মন শুধু অতীত খুঁজে
আল আমিন চৌধুরী স্বপন
মন এই ভাল এই মন্দ, মেজাজটাও এমনই! কখন যে মন-মেজাজটা খারাপ হয়ে যায় বুঝে উঠতাম পারি না।
মানুষের মেমোরি মুছে ফেলা যায় না, মানুষ যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন গল্প-স্বল্পে বা দূরে কোথাও গেলে স্মরণ করে কৈশরের স্মৃতিকথা।
মন রে কত বুঝাই, মন তো বুঝতাম চায় না, খালি ফুরুত্ কইরা স্কুলের আশে পাশে
উইড়া বেঁড়ায়। সারা দিন টই টই করে গাছ তলায়, আতুর বাঁতুর, চক পাতুরে আবার
আমগাছ জামগাছ আড়া-গাড়া নাদীর পাড়ে ঘুরতেই থাকে। অথচ বয়স তো কম হলো না,
ষাইটের মাঝামাঝি। খেয়ালোমে দেখি হেইদিন পইড়া আইছি ইস্কুল থন্।
টিফিন পিরিয়ড আইলেই দৌড় দিয়া যাইতাম মাখন দিয়া মাঠা খাওয়ার জন্যে, ডগ ডগ
করে গীলে নিতাম লেবু মিশানো মাঠা। হাফশার্টের হাতায় মুখ মুছে আবার যাইতাম
ক্লাশে।
আইস্ক্রিম খাইয়া পরান ঠান্ডা হইলেও ঠোট-জিব্বা লালে লাল রঙীন হইয়া যাইতো।
মনের কার্নিশে জমে থাকা স্বপ্নগুলি আজ রঙ ধরেছে, হিম শীতল মেমরী থেকে বরফের
মত টপ্ টপ্ করে স্মৃতি ঝরে পরছে। মনে আজ ঢেউ উঠেছে। এখন আমি এই ভাল এই
মন্দ।
ইচ্ছে করেই নিজেকে লুকিয়ে রেখেছি রহস্যময় ডানায়, শুধু সবুজ আত্মার অহংকার
আমাকে প্রতিনিয়ত ডাকে। আমি ক্ষুদ্র এই প্রান, প্রকৃতির অবলিলায় গা ভাসিয়ে দিয়েছি।
স্বপ্নগুলি ঢেউ খেলে নিভৃত অরণ্যের তরু-ছায়ায়। আমি এই ভাল এই মন্দ! মন মানে না,
ছেড়ে যেতে মন চায় না। তবুও ফিরে দেখি ফেলে আসা নরুলদিন।
গরমের দিনে পাটক্ষেত, ধানক্ষেত আওর-বাওর পথ দিয়া ৫ কিলো মিটার হ্যাট্টা যাইতাম
স্কুলে।
হায়রে পথ চলা! চলার কি আর শেষ আছে? প্রতিদিন যাওয়া আর আসা। পকেটে উইংসন
পেন আর হাতে বই খাতা, ভর দুপুরে কলই ক্ষেতের বাঁতুর দিয়া যাচ্ছি আর ভাবছি, আজ
হোম ওয়ার্ক হাতের লেখা দিতে পারিনি বলে, খাইলাম স্যারের চার ব্যাত্রাঘাত। রাস্তা দিয়া
হাটতাম আর স্যারকে দিতাম কঠিন বকা, কিন্তু এখন আমি স্যারের কাছে সরি।
জীবন ছুটছে তো ছুটছেই, চোখের নজর কমে গেলেও মনের নজরে দেখি আমার অতীত।
গুড়া মাছ দিয়ে এক প্লেট ভাত খেয়ে যার আঁচলে মুখ মুছেছি, তাঁর কথা কেমনে ভুলি?
গোল্লাছুট, দাড়ীয়া বান্ধা, কুঁতকুঁত, কলই পুড়া, ছোঁলা পুড়া, লুডুখেলা টুপামুছি, ঘুড্ডি
উড়ানো, ডাংগুটি, লাট্টু খেলা এ সবই এখন অতীত। এ পথ দীর্ঘপথ, সীমানা ছেড়ে
বহুদূর। প্রশ্ন অনেক, উত্তর একটাই, সে আমার প্রিয় জন্মভূমি।