অসহায় যারা চাইছেন তারা প্রাণ টুকু ভিক্ষা ।।
ধোঁয়ার নিবেশে অগ্নি পরশে শ্বাসকষ্টের জ্বালায় ।
উপায় না পেয়ে কেউ লাফ দিয়ে মৃত্যুর কোলে ঝাঁপায় ।।
ট্যাঙ্ক ভরা জল আসে দমকল দেরিতে স্টীফেন তলে ।
কেউ জল দিয়ে দড়ি, মই নিয়ে উদ্ধার কাজে চলে ।।
হাতে প্রাণ নিয়ে পড়েন ঝাঁপিয়ে উৎসাহি কিছু ছেলে ।
মৃত্যুর থেকে বাঁচাল কাউকে সব কিছু বাধা ঠেলে ।।
আগুনের তাপ কেউ দেন ঝাঁপ কেউ লাফ দেন ছাদে ।
দড়ি, মই নিয়ে পাইপেই বেয়ে কেউ মৃত্যুর ফাঁদে ।।
নামী কোম্পানীর কোন কর্মীর প্রাণে ক্ষতি হয় নাই ।
আসবাব গুলো যেখানে যা ছিল সব কিছু পুড়ে ছাই ।।
বহু বছরের কত কষ্টের সাজানো ফাইলে চিঠি ।
আগুনের রোষে কয়েক নিমেশে আগ নিল সব লুটি ।।
এলো নানা রং দেখি কত ঢং উদাশীন উদ্ধারে ।
কাদা ছোঁড়া ছুঁড়ি প্রতিশ্রুতি ঝুড়ি দোষারোপ পরস্পরে ।।
জলন্ত ছবি ধরা পড়ে সবই রিপোর্টার ক্যামেরায় ।
আগুন কিভাবে লাগল এভাবে জবাব তার কোথায় ?
কোনটা সঠিক, শর্ট সার্কিট নাকি অন্তর্ঘাত ?
তদন্ত চাই তদন্ত চাই এই নিয়ে প্রতিবাদ ।।
পেয়েছি জীবন মোরা সব জন মায়ের অশেষ দয়ায় ।
কর্মচ্যুতি ঘটেনি কারোর-ই মোদের কোম্পানীর কৃপায় ।।
এক মাস পরে প্রকাশ খবরে মৃত্যু তেতাল্লিশের ।
তাজা তাজা প্রাণ অকাল প্রয়াণ হাহাকার পরিজনের ।।
চিরুনি তল্লাসে ধরা পড়ে শেষে স্টীফেন কোর্টের মালিক ।
কোর্টের আদেশে আশা রাখি শেষে বিচার হবেই সঠিক ।।