কফিনের বাহির থেকে ভিতরে
আল আমিন চৌধুরী স্বপন
আমি বিশ্বাস করতে পারিনি, পৃথিবীটা এমনি ভাবে স্তব্ধ হয়ে যাবে। রহস্যময় প্রানঘাতি করোনা ভাইরাস থামিয়ে দিবে পৃথিবীর সকল আয়োজন। স্থবির হয়ে যাবে প্রকৃতির প্রানচঞ্চলতা। চারিদিকে শুনশান, রাস্তাটা জনশূন্য, রাত আর দিনকে দেখি একই নির্জনের নীরিবতা।
ঘরে ঘরে, অফিস আদালতে, মার্কেট সোপিংমলে সকল চলাচলে ছোঁয়াচে ভাইরাস করোনার ভয়।
আমি নীজের ভিতরে যখন ভাইরাসের টের পাই, সেই থেকে আমি একাকী কেউ আমার সাথে নয়। নীজেকে লুকিয়ে রেখেছি অন্যকে বাঁচাবার জন্যে।
বাঁচা মরার মাঝে ভাবছি, আমি আছি না নাই! পৃথিবীর সবাই এখন আমার পর, অসহ্য লাগে কোয়ারেন্টাইন ফেকাশে জীবন, দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ঘুরে-ফিরে অবকাশ যাপিত সময়টুকু বাহিরে চেয়ে দেখি রাস্তার প্রানহীন নীরবতা, ভিতরে আতংক বাহিরে আমার উদাসীন দুটি চোখ, হয় তো শেষ বারের মত পৃথিবীকে দেখছি,
হয় তো শেষ নিঃশ্বাসটাই নিতে যাচ্ছি! মৃত্যুর খুব কাছাকাছি।
চারি দিকে এ কি দেখছি জনশূন্য নিষ্প্রান হাহাকার! নেই যানবাহন চলাচল, ধোঁয়া নেই, ইঞ্জিনের শব্দ নেই, প্রকৃতি কত-না শান্ত, ঘরের জানালা খুলে দেখি সড়ক দিয়ে হাটে কুকুরদের স্বাধীনতা, পাখিদের কিচির মিচির শুনি, দেখি উড়ে উড়ে নিজ নিজ বাসায় ফিরে।
অস্থির শুধু মানুষের ভিতরটা, অদৃশ্য এক নীরব ঘাতক করোনা ভাইরাস পৃথিবীর মানুষকে দিয়েছে অযাচিত মৃত্যুর ছোঁয়া। লকডাউনে ঘরবন্দী মানুষেরে ফেলে দিয়েছে দুশ্চিন্তায়। মৃত্যুর কাছাকাছি দাঁড়িয়ে কর্মহীন এ কি দুঃসহ জীবন! প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে হাজার হাজার মানুষের লাস।
যে মৃত্যুর জানাজায় আপনজন থাকে না, কাফনে জড়ানো লাসের কান্না যখন কেউ শুনে না, কফিনের ভিতর থেকে বেড়িয়ে আসা শব্দের প্রতিধ্বনির কান্না যারা বুঝতে পারে না, যখন দেখি শ্মশানের দিকে নিয়ে যায় রশি দিয়ে বাধা ঝুলন্ত এক নারীর মৃতদেহ, নরকের যন্ত্রনা থেকেও কঠিন মনে হয়, যখন আপন বলতে কেউ থাকে না।
তাই বুঝে নিলাম এই পৃথিবীতে কেউ কারো না।
তবুও আশ্বির্বাদ থাকলো, হে মানুষ তোমরা বেঁচে থাকো, নিরাপদে থাকো। করোনার অহংবধ মৃত্যুই তার অহংকার। সেই মহামারি ভাইরাস করোনার মৃত্যুক্ষুধা থেকে তোমরা যেন অবিলম্বে নিস্তার পাও।