আমার একটা নদী ছিল-
যার ঘোলা জলে
ডিঙা বেয়ে যেত
জীবনানন্দের কবিতার চিত্রকল্প -
পুনর্জন্ম প্রজ্ঞায় --
আমাদের আটপৌরে ভালবাসা
ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভেসে ভেসে-
ফেরির ফাৎনা
বুকের বারান্দা জুড়ে
ইলিশের স্বপ্ন স্বাদে ডুবে যেত----
আজ ধুসরাভ পরবাসী পাখি
খোয়া যাওয়া পারাণির কড়ি
খোঁজে জীবন- জলের
জঙ্গমে-জঙ্গলে একা--
ঘোলা চোখে রূপসা বয়
সাইলেসিয়া নেত্রনালী হয়ে---
আমার একটা উঠোন ছিল-
যেখানে প্রতি সন্ধ্যায়
জীবনানন্দ প্রেম
সুদর্শন ডানা মেলে দিত-
ঠাকুমার আকাশ প্রদীপ -
মায়ের তুলসী বেদী-
আমাদের সমস্ত শৈশব জুড়ে
ঝিঁঝিঁ আর জোনাকির
আলোর শব্দে
মিশে যেত ঠাকুমার ঝুলি-
মায়ের পাঁচালি --
গোলাঘর লক্ষ্মী আর
বেলতলা শিব-
ঢেকিঘর নবান্ন উৎসব --
মাঝখানে পেয়ারার ডালে ডালে
নেচে যেত দুরন্ত কৈশোর---
আজ সে উঠোন জুড়ে ভুতুমের
ভৌতিক সংকেতে
হৃদয়টা ঝিঁঝিঁ পোকা-
চাঁদের আলোয় ঝরে বিষ-
পুড়ে যায় দূর্বাঘাস
জোনাকি আগুনে---
আমার একটা আকাশ ছিল-
যেখানে সারাদিন সখেদে
ঝাপটাতো ডানা জীবনানন্দের
শঙ্খচিল শালিখের মন-
জীবন আনন্দ চুষে-
পুজোখোলা প্রাচীন বটের ডালে
রেখে যেত আমাদের কল্পনার
কবোষ্ণ কাব্যভাষা--
নক্ষত্রেরা জন্ম দিত
তরুণ কবির চোখ- --
আজ সে আকাশ
সীমাবদ্ধ চাদরে
নিজেকে ঢেকে চুপচাপ
অম্লরোগে ভোগে-
নক্ষত্রের চোখে জ্বলে
পৌরাণিক প্রাণীর পিপাসা -
বুকে কাঁদে পরিযায়ী প্রেম -
কাঁটাতারে ঝুলে থাকে
রক্তাক্ত জটায়ু --
আমি নির্বিকার -
লাশকাটা ঘরের চাতালে
বসে থাকি সারারাত -
জীবনানন্দের কাঁটা-ছেঁড়া
লাশ নিয়ে একা---
উদ্বাস্তু উঠোনে কাঁদে
ঝিঁঝিঁ জোনাকিরা---