আল আমিন চৌধুরী স্বপন
তুমি কাছে নেই বলে
তুমি কাছে নেই বলে আমার যে কেমন কেমন লাগে তা-
বুঝাতে পারব না আমি,
তোমার অভাবটা কোন ভাবেই পূরণ করতে পারি না আমি!
তোমাকে নিয়ে ভাবি, দূর থেকে বেশী বেশী মনে করি।
তোমার আমার শৈশব স্মৃতিগুলি সহসাই পড়ে যায় মনে।
তোমাকে ভাবতে ভাবতে কত দিন কত রাত কেটে যায়,
তবুও শেষ হয় না ভাবনার নিরন্তর এই পথ চলা।
তোমার অপরুপ বৈচিত্রময় প্রকৃতি বিমূর্ত ভাবনায় বেঁধে রেখেছে
আমারে। আমি ভুলতে পারি না তোমারে। অন্তরে গভীরে মিশে আছে-
তোমার অনুপম ছায়া, তোমার স্নেহের পরশে লেগে আছে
শিল্পায়নের ছোঁয়া।
এই চোখ দিয়ে যা দেখেছি, মায়ার বাঁধনে তা বেঁধে রেখেছি,
যত দূরেই থাকি-না কেন, তুমি আছো আমার দৃষ্টির সীমানায়।
তুমি মেঘের দেশে মেঘ-মাল্লার, কখনও বৃষ্টি কখনও রোদপোড়া,
মন চায় ভিঁজে যাই, ছুঁয়ে যাই তোমার লোভনীয় কায়া।
তোমার বৈচিত্রময় ঋতুচক্রে, আবেগের রিদম উঠে আমার ধমনিতে,
আমার ভাবনা, সকল আশা-ভরসা, প্রান জুরানো ভালবাসা শুধু-
তোমাকেই লক্ষ্য করে।
তোমার নদী, তোমার প্রকৃতি গাছ-পালা ফুল-পাখি ষঢ়ঋতুর ছোঁয়া
দোলা দেয়, ভাবিয়ে তুলে, ভিঁজে যাওয়া বর্ষা হাতছানি দিয়ে ডাকে,
জেগে উঠে কবি মন। বৃষ্টির রিম্ ঝিম্ শব্দে কবিতার পায়েল বাঁজে
উদাস মন নিরালায় শুধু শুধু মন হারায়।
তোমার খাল-বিলে, ডাংগা-ডুবায়, কচুরী-পাঁনা, শস্যে ভরা ক্ষেতে
শিশির সিক্ত সবুজে ছিল আমার স্বপ্ন প্রতিদিনের।
তোমার কাঁদা-মাটি জলে মিশে আছে আমার আদরের শৈশব,
ঊঠানের পাশে জিলানো মাছের কলতানে, আমার মনের ফোয়ারায়
এখনও করে তোলপার, মৌনাতা ভেঙ্গে বার বার পিছু ডাকে-
সেই দূরন্তপনা, তখন আর আমি আমার মধ্যে থাকি না-
ছুটে যাই তোমার কাঁদা-মাটি জলে।
বাড়ীর আংগীনায় আঁচল পেতে সোঁয়াজ পাতা ছিড়ে এক নম্র কিশোরী-
আর সেই সোঁয়াজ পাতার গন্ধে বিমোহিত হয়ে আমি, তোমাকেই খুঁজি,
ঠিক এই খানেই আমি কবিতার উষ্ণতা অনুভব করি।
এই চোখ দিয়ে যা দেখেছি, আমার অন্তরিক্ষে তোমার সাদৃশ্য-
স্বযতনে রেখেছি। তোমার নদী, বৃক্ষ লতা-পাতায় স্বপ্নে যাই স্বপ্নে আসি।
তোমার দিগন্ত জুরে বিস্তৃর্ণ সবুজ অরণ্য আকুল আবেদনে খুঁজে-
আমার নিবেদিত প্রান।
যতদিন যায়, নিরবতা ভাংগে, নিঃশব্দ স্মৃতিময় তরংগে দ্রুপদী নাঁচের-
ঝংকার উঠে, উঠতেই থাকে। আমার অনুভূতির আকু-বাকুতে-
আলোক চিত্রের ছোঁয়া লেগেছে, শুধু তোমার কথাই ঝিলিক দিয়ে উঠে।
আবেগের বসে মাঝে-মাঝে যখন নদীর কাছাকাছি যাই, উদাসীন হই,
ঢেউয়ের তালে তালে স্নিগ্ধ রোদে স্বপ্নগুলি চোখের সামনে ঢেউ খেলে,
আমি হারাই, ডুবে যাই, বহিয়মান স্রোতে ভাসি, কেউ উজান বায়-
কেউ ভাটিতে যায়, আমি দাঁড়িয়ে দেখি কেউ থেমে থাকে না,
সব চলে যায় স্রোতের টানে।
আমাকে ডাকে নদী, আয়-স্রোতে-আয়, দেখ মিষ্টি রোদের ঝিকিমিকি
দূরের আকাশে উড়ে পাখি ঝাঁকে-ঝাঁকে রাতের জোঁছনায় সবুজ বনানী-
শিশিরে ভিঁজে, আঁকা-বাঁকা ধবল পথ দিয়ে হেটে যায় আমার আমি,
আবেগে-আপ্লুত হয়ে আমি কবিতার পিছু ছুটি।
ঘুম থেকে উঠে প্রতিনিয়ত দূর থেকে দেখি তোমার নয়ানাভিরাম ছবি।
যে মাটিতে আমার শিকড় গাঁথা, সেই শিকড়ের উৎস খুঁজি।