যেই মহামানব সৃষ্টি না হলে এই ভুবনে কিছুই সৃজন হত না,যাঁর পদাচারণায় ধন্য নিখিল ভুবনের সমুদয় সৃষ্টিকুল। এককথায় যাঁর চরিত্রের বৃত্তান্ত নিয়ে যদি আলোচনা করি সন্দেহাতীত! কলমের আঁচড় স্তব্ধ হয়ে যাবে কিন্তু সেই মহামানবের জীবন বৃত্তান্তের শুচি চরিত্রের কথাগুলো ইতি টানা যাবে না। যাঁর আত্মার মতত্বতা, ধৈর্য্য, বিনয়ীতা, ন্যায়পরায়ণতা ও উদারতা গোটা পৃথিবীর সর্বজাতির প্রেরুণার এক অগাধ্ উৎসস্থল হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। গোটা পৃথিবী যখন ঘোর আঁধারে আচ্ছন্ন ছিল, যখন মানুষ তার মানুষত্বকে হারিয়ে ফেলেছিল, এককথায় যেই মহামানবের আবির্ভূত হওয়ার পূর্বে মানুষ কুসংস্কার,শিরক ও অবিচারের কুজ্জ্বটিকায় নিমজ্জিত ছিল। যে যুগের মানুষ ছিল সিংহের চাইতে হিংস্র, সর্পের চাইতে বিষাক্ত, বন্য প্রাণীর চাইতে আরো অধিক নিকৃষ্ট, দ্বন্দ, কলহ,ব্যভিচার-অবিচার ছিল তাদের নিত্যসঙী। মানুষ্যত্ব তথা নারী জাতির কোনো মর্যাদা ছিল না। ফুটফুটে শিশুকে জিয়ন্ত অবস্থায় মাঠিতে পুঁথে দিত। অত্যন্ত বর্বর শ্রেণীর, পাশ
বিক আচরণ, অশান্তির ছোঁয়া ইত্যাদিতে আচ্ছন্ন ছিল। তখন মানবজাতির শান্তির মূর্ত প্রতীক হিসেবে দূর নীলাম্বরের নীচে নিখিল বিশ্বে প্রিয় হাবিব স: শুভাগমন করেন।
৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ আগষ্ট মোতাবেক ১২ রবিউল আউয়াল রোজ সোমবার বেলা প্রত্যুষে আরবের কুরাইশ গোত্রে জননী আমিনার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। এই সৃষ্টির সেরা যুগশ্রেষ্ট নবী হযরত মোহাম্মদ স:~এর জন্ম কোনো রাজমহল কিংবা জাগতিক কোনো কিছুকে কেন্দ্র করে নয় কিংবা কোনো রাজা-মহারাজার গৃহে নয়। এককথায় মরুর বুকে এক অনাথ এতিমরূপে তাঁর শুভাগমন। ছোটোবেলা থেকেই মহানবী হজরত মোহাম্মদ স: যে ইনসাফ ও সাম্যের আদর্শ দেখিয়েছেন তাতেই অনেকেই বিমুগ্ধ হয়েছিলেন। সমুদয় মানবজাতি এই মহানবী স:~এর উপর চির-ঋণী। তিনি মানুষকে সহজ-সরল পথ দেখিয়েছেন, মানুষকে গ্রন্থজ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন পবিত্র কোর'য়ানের মাধ্যমে। পূর্ববর্তী নবীগণ সবাই চেষ্টা করেছিলেন সহজ-সরল পথের পথিক হওয়ার জন্য কিন্তু অধিকাংশই অনেক সংগ্রামে প্রকৃত গন্তব্যের শিখরে পৌঁছেছিলেন। তাই তিনিও সেই প্রচেষ্টা আরও দৃঢ় ভাবে চালিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন সব নবীকুলের শেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। অন্তরের পবিত্রতা ও আমানতদারীতায় আরবের কাফীররা তাঁকে 'আল-আমীন' অর্থাৎ 'বিশ্বাসী' উপাধিতে ভূষিত করেছিল।
মহান প্রতিপালক আল্লাহ সুবাহানা তা'য়ালার অফুরন্ত প্রেমের নির্ঝরের অধিকারী এবং মানুষের করুণার ধারক হয়েও মোহাম্মদ স: কখনো দেবত্বের দাবী করেননি। প্রতিনিয়ত তিনি নিজেকে অতি সামান্য মানুষরূপে পরিচয় দিতেন এবং মানুষকে মুক্তির দিশারি হয়ে দেখিয়েছেন সহজ-সরল ও সুপথ। যে পথ সমস্ত সৃষ্টিকুলের নিমিত্তে চির উন্মুক্ত ও সঠিক। এভাবে গোটা পৃথিবী হতে অশান্তির বার্তা বন্ধ করে শান্তির নির্ঝরের অফুরন্ত ধারা প্রবাহিত করে, পাথরের ন্যায় পাষাণ হৃদয় প্রেম-প্রীতি,ভালবাসা দিয়ে ভরে দিয়েছিলেন। অজ্ঞতার বদলে জ্ঞান, আঁধারের বদলে দিবালোক, অসভ্যতার বদলে সভ্যতা, নিকৃষ্টের বদলে উৎকৃষ্টতা এককথায় - যুগের মানব সম্প্রদায়কে পৌঁছে দিলেন নিজ অনুপম আদর্শের মাধ্যমে উন্নতি ও সফলতার সিংহভাগ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় সাম্প্রতিক বিশ্বায়ানে কবলিত আধুনিক সমাজ কোন দিকে অবস্থান করছে তা নিয়ে একাগ্রচিত্তে চিন্তা করলে বুঝা যায় সমাজের বর্তমান অবস্থান। এই অত্যাধিক আধুনিকতা যেভাবে মানুষকে সাহায্যে করেছে ঠিক বিপরীত দিকটা আরও অবনতির কেন্দ্রবিন্দু। নিজের সুস্থ বিবেক দিয়ে একবার চিন্তা করি পৃথিবীর বর্তমান অবস্থান কোথায় থলিয়ে যাচ্ছে। আর বিলম্ব না করে সেই মহানবী স: শিক্ষাকে প্রতিষ্ঠিত করি, তাঁর দিক্ষায় দিক্ষিত হই,তাঁর সুপথের পথিক হই,তাঁর আদর্শকে অনুসরণ ও অনুকরণ করি ইনশাহল্লাহ আল্লাহর অশেষ করুণায় আমরা ইহকাল এবং পরকালের কদম চুম্বন করবো। মহান রাব্বুল আল-আমীন আমাদেরকে সহি ও শান্তির পথের পথিক হওয়ার তৌফিক দান করুন।
@মামনুর_ফকির